যানজট ভয়াবহ ট্রাক আটকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা
রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বৃহত্তর দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের যানজটমুক্ত রাখতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাওয়া ফেরিঘাটের একপাশে আটকে রাখা হয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক। একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে বাসযাত্রীরা নিরাপদে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে শুরু করলেও মাওয়া ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক দিনের পর দিন আটকে থাকায় ব্যবসায়ী ও ট্রাকচালকদের উদ্বেগ চরমে উঠেছে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর পাবনা ও রাজশাহীগামী যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে হাট বিড়ম্বনায়।
পাবনার বেড়া ও কাশিনাথপুরে মহাসড়কের অর্ধেকজুড়ে সপ্তাহে দুই দিন করে হাট বসায় সেখানে দুঃসহ যানজটের সৃষ্টি হয়। দ্রুতই এর প্রভাব পড়ে পুরো মহাসড়কে। আজ রবিবার কাশিনাথপুরে আবারও হাট বসার কথা। এর ফলে ঈদের আগের দিন রওনা হয়ে যাত্রীরা সময়মতো বাড়ি ফিরতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা- মাওয়া মহাসড়কের ষোলঘর থেকে ছনবাড়ী পর্যন্ত বাঁ পাশে তিন কিলোমিটারজুড়ে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ৪০০ ট্রাক। ঈদের কারণে যাত্রীবাহী বাস ও কারকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে ট্রাক পার করা একরকম বন্ধ রয়েছে বলে জানান ট্রাকচালকরা। এতে তাঁরা বেশ ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
মুন্সীগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পণ্য আগেভাগেই নেওয়া উচিত ছিল। এখন ঘরমুখো মানুষের পারাপারকেই জরুরি মনে করা হচ্ছে। তবে শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে ট্রাক পার করার কথা বলে এই লাইন থেকে ১৫টি ট্রাক ফেরিতে ওঠানো হয়েছে। বাস-কারের চাপ কমে যাওয়ায় ট্রাক পার করা হচ্ছে।
এদিকে ঈদের আগে পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের দুর্ভোগ ক্রমে বাড়ছে। নেছের আলী নামের একজন ট্রাকচালক এ প্রতিনিধিকে জানান, তিন দিন ধরে সেমাইভর্তি ট্রাক নিয়ে তীর্থের কাকের মতো ফেরি পার হওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি। ঢাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু মাওয়া থেকে সাত কিলোমিটার দূরে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকায় পুলিশ তাঁর ট্রাক আটকে দেয়। তিন দিন ধরে সেখানেই আছে তাঁর ট্রাক। এখনো তিনি সিরিয়াল ধরে এগোনোর অপেক্ষায়। নেছের আলী জানেন না ঈদের জন্য নেওয়া এই সেমাই নিয়ে ঈদের আগে আদৌ খুলনায় পেঁৗছাতে পারবেন কি না। আরেক ট্রাকচালক মো. খলিল জানান, ময়দা নিয়ে খুলনার উদ্দেশে ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার রওনা হয়ে এখনো ফেরিঘাটের কাছেই আসতে পারেননি। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে বিশেষ ধরনের কাঠ নিয়ে ইদ্রিস আলী নামের আরেকজন ট্রাকচালক রওনা হয়েছেন শরীয়তপুরের উদ্দেশে। তিনি পথেই দুই রাত কাটিয়েছেন, গতকাল কথা হওয়ার সময় তৃতীয় রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, ট্রাক রেখে কোথাও যেতে পারছেন না। একদিকে ফেরি পারের অনুমতি পাওয়ার আশা, অন্যদিকে নাওয়া-খাওয়া প্রাকৃতিক কাজ সারার জায়গা নিয়ে বড়ই দুর্ভোগে আছেন তাঁরা।
এদিকে ট্রাক চলাচলের অনুমতি না দেওয়ায় গতকাল শনিবার পাল্টে গেছে মাওয়ার চিত্র। ঘাট এলাকা হয়ে গেছে যানজটমুক্ত। ছিল না বাস-কারের কোনো লাইন। আসার সঙ্গে সঙ্গে ফেরির সিরিয়াল দেওয়া হচ্ছিল গাড়িগুলোকে। তবে শুক্রবারের মতো গতকালও মাওয়ায় ছিল মানুষের ঢল। দক্ষিণাঞ্চলগামী লাখ লাখ মানুষ এই ঘাট দিয়ে পার হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি স্পিডবোট ও লঞ্চে পারাপার করায় এসব যানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১ নং বুড়িগঙ্গা সেতুতে প্রাইভেট কারের টোল ২০ টাকার স্থলে ২৫ টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন মাওয়াগামী কার মালিকরা। অন্যান্য যানবাহন থেকেও সেতুর টোল বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এ সেতুতে।
