মাহমুদুর রহমানের মন্তব্য প্রতিবেদনঃ মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশীদের কথা ভাবুন
গত বছর হজের সময় কাশিমপুর জেলে বসে রেডিওতে লাব্বায়েক ধ্বনি শুনতে শুনতে মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে আর একবার অন্তত হজ পালনের স্বপ্ন দেখতাম। ২৯০ দিন জেল খেটে এ বছর মার্চের ১৭ তারিখে মুক্তির পর হজের খানিকটা প্রস্তুতি নিয়েও প্রধানত স্ত্রীর অসুস্থতা এবং সরকারের নানাবিধ অসহযোগিতার কারণে পিছিয়ে যেতে হলো। ভাবলাম আল্লাহ্তায়ালা মঞ্জুর করলে আগামী বছর সপরিবারে তাঁর ঘরে যাব।
কিন্তু তিনি যে এ বছরই আমার জন্য বিশেষ পুরস্কার নির্ধারিত করে রেখেছেন, সেটি প্রথম জানলাম যেদিন সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আমাকে বাদশাহর মেহমান হয়ে হজে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। সৌদি সরকারের দাওয়াত গ্রহণ করলেও ঢাকা বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবহারটা আমার সঙ্গে কেমন হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা ছিল। আমার আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, তার প্রমাণ যাত্রার নির্ধারিত দিনে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে হাতেনাতে পেলাম। সৌদি দূতাবাস থেকে আমন্ত্রিতদের বলা হয়েছিল ভিআইপি লাউঞ্জে সমবেত হয়ে দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিমানে আরোহণ কার্ড (Boarding Pass) সংগ্রহ করতে। এদিকে রাজকীয় মেহমানদের বিদায় জানানোর জন্য রাষ্ট্রদূতেরও সেখানেই উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। প্রস্তাব শুনে তখনই আমি প্রমাদ গুনেছিলাম। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভের পর থেকে বিদেশযাত্রার সময় দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের বাধা পার হওয়াটাই উচিত বলে বিবেচনা করে এসেছি। তার ওপর বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতিহিংসামূলক মানসিকতা সম্পর্কে আমার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা আর কার আছে?
আমি নিশ্চিত ছিলাম ভিআইপি লাউঞ্জে আমার যাওয়া নিয়ে ঝামেলা বাধবেই। সৌদি দূতাবাসকে এই জটিলতার মাত্রা বোঝানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। তাদের বোধহয় ধারণা ছিল রাষ্ট্রদূতের সম্মান রক্ষার্থে অন্তত সৌদি বাদশাহর কোনো অতিথির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের চরিত্র বিদেশিদের অনুধাবন করা সাধ্যাতীত। যা ভেবেছিলাম, শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো।
বাসা থেকে ইহ্রাম বেঁধে ভিআইপি লাউঞ্জে বিনা বাধাতেই প্রবেশ করলাম। একে একে অন্যান্য হজযাত্রীও এলেন। এক সময় দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে আমাদের যার যার বোর্ডিং কার্ডও হস্তান্তর করলেন। বিমানে আরোহণের আগে সবাই রাষ্ট্রদূতের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছি। হঠাত্ দুই বাংলাদেশী অত্যন্ত বিরক্ত চেহারা নিয়ে আমার উল্টোদিকের সোফায় এসে বসলেন। পরনে প্যান্ট-শার্ট দেখে বোঝা গেল তারা কেউই হজযাত্রী নন। লোক দু’টির গম্ভীর চেহারা নিয়ে উপস্থিত সবাইকে তীক্ষষ্ট পর্যবেক্ষণ করার ধরন দেখে তাদের পেশা আন্দাজ করা কঠিন হলো না। মিনিট দশেক পর তারা উঠে গেলেন। খানিক পর অপর এক নিরীহদর্শন ভদ্রলোক আমার একেবারে কাছে এসে যথেষ্ট বিনীতভাবে তাকে অনুসরণ করতে অনুরোধ করলেন।
আমার পাশের সোফাতেই মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম এ রব সস্ত্রীক বসে ছিলেন। লাউঞ্জেরই এক কোনায় ডেকে নিয়ে আমাকে বলা হলো, আমি তত্ক্ষণাত্ ওই স্থান ত্যাগ না করলে সিভিল এভিয়েশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাকরি থাকবে না। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ভিআইপি লাউঞ্জ ছেড়ে বিমানবন্দরের ওপরের তলায় ইমিগ্রেশনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। ততক্ষণে আমার পাসপোর্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অর্থাত্ ওসি ইমিগ্রেশনের কাছে পৌঁছে গেছে। তরুণ পুলিশ অফিসারটির নাম সালাহউদ্দিন। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার হজ পালনের ওপরও সরকারি বাধা-নিষেধ আছে কি না? অফিসারটি আমার প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে সৌজন্যের সঙ্গেই সামনের চেয়ারে বসতে দিয়ে বললেন, বিশেষ একটি টেলিফোন নির্দেশের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। বাকি সব সংস্থার সম্মতি নাকি পাওয়া গেছে।
