নির্বাচনে দলবদলের সুযোগের পক্ষে এরশাদ, ইসির 'না' by কাজী হাফিজ

ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনে দলবদলের পক্ষে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে বলেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদার কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেন, 'কে কখন কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন, কখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবেন সেটা সংবিধান প্রদত্ত তাঁর নাগরিক অধিকারের বিষয়।


' এর বিপক্ষে যে আইন রয়েছে তার বিরুদ্ধে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও এরশাদ সিইসিকে জানিয়েছেন।
এরশাদের এই চিঠির জবাবে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বুধবার কমিশন সচিবালয় থেকে জাতীয় পার্টির একজন প্রতিনিধির কাছে কমিশনের এই জবাব হস্তান্তর করা হয়।
দলবদলের পক্ষে আইন সংশোধনের জন্য সিইসিকে লিখিত দাবি জানানোর আগেও গত ১৫ জুন নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন সংস্কার নিয়ে সংলাপেও জাতীয় পার্টি দাবিটি তুলে ধরে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এরশাদ সিইসির কাছে লেখা চিঠিতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ (জে) ধারাটি বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন। এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে তিন বছর আগে থেকে সদস্য না হলে সংসদ নির্বাচনে ওই দলের প্রার্থী হওয়া যাবে না। এ বিধানটি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়োগযোগ্য না করা হলেও আগামী দশম সংসদ নির্বাচনের জন্য কার্যকর রয়েছে। ২০০৮ সালের অক্টোবরে এই বিধানটি আরপিওতে সংযুক্ত হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ডিগবাজি নেতাদের বা হাওয়া বুঝে দল বদলে যেসব সুযোগসন্ধানী নেতার আবারও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন থাকে, তাঁদের ঠেকাতে এই বিধান প্রয়োজন।
এরশাদের দাবি সম্পর্কে গতকাল নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা যেসব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসেছি, তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কোনো দল ওই বিধান বাতিলের বিষয়ে প্রস্তাব রাখেনি। তা ছাড়া ওই বিধান জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রণীত হয়েছে। কোনো একটি দলের প্রস্তাবে আমরা এ বিধান বাতিলের সুপারিশ করতে পারি না। বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট হলে আদালত থেকেই এর ফয়সালা হবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যে ডিও লেটার নির্বাচন কমিশনকে পাঠিয়েছিলেন, কমিশন তার জবাব দিয়েছে।'
এদিকে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান ওই বিধান অনুসারে দল বদল করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুসারে সংসদের মেয়াদ পূর্তির পূর্ববর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে সে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে ২০১৩ সালের অক্টোবর অথবা নভেম্বরে। সে ক্ষেত্রে ২০১০ সালের অক্টোবরের আগে যাঁরা কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়েছেন, দল তাঁদের মনোনয়ন দিলে তাঁরা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। আর রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে আবার যদি সংবিধান সংশোধন করে আগের নির্বাচনীব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়, তাহলে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। ওই সময়ের শেষদিকে নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চে। এ ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য দলবদলের বা দলে যোগ দেওয়ার শেষ সময় পার হয়ে গেছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চেই।

No comments

Powered by Blogger.