বল্গাহীন উক্তি জাতিকে নেতিবাচক সংস্কৃতির দীক্ষা দিচ্ছে by মাহমুদুর রহমান মান্না
গড়াতে গড়াতে দিন ২০১৩ সালকে ছুঁয়েছে। এটা এমন এক সময়, যখন সালতামামি হয়, আর তারই আলোকে দৃষ্টি মেলে দিতে হয় সামনের দিকে। আজকাল প্রায়ই শোনা যায়, বাংলাদেশ এক অপার সম্ভাবনার দেশ।
গার্ডিয়ান লিখেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাবে। আর ইউরোপে দীর্ঘকাল বসবাসকারী এক বাঙালি অর্থনীতিবিদ রসিকতা করে আমাকে বললেন, ওই দেশে একটা কথা খুব চালু আছে, তা হলো- ৫০ বছর ধরে এই দেশ এখনো একটা অপার সম্ভাবনার দেশ রূপেই আছে। আমি অর্থনীতির ওপর লিখতে বসিনি। হঠাৎ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউ কেউ একটা পরনির্ভর লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন। দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এক বক্তব্য থেকে এ রকম ব্যাপারটি ঘটেছে। তিনি বলেছিলেন, শিগগিরই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী আওয়ামী লীগ এবং ইতিমধ্যে এ ধরনের আলোচনা তলে তলে চলছে উভয় পক্ষের।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একজন ভদ্রলোক বলে পরিচিত। এ পর্যন্ত তাঁর নামে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। সৌভাগ্যবান মানুষ তিনি, যিনি তেমন বড় মাপের রাজনৈতিক কিছু না করেও এমনকি আনুগত্য প্রদর্শনেও তিনি আন্তরিকতা দেখানোর চেষ্টা করেননি, পরপর দুবার আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরসহ এই মাপের আরো তিন-চারজন নেতা থাকা সত্ত্বেও কেউ তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী পর্যন্ত হননি (অকুণ্ঠ অখণ্ড সমর্থন তাঁর প্রতি)। সেই মানুষ দায়িত্ব পাওয়ার পরে যাই বলেন তা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন সবাই। কিন্তু আশরাফ সাহেব এ কথা বলার পরদিনই সংসদীয় বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া একে মিথ্যা বলে কড়া মন্তব্য করলেন। তিনি বললেন, কারো সঙ্গে কথা হলে তো আমি জানতাম। তার পরও আওয়ামী লীগ যখন এ দাবি করছে, তার মানে আওয়ামী লীগ তলে তলে আমার লোকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। বলাই বাহুল্য, সৈয়দ আশরাফ কিংবা আওয়ামী লীগের অন্য কেউ খালেদা জিয়ার এ কথার প্রতিবাদ করেননি।
এমনিতে আওয়ামী লীগ একটি বাকপটু রাজনৈতিক সংগঠন। এ দলের নেতারা যেরকম কথা বলতে পারেন, বক্তৃতা করতে পারেন, স্লোগান দিতে পারেন, রাজপথে লড়াই করতে পারেন, অন্য কেউ সে রকম পারেন না। এই দলের নেতা-নেত্রীরা অন্য কারো কথা মাটিতেও পড়তে দেন না, তার আগেই তার জবাব দিয়ে দেন।
কয়েক দিন আগে আকবর আলি খান যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা হলো : আওয়ামী লীগ বিএনপির ৩৬ জন আইনপ্রণেতার মধ্য থেকে পাঁচজনকে বাছাই করতে পারে। আর বিএনপি প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের ২৭৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্য থেকে পাঁচজনকে বাছাই করতে পারে। দ্বিতীয় প্রস্তাব : রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে পরামর্শ দিতে পারেন, যেমনটা ১৯৯৬ সালে করা হয়েছিল। তৃতীয় প্রস্তাব : বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ১০ জন নিরপেক্ষ লোকের নাম দিতে পারে। তাদের দেওয়া নাম থেকে জাতীয় সংসদ পাঁচজনকে নির্বাচন করতে পারে। তাঁরা সবাই মিলে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করতে পারেন, অথবা লটারির মাধ্যমেও নির্বাচিত হতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা। চতুর্থ প্রস্তাব : আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিএনপি একটি পরিকল্পনা দিতে পারে। ওই প্রস্তাবের ওপর পরে গণভোট হতে পারে। ২ জানুয়ারি বাংলাভিশনের টক শো 'ফ্রন্ট লাইনে' অতিথি হিসেবে ড. আকবর আলি খান বলেছেন, তিনি আগে থেকে ভেবেচিন্তে রেডি করে এরকম প্রস্তাব পেশ করেননি। যেহেতু সেটা একটা গোলটেবিল বৈঠক ছিল, সিএফএস আয়োজিত এই গোলটেবিলের আলোচ্য বিষয় ছিল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর বাংলাদেশের সামনে বিকল্পগুলো, অন্যরাও মত দিয়েছিলেন, আমিও আলোচনাক্রমে আমার প্রস্তাবগুলো পেশ করেছিলাম।
