বিশেষ সাক্ষাৎকার-সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা তার স্বাধীনতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ by সায়মন ড্রিং
সায়মন ড্রিংয়ের জন্ম ১৯৪৫ সালে, ইংল্যান্ডের নরফোকে। ১৭ বছর বয়সে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে দক্ষিণ এশিয়া ভ্রমণে বের হন। তারপর ১৯৬৩ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংক ওয়ার্ল্ড পত্রিকার প্রুফ রিডার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। পরবর্তী ৩০ বছর তিনি লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ, ডেইলি মেইল, নিউইয়র্ক টাইমস, সানডে টাইমস, লন্ডন টাইমস, সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও বিবিসি এবং টেলিভিশন ও রেডিওর জন্য কাজ করেন।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেরিস্ট্রিয়াল টেলিভিশন স্টেশন একুশে টেলিভিশনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কাজ করেন।
সার্ক চেম্বার আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘লিড ২০১২’-এ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সায়মন ড্রিং সম্প্রতি ঢাকায় এলে তাঁর এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম
প্রথম আলো আপনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে দেখেছেন। যুদ্ধের শুরুতে কয়েক দিন এবং স্বাধীনতার পরও কয়েক মাস আপনি বাংলাদেশে কাটিয়েছেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে বলে আপনার তখন মনে হয়েছিল?
সায়মন ড্রিং আমার বয়স তখন মাত্র ২৭ বছর। একাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলাম কম্বোডিয়ায়। তখন আমার লন্ডনে ফেরার কথা; লন্ডনের হেড অফিস থেকে আমাকে বলা হলো, পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভীষণ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, বেশ বড় ধরনের রাজনৈতিক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তোমার এখন পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়া উচিত। সত্যি বলতে, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা তখন ছিল না। আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছিলাম ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া অঞ্চলে। কিন্তু আমি ঢাকায় এলাম। একাত্তরের ৬ মার্চ আমি ঢাকায় পৌঁছালাম। ঠিক তার পরের দিনই রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিব সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি দিলেন। আমি সেই জনসভার মঞ্চে একদম পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি এক হরফ বাংলা ভাষা জানি না; কিন্তু বিপুল জনসমাবেশ আর মুজিবের ভাষণের প্রতি তাদের যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করলাম, তাতে আমার মনে হলো বিশাল একটা ব্যাপার এ দেশে ঘটছে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার জন্য সেটা ছিল খুবই ভালো একটা পরিচয়মূলক ঘটনা (ইন্ট্রোডাকশন)। তার পরের ঘটনাগুলো তো আমার চোখের সামনেই ঘটতে থাকল।
প্রথম আলো পঁচিশে মার্চের রাতেও তো আপনি ঢাকাতেই ছিলেন?
সায়মন ড্রিং হ্যাঁ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আমরা বিদেশি সাংবাদিকেরা লুকিয়ে ছিলাম। জানালা দিয়ে দেখেছি পাকিস্তানি বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের ধ্বংসযজ্ঞ। পরদিন পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ সব বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করে। ট্রাক বোঝাই করে সবাইকে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়ে বিমানে তুলে দেয়। কিন্তু আমি আর মিশেল নামের এক ফরাসি ফটোসাংবাদিক হোটেলেই লুকিয়ে থেকে গিয়েছিলাম। ২৭ মার্চ সকালে কারফিউ উঠে গেলে হোটেলের লোকজনের সহায়তায় অনেকটা ছদ্মবেশে মাথা-মুখ ঢেকে গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকা দেখতে, যেখানে যেখানে গণহত্যা চালানো হয়েছে। ২৯ মার্চ মিশেল আর আমি ঢাকা ছেড়ে চলে যাই। আমি ব্যাংককে গিয়ে টেলিগ্রাফ-এর জন্য একটা প্রতিবেদন পাঠাই। সেটা ৩০ মার্চ ছাপা হয়। ঢাকার হত্যাযজ্ঞের বিবরণ ছিল সেই প্রতিবেদনে।
প্রথম আলো তারপর মুক্তিযুদ্ধের বাকিটা সময় আপনি কি লন্ডন থেকেই খবর সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলেন?
