সফিকুলের শতরঞ্জি ৩৬ দেশে by আরিফুল হক
ঢাকার শুক্রাবাদে একটা দোকানের নাম শতরঞ্জি। এখানে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি পাওয়া যায়। নাগরিক অন্দরসাজে বাংলাদেশের নিজস্ব ‘কার্পেট’ এই শতরঞ্জি বেশ কয়েক বছর হলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
এই শতরঞ্জি দোকানের পেছনে আছে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠান। আর সেই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সফিকুল আলম। তিনি শতরঞ্জিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বাইরে। ৩৬টি দেশে শৈল্পিক শতরঞ্জি রপ্তানি করে বছরে ৪০ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আনছেন দেশে।
সফিকুল আলমের গল্পটা জানতে যেতে হবে আড়াই দশক আগে। গমগাছের খড় দিয়ে দেড় হাজার ছবি বানিয়ে ১৯৮৬ সালে ঢাকার শিল্প মেলায় একটি স্টল দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ছবি বিক্রি হলো না। ছবিগুলো ছিল দেশ-বিদেশের বরেণ্য গুণী ব্যক্তিসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের। হতাশই হলেন। এরপর তিনি স্টলে টাঙিয়ে দিলেন ‘আপনি কি আপনার ছবি গমের খড় দিয়ে বানাতে চান?’ এরপর অর্ডার আসতে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি করে ছবি বানাতে থাকেন সফিকুল। এতে তিনি উৎসাহিত হলেন। চলে যান রংপুরে।
১৯৮৭ সালে ছাত্ররাজনীতির কারণে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে রংপুর কারাগারে যান। কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত অনেক কয়েদি হস্তশিল্পের বুননের কাজ করেন। তাঁদের ‘তাঁতচালি’ বলা হয়। এই তাঁতচালিদের কাজ তিন মাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন সফিকুল। জেল থেকে বেরিয়ে সেই বুননের কাজে ঝুঁকে পড়েন।
সফিকুল আলমের বাবা মরহুম এম এ সোবহান ছিলেন রাজনীতিবিদ। বাবার কারণে তিনিও ছোটবেলা থেকে জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতিতে। ছাত্রজীবনে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) পাস করেন।
১৯৯১ সালেই রংপুরে কারুপণ্য নামের একটি দোকান দিয়ে ‘শতরঞ্জি’ বুননের কাজ শুরু করলেন। জাগিয়ে তুললেন শতরঞ্জি। যে শতরঞ্জি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল, সেই শতরঞ্জি তিনি এখন ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার ৩৬টি দেশে রপ্তানি করছেন।
শতরঞ্জি শিল্পের ২০ জন কারিগরকে খুঁজে বের করেন। সেই পুরোনো কারিগরদের দিয়ে নতুনদের প্রশিক্ষিত করে শতরঞ্জি বুননের কাজ শুরু করেন। এতে সামান্য আয় হয়। সফিকুল বললেন, ‘তখন আমি ভাবলাম, এখানেই থেমে থাকলে হবে না। শতরঞ্জি বিক্রির জন্য ব্যাপক প্রচারণায় নামি সে সময়। শতরঞ্জি বানিয়ে দেশের বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় স্টল দিই। শতরঞ্জির চাহিদা বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় “শতরঞ্জি” চালু করি।’
এখানেই শেষ নয়। শতরঞ্জির বাজার তৈরি করতে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন। ২০০২ সালে প্রথম জাপানে শতরঞ্জি রপ্তানির সুযোগ পান। সেখান থেকে আয় হয় ২০ হাজার ডলার।
এরপর রংপুরের নিসবেতগঞ্জ গ্রামে বিসিকের বন্ধ থাকা একটি দোচালা ছোট্ট কারখানা ভাড়া নেন। সেখানে ওই গ্রামের ৫০ জন নারী-পুরুষ দিয়ে কারখানাটি চালু করে শতরঞ্জি বোনা শুরু করেন। ব্যবসা বাড়তে থাকে। প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হলো কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড। সফিকুল গড়ে তুললেন একে একে পাঁচটি কারখানা। এগুলো হলো, রংপুরের লাহিড়ির হাট, পদাগঞ্জ, পীরগাছা, রাবার্টসনগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের উলিপুরে। বর্তমানে এসব কারখানায় তিন হাজার ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন।
সফিকুল জানালেন, বর্তমানে বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্যে হস্তশিল্পের ৬০ শতাংশই রপ্তানি করে থাকেন তিনি। ২০১০ সালে জাতীয় রপ্তানি পুরস্কারে স্বর্ণপদক পান। ২০১২ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাঁকে কমার্শিয়াল ইম্পর্টেন্ট পারসন (সিআইপি) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সফিকুল আলম বললেন, ‘শতরঞ্জি এখন শুধু রংপুরের ঐতিহ্য নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য। রংপুরের অজপাড়াগাঁ থেকে শুধু যে শতরঞ্জি রপ্তানি করছি তা নয়। এখানকার দরিদ্র পরিবারের লোকজন কাজের সুযোগ পেয়েছেন।’ সফিকুুলের সাফল্যের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে এই শিল্পের ৩০টি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে বলে জানালেন তিন।