এদিকে গত ঈদে মাওয়া-কাওরাকান্দি নৌরুটে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসসহ ১৬টি ফেরি চলাচল করলেও এ ঈদে দেওয়া হয়েছে ১৪টি ফেরি। ঈদ স্পেশাল ফেরি সার্ভিস না থাকায় ১৪টি ফেরি সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকলেও সকালে ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে সহস্রাধিক গাড়ি। মাওয়ার বিআইডাবি্লউটিসির এজিএম আশিকুজ্জামান জানান, ১৪টি ফেরি দিয়েই সর্বোচ্চ সার্ভিস দেওয়ার সব রকম চেষ্টা চলছে। চ্যানেলে সমস্যা না হওয়ার কারণে ফেরিগুলো ভালো সার্ভিস দিচ্ছে।
অন্যদিকে যানজট সমস্যা লাঘব করতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে চলাচলরত লোকাল বাস সার্ভিসগুলোকে মাওয়া ফেরিঘাট থেকে চৌরাস্তায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ মহাসড়কের খানবাড়ী এলাকা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা হেঁটে ঘাটে এসে বিভিন্ন নৌযানে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওপার হতে বিকল্প পথে অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে যাচ্ছে।
দাউদকান্দি প্রতিনিধি জানান, ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা তিন দিনের যানজটের পর ট্রাক চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করায় মহাসড়ক যানজটমুক্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার থেকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল না করায় মহাসড়কে যানজট নেই। কুমিল্লার দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত এ চিত্র দেখা গেছে।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের এসআই মামুন মিয়া জানান, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল কমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে গরুবোঝাই ট্রাক চলাচল করলেও মহাসড়কে তেমন কোনো চাপ নেই। কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের কোনো প্রকার দুর্ভোগ না হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান না চলার কারণে মহাসড়ক যানজটমুক্ত হয়েছে বলে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধের কোনো আদেশ পাইনি। তবে গত রোজার ঈদে কয়েক দিনের জন্য ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মহাসড়কে চলাচল বন্ধ থাকায় কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। এবারও সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'
অন্যদিকে পাবনা থেকে আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, পাবনার বেড়া ও কাশীনাথপুরে মহাসড়কজুড়ে হাট বসায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাটে ব্যাপক কোরবানির পশু আমদানির পাশাপাশি লোক সমাগম বেড়ে যাওয়ায় এ যানজট হয়ে উঠেছে একেবারে অসহনীয়। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে বিভিন্ন যানবাহন। এতে ঘরমুখী ঈদের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমভাবে বেড়ে গেছে।
বিশেষ করে পাবনা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সাঁথিয়ার কাশীনাথপুর ও বেড়ার করমজা হাটের কারণে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতি ও রবিবার কাশীনাথপুরে এবং শনি ও মঙ্গলবার করমজায় হাট বসে। দুটি হাটেই স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাটুরেরা বাধ্য হয়ে মহাসড়কের অনেকটা অংশ জুড়ে বসেন। এতে দীর্ঘদিন ধরেই হাটবারে হাট দুটিতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ যানজট হয়ে উঠেছে আরো তীব্র। বাসচালকদের অভিযোগ, হাটগুলোর কারণে যানজটে গন্তব্যে পেঁৗছাতে দেরি হওয়ায় ফিরতি পথেও তাঁদের দেরি হচ্ছে। এর ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাসের সময়সূচি মানতে পারছেন না তাঁরা। এ যানজট নিরসনে প্রশাসনের দায়সারা গোছের উদ্যোগ থাকলেও চোখে পড়ে না কোনো ট্রাফিক পুলিশ। কমিউনিটি পুলিশ ও আনসার দিয়ে চেষ্টা করা হলেও হাটুরেদের রাস্তা থেকে সরানো সম্ভব হচ্ছে না। আজ রবিবার ঈদের আগের দিনেও কাশীনাথপুরে হাট বসবে। এর ফলে দূরের যাত্রীরা ঈদের আগে সময়মতো ঘরে ফিরতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
পাবনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. রইজউদ্দিন বলেন, 'করমজা ও কাশীনাথপুর হাট দুটি আমাদের জন্য বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদের সামনে এ দুই স্থানের যানজট আরো ভয়াবহ হয়েছে। যানজটে আটকে থাকায় প্রায়ই বিভিন্ন বাসের ট্রিপ মিস হয়ে যাচ্ছে।'