সায়মন ড্রিং আমি আবার ফিরে আসতে চেয়েছিলাম। টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম, আমি কলকাতায় যেতে চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকে যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে চাই। কিন্তু তারা গড়িমসি করতে থাকে। কারণ, তখন দিল্লিতে টেলিগ্রাফ-এর একজন প্রতিনিধি ছিলেন, তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধ সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু আমি ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিলাম যে আমি প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধের শুরুটা দেখে এসেছি, আমি আবার যেতে চাই। তারা আমাকে আশ্বাস দিতে থাকে, কিন্তু অনুমতি দেয় না। শেষে বিরক্ত হয়ে আমি টেলিগ্রাফ-এর চাকরি ছেড়ে দিয়ে নভেম্বর মাসে কলকাতায় চলে আসি। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে সানডে টাইমস, টাইমসসহ লন্ডনের আরও কয়েকটি পত্রিকার জন্য কাজ শুরু করি।
প্রথম আলো তারপর?
সায়মন ড্রিং ১৬ ডিসেম্বর আমি মিত্রবাহিনীর ট্যাংকে চড়ে মুক্ত ঢাকায় প্রবেশ করি। বিজয়ের আনন্দে উল্লসিত মানুষ দেখেছি, সেই আনন্দে নিজেও অংশ নিয়েছি। বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিব যখন স্বদেশে ফেরেন, তখন বিমানবন্দর থেকে তাঁকে বহনকারী সেই ট্রাকে আমিও ছিলাম। ১৯৭২ সালের জুন মাস পর্যন্ত আমি ঢাকায় ছিলাম। আপনি জানতে চেয়েছেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে বলে আমার সে সময় মনে হয়েছিল। আমার মনে হয়, মার্চের দিনগুলোতে এ ধরনের কোনো ভাবনা আমার মাথায় আসেনি; বিজয় অর্জনের পরের মুহূর্তগুলোতেও এ বিষয়ে ভাবার কোনো অবকাশ ছিল না। বিজয়ের ভীষণ উত্তেজনা, দারুণ উল্লাস, ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনার আত্মসমর্পণ, অভূতপূর্ব দৃশ্য চারদিকে। তারপর মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, সেটার আনন্দ-উল্লাস। এ রকম পরিস্থিতিতে ধীরস্থিরভাবে চিন্তা করা, সামনে কী হবে সেই সম্পর্কে ভাবার অবকাশ ছিল না। শুধু এটুকুই সে মুহূর্তের সত্য যে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়েছে, বাংলাদেশ এখন মুক্ত ও স্বাধীন একটি দেশ, তার জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছে। সামনে কী সমস্যা, কত কাজ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে ভাবারও অবকাশ তখন ছিল না।
প্রথম আলো আপনি কি সে সময় ভাবতে পেরেছিলেন যে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট অনেক বদলে যেতে পারে? বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে খুন হয়ে যাওয়া—এটা বাহাত্তর সালে ঘুণাক্ষরেও ভাবা গিয়েছিল?
সায়মন ড্রিং পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময় অনেক যুদ্ধ, বিপ্লব ও বৈপ্লবিক পরিস্থিতি আমি খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। বিপ্লব ও যুদ্ধে বিজয়ের পর নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। অনেক মানুষের মধ্যে অনেক প্রত্যাশা জাগে; সবাই নিজ নিজ অবদানের পুরস্কার প্রত্যাশা করে। ক্ষমতাবলয়ের মধ্যে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব-বিরোধ দেখা দেয়। বাংলাদেশেও সেই ধরনের সমস্যা ছিল, কিন্তু সেগুলো ভবিষ্যতে কত গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আমি কল্পনাও করতে পারিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যা ঘটেছে, সে ধরনের ঘটনা এখানে ঘটতে পারে।
প্রথম আলো ১৯৯৯ সালে আপনি আবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ দেশের প্রথম বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টিভির উদ্যোক্তাদের একজন আপনি। কিন্তু ২০০১ সালে রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের পর একুশে টিভি বন্ধ হয়ে যায়, আপনাকে এই দেশ থেকে এক প্রকার বিতাড়িত করা হয়। কেন?