পাঠকবৃন্দ আকবর আলি খানের প্রস্তাবিত ফর্মুলার বিশদ আলোচনায় আমি যাব না। কিন্তু ২ ও ৩ নম্বর প্রস্তাব দুটি যদি আপনারা খেয়াল করেন, তাহলে লক্ষ করবেন, প্রস্তাব দুটি অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের রূপরেখা, যা আওয়ামী লীগের চিন্তা বা কথার সঙ্গে সাযুজ্য রাখে। এর আগে প্রামাণ্যভাবে না হলেও আওয়ামী লীগের কোনো কোনো মহল থেকে এ কথাগুলো শোনা গেছে। আকবর আলি খান একটি মৌলিক ভিন্নতা যোগ করেছেন তা হলো, প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের পক্ষে নাম প্রস্তাব করবে বিএনপি, আর বিএনপির পক্ষে প্রস্তাব করবে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্যর্থ লোকদের প্রদত্ত ফর্মুলা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ চলবে না। আওয়ামী লীগ চলবে তার নিজস্ব চিন্তার ভিত্তিতে। প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, মোটা মানুষদের বুদ্ধিতে দেশ চলবে না। এরা দল গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইতিহাস বলে তাঁরা আসলেই ব্যর্থ কি না...
তাঁরা এভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গেলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারত কি না সন্দেহ ছিল।
কিছুদিন আগে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন দেশের বর্তমান অবস্থায় হতাশা ব্যক্ত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর পর এই দুই নেতা ঢাকার বাইরে দুই-তিনটি বড় জনসভা করেছেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী মোটা লোক বলতে কাদের বুঝিয়েছেন তা জানি না। তবে এই দুজনের মধ্যে একজন মোটা এবং দুজনই মূল দল থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করেছেন, কিন্তু সেই দল দুটির কোনোটিই কোনো শক্তিশালী দল নয়। হাসি-খুশি সদালাপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ড. কামালকে রাজনীতির উচ্ছিষ্ট বলে তখন আখ্যায়িত করেছিলেন।
আমরা জনাব আশরাফুল ইসলামের কথায় আবার ফিরে আসি। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে। তাঁর এ কথার মূল্য বা বিশ্বাসযোগ্যতা কতখানি।
সংলাপ মানেই কেবল বসাবসি নয়। কেবল লোক দেখানো বৈঠক বা কথাবার্তা নয়। একটা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে পারস্পরিক মতবিনিময় করা, যার মধ্যদিয়ে নিষ্পত্তিমূলক কিছু বের করে আনা যায়। সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন কি আমরা কোথাও দেখতে পাচ্ছি? ড. ইউনূস বহু আগে বর্জিত, এর আগে ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে উনি কার খালু। ড. কামাল মোটা ও উচ্ছিষ্ট। এখন ড. আকবর আলি খানের মতো একজন ননপার্টি বোদ্ধা মানুষকে ব্যর্থ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে। আশরাফ বা আওয়ামী লীগ সংলাপে বসতে চাচ্ছে কেন- অন্যের মতামত শোনা এবং তাঁকে জায়গা দেওয়া। সেই দৃষ্টিভঙ্গি কি দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে? দলের সভানেত্রী তো বলেই দিয়েছেন, 'নিজের মতো করে আওয়ামী লীগ ...'
প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেছিলেন, 'আমাদের দেশে সেই পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত সংলাপে কোনো ভালো ফল পাওয়া যায়নি। অথচ সারা বিশ্বেই সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছে।'
(কয়েক দিন আগে) ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসংযোগকালে খালেদা জিয়া বলেছেন, সাপকেও বিশ্বাস করা যায়, আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না। খালেদা জিয়া কি সাপের চেয়েও ভয়ংকর প্রাণীর সঙ্গে বসবেন?