করমজা হাট-বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, 'হাটের জায়গা অবৈধভাবে দখল হওয়ায় হাটে স্থান সংকুলান হয় না। এর ওপর ঈদ উপলক্ষে হাটে সব ধরনের পণ্যের বেচাকেনা ও লোক সমাগম বেড়ে যাওয়ায় অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে।'
বেড়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র এনামুল হক শামীম বলেন, 'করমজা হাটের জায়গা প্রশস্তকরণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে। এতে হাট আর মহাসড়কে গিয়ে বসবে না।'
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা- মাওয়া মহাসড়কের ষোলঘর থেকে ছনবাড়ী পর্যন্ত বাঁ পাশে তিন কিলোমিটারজুড়ে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ৪০০ ট্রাক। ঈদের কারণে যাত্রীবাহী বাস ও কারকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণে ট্রাক পার করা একরকম বন্ধ রয়েছে বলে জানান ট্রাকচালকরা। এতে তাঁরা বেশ ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
মুন্সীগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পণ্য আগেভাগেই নেওয়া উচিত ছিল। এখন ঘরমুখো মানুষের পারাপারকেই জরুরি মনে করা হচ্ছে। তবে শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা থেকে ট্রাক পার করার কথা বলে এই লাইন থেকে ১৫টি ট্রাক ফেরিতে ওঠানো হয়েছে। বাস-কারের চাপ কমে যাওয়ায় ট্রাক পার করা হচ্ছে।
এদিকে ঈদের আগে পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের দুর্ভোগ ক্রমে বাড়ছে। নেছের আলী নামের একজন ট্রাকচালক এ প্রতিনিধিকে জানান, তিন দিন ধরে সেমাইভর্তি ট্রাক নিয়ে তীর্থের কাকের মতো ফেরি পার হওয়ার অপেক্ষায় আছেন তিনি। ঢাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে খুলনার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু মাওয়া থেকে সাত কিলোমিটার দূরে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকায় পুলিশ তাঁর ট্রাক আটকে দেয়। তিন দিন ধরে সেখানেই আছে তাঁর ট্রাক। এখনো তিনি সিরিয়াল ধরে এগোনোর অপেক্ষায়। নেছের আলী জানেন না ঈদের জন্য নেওয়া এই সেমাই নিয়ে ঈদের আগে আদৌ খুলনায় পেঁৗছাতে পারবেন কি না। আরেক ট্রাকচালক মো. খলিল জানান, ময়দা নিয়ে খুলনার উদ্দেশে ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার রওনা হয়ে এখনো ফেরিঘাটের কাছেই আসতে পারেননি। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে বিশেষ ধরনের কাঠ নিয়ে ইদ্রিস আলী নামের আরেকজন ট্রাকচালক রওনা হয়েছেন শরীয়তপুরের উদ্দেশে। তিনি পথেই দুই রাত কাটিয়েছেন, গতকাল কথা হওয়ার সময় তৃতীয় রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, ট্রাক রেখে কোথাও যেতে পারছেন না। একদিকে ফেরি পারের অনুমতি পাওয়ার আশা, অন্যদিকে নাওয়া-খাওয়া প্রাকৃতিক কাজ সারার জায়গা নিয়ে বড়ই দুর্ভোগে আছেন তাঁরা।
এদিকে ট্রাক চলাচলের অনুমতি না দেওয়ায় গতকাল শনিবার পাল্টে গেছে মাওয়ার চিত্র। ঘাট এলাকা হয়ে গেছে যানজটমুক্ত। ছিল না বাস-কারের কোনো লাইন। আসার সঙ্গে সঙ্গে ফেরির সিরিয়াল দেওয়া হচ্ছিল গাড়িগুলোকে। তবে শুক্রবারের মতো গতকালও মাওয়ায় ছিল মানুষের ঢল। দক্ষিণাঞ্চলগামী লাখ লাখ মানুষ এই ঘাট দিয়ে পার হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি স্পিডবোট ও লঞ্চে পারাপার করায় এসব যানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১ নং বুড়িগঙ্গা সেতুতে প্রাইভেট কারের টোল ২০ টাকার স্থলে ২৫ টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন মাওয়াগামী কার মালিকরা। অন্যান্য যানবাহন থেকেও সেতুর টোল বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এ সেতুতে।
এদিকে গত ঈদে মাওয়া-কাওরাকান্দি নৌরুটে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসসহ ১৬টি ফেরি চলাচল করলেও এ ঈদে দেওয়া হয়েছে ১৪টি ফেরি। ঈদ স্পেশাল ফেরি সার্ভিস না থাকায় ১৪টি ফেরি সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকলেও সকালে ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে সহস্রাধিক গাড়ি। মাওয়ার বিআইডাবি্লউটিসির এজিএম আশিকুজ্জামান জানান, ১৪টি ফেরি দিয়েই সর্বোচ্চ সার্ভিস দেওয়ার সব রকম চেষ্টা চলছে। চ্যানেলে সমস্যা না হওয়ার কারণে ফেরিগুলো ভালো সার্ভিস দিচ্ছে।
