রবিঠাকুরের বাড়ি ঘিরে বাজার by খায়রুল ইসলাম

ওগাঁর আত্রাই উপজেলার পতিসরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত জমিদার কাচারিবাড়ির (জাদুঘর) বারান্দা ও সামনের ফাঁকা স্থানে হাটবাজার বসছে। বাড়ির আশপাশ ঘিরেও গড়ে উঠছে অসংখ্য দোকান। এতে ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি ধ্বংসের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।


পতিসর রবীন্দ্র-চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও রবীন্দ্রস্মৃতি সংগ্রাহক এম মতিউর মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে সময় কবির লেখা চিঠি, নথিপত্র ও কিছু নিদর্শন সংগ্রহ করে প্রত্নতত্ত্ব আধিদপ্তরকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি, ঠিক সেই মুহূর্তে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে কাচারিবাড়ি ও তৎসংলগ্ন এলাকা।’
জাদুঘরটি আত্রাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মুনিয়ারি ইউনিয়নের পতিসর গ্রামে অবস্থিত। ৪ জানুয়ারি সরেজমিনে দেখা গেছে, জাদুঘরের প্রধান ফটকের সামনের জায়গায় বসেছে কাঁচামালের দোকান। বারান্দায় বসেছে চাল ও মাছের আড়ত। রবীন্দ্র ভাস্কর্যের চারদিক ঘিরে কাঁচাবাজার। জাদুঘর থেকে এক-দেড় শ গজ উত্তর ও পশ্চিমে দুটি দিঘি আছে। উত্তরের দিঘিটি রবীন্দ্রদিঘি হিসেবে পরিচিত। এর পশ্চিমাংশ ছেয়ে গেছে দোকানপাটে। জাদুঘরের দক্ষিণে রয়েছে একটি মাঠ, যার পূর্ব দিকজুড়ে গড়ে উঠেছে সারি সারি দোকান।
পতিসরে অবস্থিত রবীন্দ্র শিক্ষা নিকেতনের শিক্ষক আবদুর রশিদ বলেন, কাচারিবাড়ি ঘিরে নানা প্রতিষ্ঠান ও ভাস্কর্য গড়ে উঠছে। এ কারণে আশপাশের সব জায়গা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
হাটে আসা লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে সপ্তাহে শনি ও বুধবার দুই দিন হাট বসে। প্রতিদিন বসে বাজার। বছর দু-এক ধরে স্থানীয় ব্যক্তিরা বাজারটি বসাচ্ছেন। তবে কাচারিবাড়ির বারান্দায় দোকান বসছে তিন মাস ধরে। এলাকাবাসী মনে করেন, এখানে বাজার না হলেও তাঁদের চলে। কারণ দুই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে দুটি হাট আছে।
মুনিয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাচারিবাড়ির সামনে যে হাট বসছে, তা অবৈধ। হাটের জন্য পতিসরে নতুন জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে দোকানিরা না বসে বাড়ির সৌন্দর্যহানি করছেন।
জানা যায়, ১৮৯১ সালের দিকে কবিগুরু প্রথম পতিসরে আসেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। এরপর একাধিকবার তিনি পতিসরে আসেন এবং এখানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। পাকিস্তান আমলে কাচারিবাড়িটি ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারের আমলে বাড়িটি আবার সংস্কার ও পরে সেটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে জাদুঘরটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এবং বাকি জায়গা জেলা প্রশাসনের অধীনে আছে।
রবীন্দ্রস্মৃতি সংগ্রাহক এম মতিউর মামুন অভিযোগ করেন, জাদুঘরের বারান্দায় বসছে বাজারের দোকান। জাদুঘরের ভেতরে চলে কৃষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা, এগুলো অচিন্তনীয় ব্যাপার। কৃষক প্রশিক্ষণ কারা দিচ্ছে, জানতে চাইলে মতিউর মামুন বলেন, উপজেলা কৃষি কার্যালয় কয়েকবার এখানে কৃষক মাঠ দিবস পালন করে। পরে স্থানীয় জনগণের বাধার মুখে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
কাচারিবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমাদের কথা কেউ শোনে না। কাচারিবাড়ির দখলদারি বন্ধসহ এখানকার নানা অনিয়ম নিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।’
বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক বদরুল আলম জানান, কেউ বাড়ির জায়গা দখল করে থাকলে জরুরি ভিত্তিতে তা উচ্ছেদ করা হবে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, বাড়ির সামনে যে হাট বসছে, তার কোনো বৈধতা নেই। ইতিমধ্যে অবৈধ দোকানদারদের সরে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া এবং মামলা করা হয়েছে। প্রয়োজনে বাড়িটি রক্ষায় কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.