আবারও মেসি
লিওনেল মেসির হাতে ফিফা ব্যালন ডি’অর দেখতে চেয়েছেন কে, আর কে-ই বা চাননি! নির্বাচন-প্রক্রিয়ার বিস্তারিত জানাচ্ছেন রাজীব হাসান আরন হিউজ ও বিলাল রজব—এ দুজনকে ‘স্পেশাল থ্যাংকস’ দেওয়া উচিত লিওনেল মেসির। এঁরা আবার কারা? ভোটার। মেসিকে ফিফা ব্যালন ডি’অর জেতাতে ভোট দিয়েছেন এঁরা।
প্রশ্ন করতে পারেন, তা তো অনেকেই দিয়েছেন। ফিফার সদস্য ১৫০টিরও বেশি দেশের কোচ, অধিনায়ক ও সাংবাদিকেরা ভোট দিয়েছেন। পাঁচ শর কাছাকাছি ভোটার। তাঁদের প্রায় অর্ধেক, সুনির্দিষ্ট করে বললে ৪৭.৮৮ শতাংশ ভোটই গেছে মেসির ব্যালটে, যেখানে দ্বিতীয় সেরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পেয়েছেন তাঁর অর্ধেকেরও কম (২১.৬) ভোট। ধন্যবাদ যদি দিতেই হয়, মেসির তো আরও অনেককেই দেওয়া উচিত। বেছে বেছে শুধু হিউজ ও রজব কেন?
সেটি বুঝতে হলে আগে জানতে হবে ফিফা ব্যালন ডি’অরের ভোটাভুটির প্রক্রিয়া। এ বছর ভোটের প্রক্রিয়ায়ও এসেছে পরিবর্তন। আগে ফিফা বর্ষসেরা নির্বাচন করতেন সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়ক। ব্যালন ডি’অর নির্বাচন করতেন ইউরোপের বাছাই করা কয়েকজন সাংবাদিক। কিন্তু ফিফা ব্যালন ডি’অরে জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়কের পাশাপাশি ফিফার সদস্যভুক্ত দেশগুলোর একজন ফুটবল সাংবাদিকও ভোটাধিকার পেলেন। আরেকটি নিয়ম পাল্টানো হলো, আগে কোনো দেশের কোচ-অধিনায়ক নিজ দেশের কাউকে ভোট দিতে পারতেন না। ডিয়েগো ম্যারাডোনা তাই বিরক্ত হয়েই ভোট দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ থাকার সময়। বলেছিলেন, ‘আমি জানি, সেরা ফুটবলার মেসি, অথচ আমাকে ভোট দিতে হচ্ছে অন্য কাউকে!’
ম্যারাডোনার সমালোচনা শুনেই কিনা নিয়মটি পাল্টানো হয়েছে। এবারই প্রথম নিজ দেশের কাউকে ভোট দিতে পেরেছেন ভোটাররা। এত পরিবর্তনের মধ্যে কিন্তু পয়েন্ট বিন্যাসের প্রক্রিয়াটি থাকল আগের মতোই। প্রথম পছন্দের ফুটবলার পাবেন ৫ পয়েন্ট এবং পরের দুজন ৩ ও ১। এভাবে এক-দুই-তিন বেছে নিতে হবে প্রত্যেক ভোটারকে।
এবার হিউজ ও রজবের কাহিনিটা শুনুন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক হিউজ এবং কাতারের অধিনায়ক রজব প্রথম পছন্দ হিসেবে মেসিকেই বেছে নিয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দ? নেই! কেউ নেই! যেন সম্ভব হলে দুই ও তিনেও মেসির নাম বসিয়ে দিতেন এঁরা!
আসল ঘটনা যা-ই হোক, চাইলে ধরে নিতেই পারেন, মেসি ছাড়া এঁদের কাছে যোগ্য প্রার্থী মনে হয়নি আর কাউকেই। মেসির জন্যও তো এঁরা তাই স্পেশাল ভোটার। স্পেশাল ধন্যবাদ তো এঁদেরই প্রাপ্য!
