উচ্চতাই সব নয়!
উচ্চতা ফুটবলে গোলকিপারদের সাফল্যের পূর্বশর্ত নয়। বেশি লম্বা না হয়েও সফল অনেক গোলরক্ষক প্রসঙ্গটা যখন ফুটবল গোলরক্ষকের, অনেকেই মনে করেন, খেলোয়াড়ের দৈহিক আকৃতি একটা ব্যাপার। ২২ ফুট প্রশস্ত ও ৮ ফুট উঁচু গোলপোস্ট সামলাতে হয় তাঁকে। সুতরাং, লম্বা হওয়াটা গোলরক্ষকের পূর্বশর্তই! আসলেই কী? ইতিহাস কিন্তু বলছে উচ্চতাই সবকিছু নয়। উচ্চতা ৬ ফুটও নয়, এমন অনেক গোলরক্ষক আছেন, যাঁদের ফুটবল ক্যারিয়ার সাফল্যে মোড়ানো।
যেমন হোর্হে ক্যাম্পোস। মেক্সিকোর এই গোলরক্ষক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ১৩০টি, যা দেশের পক্ষে চতুর্থ সর্বোচ্চ। ১৯৯৩ ও ১৯৯৬ সালে মেক্সিকোকে জিতিয়েছেন টানা দুটি কনক্যাকাফ গোল্ডকাপ শিরোপা। প্রথমবার নিজেদের জালে বল ঢুকতে দিয়েছিলেন মাত্র দুবার। ১৯৯৬-তে তো মেক্সিকোর জালে বলই ঢোকেনি! ১৯৯৯ সালে ক্যাম্পোসের মেক্সিকো প্রথম স্বাগতিক দেশ হিসেবে জেতে ফিফা কনফেডারেশন কাপেরও শিরোপা।
তবে তাঁকে মানুষ বেশি মনে রেখেছে ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সৌজন্যে। অথচ ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার ক্যাম্পোস ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন স্ট্রাইকার হিসেবে! পুমাসের হয়ে প্রথম মৌসুমেই করেছিলেন ১৪ গোল। গোল করার ধারাটা ক্যাম্পোস ধরে রাখেন গোলরক্ষক হওয়ার পরও। পেশাদার ফুটবলে তাঁর ৩৩টি গোলই এর সাক্ষী! বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ক্যাম্পোস মাঝেমধ্যেই নামতেন স্ট্রাইকারের ভূমিকায়!
গোলরক্ষককে মানুষ মনে রাখে গোল হতে না দেওয়ার জন্যই। লাডিসলাও মাজুরকিউইজও একই কারণে স্মরণীয়। তবে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ‘মিস’-এর অংশও তিনি। ১৯৭০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল-উরুগুয়ে সেমিফাইনালে টোস্টাওয়ের বাড়িয়ে দেওয়া বলে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য ছুটছিলেন পেলে। গোলপোস্ট ছেড়ে এগিয়ে যান মাজুরকিউইজ। পেলে দুজনের সামনে দিয়ে বলটা গড়িয়ে যেতে দিয়ে যেদিকে দৌড়াচ্ছিলেন, সেদিকেই দৌড়ে যেতে থাকেন। হতভম্ব মাজুরকিউইজ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তাঁর পেছন দিক দিয়ে দৌড়ে বল ধরে গোলে শট নেন পেলে। অল্পের জন্য তা পোস্টের বাইরে চলে যায়। সেই সেমিফাইনালে হেরে উরুগুয়ে বিদায় নিলেও টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক হন মাজুরকিউইজ।
ক্লাব ফুটবলে পেনারলের সাফল্যের ইতিহাসটা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার মাজুরকিউইজ লিখেছেন নিজের হাতে! পেনারলকে জিতিয়েছেন পাঁচটি লিগ শিরোপা। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকসের (আইএফএফএইচএস) শতাব্দী-সেরা গোলরক্ষকের তালিকায় পোলিশ বংশোদ্ভূত উরুগুইয়ান গোলরক্ষকের ঠাঁই হয়েছে ১২ নম্বরে।
তাঁকে বলা হয় ইতালির ফুটবল ইতিহাসের তৃতীয় সেরা গোলরক্ষক। দিনো জফ ও ওয়াল্টার জেঙ্গার পরই আসে তাঁর নাম। অথচ জিয়ামপিয়েরো কম্বির উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। ১৯৩৪ বিশ্বকাপজয়ী ইতালি দলের গোলরক্ষক ছিলেন। তারও আগে অধিনায়ক হিসেবে ইতালিকে জিতিয়েছিলেন ১৯২৮ অলিম্পিক সোনা। ইতালিয়ান লিগে ৯৩৪ মিনিট ‘অপরাজিত’ থাকার রেকর্ডের মালিক কম্বির জুভেন্টাস জিতেছিল পাঁচটি স্কুডেট্টো। এর মধ্যে ১৯৩০ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত টানা চারবার!