সায়মন ড্রিং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মনে হয়েছিল আমরা আওয়ামী লীগপন্থী। আমরা যেহেতু লাইসেন্স পেয়েছি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, তাই বিএনপি ভেবেছে আমরা অবশ্যই আওয়ামী লীগপন্থী। কিন্তু আমরা একুশে টিভিতে যা করছিলাম, তা কোনো পার্টিজান জার্নালিজম ছিল না; পেশাদারির সঙ্গেই আমরা সাংবাদিকতা করছিলাম। সে কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে একুশে টিভি সারা দেশে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিটিভির রাজস্ব আশঙ্কাভাবে কমে গিয়েছিল। একুশে টিভি ছিল টেরিস্ট্রিয়াল টিভি, সারা দেশের মানুষ একুশে টিভি দেখতে পেত। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ কখনো ভাবতেও পারত না, টিভিতে তাদের কথা বলা হবে, তাদের ছবি দেখা যাবে, কণ্ঠস্বর শোনা যাবে টেলিভিশনের পর্দায়। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে সেই কাজটি করেছিল। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জাতীয়ভাবে তুলে এনেছিল। সাধারণ মানুষ টিভির পর্দায় নিজেদের দেখতে পাচ্ছিল, নিজেরা কথা বলতে পারছিল। এটা একটা বিরাট ব্যাপার। এভাবে বাংলাদেশে সম্প্রচার সাংবাদিকতায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়েছিল একুশে টিভির মাধ্যমে। তৃতীয়ত, একুশে টিভি ব্যবসায়িকভাবে অত্যন্ত সফল হয়েছিল, প্রচুর বিজ্ঞাপন পাচ্ছিল, বিটিভির একচেটিয়া ব্যবসার বিপরীতে বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রথম আলো বাংলাদেশে এখন অনেকগুলো বেসরকারি টিভি চ্যানেল কাজ করছে। এখানকার সম্প্রচারমাধ্যমের বিকাশ কেমন হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
সায়মন ড্রিং এ দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা খুব বেশি, কিন্তু বিজ্ঞাপনের বাজার ছোট। এর ফলে অনুষ্ঠানের মান বাড়েনি, বরং কমে গিয়েছে। কিছু লোক টাকার মালিক হয়েছেন, তাঁর মনে হলো আমার একটা টিভি চ্যানেল দরকার, তিনি টিভি চ্যানেল খুলে বসলেন। কিন্তু কীভাবে চলবে সেই চ্যানেল, সেটা তো ভাবতে হবে। কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, কেউ করপোরেট উদ্দেশ্যে, কেউ নিজেকে দেখানোর উদ্দেশ্যে টিভি চ্যানেল খুলছেন। টিভি বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আয় হাস্যকর পর্যায়ে কমে গিয়েছে। এভাবে টিভি স্টেশন চালানো যায় না। তা ছাড়া এটা বিপজ্জনক। কারণ, এতে করে সম্প্রচারমাধ্যমের মূল কর্তব্যগুলো করা হবে না। সম্প্রচারমাধ্যম খুবই প্রভাবসম্পন্ন মাধ্যম। এর কাজ মানুষকে তথ্য দেওয়া, শিক্ষিত করে তোলা এবং তার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন দেওয়া। এবং এই মাধ্যমকে হতে হয় দায়িত্বশীল। তথ্যপ্রচারে অতিরঞ্জন, অহেতুক চাঞ্চল্য সৃষ্টির চেষ্টা করা—এই প্রবণতা দেখা দেয় যখন টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা বাড়ে। গুণগত মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে সস্তা ও নিম্ন রুচির বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকলে সম্প্রচারমাধ্যমের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।
প্রথম আলো সম্প্রচারমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা, সুরুচি ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করা যায় কীভাবে?