মেসি নিজেও এবার ভোটার হয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হওয়ার সুবাদে। তো তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন? না, নিজেকে দেননি। তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় দুই বার্সেলোনা সতীর্থ জাভি ও ইনিয়েস্তা। তৃতীয় আর্জেন্টাইন-সতীর্থ আগুয়েরো। আশ্চর্য, মেসি রোনালদোকে ভোট দিলেনই না! অথচ গত মৌসুমে মেসির সবচেয়ে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রোনালদো। ক্লাবের হয়ে মেসির সমান ৫৩টি গোলও করেছেন।
মজার ব্যাপার হলো, রোনালদো কিন্তু প্রতিশোধ নিতে পারেননি। কারণ, সেই সময় পর্তুগালের অধিনায়ক ছিলেন নুনো গোমেজ। তবে বদলা নিয়েছেন ইকার ক্যাসিয়াস। মেসি যেমন দুই বার্সা সতীর্থকে বেছে নিয়েছেন, স্পেন অধিনায়ক হিসেবে ক্যাসিয়াসও বেছে নিয়েছেন দুই রিয়াল-সতীর্থ রোনালদো ও মেসুত ওজিলকে। তৃতীয় ভোটটি অবশ্য মেসিকে দিয়েছেন। তবে মেসি গত মৌসুমে ওজিলের পেছনে ছিলেন—এটা ক্যাসিয়াস যখন বোঝাতে চাইছেন, এ-ও ধরে নিতে পারেন, মেসিকে তৃতীয় বানানো ভদ্রতা রক্ষা। খোদ মেসি তো সেই ভদ্রতাও মানেননি!
অর্থাৎ ক্লাবের রেষারেষির ফল কিন্তু ঠিকই প্রতিফলিত হয়েছে ভোটাভুটির সময়। শুধু ক্লাবের ‘শত্রুতা’? ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা কেন তবে প্রথম ভোটটি মেসিকে না দিয়ে রোনালদোকে দিলেন? এখানে কি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবচেতনভাবে কাজ করেছিল? নাকি সজ্ঞানেই সিলভা মেসিকে দিয়েছেন দ্বিতীয়-সেরার ভোট?
অবশ্য বলতে পারেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।’ ভোটাধিকার প্রয়োগের এই অবাধ স্বাধীনতার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যবহার করেছেন কয়েকজন। ডাচ্ অধিনায়ক মার্ক ফন বোমেল যেমন প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সতীর্থ স্নাইডারকে। অথচ স্নাইডার ২০১১ সালে ছিলেন নিষ্প্রভ। আর্জেন্টিনার কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলাও বেছে নিয়েছেন মেসিকে। ক্যামেরুনের কোচ ডেনিস লাভাঙ্গের প্রথম পছন্দ ছিলেন স্যামুয়েল ইতো।
ব্রাজিলের কোচ মানো মেনেজেস কিন্তু সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রথম ভোটটি মেসিকেই দিয়েছেন। আলোচিত কোচদের মধ্যে বিশ্বকাপজয়ী স্পেনের ভিসেন্তে দেল বক্সও দিয়েছেন তাঁর প্রিয়পাত্র মেসিকে। ইতালির সিজারে প্রানদেল্লির পছন্দও তাই। জার্মানির জোয়াকিম লোর চোখে আবার সেরা জাভি।
এক-দুজনের মধ্যে আবার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেখা গেছে মহাদেশপ্রীতি। ঘানার অধিনায়ক জন মেনশাহ যেমন ভোটটি দিয়েছেন ইতোকে। সেনেগালের কোচ আমারা ত্রাওরোও তাই। ভেনেজুয়েলার কোচ সিজার ফারিয়াস আবার বেছে নিয়েছেন ফোরলানকে। শুধু দক্ষিণ আমেরিকাপ্রীতিই হয়তো নয়, উরুগুয়েকে ২০১১ কোপা আমেরিকা জেতানোয় ফোরলানের ভূমিকারই হয়তো স্বীকৃতি দিয়েছেন ফারিয়াস।
ভোটাভুটি নিয়ে কারচুপির কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ইভিএম ব্যবহার হবে কি হবে না, এই জাতীয় জটিলতাও ছিল না। জাল ভোটও কেউ দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। তবে দুজনের ভোট বাতিল হয়েছে। সেন্ট লুুসিয়ার অধিনায়ক প্রথম ভোটটি দিয়েছেন মেসিকে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভোট দুটি ‘বাতিল’। অধিনায়ক কোচকে অনুসরণ করেছেন, নাকি কোচ অধিনায়ককে—বলা মুশকিল। কারণ, সেন্ট লুসিয়ার কোচ অ্যালেইন প্রভিডেন্সের প্রথম ভোটটি মেসিকে দেওয়া। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভোট দুটি ‘বাতিল’!
