হরতাল: আট ঘণ্টার অফিস ১২ ঘণ্টা পার
অফিসের আট ঘণ্টা সময় এখন ১২ ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকেছে। গতকাল বিকেল পাঁচটায় নাজমা আক্তার ছুটির পর মতিঝিলের অগ্রণী ব্যাংক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর সহকর্মী গোলাম আক্তারুজ্জামান ও অন্যদের সঙ্গে। বাসের অপেক্ষায়। বিআইডব্লিউটিএর কর্মী তাঁরা। অফিসের গাড়িতেই যাতায়াত করেন।
তবে সেই গাড়ির সময় বদলেছে, হরতালের বদলে-যাওয়া পরিস্থিতির কারণে। নাজমা আক্তারের বাসা কল্যাণপুরে। সকাল আটটায় সেখান থেকে বাসে উঠতেন। এখন হরতালের জন্য বাস ছাড়ছে সকাল ছয়টায়। আবার ছুটির পর যেখানে বিকেল পাঁচটায় ছিল বাসের সময়, সেখানে বাস আসছে হরতালের মেয়াদ শেষে সন্ধ্যা সাতটায়। সব মিলিয়ে তাঁদের এখন অফিস-সময় দাঁড়িয়েছে ১২ ঘণ্টার ওপর।
বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে নাজমা আক্তার বললেন, ‘দুর্ভোগের চূড়ান্ত।’ নিজের যাতায়াতের সমস্যা তো আছেই, তাঁর বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে মেয়ের পরীক্ষা নিয়ে। মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী, ত্রৈমাসিক পরীক্ষা চলছে। পুরোটা দিন অফিসে যাতায়াত নিয়ে কেটে যাওয়ায় মেয়ের দিকে একটু বাড়তি নজর দেবেন, তা পারছেন না। উপরন্তু হরতালের কারণে বারবার রুটিন পাল্টে যাওয়ায় প্রস্তুতিও ভালো হচ্ছে না। তিনি জানালেন, দিনের পর দিন প্রলম্বিত হরতাল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে গতকাল সোমবার মাসের শেষ কর্মদিবসটিও রাজধানীতে কেটেছে শিথিল হরতালে। যানবাহন চলাচল ছিল কম। পথের পাশ দিয়ে দোকানপাট খোলা ছিল প্রচুর, তবে বিক্রিবাট্টা তেমন হয়নি। শহরে লোকজন বের হয়েছে কম। সন্ধ্যায় টঙ্গী ডাইভারশন রোড, বড় মগবাজারের হার্ডওয়্যার ও রঙের দোকান ক্যাপিটাল পেইন্টসের প্রবীণ ব্যবসায়ী আবদুল হান্নান জানালেন, সারা দিনে মাত্র ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। নিদেনপক্ষে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয়, সেখানে হরতালের দিন এক হাজার টাকাই বিক্রি হয় না। দোকান খোলা আর বন্ধ রাখায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। যেভাবে দিনের পর দিন হরতাল চলছে, তাতে কদিনই-বা আর দোকান বন্ধ রাখবেন! সে কারণেই দোকান খুলে রেখেছেন। তিনি জানালেন, তাঁদের ব্যবসা নির্মাণ ও শ্রমিকসংশ্লিষ্ট। হরতালে শ্রমজীবী লোকেরা যেমন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি তার প্রভাব পড়েছে তাঁদের ব্যবসাতেও। বেচাকেনা বলতে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
ফুটপাতের ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের অবস্থাও বেহাল। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ঘুমটিঘর এলাকার আড়ত থেকে মসুর ডাল, আদা-রসুন এনে দিলকুশার ফুটপাতে বিক্রি করেন লিয়াকত আলী ও রাজ্জাক মাতুব্বর। মাদারীপুরে তাঁদের বাড়ি। ঢাকায় নিবাস ধূপখোলায়। ১০০ কেজির ওপর ডাল বিক্রি হয় প্রতিদিন। কেজিতে চার টাকা লাভ। গতকাল লিয়াকত আলীর বিক্রি ২৫ কেজি। রাজ্জাকের আদা-রসুন বিক্রি তলানিতে। অফিস-ফেরতা চাকুরেরাই তাঁদের প্রধান ক্রেতা। কিন্তু তাঁরা এখন ঘরে ফেরার যানবাহন পাওয়া নিয়েই মুসিবতে। কেনাকাটা করার তাগিদই নেই তাঁদের।
শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাবই নয়, হরতালে জনজীবনের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে সব ক্ষেত্রে। যানবাহনের অপ্রতুলতা ও সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় মানুষের চলাচল কমেছে। এমনকি খুব জরুরি না হলে চিকিৎসা নিতেও আসছে না অনেকে। বারডেম হাসপাতালের বহির্বিভাগে গতকাল বিকেলের পালায় পাঁচটা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। বহির্বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহসেনা বেগম জানালেন, প্রতিদিন বহির্বিভাগে রক্ত পরীক্ষা ও আগাম নেওয়া নির্ধারিত তারিখ অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের জন্য প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী এসে থাকে। হরতালের দিনে রোগীর সংখ্যা একেবারেই কমে যায়। বহির্বিভাগের কর্মীরা জানালেন, শহরতলি বা আরও দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এখানে এসে থাকেন। যানবাহনের সংকটের কারণেই রোগীর সংখ্যা হরতালের দিনে কমে যায়।
