প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ-ভিক্টোরিয়ার শেষ বলে জয়

শেষ ওভারে দরকার ১৫ রান। আবাহনীর পেসার আবুল হাসানের সামনে ভিক্টোরিয়ার টেল এন্ডার মুক্তার আলী। নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে মোশাররফ হোসেন। কে জিতবে শেষ ওভারের লড়াইয়ে? শেষ বলে ছয় মেরে মুক্তারের হাত ধরে জয় ভিক্টোরিয়ারই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে তারা হারিয়ে দিল ৩ উইকেটে।


পাঁচ ম্যাচে আবাহনীর এটি দ্বিতীয় হার। মিরপুরে জমাট লড়াইয়ের দিনে প্রিমিয়ার লিগের অন্য দুই ম্যাচ ছিল একেবারেই একপেশে। ফতুল্লায় কলাবাগানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে মোহামেডান। বিকেএসপিতে সিসিএসের বিপক্ষে গাজী ট্যাংক জিতেছে ৫ উইকেটে।
শেষ ওভারের লড়াইয়ে মুক্তারের জয় মুছে দিয়েছে আবাহনী অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরির কৃতিত্বও। মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ১০৯ রানের সৌজন্যে ৫ উইকেটে ২৫৩ রান করেছিল আবাহনী। মিডল অর্ডারে ভিক্টোরিয়ার ব্যাটিং বিপর্যয় সেটিকেই বানিয়ে দিচ্ছিল জেতার মতো রান। কিন্তু হলো না।
হলো না মুক্তারের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ের কারণেই। শেষ ওভারের আগে মুক্তার নাকি মোশাররফকে বলেছিলেন, ‘দুশ্চিন্তা করবেন না। ম্যাচ বের করে আনব।’ রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারে সেটি করেও দেখালেন। আবুল হাসানের প্রথম বলেই বোলারের পেছন দিয়ে চার, ওয়াইডিশ মিড অন দিয়ে পরের বলেও বাউন্ডারি। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদল, চতুর্থ বলে আরও ১ রান নিয়ে স্ট্রাইকিং এন্ডে আবার মুক্তার। পঞ্চম বলে ২ রান। শেষ বলের জন্য থাকল ৩।
চরম নাটকীয়তার অপেক্ষায় তখন গ্যালারির হাতেগোনা দর্শক। স্লোয়ার দিলেন আবুল হাসান। মুক্তারও যেন অপেক্ষায় ছিলেন এমন একটা বলেরই, লং অফের ওপর দিয়ে মেরে দিলেন দুর্দান্ত ছক্কা। আগের ম্যাচে মোহামেডানের কাছে হেরে হতাশায় ডুবেছিল ভিক্টোরিয়া। কাল শিরোপাপ্রত্যাশী আবাহনীকে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফেরার উৎসবটা তাই জমে উঠল মাঠেই। হতাশায় ডুবল আবাহনী।
ভিক্টোরিয়ার উৎসবের মধ্যমণি ছিলেন মুক্তার, তবে দলের জন্য আসল কাজটা করে দিয়েছিল তামিম ইকবাল-শোয়েব মালিকের ১৬৮ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। দলীয় ১২ রানে ওপেনার আহমেদ শেহজাদ আউট। তামিমের সঙ্গী হন সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক মালিক। অখেলোয়াড়োচিত আচরণের জন্য এক ম্যাচ বহিষ্কার থাকার পর মাঠে ফিরে আগের ম্যাচে মাত্র ৬ রান পেয়েছেন তামিম। কাল এক ছক্কা আর ছয় চারে সাজানো ১০২ বলে ৮৬ রানের ইনিংস নিশ্চিতভাবেই ফিরিয়ে আনবে তাঁর আত্মবিশ্বাস। ১২১ বলে মালিকের ৮৫ রানের ইনিংসটাও হতে পারে সে রকম টনিক। কালকের আগ পর্যন্ত যে তিন ম্যাচে রান করেছিলেন মাত্রই ১৯! তামিম-মালিক জুটি ভাঙার পর মাত্র ৫০ রানেই ৬ উইকেট হারিয়েছিল ভিক্টোরিয়া।
এর আগে ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানো আবাহনীর ত্রাতা ছিলেন মাহমুদউল্লাহ, সঙ্গে মার্শাল আইয়ুবও (৫৭)। তৃতীয় উইকেটে তাঁদের ৯৩ রানের জুটির সুবাদেই বিপর্যয় কাটায় আবাহনী। এরপর ফরহাদ হোসেনের (৪১*) সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৯৩। দলের সংগ্রহটা পেরিয়ে যায় আড়াই শ। ১২৫ বলে অপরাজিত ১০৯ রানের ইনিংসে ৯ বাউন্ডারি মাহমুদউল্লাহর।
মিরপুরের উত্তেজনার ছিটেফোঁটাও ছিল না ফতুল্লায়। কলাবাগানের ১৪৫ রান মোহামেডান হেসে-খেলে টপকে গেছে ১০ ওভার ৩ বল বাকি থাকতেই। ২৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে মোহামেডানের শুরুটা ভালো হয়নি, ইমরুল কায়েসের (৪৫) সঙ্গে অধিনায়ক নাঈম ইসলামের (৫৩*) ৭৯ রানেই মোহামেডান জয়ের কাছাকাছি চলে যায়।
বিকেএসপিতেও ছিল প্রায় একই দৃশ্য। সিসিএস ৮৩ রানে ফেলে দিয়েছিল গাজী ট্যাংকের ৪ উইকেট। কিন্তু তাতে কী! তাদের ভান্ডারে রান তো ছিল মাত্র ১৩২! পাকিস্তানি ওপেনার শাহজাইব হাসান আর অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে নাসির হোসেনই (৬২*) জিতিয়ে দিয়েছেন গাজী ট্যাংককে। এর আগে বল হাতে ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন গাজীর পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ সামি।

সং ক্ষি প্ত স্কো র
আবাহনী: ৫০ ওভারে ২৫৩/৫ (মাহমুদউল্লাহ ১০৯*, মার্শাল ৫৭, ফরহাদ হোসেন ৪১*; সাকিব ৩/৪৫, আল আমিন ২/৩০)। ভিক্টোরিয়া: ৫০ ওভারে ২৫৭/৭ (তামিম ৮৬, মালিক ৮৫, মুক্তার ২৪*; ট্রেগো ৩/৪০)।
ফল: ভিক্টোরিয়া ৩ উইকেটে জয়ী।

কলাবাগান: ৪৭.১ ওভারে ১৪৫ (রিপন ৩১, আবিদ ২৯, উত্তম ২৪, সালমান ২৪*; রাসেল ৩/১২, ইয়াসিম ২/১৬, হাম্মাদ ২/৩৪)। মোহামেডান: ৩৯.৩ ওভারে ১৪৯/৪ (নাঈম ৫৩*, ইমরুল ৪৫, রাজিন ২৬; শাহাদাত ২/৩০)।
ফল: মোহামেডান ৬ উইকেটে জয়ী।

সিসিএস: ৩৭.১ ওভারে ১৩২ (রকিবুল ৩৪, অমিত ৩০, রশিদ ২০; সামি ৪/২৬)। গাজী ট্যাংক: ২৯.৩ ওভারে ১৩৫/৫ (নাসির ৬২*, শাহজাইব ২৮, মিঠুন ২৪; রবিউল ২/৩১)।
ফল: গাজী ট্যাংক ৫ উইকেটে জয়ী।

No comments

Powered by Blogger.