মিনিট দশেক অপেক্ষার পর আমি আর তার সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি সমীচীন মনে না করে ঘরের বাইরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে গিয়ে বসলাম। আরও ঘণ্টাখানেক পর পাসপোর্ট হাতে এসে ওসি সালাহউদ্দিন খবর দিলেন, সর্বশেষ টেলিফোনটি অবশেষে পাওয়া গেছে। আমি এবার হজের উদ্দেশে বিমানে উঠতে পারি। বিমানে ওঠার আগে অবশ্য সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ফোনে ধন্যবাদ জানিয়ে ভিআইপি লাউঞ্জে আমার অনুপস্থিতির কারণ জানালাম। বিমানে ওঠার পর জানলাম, আমার মতো অতটা না হলেও সংগ্রাম-এর সম্প্রতি জেলখাটা প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকেও বেশ খানিকটা হেনস্তা করা হয়েছে। তার স্ত্রী সঙ্গে থাকায় ধারণা করছি আসাদ ভাইও যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেছেন। সৌদি মেহমানদের মধ্যে সরকারদলীয় শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদেরই আধিক্য লক্ষ্য করলাম। তাদের মধ্যে একজনকে দেখে প্রকৃতই বিস্মিত হলাম। অন্যের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা শোভন না হলেও এটুকু বোধহয় বলতে পারি যে, আমার জানামতে ভদ্রলোক নিদেনপক্ষে সংশয়বাদী এবং কখনও কখনও আমাদের মহানবী (সা. আ.) সম্পর্কে অশ্রদ্ধামূলক মন্তব্যও করে থাকেন। হজ পালন করাটা তার কাছে বিনে পয়সায় একটি দেশ দেখার অতিরিক্ত কিছু হওয়ার কথা নয়। অবশ্য পারিবারিক জীবনে অ্যাথিস্ট (athiest) মন্ত্রীদেরও যখন কেবল হজ নয় আজকাল রোজার মাসেও ওমরাহ পালন করতে দেখা যাচ্ছে, তখন আর একই সেক্যুলার দলভুক্ত বুদ্ধিজীবীর অপরাধ কী? আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, এরা যেন হেদায়েতপ্রাপ্ত হন।
পবিত্র হজ পালনের কারণে লেখালেখিতে তিন সপ্তাহ বিরতির পরের আজকের এই মন্তব্য প্রতিবেদনে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের এক স্তম্ভ নিয়ে আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। ইসলাম ধর্মের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমার জ্ঞান ও লেখাপড়া এতটাই সামান্য যে, সেই চেষ্টা করাটাও ধৃষ্টতা। আজ আমার লেখার প্রধান উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশীদের নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। ঢাকা বিমানবন্দরে আমার যে তিক্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটুকু বর্ণনা করলাম, সেটা নিতান্তই প্রসঙ্গক্রমে এসেছে। ৩১ অক্টোবর ভোর সাড়ে তিনটায় মক্কায় ‘লা মেরিডিয়েন’ হোটেলে পৌঁছে নির্ধারিত কক্ষে জিনিসপত্র রেখেই ওমরাহ পালনের জন্য হারাম শরিফে চলে গেলাম। ফজরের নামাজ শেষে মসজিদের বাইরের চত্বরে একা বসে দোয়া-দরূদ পড়ছি। মনে মনে ইচ্ছা ভিড় খানিক কমলে আল্লাহ্র ঘরের চারদিকে তাওয়াফ শুরু করব। এমন সময় ইহরাম পরিহিত বছর তিরিশের এক তরুণ এসে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি মাহমুদুর রহমান? ছেলেটি বেশ খানিকক্ষণ ধরে দূর থেকে আমাকে লক্ষ্য করছিল। হ্যাঁ সূচক জবাব দিতেই একগাল হাসিতে মুখ ভরিয়ে দু’হাত জড়িয়ে ধরল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আরও জনাদশেক বাংলাদেশী ভিড় জমালেন। একজন দৌড়ে ধূমায়িত চা আর বিস্কুট নিয়ে এলেন। গোল হয়ে বসে সুখ-দুঃখ এবং দেশের কথা শুরু হলো।
বাংলাদেশে সেক্যুলারের ছদ্মবেশে ঘোরতর ইসলামবিদ্বেষী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিকদের সমস্যার তীব্রতা বৃদ্ধির অভিন্ন অভিযোগ একবাক্যে সবাই করলেন। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী তিন বছর ধরে তাদের আকামা সমস্যা সমাধানের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি অব্যাহতভাবে দিয়ে এলেও দিনে দিনে সমস্যা আরও গুরুতর হয়েছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সৌদি সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করে তাদের সমস্যা ঠিকই মিটিয়ে নিয়েছে। সৌদি আরবের শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার এখন কার্যত বন্ধই হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে যারা গল্প করছিলেন, তাদের মধ্যে একজন কম্পিউটার টেকনোলজিস্ট পদে প্রায় দশ বছর ধরে রিয়াদে কাজ করছেন। আশা করেছিলেন, অবশেষে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ক্লান্ত স্ত্রীকে দেশের বাড়ি থেকে তার কাছে নিয়ে আসবেন। কোম্পানিরও আপত্তি ছিল না। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও কেবল বাংলাদেশী হওয়ার অপরাধে তার আবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নাকচ হয়ে গেছে। দেখলাম এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাতেও সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। তরুণটির সাফ কথা, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্বতসমান ব্যর্থতার ফলেই স্ত্রীকে সে কাছে নিতে পারছে না।
