রঙ্গব্যঙ্গ-কিংস পার্টির কিং... by মোস্তফা কামাল
হাবলু মিয়ার বড় বাহারি গোঁফ। গোঁফ নিয়ে তিনি নানা গবেষণা করেন। একেক সিজনে একেক স্টাইলের গোঁফ রাখেন। তিনি গোঁফের বড়ই যত্ন করেন। প্রতিদিন সকালে গোঁফে তেল মাখা তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ইদানীং রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে তিনি গোঁফে তেল মাখা শুরু করেন। এখন তাঁর গোঁফ দুই পাশ থেকে বাঁকা হয়ে গরুর শিংয়ের মতো ওপরের দিকে উঠছে। দেখতে বেশ লাগছে। তাঁর এক ভক্ত আছে। তার নাম কালু। সে বড়ই রসিক মানুষ।
অনেক দিন পর কালু হাবলু মিয়ার কাছে এলো। সে বলল, 'লিডার, এবার আপনার গোঁফের প্রশংসা না করে পারছি না। এত চমৎকার গোঁফ কেমন করে বানালেন?'
'আর বলো না। অনেক চিন্তাভাবনা করে গোঁফে তেল দিতে হচ্ছে। খাটাখাটনি যাচ্ছে বেশ।'
'এবারকার গোঁফের অর্থ কী, লিডার?'
'এবার আমি রাজনৈতিক গোঁফ রেখেছি। এবার বুঝে নাও আমি কী করতে যাচ্ছি।'
'হুম, বুঝতে পারছি। আপনি নতুন দল করতে যাচ্ছেন। কিন্তু টাকা কই?'
'আরে, টাকার কোনো চিন্তা নাই। বড় ভাই দেবেন।'
'বড় ভাই কেডা?'
'আছে, তোমার এত জানার দরকার নাই। আমার লোকজনরে খবর দাও। নতুন পার্টি করব। গুলশানে পাঁচতারা মার্কা অফিস নিব।'
'লিডার, পাঁচতারা মার্কা এইডা আবার কেমন অফিস?'
'বুঝলা না? আরে মিয়া, ফাইভ স্টার হোটেল আছে না? সে রকম ফাইভ স্টার অফিস আর কি!'
'তাই কন লিডার। কিন্তু গুলশানে অফিস নিতে তো অনেক টাকা লাগব। এত টাকা কোথায় পাইবেন?'
'বললাম না, সব বড় ভাই দিব! চিন্তার কিছু নাই। তুমি শুধু লোক জোগাড় করো।'
'লিডার, আগেরবার তো লোক জোগাড় করে ধরা খাইলাম। এবার সে রকম কিছু ঘটব না তো!'
'আরে রাখো! আগের মতো বারবার ভুল করব নাকি! ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়। বারবার যায় না। আমি এবার আটঘাট বেঁধে নামছি। টাকা-পয়সা কোনো সমস্যা না। তা ছাড়া বড় ভাই যখন আছেন, তখন প্রভাব বিস্তার করাও কোনো সমস্যা না।'
'তাহলে পার্টির নাম কী দিছেন?'
'আমার ভাবসাব দেখে বুঝতে পারো না!'
'আমার কি অত জ্ঞানবুদ্ধি আছে! আমি হইলাম ছাপোসা মানুষ! কন না কী নাম দিছেন?'
'কিংস পার্টি।'
'ওরে বাবা! কিংস পার্টি!'
'কি, নামটা সুন্দর না?'
'সুন্দর মানে! বড়ই সুন্দর নাম।'
'তুমি আমার সঙ্গে থাকো। আমি তোমাকে বড় একটা পদ দিয়ে দিব।'
'কী পদ দিবেন?'
'তুমি যা চাও তা-ই দিয়া দিব।'
'আমি যদি সেই পদের যোগ্য না হই?'
'তাহলেও দিব।'
'কেন?'
'কারণ তুমি আমার নিজের লোক। তুমি আমার সঙ্গে বেইমানি করবা না।'
'লিডার, আমার ওপর আপনার এত আস্থা?'
'আমি যা বলি তা শোনো, যা করতে বলি তা করো। এটাই তো আমি চাই। বেশি যোগ্য লোক তো আমার দরকার নাই। বেশি যোগ্য হলে আমাকে মানবে?'