কে জানে, হিউজ ও রজবের মতো হয়তো এ দুজনও মেসির আশপাশে আর কাউকে খুঁজে পাননি!
সেটি বুঝতে হলে আগে জানতে হবে ফিফা ব্যালন ডি’অরের ভোটাভুটির প্রক্রিয়া। এ বছর ভোটের প্রক্রিয়ায়ও এসেছে পরিবর্তন। আগে ফিফা বর্ষসেরা নির্বাচন করতেন সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়ক। ব্যালন ডি’অর নির্বাচন করতেন ইউরোপের বাছাই করা কয়েকজন সাংবাদিক। কিন্তু ফিফা ব্যালন ডি’অরে জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়কের পাশাপাশি ফিফার সদস্যভুক্ত দেশগুলোর একজন ফুটবল সাংবাদিকও ভোটাধিকার পেলেন। আরেকটি নিয়ম পাল্টানো হলো, আগে কোনো দেশের কোচ-অধিনায়ক নিজ দেশের কাউকে ভোট দিতে পারতেন না। ডিয়েগো ম্যারাডোনা তাই বিরক্ত হয়েই ভোট দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ থাকার সময়। বলেছিলেন, ‘আমি জানি, সেরা ফুটবলার মেসি, অথচ আমাকে ভোট দিতে হচ্ছে অন্য কাউকে!’
ম্যারাডোনার সমালোচনা শুনেই কিনা নিয়মটি পাল্টানো হয়েছে। এবারই প্রথম নিজ দেশের কাউকে ভোট দিতে পেরেছেন ভোটাররা। এত পরিবর্তনের মধ্যে কিন্তু পয়েন্ট বিন্যাসের প্রক্রিয়াটি থাকল আগের মতোই। প্রথম পছন্দের ফুটবলার পাবেন ৫ পয়েন্ট এবং পরের দুজন ৩ ও ১। এভাবে এক-দুই-তিন বেছে নিতে হবে প্রত্যেক ভোটারকে।
এবার হিউজ ও রজবের কাহিনিটা শুনুন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক হিউজ এবং কাতারের অধিনায়ক রজব প্রথম পছন্দ হিসেবে মেসিকেই বেছে নিয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দ? নেই! কেউ নেই! যেন সম্ভব হলে দুই ও তিনেও মেসির নাম বসিয়ে দিতেন এঁরা!
আসল ঘটনা যা-ই হোক, চাইলে ধরে নিতেই পারেন, মেসি ছাড়া এঁদের কাছে যোগ্য প্রার্থী মনে হয়নি আর কাউকেই। মেসির জন্যও তো এঁরা তাই স্পেশাল ভোটার। স্পেশাল ধন্যবাদ তো এঁদেরই প্রাপ্য!
মেসি নিজেও এবার ভোটার হয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হওয়ার সুবাদে। তো তিনি কাকে ভোট দিয়েছেন? না, নিজেকে দেননি। তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় দুই বার্সেলোনা সতীর্থ জাভি ও ইনিয়েস্তা। তৃতীয় আর্জেন্টাইন-সতীর্থ আগুয়েরো। আশ্চর্য, মেসি রোনালদোকে ভোট দিলেনই না! অথচ গত মৌসুমে মেসির সবচেয়ে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রোনালদো। ক্লাবের হয়ে মেসির সমান ৫৩টি গোলও করেছেন।
মজার ব্যাপার হলো, রোনালদো কিন্তু প্রতিশোধ নিতে পারেননি। কারণ, সেই সময় পর্তুগালের অধিনায়ক ছিলেন নুনো গোমেজ। তবে বদলা নিয়েছেন ইকার ক্যাসিয়াস। মেসি যেমন দুই বার্সা সতীর্থকে বেছে নিয়েছেন, স্পেন অধিনায়ক হিসেবে ক্যাসিয়াসও বেছে নিয়েছেন দুই রিয়াল-সতীর্থ রোনালদো ও মেসুত ওজিলকে। তৃতীয় ভোটটি অবশ্য মেসিকে দিয়েছেন। তবে মেসি গত মৌসুমে ওজিলের পেছনে ছিলেন—এটা ক্যাসিয়াস যখন বোঝাতে চাইছেন, এ-ও ধরে নিতে পারেন, মেসিকে তৃতীয় বানানো ভদ্রতা রক্ষা। খোদ মেসি তো সেই ভদ্রতাও মানেননি!