অন্যরাও ছেলেটির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বললো, শুধু সৌদি আরব কেন, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গেই মহাজোট সরকার বিশাল দূরত্ব তৈরি করেছে। অতিমাত্রায় ভারত তোষণের ভ্রান্ত নীতি এই সরকারকে বিশ্বে কেবল মর্যাদাহীনই করেনি, সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের একটি আশ্রিত রাজ্যের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অবমাননাকর পরিচয়ে কালিমালিপ্ত করেছে। এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের আত্মঘাতী পররাষ্ট্র নীতির ফায়দা তুলছে ভারত। পাকিস্তান তো আগে থেকেই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন নাকি নেপালিরাও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাকরিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কাবাঘরের সামনে সেদিন উপস্থিত বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবে বর্তমানে ২২ লাখ বাংলাদেশী বৈধভাবে কর্মরত থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা নাকি ৩৫ থেকে ৪০ লাখ হতে পারে। এরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে যে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন, ক্ষমতাসীনরা সেই অর্থ নিয়ে লুটপাট এবং ফুটানি করে বেড়ালেও তাদের স্বার্থ দেখার মতো সময় কোনো ডিজিটাল মন্ত্রীর নেই।
গত অর্থবছরে শুধু সৌদি আরব থেকে এসব প্রবাসী বাংলাদেশী ৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে যে কোনো দেশপ্রেমিক সরকারের দায়িত্ব ছিল সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে নৈকট্য বাড়ানো। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের প্রতিটি মন্ত্রী ভারতীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কৃপালাভের চেষ্টায় জানপাত তো করছেনই, এখন দেখতে পাচ্ছি এদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অবস্থানও মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাহ এবং সরকারপ্রধানদের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে। ভারত সরকারের নীতিনির্ধারকদের পদযুগলে এত তৈলমর্দনের বিনিময়ে বাংলাদেশের ভাগ্যে সীমান্তে নাগরিকদের লাশের মিছিল এবং পানি ও ভূমি আগ্রাসন ছাড়া ভারতের কাছ থেকে আর কিছু মিলছে না। এবারের পবিত্র হজ পালনকালে সৌদি আরবের তিনটি শহরে যাওয়ার সুযোগ ঘটেছে। মক্কা, মদিনা এবং জেদ্দা। তিন শহরেই প্রতিটি বাংলাদেশীর কাছ থেকে বর্তমান সরকার সম্পর্কে একই ধরনের অভিযোগ শুনে এসেছি। সৌদি বাদশাহর মেহমান হয়ে আমার সঙ্গে সরকারি কর্তাব্যক্তি এবং সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও হজ করে এসেছেন। নীতিনির্ধারকদের কাছে তারা প্রকৃত পরিস্থিতির কেমন চিত্র উপস্থাপন করবেন জানি না; তবে সততার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যার কথাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ভয়ে তুলে ধরতে পারলে তাদের হজ হয়তো মহান আল্লাহর কাছে কবুল হতে পারে। মাসে মাত্র তিন-চারশ’ রিয়াল বেতনে মরুভূমির প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে মানবেতর পরিবেশে এই মানুষগুলো দিনরাত পরিশ্রম করে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন, এ বিষয়টি স্মরণে রাখলে তাদের বিবেক অন্তত পীড়া দেবে না।
হজ শেষ করে ফেরার দিন বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে জেদ্দার এক সরাইখানায় আমরা কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়েছিলাম। সেখানে অপর এক বাংলাদেশীর সঙ্গে পরিচয় হলো, যিনি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। সিলেটের অধিবাসী মানুষটি যৌবন পার হয়ে গেলেও এখনও বিয়ে করার মতো আর্থিক সঙ্গতি অর্জন অথবা ফুরসত করে উঠতে পারেনি। লোকটি আমাদের দূতাবাসের লোকজনের দুর্ব্যবহার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার সহযাত্রীদের সামনেই যথেষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্তাব্যক্তিরা নাকি বাংলাদেশী শ্রমিকদের সঙ্গে রীতিমত দুর্ব্যবহার করতেই সচরাচর অভ্যস্ত। অন্যদিকে মিয়ানমারের যেসব রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছে, তারা মণিকাঞ্চনের বিনিময়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে অবাধ যাতায়াত করে থাকে। এসব রোহিঙ্গা সৌদি আরবে নানারকম অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিরও ভয়ানক ক্ষতি করছে। এরপরও রোহিঙ্গা নাগরিকরাই লেনদেনের বিনিময়ে আমাদের দূতাবাসের লোকজনের কাছে সাদর অভ্যর্থনা পেয়ে থাকে।
এসব অভিযোগের সত্যাসত্য আমার পক্ষে এই স্বল্প সময়ে জানা সম্ভব হয়নি। নীতিনির্ধারকরা চাইলে এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে দেখতে পারেন। সিলেট অঞ্চলের প্রবাসী বাংলাদেশী তিরিশোর্ধ্ব যুবকটি ফিলিপাইন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সৌদি আরবে অনেক ফিলিপিনো নারী গৃহপরিচারিকার কাজ করছে। তাদের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সেদেশের দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সদাতত্পর থাকেন। আমাদের আমলাশ্রেণীর মধ্যে এই সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তারা নিজেদের এলিট শ্রেণীভুক্ত ভাবতেই পছন্দ করেন। সৌদি আরবে কর্মরত প্রবাসী শ্রমজীবী বাংলাদেশীদের অভিযোগের কোনো সদুত্তর আমি দিতে পারিনি। নিজেও একসময় সরকারি দায়িত্বে ছিলাম মনে করে কেবল অপরাধবোধে পীড়িত হয়েছি। আজকের এই মন্তব্য প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমার সেই অপরাধ খানিকটা লাঘবের চেষ্টা করলাম। আর আমার প্রতি বর্তমান সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে যারা দূরদেশ থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আল্লাহর ঘরে ও মহানবী (সা. আ.)’র মসজিদে আমার জন্য দোয়া করেছেন, তাদের প্রতি রইল অপার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
এক অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে আজকের লেখা শেষ করব। মদিনা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ওয়াদি-জিন (wadi-jinn) নামে একটি অঞ্চল রয়েছে। মদিনা বিএনপি শাখার সভাপতি নুরুজ্জামান ১৪ তারিখ সকালে আমাকে মদিনার আশপাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিয়ে গেলেন। আমাদের সঙ্গে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য গাজীপুরের ফজলুল হক মিলনও ছিলেন। সকাল সাতটায় হোটেল ত্যাগ করে প্রথমেই ইসলামের প্রথম মসজিদ কোবায় দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আমরা সেই ওয়াদি-জিন এলাকার দিকে রওনা হলাম। চারদিকে পাহাড় অধ্যুষিত নয়নাভিরাম একটি উপত্যকার বুকচিরে চওড়া রাস্তা চলে গেছে। রাস্তাটি শেষ হয়েছে অর্ধবৃত্তাকার পাহাড়ের পাদদেশে। সব যানবাহনের যাত্রা শেষ করে ওখানেই মোড় ঘুরতে হয়, যেহেতু উঁচু পাহাড়ের দেয়াল ভেদ করে সামনে এগুনোর আর পথ নেই। রাস্তার প্রান্তসীমায় (dead end) পৌঁছে জিপের চালক গাড়ি ঘুরিয়ে গিয়ার নিউট্রালে দিয়ে ব্রেক চেপে দম নেয়ার মতো করে একটুক্ষণ থামল। তারপরই শুরু হলো সেই অলৌকিক ঘটনা। চালক ব্রেক থেকে পা সরাচ্ছে আর গাড়ির গতি বাড়ছে। এদিকে গিয়ার নিউট্রালে, ইঞ্জিন আরপিএম (RPM)-এর কাঁটা শূন্যে। অর্থাত্ ইঞ্জিন ঘুরছে না। গাড়ির গতি বাড়তে বাড়তে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেললো। সোজা রাস্তা, যদিও সামান্য ঢাল (slope) রাস্তার দু’পাশেই রয়েছে। সুতরাং রাস্তা ঢালুর কারণে ইঞ্জিন না চালিয়েই গাড়ির গতি ১২০ কিলোমিটার ওঠার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে আমি অন্তত নিশ্চিত নই। কেউ হয়তো দাবি করতে পারেন দৃষ্টিবিভ্রমের (optical illusion) কারণে downhill slope আমাদের কাছে uphill slope বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ ধরনের ব্যাপার gravity hill-এর ক্ষেত্রে ঘটতেও পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাত্র ৫/৬ ডিগ্রি downhill slope-এর কারণে জিপ কিংবা বাসের মতো ভারী যানবাহনেরও এ ধরনের গতিসঞ্চয় করাটাকে বিজ্ঞানসম্মত হিসেবে মেনে নেয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সেখানে যে downhill slopeই ছিল, সেরকম কোনো প্রমাণও আমার কাছে নেই। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হলে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। একবার নিজে গাড়ি চালিয়ে ব্যাপারটা বোঝার ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা হলো, সৌদি আরবে আমেরিকার মতো বাম হাতে চালিত (left hand drive) গাড়ি ব্যবহার করা হয়। আমার পূর্বঅভিজ্ঞতা না থাকায় সেই সাহস করলাম না। একস্থানে দেখলাম, বোতল থেকে রাস্তায় পানি ঢাললে ঢাল গড়িয়ে নিচে যাওয়ার পরিবর্তে পানি উপরের দিকে যাচ্ছে। এখানেও আমার দৃষ্টিবিভ্রম কাজ করেছে কি-না, বলতে পারছি না। মাধ্যাকর্ষণকে পরাজিত করা এবং ইঞ্জিন বন্ধ গাড়ির প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরত্ব ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে অতিক্রম করার অবিশ্বাস্য ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বিচলিত মনেই হোটেলে ফিরেছি।
পরদিন হোটেল আল-আনসারে আমার রুমমেট, বাংলাদেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ইসলামী চিন্তাবিদ ড. শমশের আলীও ওয়াদি-জিন এলাকার অলৌকিকত্ব প্রত্যক্ষ করে আমার মতো একই রকম বিস্ময় নিয়ে ফিরেছেন। আমরা দু’জন চৌম্বক ক্ষেত্র (magnetic field), gravity hill ইত্যাদি প্রসঙ্গে অনেক আলোচনা করেও এ ব্যাপারে কোনো স্থির বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। শেষপর্যন্ত ঠিক করেছি সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সম্ভব হলে বাংলাদেশের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও ফিজিসিস্টদের একটি দল ওই এলাকায় পাঠানোর উদ্যোগ নেব। আশা করি, তারা এই রহস্যের কিনারা করতে সক্ষম হবেন। তবে শেষ কথা হলো, আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কোরআন শরিফে পরিষ্কার করেই মানবজাতির জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। কাজেই সৃষ্টির অতল রহস্যের কূলকিনারা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলে বিশ্বাসীদের আল্লাহ্র অপরিসীম ক্ষমতার কাছে মাথানত করাটাই উত্তম। পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা আল-ইমরানের ১৮৯, ১৯০ এবং ১৯১ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে আজকের লেখার সমাপ্তি টানছি।
