গাড়ি আমদানি-নীতিমালার ভিত্তিতেই হতে হবে
রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশে অনেক পুরনো গাড়ি প্রবেশ করছে। কর ফাঁকি দেওয়া আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের গৃহীত আমদানিনীতিরও তোয়াক্কা করছে না। অবৈধ এসব কাজ করছে দেশের গাড়ি আমদানিকারক ২৬টি প্রতিষ্ঠান। তারা ভাবছে না, পুরনো গাড়িগুলো দেশে আমদানি হওয়ায় পরিবেশের কী ক্ষতি হতে পারে কিংবা সস্তা হওয়ার সুবাদে অধিক হারে গাড়ি আমদানি হলে রাস্তাগুলো তা ধারণ করতে পারবে কি না।
হালে সিএনজির মাধ্যমে গাড়ি চালানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়া এবং সিএনজির দাম জ্বালানি তেলের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক মধ্যবিত্তও গাড়ি কিনে যান্ত্রিক সুবিধা গ্রহণ করছে। এর সঙ্গে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যদি কম দামে গাড়ি আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাহলে গাড়ির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাবে। তাই সরকার বিভিন্ন দিক চিন্তা করে পাঁচ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারের কিছু দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনাও দায়ী। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আমদানি করা গাড়িগুলোর কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের কিছু দুর্বলতার সুযোগও গ্রহণ করছে আমদানিকারকরা। এটা প্রমাণিত হয়েছে মংলা বন্দরে। বন্দর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে কাস্টম হাউস; সেখানেও রয়েছে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি। দুটি সুযোগই গ্রহণ করছে আমদানিকারকরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে ম্যানেজ করে তারা অবৈধভাবে পুরনো গাড়ি আমদানি করছে দিনের পর দিন। এভাবে আমদানিনীতিকে অবজ্ঞা করে গাড়ি আমদানি করায় শুধু যে রাজস্বব্যবস্থায় ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা-ই নয়; যেসব প্রতিষ্ঠান সৎভাবে গাড়ি আমদানি করছে, তাদের ব্যবসায়ও ক্ষতি হচ্ছে। তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার অর্থ হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ে আরেক ধাপ ক্ষতি। চট্টগ্রাম বন্দরে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া কিছুটা কষ্টসাধ্য হওয়ায় যে মংলা বন্দরটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এটা সবাই জানে। সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, ২০১১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে যেখানে ২৭২টি গাড়ি আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাত্র পাঁচটি ছাড়া বাকি সব গাড়িই আমদানি হয়েছে মংলা বন্দর দিয়ে। বিষয়টি সরকারের স্পষ্টই জানা আছে। তারা এও জানে, সেখানে সরকার প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তার পরও কোন কারণে মংলা বন্দর এলাকায় কাস্টম দপ্তর প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না, তা বোঝা মুশকিল। এই অবৈধ কাজ বন্ধ করতে হলে মংলা এলাকায় পর্যাপ্ত কাস্টম সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে কাস্টম কর্তৃপক্ষ জনবলের অভাবের কথা বলছে। দেশের স্বার্থ চিন্তা করে এ ধরনের যুক্তি মেনে নেওয়া যায় না। জনবল ঘাটতির কারণে সরকারকে যে পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হচ্ছে, জনবল বাড়ালে তার চেয়ে অনেক কম খরচ হবে।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর মংলাকে ব্যবহার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে এই বন্দরের সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। এর প্রভাব দেশের রাজস্ব খাতেও পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিনীতি অনুসরণে বাধ্য করতে হবে।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর মংলাকে ব্যবহার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে এই বন্দরের সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। এর প্রভাব দেশের রাজস্ব খাতেও পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিনীতি অনুসরণে বাধ্য করতে হবে।
No comments