সায়মন ড্রিং আমার মনে হয়, অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও একটা সম্প্রচার কমিশন প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যারা এই মাধ্যমের আচরণবিধি তৈরি করবে এবং সম্প্রচারমাধ্যমকে সেগুলো মেনে চলতে উৎসাহিত করবে।
প্রথম আলো এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিছু করতে গেলেই নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো বড় হয়ে ওঠে। সংবাদমাধ্যমের রেগুলেশনের কথা বলা হলে বলা হয় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।
সায়মন ড্রিং সেভাবে দেখলে চলবে না, সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা তার স্বাধীনতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্প্রচারমাধ্যমের দায়িত্বশীলতার অভাবে ১০ সেকেন্ডে একজন মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বিরাট নেতিবাচক ঘটনা ঘটে যেতে পারে, অনেক মানুষের অনেক ক্ষতি হতে পারে। সম্প্রচার কমিশনের কাজ নিয়ন্ত্রণ বা সেন্সরশিপ আরোপ করা নয়, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা। কমিশন সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য একটা ‘গাইডলাইন’ তৈরি করে দেবে; সব টিভি চ্যানেল সেই গাইডলাইন মেনে কাজ করার চেষ্টা করবে। এর মানে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা নয়। তা ছাড়া এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত, কোনো অনুষ্ঠান বা সংবাদ কোনো দর্শকের কাছে আপত্তিকর মনে হলে তিনি যেন সম্প্রচার কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন, বলতে পারেন: এই অনুষ্ঠান অশ্লীল, এই তথ্যটি ভুল ইত্যাদি, যেন কমিশন তাঁর অভিযোগের সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে তদন্ত করতে পারে। নির্বাচনের আগে সম্প্রচার কমিশন সম্প্রচারমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের জন্য বিশেষ গাইডলাইন তৈরি করে দিতে পারে, যাতে পক্ষপাতহীন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা নিশ্চিত হয়।
প্রথম আলো মুদ্রণমাধ্যমসহ পুরো সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
সায়মন ড্রিং বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম এখন অনেক স্বাধীন। এখন প্রয়োজন ব্যবস্থাপনার মান বাড়ানো এবং পেশাগত প্রশিক্ষণের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া। সাংবাদিকতার গুণগত মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ দুটো অত্যন্ত জরুরি।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সায়মন ড্রিং আপনাকেও ধন্যবাদ।
সার্ক চেম্বার আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘লিড ২০১২’-এ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সায়মন ড্রিং সম্প্রতি ঢাকায় এলে তাঁর এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম
প্রথম আলো আপনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে দেখেছেন। যুদ্ধের শুরুতে কয়েক দিন এবং স্বাধীনতার পরও কয়েক মাস আপনি বাংলাদেশে কাটিয়েছেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে বলে আপনার তখন মনে হয়েছিল?
সায়মন ড্রিং আমার বয়স তখন মাত্র ২৭ বছর। একাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলাম কম্বোডিয়ায়। তখন আমার লন্ডনে ফেরার কথা; লন্ডনের হেড অফিস থেকে আমাকে বলা হলো, পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভীষণ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, বেশ বড় ধরনের রাজনৈতিক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তোমার এখন পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়া উচিত। সত্যি বলতে, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা তখন ছিল না। আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছিলাম ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া অঞ্চলে। কিন্তু আমি ঢাকায় এলাম। একাত্তরের ৬ মার্চ আমি ঢাকায় পৌঁছালাম। ঠিক তার পরের দিনই রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিব সেই ঐতিহাসিক ভাষণটি দিলেন। আমি সেই জনসভার মঞ্চে একদম পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি এক হরফ বাংলা ভাষা জানি না; কিন্তু বিপুল জনসমাবেশ আর মুজিবের ভাষণের প্রতি তাদের যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করলাম, তাতে আমার মনে হলো বিশাল একটা ব্যাপার এ দেশে ঘটছে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার জন্য সেটা ছিল খুবই ভালো একটা পরিচয়মূলক ঘটনা (ইন্ট্রোডাকশন)। তার পরের ঘটনাগুলো তো আমার চোখের সামনেই ঘটতে থাকল।
প্রথম আলো পঁচিশে মার্চের রাতেও তো আপনি ঢাকাতেই ছিলেন?