'ঠিক বলেছেন, লিডার। তবে লিডার, আপনি অনুমতি দিলে একটা প্রশ্ন করব।'
'কী প্রশ্ন কও? তবে সংক্ষেপে করো। বেশি বড় প্রশ্ন এই মুহূর্তে আমার মাথায় ঢুকবে না।'
'আগেরবার পার্টির নাম দিয়েছিলেন জনদরদি পার্টি। এইবার দিলেন কিংস পার্টি, কারণটা কী?'
'গতবারের কনসেপ্ট আর এবারের কনসেপ্ট তো পুরোপুরি আলাদা। এবার আর জনগণের কাছে যাওয়ার দরকার নাই। এবার আমরা সরাসরি ক্ষমতায় বসে যাব। জনগণ, ভোট_ এসবের ধারেকাছে আর নাই! আমার শুধু তোমার মতো কিছু কর্মী দরকার, যারা সারাক্ষণ আমার আশপাশে থাকবে। আমার গুণকীর্তন করবে আর আমি যা বলব, তা সমর্থন দিয়ে যাবে। বুঝতে পারছ?'
'জি। কিন্তু ভোট ছাড়া ক্ষমতায় কিভাবে যাইবেন?'
'দেখো না, ওয়েট অ্যান্ড সি।'
'একটু খুলে বলেন না, লিডার!'
'তুমি কি পত্রপত্রিকা পড়া ছাড়ান দিয়েছ নাকি?'
'কেন?'
'দিনদুনিয়ার খোঁজখবর কিছু রাখো?'
'কেন, কী হয়েছে?'
'থার্ড ফোর্সের নাম শুনেছ?'
'জি, ইদানীং খুব আলোচনা হচ্ছে।'
'আমরা তো তা-ই। কিংস পার্টি নাম কী এমনি এমনি দিয়েছি!'
'তার মানে আপনি কিংস পার্টির কিং! মাশাআল্লাহ! খুব খুশি হইলাম। কিন্তু কেমনে থার্ড ফোর্স আসব? এখন তো কেয়ারটেকারও নাই!'
'ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।'
'ঠিক আছে, আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়া কী লাভ? তয়, দেশ নিয়া খালি চিন্তা লাগে। মন খারাপ হয়।'
'চিন্তার কিছু নাই। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আসছি। সব ঠিক করে ফেলব। বুঝতে পারছ?'
'যেইভাবে আউলাঝাউলা লাইগা আছে, কিভাবে যে ঠিক করবেন বুঝতে পারছি না।'
'অত বোঝার দরকার নাই। তুমি যাও, আমার লোকজনরে খবর দাও।'
কালু চলে যায়। হাবলু মিয়া সোফায় হেলান দিয়ে বসে আবার গোঁফে তেল দিতে শুরু করেন। খাঁটি সরিষার তেল।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
'আর বলো না। অনেক চিন্তাভাবনা করে গোঁফে তেল দিতে হচ্ছে। খাটাখাটনি যাচ্ছে বেশ।'
'এবারকার গোঁফের অর্থ কী, লিডার?'
'এবার আমি রাজনৈতিক গোঁফ রেখেছি। এবার বুঝে নাও আমি কী করতে যাচ্ছি।'
'হুম, বুঝতে পারছি। আপনি নতুন দল করতে যাচ্ছেন। কিন্তু টাকা কই?'
'আরে, টাকার কোনো চিন্তা নাই। বড় ভাই দেবেন।'
'বড় ভাই কেডা?'
'আছে, তোমার এত জানার দরকার নাই। আমার লোকজনরে খবর দাও। নতুন পার্টি করব। গুলশানে পাঁচতারা মার্কা অফিস নিব।'
'লিডার, পাঁচতারা মার্কা এইডা আবার কেমন অফিস?'
'বুঝলা না? আরে মিয়া, ফাইভ স্টার হোটেল আছে না? সে রকম ফাইভ স্টার অফিস আর কি!'
'তাই কন লিডার। কিন্তু গুলশানে অফিস নিতে তো অনেক টাকা লাগব। এত টাকা কোথায় পাইবেন?'
'বললাম না, সব বড় ভাই দিব! চিন্তার কিছু নাই। তুমি শুধু লোক জোগাড় করো।'
'লিডার, আগেরবার তো লোক জোগাড় করে ধরা খাইলাম। এবার সে রকম কিছু ঘটব না তো!'