খর্বাকৃতির গোলরক্ষকদের মধ্যে অনেকেই সেরা মনে করেন ফ্রান্টিসেক প্লানিকাকে। কম্বির মতো প্লানিকাও ১৯৩৪ বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়াকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। মুখোমুখি হয়েছিলেন কম্বির। ফাইনালে ২-১ গোলে জিতে স্বাগতিক ইতালিই পরে বিশ্বসেরার মুকুট। পরের বিশ্বকাপেও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার প্লানিকা। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলেছিলেন ভাঙা হাত নিয়েই! ১৯৩২ সালে পূর্ব ইউরোপিয়ান মিত্রোপা কাপের সেমিফাইনালে দর্শকের ছোড়া পাথরে মাথা ফেটে গেলেও রক্তাক্ত মাথা নিয়েই খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন প্লানিকা।
১৯৫০-এর দশকে হাঙ্গেরির ফুটবল দলকে বলা হতো ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্স বা গোল্ডেন টিম। পুসকাস-ককসিচের সেই দলের গোলরক্ষক ছিলেন জিউলা গ্রোসিকস। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার গ্রোসিকসকে ডাকা হতো ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ বলে। গ্লাভসজোড়া হাতে নিয়ে চার বছর এবং ৩৩টি ম্যাচে হাঙ্গেরিকে অপরাজিত রেখেছিলেন। দলের প্রয়োজনে খেলতেন রক্ষণভাগেও।
তর্কযোগ্যভাবে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক উদালদো ফিলোল দাপটের সঙ্গে ক্লাব ফুটবল খেলেছেন দুই দশক। ৬ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার ফিলোল এক দশকেরও বেশি সময় সামলেছেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের গোলপোস্ট। ১৯৭৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপজয়ী ফিলোল খেলেছেন এর আগে ও পরের দুটি বিশ্বকাপেও। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে তাঁর হাতেই ওঠে টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। দ্বিতীয় রাউন্ডের তিন ম্যাচে একবারও বল জালে জড়াতে দেননি। উল্টো ঠেকিয়ে দেন পোল্যান্ডের পেনাল্টি। আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবলে এক মৌসুমেই ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ছয়টি পেনাল্টি!
খর্বাকৃতি সফল গোলরক্ষকদের গল্পের শেষটা করা যায় রেনে হিগুইতাকে দিয়ে। নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লম্বা কোঁকড়ানো চুলের ব্যতিক্রমী এক গোলরক্ষকের ছবি। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার এই কলম্বিয়ান গোলরক্ষক প্রায়ই গোলপোস্ট ছেড়ে উঠে যেতেন ওপরে। খেয়ালি স্বভাবের কারণেই কিনা, ডাকনাম ছিল ‘এল লোকো’ অর্থাৎ ‘পাগল’। প্রতিপক্ষের বিপৎসীমায় ফ্রি-কিক পেলেই উঠে গিয়ে কিক নিতেন। ৬৮ ম্যাচ খেলে গোলও করেছেন ৮টি। এই ‘একের ভেতরে দুই’ ভূমিকাই তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে বিশ্বের সেরা সব গোলরক্ষকের তালিকায়।
ফিফাডটকম অবলম্বনে খলিলুর রহমান
তবে তাঁকে মানুষ বেশি মনে রেখেছে ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপের সৌজন্যে। অথচ ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার ক্যাম্পোস ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন স্ট্রাইকার হিসেবে! পুমাসের হয়ে প্রথম মৌসুমেই করেছিলেন ১৪ গোল। গোল করার ধারাটা ক্যাম্পোস ধরে রাখেন গোলরক্ষক হওয়ার পরও। পেশাদার ফুটবলে তাঁর ৩৩টি গোলই এর সাক্ষী! বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ক্যাম্পোস মাঝেমধ্যেই নামতেন স্ট্রাইকারের ভূমিকায়!