সায়মন ড্রিং হ্যাঁ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আমরা বিদেশি সাংবাদিকেরা লুকিয়ে ছিলাম। জানালা দিয়ে দেখেছি পাকিস্তানি বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের ধ্বংসযজ্ঞ। পরদিন পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ সব বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করে। ট্রাক বোঝাই করে সবাইকে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়ে বিমানে তুলে দেয়। কিন্তু আমি আর মিশেল নামের এক ফরাসি ফটোসাংবাদিক হোটেলেই লুকিয়ে থেকে গিয়েছিলাম। ২৭ মার্চ সকালে কারফিউ উঠে গেলে হোটেলের লোকজনের সহায়তায় অনেকটা ছদ্মবেশে মাথা-মুখ ঢেকে গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরান ঢাকার কিছু এলাকা দেখতে, যেখানে যেখানে গণহত্যা চালানো হয়েছে। ২৯ মার্চ মিশেল আর আমি ঢাকা ছেড়ে চলে যাই। আমি ব্যাংককে গিয়ে টেলিগ্রাফ-এর জন্য একটা প্রতিবেদন পাঠাই। সেটা ৩০ মার্চ ছাপা হয়। ঢাকার হত্যাযজ্ঞের বিবরণ ছিল সেই প্রতিবেদনে।
প্রথম আলো তারপর মুক্তিযুদ্ধের বাকিটা সময় আপনি কি লন্ডন থেকেই খবর সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলেন?
সায়মন ড্রিং আমি আবার ফিরে আসতে চেয়েছিলাম। টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম, আমি কলকাতায় যেতে চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকে যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে চাই। কিন্তু তারা গড়িমসি করতে থাকে। কারণ, তখন দিল্লিতে টেলিগ্রাফ-এর একজন প্রতিনিধি ছিলেন, তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধ সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু আমি ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিলাম যে আমি প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধের শুরুটা দেখে এসেছি, আমি আবার যেতে চাই। তারা আমাকে আশ্বাস দিতে থাকে, কিন্তু অনুমতি দেয় না। শেষে বিরক্ত হয়ে আমি টেলিগ্রাফ-এর চাকরি ছেড়ে দিয়ে নভেম্বর মাসে কলকাতায় চলে আসি। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে সানডে টাইমস, টাইমসসহ লন্ডনের আরও কয়েকটি পত্রিকার জন্য কাজ শুরু করি।
প্রথম আলো তারপর?
সায়মন ড্রিং ১৬ ডিসেম্বর আমি মিত্রবাহিনীর ট্যাংকে চড়ে মুক্ত ঢাকায় প্রবেশ করি। বিজয়ের আনন্দে উল্লসিত মানুষ দেখেছি, সেই আনন্দে নিজেও অংশ নিয়েছি। বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিব যখন স্বদেশে ফেরেন, তখন বিমানবন্দর থেকে তাঁকে বহনকারী সেই ট্রাকে আমিও ছিলাম। ১৯৭২ সালের জুন মাস পর্যন্ত আমি ঢাকায় ছিলাম। আপনি জানতে চেয়েছেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে বলে আমার সে সময় মনে হয়েছিল। আমার মনে হয়, মার্চের দিনগুলোতে এ ধরনের কোনো ভাবনা আমার মাথায় আসেনি; বিজয় অর্জনের পরের মুহূর্তগুলোতেও এ বিষয়ে ভাবার কোনো অবকাশ ছিল না। বিজয়ের ভীষণ উত্তেজনা, দারুণ উল্লাস, ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনার আত্মসমর্পণ, অভূতপূর্ব দৃশ্য চারদিকে। তারপর মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, সেটার আনন্দ-উল্লাস। এ রকম পরিস্থিতিতে ধীরস্থিরভাবে চিন্তা করা, সামনে কী হবে সেই সম্পর্কে ভাবার অবকাশ ছিল না। শুধু এটুকুই সে মুহূর্তের সত্য যে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়েছে, বাংলাদেশ এখন মুক্ত ও স্বাধীন একটি দেশ, তার জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছে। সামনে কী সমস্যা, কত কাজ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে ভাবারও অবকাশ তখন ছিল না।
প্রথম আলো আপনি কি সে সময় ভাবতে পেরেছিলেন যে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট অনেক বদলে যেতে পারে? বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে খুন হয়ে যাওয়া—এটা বাহাত্তর সালে ঘুণাক্ষরেও ভাবা গিয়েছিল?