অর্থাৎ ক্লাবের রেষারেষির ফল কিন্তু ঠিকই প্রতিফলিত হয়েছে ভোটাভুটির সময়। শুধু ক্লাবের ‘শত্রুতা’? ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা কেন তবে প্রথম ভোটটি মেসিকে না দিয়ে রোনালদোকে দিলেন? এখানে কি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা অবচেতনভাবে কাজ করেছিল? নাকি সজ্ঞানেই সিলভা মেসিকে দিয়েছেন দ্বিতীয়-সেরার ভোট?
অবশ্য বলতে পারেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।’ ভোটাধিকার প্রয়োগের এই অবাধ স্বাধীনতার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যবহার করেছেন কয়েকজন। ডাচ্ অধিনায়ক মার্ক ফন বোমেল যেমন প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সতীর্থ স্নাইডারকে। অথচ স্নাইডার ২০১১ সালে ছিলেন নিষ্প্রভ। আর্জেন্টিনার কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলাও বেছে নিয়েছেন মেসিকে। ক্যামেরুনের কোচ ডেনিস লাভাঙ্গের প্রথম পছন্দ ছিলেন স্যামুয়েল ইতো।
ব্রাজিলের কোচ মানো মেনেজেস কিন্তু সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রথম ভোটটি মেসিকেই দিয়েছেন। আলোচিত কোচদের মধ্যে বিশ্বকাপজয়ী স্পেনের ভিসেন্তে দেল বক্সও দিয়েছেন তাঁর প্রিয়পাত্র মেসিকে। ইতালির সিজারে প্রানদেল্লির পছন্দও তাই। জার্মানির জোয়াকিম লোর চোখে আবার সেরা জাভি।
এক-দুজনের মধ্যে আবার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেখা গেছে মহাদেশপ্রীতি। ঘানার অধিনায়ক জন মেনশাহ যেমন ভোটটি দিয়েছেন ইতোকে। সেনেগালের কোচ আমারা ত্রাওরোও তাই। ভেনেজুয়েলার কোচ সিজার ফারিয়াস আবার বেছে নিয়েছেন ফোরলানকে। শুধু দক্ষিণ আমেরিকাপ্রীতিই হয়তো নয়, উরুগুয়েকে ২০১১ কোপা আমেরিকা জেতানোয় ফোরলানের ভূমিকারই হয়তো স্বীকৃতি দিয়েছেন ফারিয়াস।
ভোটাভুটি নিয়ে কারচুপির কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ইভিএম ব্যবহার হবে কি হবে না, এই জাতীয় জটিলতাও ছিল না। জাল ভোটও কেউ দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। তবে দুজনের ভোট বাতিল হয়েছে। সেন্ট লুুসিয়ার অধিনায়ক প্রথম ভোটটি দিয়েছেন মেসিকে এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভোট দুটি ‘বাতিল’। অধিনায়ক কোচকে অনুসরণ করেছেন, নাকি কোচ অধিনায়ককে—বলা মুশকিল। কারণ, সেন্ট লুসিয়ার কোচ অ্যালেইন প্রভিডেন্সের প্রথম ভোটটি মেসিকে দেওয়া। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভোট দুটি ‘বাতিল’!
কে জানে, হিউজ ও রজবের মতো হয়তো এ দুজনও মেসির আশপাশে আর কাউকে খুঁজে পাননি!
No comments