অন্যদিকে যানজট সমস্যা লাঘব করতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে চলাচলরত লোকাল বাস সার্ভিসগুলোকে মাওয়া ফেরিঘাট থেকে চৌরাস্তায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাজার হাজার মানুষ মহাসড়কের খানবাড়ী এলাকা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা হেঁটে ঘাটে এসে বিভিন্ন নৌযানে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওপার হতে বিকল্প পথে অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে যাচ্ছে।
দাউদকান্দি প্রতিনিধি জানান, ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা তিন দিনের যানজটের পর ট্রাক চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করায় মহাসড়ক যানজটমুক্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার থেকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল না করায় মহাসড়কে যানজট নেই। কুমিল্লার দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত এ চিত্র দেখা গেছে।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের এসআই মামুন মিয়া জানান, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল কমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে গরুবোঝাই ট্রাক চলাচল করলেও মহাসড়কে তেমন কোনো চাপ নেই। কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের কোনো প্রকার দুর্ভোগ না হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান না চলার কারণে মহাসড়ক যানজটমুক্ত হয়েছে বলে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধের কোনো আদেশ পাইনি। তবে গত রোজার ঈদে কয়েক দিনের জন্য ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মহাসড়কে চলাচল বন্ধ থাকায় কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। এবারও সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'
অন্যদিকে পাবনা থেকে আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, পাবনার বেড়া ও কাশীনাথপুরে মহাসড়কজুড়ে হাট বসায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাটে ব্যাপক কোরবানির পশু আমদানির পাশাপাশি লোক সমাগম বেড়ে যাওয়ায় এ যানজট হয়ে উঠেছে একেবারে অসহনীয়। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে বিভিন্ন যানবাহন। এতে ঘরমুখী ঈদের যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমভাবে বেড়ে গেছে।
বিশেষ করে পাবনা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সাঁথিয়ার কাশীনাথপুর ও বেড়ার করমজা হাটের কারণে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতি ও রবিবার কাশীনাথপুরে এবং শনি ও মঙ্গলবার করমজায় হাট বসে। দুটি হাটেই স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাটুরেরা বাধ্য হয়ে মহাসড়কের অনেকটা অংশ জুড়ে বসেন। এতে দীর্ঘদিন ধরেই হাটবারে হাট দুটিতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে এ যানজট হয়ে উঠেছে আরো তীব্র। বাসচালকদের অভিযোগ, হাটগুলোর কারণে যানজটে গন্তব্যে পেঁৗছাতে দেরি হওয়ায় ফিরতি পথেও তাঁদের দেরি হচ্ছে। এর ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাসের সময়সূচি মানতে পারছেন না তাঁরা। এ যানজট নিরসনে প্রশাসনের দায়সারা গোছের উদ্যোগ থাকলেও চোখে পড়ে না কোনো ট্রাফিক পুলিশ। কমিউনিটি পুলিশ ও আনসার দিয়ে চেষ্টা করা হলেও হাটুরেদের রাস্তা থেকে সরানো সম্ভব হচ্ছে না। আজ রবিবার ঈদের আগের দিনেও কাশীনাথপুরে হাট বসবে। এর ফলে দূরের যাত্রীরা ঈদের আগে সময়মতো ঘরে ফিরতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
পাবনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. রইজউদ্দিন বলেন, 'করমজা ও কাশীনাথপুর হাট দুটি আমাদের জন্য বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদের সামনে এ দুই স্থানের যানজট আরো ভয়াবহ হয়েছে। যানজটে আটকে থাকায় প্রায়ই বিভিন্ন বাসের ট্রিপ মিস হয়ে যাচ্ছে।'
করমজা হাট-বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, 'হাটের জায়গা অবৈধভাবে দখল হওয়ায় হাটে স্থান সংকুলান হয় না। এর ওপর ঈদ উপলক্ষে হাটে সব ধরনের পণ্যের বেচাকেনা ও লোক সমাগম বেড়ে যাওয়ায় অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে।'
বেড়া পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র এনামুল হক শামীম বলেন, 'করমজা হাটের জায়গা প্রশস্তকরণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে। এতে হাট আর মহাসড়কে গিয়ে বসবে না।'
No comments