গোলরক্ষককে মানুষ মনে রাখে গোল হতে না দেওয়ার জন্যই। লাডিসলাও মাজুরকিউইজও একই কারণে স্মরণীয়। তবে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ‘মিস’-এর অংশও তিনি। ১৯৭০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল-উরুগুয়ে সেমিফাইনালে টোস্টাওয়ের বাড়িয়ে দেওয়া বলে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য ছুটছিলেন পেলে। গোলপোস্ট ছেড়ে এগিয়ে যান মাজুরকিউইজ। পেলে দুজনের সামনে দিয়ে বলটা গড়িয়ে যেতে দিয়ে যেদিকে দৌড়াচ্ছিলেন, সেদিকেই দৌড়ে যেতে থাকেন। হতভম্ব মাজুরকিউইজ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তাঁর পেছন দিক দিয়ে দৌড়ে বল ধরে গোলে শট নেন পেলে। অল্পের জন্য তা পোস্টের বাইরে চলে যায়। সেই সেমিফাইনালে হেরে উরুগুয়ে বিদায় নিলেও টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক হন মাজুরকিউইজ।
ক্লাব ফুটবলে পেনারলের সাফল্যের ইতিহাসটা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার মাজুরকিউইজ লিখেছেন নিজের হাতে! পেনারলকে জিতিয়েছেন পাঁচটি লিগ শিরোপা। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকসের (আইএফএফএইচএস) শতাব্দী-সেরা গোলরক্ষকের তালিকায় পোলিশ বংশোদ্ভূত উরুগুইয়ান গোলরক্ষকের ঠাঁই হয়েছে ১২ নম্বরে।
তাঁকে বলা হয় ইতালির ফুটবল ইতিহাসের তৃতীয় সেরা গোলরক্ষক। দিনো জফ ও ওয়াল্টার জেঙ্গার পরই আসে তাঁর নাম। অথচ জিয়ামপিয়েরো কম্বির উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। ১৯৩৪ বিশ্বকাপজয়ী ইতালি দলের গোলরক্ষক ছিলেন। তারও আগে অধিনায়ক হিসেবে ইতালিকে জিতিয়েছিলেন ১৯২৮ অলিম্পিক সোনা। ইতালিয়ান লিগে ৯৩৪ মিনিট ‘অপরাজিত’ থাকার রেকর্ডের মালিক কম্বির জুভেন্টাস জিতেছিল পাঁচটি স্কুডেট্টো। এর মধ্যে ১৯৩০ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত টানা চারবার!
খর্বাকৃতির গোলরক্ষকদের মধ্যে অনেকেই সেরা মনে করেন ফ্রান্টিসেক প্লানিকাকে। কম্বির মতো প্লানিকাও ১৯৩৪ বিশ্বকাপে চেকোস্লোভাকিয়াকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। মুখোমুখি হয়েছিলেন কম্বির। ফাইনালে ২-১ গোলে জিতে স্বাগতিক ইতালিই পরে বিশ্বসেরার মুকুট। পরের বিশ্বকাপেও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার প্লানিকা। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলেছিলেন ভাঙা হাত নিয়েই! ১৯৩২ সালে পূর্ব ইউরোপিয়ান মিত্রোপা কাপের সেমিফাইনালে দর্শকের ছোড়া পাথরে মাথা ফেটে গেলেও রক্তাক্ত মাথা নিয়েই খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন প্লানিকা।
১৯৫০-এর দশকে হাঙ্গেরির ফুটবল দলকে বলা হতো ম্যাজিকাল ম্যাগিয়ার্স বা গোল্ডেন টিম। পুসকাস-ককসিচের সেই দলের গোলরক্ষক ছিলেন জিউলা গ্রোসিকস। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার গ্রোসিকসকে ডাকা হতো ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ বলে। গ্লাভসজোড়া হাতে নিয়ে চার বছর এবং ৩৩টি ম্যাচে হাঙ্গেরিকে অপরাজিত রেখেছিলেন। দলের প্রয়োজনে খেলতেন রক্ষণভাগেও।
তর্কযোগ্যভাবে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক উদালদো ফিলোল দাপটের সঙ্গে ক্লাব ফুটবল খেলেছেন দুই দশক। ৬ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার ফিলোল এক দশকেরও বেশি সময় সামলেছেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের গোলপোস্ট। ১৯৭৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপজয়ী ফিলোল খেলেছেন এর আগে ও পরের দুটি বিশ্বকাপেও। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে তাঁর হাতেই ওঠে টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার। দ্বিতীয় রাউন্ডের তিন ম্যাচে একবারও বল জালে জড়াতে দেননি। উল্টো ঠেকিয়ে দেন পোল্যান্ডের পেনাল্টি। আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবলে এক মৌসুমেই ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন ছয়টি পেনাল্টি!
খর্বাকৃতি সফল গোলরক্ষকদের গল্পের শেষটা করা যায় রেনে হিগুইতাকে দিয়ে। নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লম্বা কোঁকড়ানো চুলের ব্যতিক্রমী এক গোলরক্ষকের ছবি। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার এই কলম্বিয়ান গোলরক্ষক প্রায়ই গোলপোস্ট ছেড়ে উঠে যেতেন ওপরে। খেয়ালি স্বভাবের কারণেই কিনা, ডাকনাম ছিল ‘এল লোকো’ অর্থাৎ ‘পাগল’। প্রতিপক্ষের বিপৎসীমায় ফ্রি-কিক পেলেই উঠে গিয়ে কিক নিতেন। ৬৮ ম্যাচ খেলে গোলও করেছেন ৮টি। এই ‘একের ভেতরে দুই’ ভূমিকাই তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে বিশ্বের সেরা সব গোলরক্ষকের তালিকায়।
ফিফাডটকম অবলম্বনে খলিলুর রহমান
No comments