বিক্ষুব্ধ কণ্ঠে নাজমা আক্তার বললেন, ‘দুর্ভোগের চূড়ান্ত।’ নিজের যাতায়াতের সমস্যা তো আছেই, তাঁর বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে মেয়ের পরীক্ষা নিয়ে। মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী, ত্রৈমাসিক পরীক্ষা চলছে। পুরোটা দিন অফিসে যাতায়াত নিয়ে কেটে যাওয়ায় মেয়ের দিকে একটু বাড়তি নজর দেবেন, তা পারছেন না। উপরন্তু হরতালের কারণে বারবার রুটিন পাল্টে যাওয়ায় প্রস্তুতিও ভালো হচ্ছে না। তিনি জানালেন, দিনের পর দিন প্রলম্বিত হরতাল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এদিকে গতকাল সোমবার মাসের শেষ কর্মদিবসটিও রাজধানীতে কেটেছে শিথিল হরতালে। যানবাহন চলাচল ছিল কম। পথের পাশ দিয়ে দোকানপাট খোলা ছিল প্রচুর, তবে বিক্রিবাট্টা তেমন হয়নি। শহরে লোকজন বের হয়েছে কম। সন্ধ্যায় টঙ্গী ডাইভারশন রোড, বড় মগবাজারের হার্ডওয়্যার ও রঙের দোকান ক্যাপিটাল পেইন্টসের প্রবীণ ব্যবসায়ী আবদুল হান্নান জানালেন, সারা দিনে মাত্র ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। নিদেনপক্ষে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয়, সেখানে হরতালের দিন এক হাজার টাকাই বিক্রি হয় না। দোকান খোলা আর বন্ধ রাখায় তেমন কোনো পার্থক্য নেই। যেভাবে দিনের পর দিন হরতাল চলছে, তাতে কদিনই-বা আর দোকান বন্ধ রাখবেন! সে কারণেই দোকান খুলে রেখেছেন। তিনি জানালেন, তাঁদের ব্যবসা নির্মাণ ও শ্রমিকসংশ্লিষ্ট। হরতালে শ্রমজীবী লোকেরা যেমন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি তার প্রভাব পড়েছে তাঁদের ব্যবসাতেও। বেচাকেনা বলতে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
ফুটপাতের ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের অবস্থাও বেহাল। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ঘুমটিঘর এলাকার আড়ত থেকে মসুর ডাল, আদা-রসুন এনে দিলকুশার ফুটপাতে বিক্রি করেন লিয়াকত আলী ও রাজ্জাক মাতুব্বর। মাদারীপুরে তাঁদের বাড়ি। ঢাকায় নিবাস ধূপখোলায়। ১০০ কেজির ওপর ডাল বিক্রি হয় প্রতিদিন। কেজিতে চার টাকা লাভ। গতকাল লিয়াকত আলীর বিক্রি ২৫ কেজি। রাজ্জাকের আদা-রসুন বিক্রি তলানিতে। অফিস-ফেরতা চাকুরেরাই তাঁদের প্রধান ক্রেতা। কিন্তু তাঁরা এখন ঘরে ফেরার যানবাহন পাওয়া নিয়েই মুসিবতে। কেনাকাটা করার তাগিদই নেই তাঁদের।
শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাবই নয়, হরতালে জনজীবনের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে সব ক্ষেত্রে। যানবাহনের অপ্রতুলতা ও সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় মানুষের চলাচল কমেছে। এমনকি খুব জরুরি না হলে চিকিৎসা নিতেও আসছে না অনেকে। বারডেম হাসপাতালের বহির্বিভাগে গতকাল বিকেলের পালায় পাঁচটা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। বহির্বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহসেনা বেগম জানালেন, প্রতিদিন বহির্বিভাগে রক্ত পরীক্ষা ও আগাম নেওয়া নির্ধারিত তারিখ অনুসারে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের জন্য প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী এসে থাকে। হরতালের দিনে রোগীর সংখ্যা একেবারেই কমে যায়। বহির্বিভাগের কর্মীরা জানালেন, শহরতলি বা আরও দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এখানে এসে থাকেন। যানবাহনের সংকটের কারণেই রোগীর সংখ্যা হরতালের দিনে কমে যায়।
No comments