সায়মন ড্রিং পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সময় অনেক যুদ্ধ, বিপ্লব ও বৈপ্লবিক পরিস্থিতি আমি খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। বিপ্লব ও যুদ্ধে বিজয়ের পর নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। অনেক মানুষের মধ্যে অনেক প্রত্যাশা জাগে; সবাই নিজ নিজ অবদানের পুরস্কার প্রত্যাশা করে। ক্ষমতাবলয়ের মধ্যে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব-বিরোধ দেখা দেয়। বাংলাদেশেও সেই ধরনের সমস্যা ছিল, কিন্তু সেগুলো ভবিষ্যতে কত গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আমি কল্পনাও করতে পারিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যা ঘটেছে, সে ধরনের ঘটনা এখানে ঘটতে পারে।
প্রথম আলো ১৯৯৯ সালে আপনি আবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। এ দেশের প্রথম বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টিভির উদ্যোক্তাদের একজন আপনি। কিন্তু ২০০১ সালে রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনের পর একুশে টিভি বন্ধ হয়ে যায়, আপনাকে এই দেশ থেকে এক প্রকার বিতাড়িত করা হয়। কেন?
সায়মন ড্রিং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মনে হয়েছিল আমরা আওয়ামী লীগপন্থী। আমরা যেহেতু লাইসেন্স পেয়েছি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, তাই বিএনপি ভেবেছে আমরা অবশ্যই আওয়ামী লীগপন্থী। কিন্তু আমরা একুশে টিভিতে যা করছিলাম, তা কোনো পার্টিজান জার্নালিজম ছিল না; পেশাদারির সঙ্গেই আমরা সাংবাদিকতা করছিলাম। সে কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে একুশে টিভি সারা দেশে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিটিভির রাজস্ব আশঙ্কাভাবে কমে গিয়েছিল। একুশে টিভি ছিল টেরিস্ট্রিয়াল টিভি, সারা দেশের মানুষ একুশে টিভি দেখতে পেত। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ কখনো ভাবতেও পারত না, টিভিতে তাদের কথা বলা হবে, তাদের ছবি দেখা যাবে, কণ্ঠস্বর শোনা যাবে টেলিভিশনের পর্দায়। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে সেই কাজটি করেছিল। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর জাতীয়ভাবে তুলে এনেছিল। সাধারণ মানুষ টিভির পর্দায় নিজেদের দেখতে পাচ্ছিল, নিজেরা কথা বলতে পারছিল। এটা একটা বিরাট ব্যাপার। এভাবে বাংলাদেশে সম্প্রচার সাংবাদিকতায় একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়েছিল একুশে টিভির মাধ্যমে। তৃতীয়ত, একুশে টিভি ব্যবসায়িকভাবে অত্যন্ত সফল হয়েছিল, প্রচুর বিজ্ঞাপন পাচ্ছিল, বিটিভির একচেটিয়া ব্যবসার বিপরীতে বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
প্রথম আলো বাংলাদেশে এখন অনেকগুলো বেসরকারি টিভি চ্যানেল কাজ করছে। এখানকার সম্প্রচারমাধ্যমের বিকাশ কেমন হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
সায়মন ড্রিং এ দেশে টিভি চ্যানেলের সংখ্যা খুব বেশি, কিন্তু বিজ্ঞাপনের বাজার ছোট। এর ফলে অনুষ্ঠানের মান বাড়েনি, বরং কমে গিয়েছে। কিছু লোক টাকার মালিক হয়েছেন, তাঁর মনে হলো আমার একটা টিভি চ্যানেল দরকার, তিনি টিভি চ্যানেল খুলে বসলেন। কিন্তু কীভাবে চলবে সেই চ্যানেল, সেটা তো ভাবতে হবে। কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, কেউ করপোরেট উদ্দেশ্যে, কেউ নিজেকে দেখানোর উদ্দেশ্যে টিভি চ্যানেল খুলছেন। টিভি বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আয় হাস্যকর পর্যায়ে কমে গিয়েছে। এভাবে টিভি স্টেশন চালানো যায় না। তা