(১৮৯) আর আল্লাহ্র জন্যই হলো আসমান ও যমীনের বাদশাহী। আল্লাহ্ই সর্ববিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী।
(১৯০) নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য।
(১৯১) যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহেক স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও যমীন সৃষ্টির বিষয়ে (তারা বলে), পরওয়ারদেগার, এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।
ই-মেইল : admahmudrahman@gmail.com
আমি নিশ্চিত ছিলাম ভিআইপি লাউঞ্জে আমার যাওয়া নিয়ে ঝামেলা বাধবেই। সৌদি দূতাবাসকে এই জটিলতার মাত্রা বোঝানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। তাদের বোধহয় ধারণা ছিল রাষ্ট্রদূতের সম্মান রক্ষার্থে অন্তত সৌদি বাদশাহর কোনো অতিথির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের চরিত্র বিদেশিদের অনুধাবন করা সাধ্যাতীত। যা ভেবেছিলাম, শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো।
বাসা থেকে ইহ্রাম বেঁধে ভিআইপি লাউঞ্জে বিনা বাধাতেই প্রবেশ করলাম। একে একে অন্যান্য হজযাত্রীও এলেন। এক সময় দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসে আমাদের যার যার বোর্ডিং কার্ডও হস্তান্তর করলেন। বিমানে আরোহণের আগে সবাই রাষ্ট্রদূতের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছি। হঠাত্ দুই বাংলাদেশী অত্যন্ত বিরক্ত চেহারা নিয়ে আমার উল্টোদিকের সোফায় এসে বসলেন। পরনে প্যান্ট-শার্ট দেখে বোঝা গেল তারা কেউই হজযাত্রী নন। লোক দু’টির গম্ভীর চেহারা নিয়ে উপস্থিত সবাইকে তীক্ষষ্ট পর্যবেক্ষণ করার ধরন দেখে তাদের পেশা আন্দাজ করা কঠিন হলো না। মিনিট দশেক পর তারা উঠে গেলেন। খানিক পর অপর এক নিরীহদর্শন ভদ্রলোক আমার একেবারে কাছে এসে যথেষ্ট বিনীতভাবে তাকে অনুসরণ করতে অনুরোধ করলেন।
আমার পাশের সোফাতেই মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম এ রব সস্ত্রীক বসে ছিলেন। লাউঞ্জেরই এক কোনায় ডেকে নিয়ে আমাকে বলা হলো, আমি তত্ক্ষণাত্ ওই স্থান ত্যাগ না করলে সিভিল এভিয়েশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাকরি থাকবে না। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ভিআইপি লাউঞ্জ ছেড়ে বিমানবন্দরের ওপরের তলায় ইমিগ্রেশনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। ততক্ষণে আমার পাসপোর্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অর্থাত্ ওসি ইমিগ্রেশনের কাছে পৌঁছে গেছে। তরুণ পুলিশ অফিসারটির নাম সালাহউদ্দিন। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার হজ পালনের ওপরও সরকারি বাধা-নিষেধ আছে কি না? অফিসারটি আমার প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে সৌজন্যের সঙ্গেই সামনের চেয়ারে বসতে দিয়ে বললেন, বিশেষ একটি টেলিফোন নির্দেশের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। বাকি সব সংস্থার সম্মতি নাকি পাওয়া গেছে।
মিনিট দশেক অপেক্ষার পর আমি আর তার সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি সমীচীন মনে না করে ঘরের বাইরে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে গিয়ে বসলাম। আরও ঘণ্টাখানেক পর পাসপোর্ট হাতে এসে ওসি সালাহউদ্দিন খবর দিলেন, সর্বশেষ টেলিফোনটি অবশেষে পাওয়া গেছে। আমি এবার হজের উদ্দেশে বিমানে উঠতে পারি। বিমানে ওঠার আগে অবশ্য সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ফোনে ধন্যবাদ জানিয়ে ভিআইপি লাউঞ্জে আমার অনুপস্থিতির কারণ জানালাম। বিমানে ওঠার পর জানলাম, আমার মতো অতটা না হলেও সংগ্রাম-এর সম্প্রতি জেলখাটা প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকেও বেশ খানিকটা হেনস্তা করা হয়েছে। তার স্ত্রী সঙ্গে থাকায় ধারণা করছি আসাদ ভাইও যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেছেন। সৌদি মেহমানদের মধ্যে সরকারদলীয় শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদেরই আধিক্য লক্ষ্য করলাম। তাদের মধ্যে একজনকে দেখে প্রকৃতই বিস্মিত হলাম। অন্যের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা শোভন না হলেও এটুকু বোধহয় বলতে পারি যে, আমার জানামতে ভদ্রলোক নিদেনপক্ষে সংশয়বাদী এবং কখনও কখনও আমাদের মহানবী (সা. আ.) সম্পর্কে অশ্রদ্ধামূলক মন্তব্যও করে থাকেন। হজ পালন করাটা তার কাছে বিনে পয়সায় একটি দেশ দেখার অতিরিক্ত কিছু হওয়ার কথা নয়। অবশ্য পারিবারিক জীবনে অ্যাথিস্ট (athiest) মন্ত্রীদেরও যখন কেবল হজ নয় আজকাল রোজার মাসেও ওমরাহ পালন করতে দেখা যাচ্ছে, তখন আর একই সেক্যুলার দলভুক্ত বুদ্ধিজীবীর অপরাধ কী? আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, এরা যেন হেদায়েতপ্রাপ্ত হন।
পবিত্র হজ পালনের কারণে লেখালেখিতে তিন সপ্তাহ বিরতির পরের আজকের এই মন্তব্য প্রতিবেদনে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের এক স্তম্ভ নিয়ে আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। ইসলাম ধর্মের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমার জ্ঞান ও লেখাপড়া এতটাই সামান্য যে, সেই চেষ্টা করাটাও ধৃষ্টতা। আজ আমার লেখার প্রধান উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশীদের নানাবিধ সমস্যা সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা। ঢাকা বিমানবন্দরে আমার যে তিক্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটুকু বর্ণনা করলাম, সেটা নিতান্তই প্রসঙ্গক্রমে এসেছে। ৩১ অক্টোবর ভোর সাড়ে তিনটায় মক্কায় ‘লা মেরিডিয়েন’ হোটেলে পৌঁছে নির্ধারিত কক্ষে জিনিসপত্র রেখেই ওমরাহ পালনের জন্য হারাম শরিফে চলে গেলাম। ফজরের নামাজ শেষে মসজিদের বাইরের চত্বরে একা বসে দোয়া-দরূদ পড়ছি। মনে মনে ইচ্ছা ভিড় খানিক কমলে আল্লাহ্র ঘরের চারদিকে তাওয়াফ শুরু করব। এমন সময় ইহরাম পরিহিত বছর তিরিশের এক তরুণ এসে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি মাহমুদুর রহমান? ছেলেটি বেশ খানিকক্ষণ ধরে দূর থেকে আমাকে লক্ষ্য করছিল। হ্যাঁ সূচক জবাব দিতেই একগাল হাসিতে মুখ ভরিয়ে দু’হাত জড়িয়ে ধরল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আরও জনাদশেক বাংলাদেশী ভিড় জমালেন। একজন দৌড়ে ধূমায়িত চা আর বিস্কুট নিয়ে এলেন। গোল হয়ে বসে সুখ-দুঃখ এবং দেশের কথা শুরু হলো।
বাংলাদেশে সেক্যুলারের ছদ্মবেশে ঘোরতর ইসলামবিদ্বেষী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিকদের সমস্যার তীব্রতা বৃদ্ধির অভিন্ন অভিযোগ একবাক্যে সবাই করলেন। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী তিন বছর ধরে তাদের আকামা সমস্যা সমাধানের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি অব্যাহতভাবে দিয়ে এলেও দিনে দিনে সমস্যা আরও গুরুতর হয়েছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো সৌদি সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করে তাদের সমস্যা ঠিকই মিটিয়ে নিয়েছে। সৌদি আরবের শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রবেশাধিকার এখন কার্যত বন্ধই হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে যারা গল্প করছিলেন, তাদের মধ্যে একজন কম্পিউটার টেকনোলজিস্ট পদে প্রায় দশ বছর ধরে রিয়াদে কাজ করছেন। আশা করেছিলেন, অবশেষে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ক্লান্ত স্ত্রীকে দেশের বাড়ি থেকে তার কাছে নিয়ে আসবেন। কোম্পানিরও আপত্তি ছিল না। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও কেবল বাংলাদেশী হওয়ার অপরাধে তার আবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নাকচ হয়ে গেছে। দেখলাম এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাতেও সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। তরুণটির সাফ কথা, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্বতসমান ব্যর্থতার ফলেই স্ত্রীকে সে কাছে নিতে পারছে না।
অন্যরাও ছেলেটির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বললো, শুধু সৌদি আরব কেন, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গেই মহাজোট সরকার বিশাল দূরত্ব তৈরি করেছে। অতিমাত্রায় ভারত তোষণের ভ্রান্ত নীতি এই সরকারকে বিশ্বে কেবল মর্যাদাহীনই করেনি, সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের একটি আশ্রিত রাজ্যের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অবমাননাকর পরিচয়ে কালিমালিপ্ত করেছে। এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের আত্মঘাতী পররাষ্ট্র নীতির ফায়দা তুলছে ভারত। পাকিস্তান তো আগে থেকেই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন নাকি নেপালিরাও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাকরিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কাবাঘরের সামনে সেদিন উপস্থিত বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবে বর্তমানে ২২ লাখ বাংলাদেশী বৈধভাবে কর্মরত থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা নাকি ৩৫ থেকে ৪০ লাখ হতে পারে। এরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে যে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন, ক্ষমতাসীনরা সেই অর্থ নিয়ে লুটপাট এবং ফুটানি করে বেড়ালেও তাদের স্বার্থ দেখার মতো সময় কোনো ডিজিটাল মন্ত্রীর নেই।
গত অর্থবছরে শুধু সৌদি আরব থেকে এসব প্রবাসী বাংলাদেশী ৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে যে কোনো দেশপ্রেমিক সরকারের দায়িত্ব ছিল সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে নৈকট্য বাড়ানো। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বর্তমান সরকারের প্রতিটি মন্ত্রী ভারতীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কৃপালাভের চেষ্টায় জানপাত তো করছেনই, এখন দেখতে পাচ্ছি এদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অবস্থানও মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাহ এবং সরকারপ্রধানদের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে। ভারত সরকারের নীতিনির্ধারকদের পদযুগলে এত তৈলমর্দনের বিনিময়ে বাংলাদেশের ভাগ্যে সীমান্তে নাগরিকদের লাশের মিছিল এবং পানি ও ভূমি আগ্রাসন ছাড়া ভারতের কাছ থেকে আর কিছু মিলছে না। এবারের পবিত্র হজ পালনকালে সৌদি আরবের তিনটি শহরে যাওয়ার সুযোগ ঘটেছে। মক্কা, মদিনা এবং জেদ্দা। তিন শহরেই প্রতিটি বাংলাদেশীর কাছ থেকে বর্তমান সরকার সম্পর্কে একই ধরনের অভিযোগ শুনে এসেছি। সৌদি বাদশাহর মেহমান হয়ে আমার সঙ্গে সরকারি কর্তাব্যক্তি এবং সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও হজ করে এসেছেন। নীতিনির্ধারকদের কাছে তারা প্রকৃত পরিস্থিতির কেমন চিত্র উপস্থাপন করবেন জানি না; তবে সততার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যার কথাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ভয়ে তুলে ধরতে পারলে তাদের হজ হয়তো মহান আল্লাহর কাছে কবুল হতে পারে। মাসে মাত্র তিন-চারশ’ রিয়াল বেতনে মরুভূমির প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে মানবেতর পরিবেশে এই মানুষগুলো দিনরাত পরিশ্রম করে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন, এ বিষয়টি স্মরণে রাখলে তাদের বিবেক অন্তত পীড়া দেবে না।
হজ শেষ করে ফেরার দিন বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে জেদ্দার এক সরাইখানায় আমরা কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়েছিলাম। সেখানে অপর এক বাংলাদেশীর সঙ্গে পরিচয় হলো, যিনি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। সিলেটের অধিবাসী মানুষটি যৌবন পার হয়ে গেলেও এখনও বিয়ে করার মতো আর্থিক সঙ্গতি অর্জন অথবা ফুরসত করে উঠতে পারেনি। লোকটি আমাদের দূতাবাসের লোকজনের দুর্ব্যবহার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার সহযাত্রীদের সামনেই যথেষ্ট ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্তাব্যক্তিরা নাকি বাংলাদেশী শ্রমিকদের সঙ্গে রীতিমত দুর্ব্যবহার করতেই সচরাচর অভ্যস্ত। অন্যদিকে মিয়ানমারের যেসব রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছে, তারা মণিকাঞ্চনের বিনিময়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে অবাধ যাতায়াত করে থাকে। এসব রোহিঙ্গা সৌদি আরবে নানারকম অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিরও ভয়ানক ক্ষতি করছে। এরপরও রোহিঙ্গা নাগরিকরাই লেনদেনের বিনিময়ে আমাদের দূতাবাসের লোকজনের কাছে সাদর অভ্যর্থনা পেয়ে থাকে।
এসব অভিযোগের সত্যাসত্য আমার পক্ষে এই স্বল্প সময়ে জানা সম্ভব হয়নি। নীতিনির্ধারকরা চাইলে এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে দেখতে পারেন। সিলেট অঞ্চলের প্রবাসী বাংলাদেশী তিরিশোর্ধ্ব যুবকটি ফিলিপাইন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সৌদি আরবে অনেক ফিলিপিনো নারী গৃহপরিচারিকার কাজ করছে। তাদের যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সেদেশের দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সদাতত্পর থাকেন। আমাদের আমলাশ্রেণীর মধ্যে এই সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তারা নিজেদের এলিট শ্রেণীভুক্ত ভাবতেই পছন্দ করেন। সৌদি আরবে কর্মরত প্রবাসী শ্রমজীবী বাংলাদেশীদের অভিযোগের কোনো সদুত্তর আমি দিতে পারিনি। নিজেও একসময় সরকারি দায়িত্বে ছিলাম মনে করে কেবল অপরাধবোধে পীড়িত হয়েছি। আজকের এই মন্তব্য প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমার সেই অপরাধ খানিকটা লাঘবের চেষ্টা করলাম। আর আমার প্রতি বর্তমান সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে যারা দূরদেশ থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আল্লাহর ঘরে ও মহানবী (সা. আ.)’র মসজিদে আমার জন্য দোয়া করেছেন, তাদের প্রতি রইল অপার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