পাঠকবৃন্দ আমি সংলাপের বিরুদ্ধে নই। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে এবং সেজন্য সংলাপ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু যারা সংলাপ করবেন, আগে তাদের মাথা পরিষ্কার করতে হবে। কেবল জেতার জন্য কোনো সংলাপ হতে পারে না।
দুই নেত্রীকে বলি, আপনাদের বচসা সংযত করুন। আপনাদের বল্গাহীন উক্তি সমগ্র জাতিকে একটা নেতিবাচক সংস্কৃতির দীক্ষা দিচ্ছে। আমরা একজন আরেকজনের প্রতিপক্ষ, কিন্তু শত্রু নই।
লেখক : রাজনীতিক, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক
mrmanna51@yahoo.com
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একজন ভদ্রলোক বলে পরিচিত। এ পর্যন্ত তাঁর নামে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। সৌভাগ্যবান মানুষ তিনি, যিনি তেমন বড় মাপের রাজনৈতিক কিছু না করেও এমনকি আনুগত্য প্রদর্শনেও তিনি আন্তরিকতা দেখানোর চেষ্টা করেননি, পরপর দুবার আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরসহ এই মাপের আরো তিন-চারজন নেতা থাকা সত্ত্বেও কেউ তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী পর্যন্ত হননি (অকুণ্ঠ অখণ্ড সমর্থন তাঁর প্রতি)। সেই মানুষ দায়িত্ব পাওয়ার পরে যাই বলেন তা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন সবাই। কিন্তু আশরাফ সাহেব এ কথা বলার পরদিনই সংসদীয় বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া একে মিথ্যা বলে কড়া মন্তব্য করলেন। তিনি বললেন, কারো সঙ্গে কথা হলে তো আমি জানতাম। তার পরও আওয়ামী লীগ যখন এ দাবি করছে, তার মানে আওয়ামী লীগ তলে তলে আমার লোকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। বলাই বাহুল্য, সৈয়দ আশরাফ কিংবা আওয়ামী লীগের অন্য কেউ খালেদা জিয়ার এ কথার প্রতিবাদ করেননি।
এমনিতে আওয়ামী লীগ একটি বাকপটু রাজনৈতিক সংগঠন। এ দলের নেতারা যেরকম কথা বলতে পারেন, বক্তৃতা করতে পারেন, স্লোগান দিতে পারেন, রাজপথে লড়াই করতে পারেন, অন্য কেউ সে রকম পারেন না। এই দলের নেতা-নেত্রীরা অন্য কারো কথা মাটিতেও পড়তে দেন না, তার আগেই তার জবাব দিয়ে দেন।
কয়েক দিন আগে আকবর আলি খান যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা হলো : আওয়ামী লীগ বিএনপির ৩৬ জন আইনপ্রণেতার মধ্য থেকে পাঁচজনকে বাছাই করতে পারে। আর বিএনপি প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের ২৭৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্য থেকে পাঁচজনকে বাছাই করতে পারে। দ্বিতীয় প্রস্তাব : রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুপ্রিম কোর্টকে পরামর্শ দিতে পারেন, যেমনটা ১৯৯৬ সালে করা হয়েছিল। তৃতীয় প্রস্তাব : বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ১০ জন নিরপেক্ষ লোকের নাম দিতে পারে। তাদের দেওয়া নাম থেকে জাতীয় সংসদ পাঁচজনকে নির্বাচন করতে পারে। তাঁরা সবাই মিলে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করতে পারেন, অথবা লটারির মাধ্যমেও নির্বাচিত হতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা। চতুর্থ প্রস্তাব : আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিএনপি একটি পরিকল্পনা দিতে পারে। ওই প্রস্তাবের ওপর পরে গণভোট হতে পারে। ২ জানুয়ারি বাংলাভিশনের টক শো 'ফ্রন্ট লাইনে' অতিথি হিসেবে ড. আকবর আলি খান বলেছেন, তিনি আগে থেকে ভেবেচিন্তে রেডি করে এরকম প্রস্তাব পেশ করেননি। যেহেতু সেটা একটা গোলটেবিল বৈঠক ছিল, সিএফএস আয়োজিত এই গোলটেবিলের আলোচ্য বিষয় ছিল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর বাংলাদেশের সামনে বিকল্পগুলো, অন্যরাও মত দিয়েছিলেন, আমিও আলোচনাক্রমে আমার প্রস্তাবগুলো পেশ করেছিলাম।
পাঠকবৃন্দ আকবর আলি খানের প্রস্তাবিত ফর্মুলার বিশদ আলোচনায় আমি যাব না। কিন্তু ২ ও ৩ নম্বর প্রস্তাব দুটি যদি আপনারা খেয়াল করেন, তাহলে লক্ষ করবেন, প্রস্তাব দুটি অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকারের রূপরেখা, যা আওয়ামী লীগের চিন্তা বা কথার সঙ্গে সাযুজ্য রাখে। এর আগে প্রামাণ্যভাবে না হলেও আওয়ামী লীগের কোনো কোনো মহল থেকে এ কথাগুলো শোনা গেছে। আকবর আলি খান একটি মৌলিক ভিন্নতা যোগ করেছেন তা হলো, প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের পক্ষে নাম প্রস্তাব করবে বিএনপি, আর বিএনপির পক্ষে প্রস্তাব করবে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্যর্থ লোকদের প্রদত্ত ফর্মুলা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ চলবে না। আওয়ামী লীগ চলবে তার নিজস্ব চিন্তার ভিত্তিতে। প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, মোটা মানুষদের বুদ্ধিতে দেশ চলবে না। এরা দল গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইতিহাস বলে তাঁরা আসলেই ব্যর্থ কি না...
তাঁরা এভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গেলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারত কি না সন্দেহ ছিল।
কিছুদিন আগে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন দেশের বর্তমান অবস্থায় হতাশা ব্যক্ত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর পর এই দুই নেতা ঢাকার বাইরে দুই-তিনটি বড় জনসভা করেছেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী মোটা লোক বলতে কাদের বুঝিয়েছেন তা জানি না। তবে এই দুজনের মধ্যে একজন মোটা এবং দুজনই মূল দল থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠন করেছেন, কিন্তু সেই দল দুটির কোনোটিই কোনো শক্তিশালী দল নয়। হাসি-খুশি সদালাপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ড. কামালকে রাজনীতির উচ্ছিষ্ট বলে তখন আখ্যায়িত করেছিলেন।
আমরা জনাব আশরাফুল ইসলামের কথায় আবার ফিরে আসি। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসবে। তাঁর এ কথার মূল্য বা বিশ্বাসযোগ্যতা কতখানি।
সংলাপ মানেই কেবল বসাবসি নয়। কেবল লোক দেখানো বৈঠক বা কথাবার্তা নয়। একটা সংকট সমাধানের লক্ষ্যে পারস্পরিক মতবিনিময় করা, যার মধ্যদিয়ে নিষ্পত্তিমূলক কিছু বের করে আনা যায়। সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন কি আমরা কোথাও দেখতে পাচ্ছি? ড. ইউনূস বহু আগে বর্জিত, এর আগে ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে উনি কার খালু। ড. কামাল মোটা ও উচ্ছিষ্ট। এখন ড. আকবর আলি খানের মতো একজন ননপার্টি বোদ্ধা মানুষকে ব্যর্থ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে। আশরাফ বা আওয়ামী লীগ সংলাপে বসতে চাচ্ছে কেন- অন্যের মতামত শোনা এবং তাঁকে জায়গা দেওয়া। সেই দৃষ্টিভঙ্গি কি দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে? দলের সভানেত্রী তো বলেই দিয়েছেন, 'নিজের মতো করে আওয়ামী লীগ ...'
প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেছিলেন, 'আমাদের দেশে সেই পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত সংলাপে কোনো ভালো ফল পাওয়া যায়নি। অথচ সারা বিশ্বেই সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছে।'
(কয়েক দিন আগে) ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসংযোগকালে খালেদা জিয়া বলেছেন, সাপকেও বিশ্বাস করা যায়, আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না। খালেদা জিয়া কি সাপের চেয়েও ভয়ংকর প্রাণীর সঙ্গে বসবেন?
পাঠকবৃন্দ আমি সংলাপের বিরুদ্ধে নই। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে এবং সেজন্য সংলাপ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু যারা সংলাপ করবেন, আগে তাদের মাথা পরিষ্কার করতে হবে। কেবল জেতার জন্য কোনো সংলাপ হতে পারে না।
দুই নেত্রীকে বলি, আপনাদের বচসা সংযত করুন। আপনাদের বল্গাহীন উক্তি সমগ্র জাতিকে একটা নেতিবাচক সংস্কৃতির দীক্ষা দিচ্ছে। আমরা একজন আরেকজনের প্রতিপক্ষ, কিন্তু শত্রু নই।
লেখক : রাজনীতিক, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক
mrmanna51@yahoo.com
No comments