অপসালিশ-ইজ্জতের মূল্য!
ফতোয়াবাজি এবং গ্রাম্য সালিশের নামে প্রায়ই দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় দরিদ্র মানুষ, বিশেষত নারীদের অধিকার হরণের পাঁয়তারা চলে। এ ধরনের ঘটনার ছিটেফোঁটা সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে জানাজানি হয়। অনেক ঘটনা আবার লোকলজ্জা ও অপরাধ সংঘটনকারীদের নানা ধরনের কূটকৌশল প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শনে চাপা পড়ে যায়। অপরাধীকে রক্ষা করার জন্য গ্রাম্য সালিশদার ও ফতোয়াবাজদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে দেখা যায়।
এ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত অপরাধী পার পেয়ে গেলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা শিকড় গেড়ে বসে। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, বরিশালের উজিরপুরের পশ্চিম জয়শ্রী গ্রামের এক বাকপ্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের জন্য গ্রাম্য সালিশদাররা ধর্ষককে মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে সে টাকা ধর্ষিতার মা-বাবার হাতে তুলে দিয়ে নিজেরা ধোয়া তুলসী পাতা সাজতে চেয়েছিল। আসলে এসব সালিশদার সামান্য অর্থের বিনিময়ে প্রকারান্তরে ধর্ষককে কঠোর শাস্তির হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। ধর্ষিতা ও তার অভিভাবকরা গরিব এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষ হওয়ার কারণে তাদের পক্ষে প্রভাবশালী সালিশদারদের বিচারের নামে প্রহসন চ্যালেঞ্জ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় ধর্ষিতা নিজেই অপরাধীর বিচার দাবি করার সাহস করে উঠতে পেরেছেন। অনানুষ্ঠানিক সালিশ ব্যবস্থা আমাদের ঐতিহ্যগত বিরোধ নিষ্পত্তির একটি স্বীকৃত মাধ্যম এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার সামাজিক বৈধতাও ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সালিশ ব্যবস্থা এখন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পরিবর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধ ও অপরাধীকে আড়াল করার মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সে কারণে সালিশ ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা এখন আর অটুট নেই। তাই নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া যথার্থ বিবেচিত হতে পারে না। পুলিশের উচিত অপরাধী কুদ্দুসের বিরুদ্ধে মামলা করা। মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনের উচিত এখনই ধর্ষিতার পাশে দাঁড়ানো। সালিশের নামে যারা প্রহসনের আয়োজন করেছিল তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত হবে। এতে বিচারের নামে প্রহসন বা অবিচারের প্রকোপ কমবে।
No comments