এক অত্যাশ্চর্য অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে আজকের লেখা শেষ করব। মদিনা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ওয়াদি-জিন (wadi-jinn) নামে একটি অঞ্চল রয়েছে। মদিনা বিএনপি শাখার সভাপতি নুরুজ্জামান ১৪ তারিখ সকালে আমাকে মদিনার আশপাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিয়ে গেলেন। আমাদের সঙ্গে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য গাজীপুরের ফজলুল হক মিলনও ছিলেন। সকাল সাতটায় হোটেল ত্যাগ করে প্রথমেই ইসলামের প্রথম মসজিদ কোবায় দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আমরা সেই ওয়াদি-জিন এলাকার দিকে রওনা হলাম। চারদিকে পাহাড় অধ্যুষিত নয়নাভিরাম একটি উপত্যকার বুকচিরে চওড়া রাস্তা চলে গেছে। রাস্তাটি শেষ হয়েছে অর্ধবৃত্তাকার পাহাড়ের পাদদেশে। সব যানবাহনের যাত্রা শেষ করে ওখানেই মোড় ঘুরতে হয়, যেহেতু উঁচু পাহাড়ের দেয়াল ভেদ করে সামনে এগুনোর আর পথ নেই। রাস্তার প্রান্তসীমায় (dead end) পৌঁছে জিপের চালক গাড়ি ঘুরিয়ে গিয়ার নিউট্রালে দিয়ে ব্রেক চেপে দম নেয়ার মতো করে একটুক্ষণ থামল। তারপরই শুরু হলো সেই অলৌকিক ঘটনা। চালক ব্রেক থেকে পা সরাচ্ছে আর গাড়ির গতি বাড়ছে। এদিকে গিয়ার নিউট্রালে, ইঞ্জিন আরপিএম (RPM)-এর কাঁটা শূন্যে। অর্থাত্ ইঞ্জিন ঘুরছে না। গাড়ির গতি বাড়তে বাড়তে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেললো। সোজা রাস্তা, যদিও সামান্য ঢাল (slope) রাস্তার দু’পাশেই রয়েছে। সুতরাং রাস্তা ঢালুর কারণে ইঞ্জিন না চালিয়েই গাড়ির গতি ১২০ কিলোমিটার ওঠার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে আমি অন্তত নিশ্চিত নই। কেউ হয়তো দাবি করতে পারেন দৃষ্টিবিভ্রমের (optical illusion) কারণে downhill slope আমাদের কাছে uphill slope বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ ধরনের ব্যাপার gravity hill-এর ক্ষেত্রে ঘটতেও পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাত্র ৫/৬ ডিগ্রি downhill slope-এর কারণে জিপ কিংবা বাসের মতো ভারী যানবাহনেরও এ ধরনের গতিসঞ্চয় করাটাকে বিজ্ঞানসম্মত হিসেবে মেনে নেয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সেখানে যে downhill slopeই ছিল, সেরকম কোনো প্রমাণও আমার কাছে নেই। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হলে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। একবার নিজে গাড়ি চালিয়ে ব্যাপারটা বোঝার ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা হলো, সৌদি আরবে আমেরিকার মতো বাম হাতে চালিত (left hand drive) গাড়ি ব্যবহার করা হয়। আমার পূর্বঅভিজ্ঞতা না থাকায় সেই সাহস করলাম না। একস্থানে দেখলাম, বোতল থেকে রাস্তায় পানি ঢাললে ঢাল গড়িয়ে নিচে যাওয়ার পরিবর্তে পানি উপরের দিকে যাচ্ছে। এখানেও আমার দৃষ্টিবিভ্রম কাজ করেছে কি-না, বলতে পারছি না। মাধ্যাকর্ষণকে পরাজিত করা এবং ইঞ্জিন বন্ধ গাড়ির প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরত্ব ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে অতিক্রম করার অবিশ্বাস্য ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বিচলিত মনেই হোটেলে ফিরেছি।
পরদিন হোটেল আল-আনসারে আমার রুমমেট, বাংলাদেশের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ইসলামী চিন্তাবিদ ড. শমশের আলীও ওয়াদি-জিন এলাকার অলৌকিকত্ব প্রত্যক্ষ করে আমার মতো একই রকম বিস্ময় নিয়ে ফিরেছেন। আমরা দু’জন চৌম্বক ক্ষেত্র (magnetic field), gravity hill ইত্যাদি প্রসঙ্গে অনেক আলোচনা করেও এ ব্যাপারে কোনো স্থির বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। শেষপর্যন্ত ঠিক করেছি সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সম্ভব হলে বাংলাদেশের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও ফিজিসিস্টদের একটি দল ওই এলাকায় পাঠানোর উদ্যোগ নেব। আশা করি, তারা এই রহস্যের কিনারা করতে সক্ষম হবেন। তবে শেষ কথা হলো, আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কোরআন শরিফে পরিষ্কার করেই মানবজাতির জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। কাজেই সৃষ্টির অতল রহস্যের কূলকিনারা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলে বিশ্বাসীদের আল্লাহ্র অপরিসীম ক্ষমতার কাছে মাথানত করাটাই উত্তম। পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা আল-ইমরানের ১৮৯, ১৯০ এবং ১৯১ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে আজকের লেখার সমাপ্তি টানছি।
(১৮৯) আর আল্লাহ্র জন্যই হলো আসমান ও যমীনের বাদশাহী। আল্লাহ্ই সর্ববিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী।
(১৯০) নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য।
(১৯১) যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহেক স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও যমীন সৃষ্টির বিষয়ে (তারা বলে), পরওয়ারদেগার, এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।
ই-মেইল : admahmudrahman@gmail.com
No comments