গত তিন বছর ধরেই গড়ে প্রতিবছর ৪০ লাখ ডলার দেশে আনছেন সাইফুল। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে এই রপ্তানি আয় বেড়ে বছরে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ডলারে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী শতরঞ্জির এই নতুন কান্ডারি।
প্রথম আলোর আমিই বাংলাদেশ আয়োজনের জন্য পরামর্শ দিতে যোগাযোগ: ab@pৎothom-alo.info
সফিকুল আলমের গল্পটা জানতে যেতে হবে আড়াই দশক আগে। গমগাছের খড় দিয়ে দেড় হাজার ছবি বানিয়ে ১৯৮৬ সালে ঢাকার শিল্প মেলায় একটি স্টল দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো ছবি বিক্রি হলো না। ছবিগুলো ছিল দেশ-বিদেশের বরেণ্য গুণী ব্যক্তিসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের। হতাশই হলেন। এরপর তিনি স্টলে টাঙিয়ে দিলেন ‘আপনি কি আপনার ছবি গমের খড় দিয়ে বানাতে চান?’ এরপর অর্ডার আসতে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি করে ছবি বানাতে থাকেন সফিকুল। এতে তিনি উৎসাহিত হলেন। চলে যান রংপুরে।
১৯৮৭ সালে ছাত্ররাজনীতির কারণে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে রংপুর কারাগারে যান। কারাগারে দণ্ডপ্রাপ্ত অনেক কয়েদি হস্তশিল্পের বুননের কাজ করেন। তাঁদের ‘তাঁতচালি’ বলা হয়। এই তাঁতচালিদের কাজ তিন মাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন সফিকুল। জেল থেকে বেরিয়ে সেই বুননের কাজে ঝুঁকে পড়েন।
সফিকুল আলমের বাবা মরহুম এম এ সোবহান ছিলেন রাজনীতিবিদ। বাবার কারণে তিনিও ছোটবেলা থেকে জড়িয়ে পড়েন ছাত্ররাজনীতিতে। ছাত্রজীবনে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) পাস করেন।
১৯৯১ সালেই রংপুরে কারুপণ্য নামের একটি দোকান দিয়ে ‘শতরঞ্জি’ বুননের কাজ শুরু করলেন। জাগিয়ে তুললেন শতরঞ্জি। যে শতরঞ্জি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল, সেই শতরঞ্জি তিনি এখন ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার ৩৬টি দেশে রপ্তানি করছেন।
শতরঞ্জি শিল্পের ২০ জন কারিগরকে খুঁজে বের করেন। সেই পুরোনো কারিগরদের দিয়ে নতুনদের প্রশিক্ষিত করে শতরঞ্জি বুননের কাজ শুরু করেন। এতে সামান্য আয় হয়। সফিকুল বললেন, ‘তখন আমি ভাবলাম, এখানেই থেমে থাকলে হবে না। শতরঞ্জি বিক্রির জন্য ব্যাপক প্রচারণায় নামি সে সময়। শতরঞ্জি বানিয়ে দেশের বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় স্টল দিই। শতরঞ্জির চাহিদা বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় “শতরঞ্জি” চালু করি।’
এখানেই শেষ নয়। শতরঞ্জির বাজার তৈরি করতে বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন। ২০০২ সালে প্রথম জাপানে শতরঞ্জি রপ্তানির সুযোগ পান। সেখান থেকে আয় হয় ২০ হাজার ডলার।
এরপর রংপুরের নিসবেতগঞ্জ গ্রামে বিসিকের বন্ধ থাকা একটি দোচালা ছোট্ট কারখানা ভাড়া নেন। সেখানে ওই গ্রামের ৫০ জন নারী-পুরুষ দিয়ে কারখানাটি চালু করে শতরঞ্জি বোনা শুরু করেন। ব্যবসা বাড়তে থাকে। প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হলো কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড। সফিকুল গড়ে তুললেন একে একে পাঁচটি কারখানা। এগুলো হলো, রংপুরের লাহিড়ির হাট, পদাগঞ্জ, পীরগাছা, রাবার্টসনগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের উলিপুরে। বর্তমানে এসব কারখানায় তিন হাজার ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন।
সফিকুল জানালেন, বর্তমানে বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্যে হস্তশিল্পের ৬০ শতাংশই রপ্তানি করে থাকেন তিনি। ২০১০ সালে জাতীয় রপ্তানি পুরস্কারে স্বর্ণপদক পান। ২০১২ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাঁকে কমার্শিয়াল ইম্পর্টেন্ট পারসন (সিআইপি) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সফিকুল আলম বললেন, ‘শতরঞ্জি এখন শুধু রংপুরের ঐতিহ্য নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য। রংপুরের অজপাড়াগাঁ থেকে শুধু যে শতরঞ্জি রপ্তানি করছি তা নয়। এখানকার দরিদ্র পরিবারের লোকজন কাজের সুযোগ পেয়েছেন।’ সফিকুুলের সাফল্যের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে এই শিল্পের ৩০টি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে বলে জানালেন তিন।
গত তিন বছর ধরেই গড়ে প্রতিবছর ৪০ লাখ ডলার দেশে আনছেন সাইফুল। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে এই রপ্তানি আয় বেড়ে বছরে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ডলারে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী শতরঞ্জির এই নতুন কান্ডারি।
প্রথম আলোর আমিই বাংলাদেশ আয়োজনের জন্য পরামর্শ দিতে যোগাযোগ: ab@pৎothom-alo.info
No comments