'আরে রাখো! আগের মতো বারবার ভুল করব নাকি! ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়। বারবার যায় না। আমি এবার আটঘাট বেঁধে নামছি। টাকা-পয়সা কোনো সমস্যা না। তা ছাড়া বড় ভাই যখন আছেন, তখন প্রভাব বিস্তার করাও কোনো সমস্যা না।'
'তাহলে পার্টির নাম কী দিছেন?'
'আমার ভাবসাব দেখে বুঝতে পারো না!'
'আমার কি অত জ্ঞানবুদ্ধি আছে! আমি হইলাম ছাপোসা মানুষ! কন না কী নাম দিছেন?'
'কিংস পার্টি।'
'ওরে বাবা! কিংস পার্টি!'
'কি, নামটা সুন্দর না?'
'সুন্দর মানে! বড়ই সুন্দর নাম।'
'তুমি আমার সঙ্গে থাকো। আমি তোমাকে বড় একটা পদ দিয়ে দিব।'
'কী পদ দিবেন?'
'তুমি যা চাও তা-ই দিয়া দিব।'
'আমি যদি সেই পদের যোগ্য না হই?'
'তাহলেও দিব।'
'কেন?'
'কারণ তুমি আমার নিজের লোক। তুমি আমার সঙ্গে বেইমানি করবা না।'
'লিডার, আমার ওপর আপনার এত আস্থা?'
'আমি যা বলি তা শোনো, যা করতে বলি তা করো। এটাই তো আমি চাই। বেশি যোগ্য লোক তো আমার দরকার নাই। বেশি যোগ্য হলে আমাকে মানবে?'
'ঠিক বলেছেন, লিডার। তবে লিডার, আপনি অনুমতি দিলে একটা প্রশ্ন করব।'
'কী প্রশ্ন কও? তবে সংক্ষেপে করো। বেশি বড় প্রশ্ন এই মুহূর্তে আমার মাথায় ঢুকবে না।'
'আগেরবার পার্টির নাম দিয়েছিলেন জনদরদি পার্টি। এইবার দিলেন কিংস পার্টি, কারণটা কী?'
'গতবারের কনসেপ্ট আর এবারের কনসেপ্ট তো পুরোপুরি আলাদা। এবার আর জনগণের কাছে যাওয়ার দরকার নাই। এবার আমরা সরাসরি ক্ষমতায় বসে যাব। জনগণ, ভোট_ এসবের ধারেকাছে আর নাই! আমার শুধু তোমার মতো কিছু কর্মী দরকার, যারা সারাক্ষণ আমার আশপাশে থাকবে। আমার গুণকীর্তন করবে আর আমি যা বলব, তা সমর্থন দিয়ে যাবে। বুঝতে পারছ?'
'জি। কিন্তু ভোট ছাড়া ক্ষমতায় কিভাবে যাইবেন?'
'দেখো না, ওয়েট অ্যান্ড সি।'
'একটু খুলে বলেন না, লিডার!'
'তুমি কি পত্রপত্রিকা পড়া ছাড়ান দিয়েছ নাকি?'
'কেন?'
'দিনদুনিয়ার খোঁজখবর কিছু রাখো?'
'কেন, কী হয়েছে?'
'থার্ড ফোর্সের নাম শুনেছ?'
'জি, ইদানীং খুব আলোচনা হচ্ছে।'
'আমরা তো তা-ই। কিংস পার্টি নাম কী এমনি এমনি দিয়েছি!'
'তার মানে আপনি কিংস পার্টির কিং! মাশাআল্লাহ! খুব খুশি হইলাম। কিন্তু কেমনে থার্ড ফোর্স আসব? এখন তো কেয়ারটেকারও নাই!'
'ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।'
'ঠিক আছে, আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়া কী লাভ? তয়, দেশ নিয়া খালি চিন্তা লাগে। মন খারাপ হয়।'
'চিন্তার কিছু নাই। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আসছি। সব ঠিক করে ফেলব। বুঝতে পারছ?'
'যেইভাবে আউলাঝাউলা লাইগা আছে, কিভাবে যে ঠিক করবেন বুঝতে পারছি না।'
'অত বোঝার দরকার নাই। তুমি যাও, আমার লোকজনরে খবর দাও।'
কালু চলে যায়। হাবলু মিয়া সোফায় হেলান দিয়ে বসে আবার গোঁফে তেল দিতে শুরু করেন। খাঁটি সরিষার তেল।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
No comments