ছাড়া এটা বিপজ্জনক। কারণ, এতে করে সম্প্রচারমাধ্যমের মূল কর্তব্যগুলো করা হবে না। সম্প্রচারমাধ্যম খুবই প্রভাবসম্পন্ন মাধ্যম। এর কাজ মানুষকে তথ্য দেওয়া, শিক্ষিত করে তোলা এবং তার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন দেওয়া। এবং এই মাধ্যমকে হতে হয় দায়িত্বশীল। তথ্যপ্রচারে অতিরঞ্জন, অহেতুক চাঞ্চল্য সৃষ্টির চেষ্টা করা—এই প্রবণতা দেখা দেয় যখন টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা বাড়ে। গুণগত মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে সস্তা ও নিম্ন রুচির বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকলে সম্প্রচারমাধ্যমের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।
প্রথম আলো সম্প্রচারমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা, সুরুচি ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করা যায় কীভাবে?
সায়মন ড্রিং আমার মনে হয়, অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও একটা সম্প্রচার কমিশন প্রতিষ্ঠা করা উচিত, যারা এই মাধ্যমের আচরণবিধি তৈরি করবে এবং সম্প্রচারমাধ্যমকে সেগুলো মেনে চলতে উৎসাহিত করবে।
প্রথম আলো এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিছু করতে গেলেই নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো বড় হয়ে ওঠে। সংবাদমাধ্যমের রেগুলেশনের কথা বলা হলে বলা হয় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।
সায়মন ড্রিং সেভাবে দেখলে চলবে না, সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা তার স্বাধীনতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্প্রচারমাধ্যমের দায়িত্বশীলতার অভাবে ১০ সেকেন্ডে একজন মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বিরাট নেতিবাচক ঘটনা ঘটে যেতে পারে, অনেক মানুষের অনেক ক্ষতি হতে পারে। সম্প্রচার কমিশনের কাজ নিয়ন্ত্রণ বা সেন্সরশিপ আরোপ করা নয়, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা। কমিশন সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য একটা ‘গাইডলাইন’ তৈরি করে দেবে; সব টিভি চ্যানেল সেই গাইডলাইন মেনে কাজ করার চেষ্টা করবে। এর মানে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা নয়। তা ছাড়া এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত, কোনো অনুষ্ঠান বা সংবাদ কোনো দর্শকের কাছে আপত্তিকর মনে হলে তিনি যেন সম্প্রচার কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন, বলতে পারেন: এই অনুষ্ঠান অশ্লীল, এই তথ্যটি ভুল ইত্যাদি, যেন কমিশন তাঁর অভিযোগের সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে তদন্ত করতে পারে। নির্বাচনের আগে সম্প্রচার কমিশন সম্প্রচারমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের জন্য বিশেষ গাইডলাইন তৈরি করে দিতে পারে, যাতে পক্ষপাতহীন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা নিশ্চিত হয়।
প্রথম আলো মুদ্রণমাধ্যমসহ পুরো সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
সায়মন ড্রিং বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম এখন অনেক স্বাধীন। এখন প্রয়োজন ব্যবস্থাপনার মান বাড়ানো এবং পেশাগত প্রশিক্ষণের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া। সাংবাদিকতার গুণগত মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ দুটো অত্যন্ত জরুরি।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সায়মন ড্রিং আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments