ভুল ইস্যুতে হরতাল-এ প্রবণতা অনাকাঙ্ক্ষিত
বিদ্যমান উত্তরাধিকার আইনের সংস্কার দীর্ঘদিন ধরে নারী আন্দোলনের দাবিনামার শীর্ষে আছে। অনেকেই মনে করেন, সমাজের সমতা প্রতিষ্ঠিত হলেও যদি সম্পত্তি অর্জন ও তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
কিন্তু সম্পত্তিতে সমতাভিত্তিক উত্তরাধিকারের প্রশ্নটি বাংলাদেশে নানা তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিশেষত, সমতাভিত্তিক উত্তরাধিকার নীতি ইসলামী নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক_ এমন যুক্তি দেখিয়ে এ সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নের বিরোধিতা করেছেন অনেকেই। শুধু উত্তরাধিকার বিষয়ক নীতিই নয়, নারী উন্নয়নের জন্য যে কোনো নীতিমালারই বিরোধিতা করেন কোনো কোনো মহল। মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় নীতি ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকার নতুন গৃহীত নারী উন্নয়ন নীতিতে উত্তরাধিকার আইনে সমতার বিধান চালু করেনি। বরং ইসলামী বিধান অনুসারেই এটি বহাল রেখে নীতি প্রণীত হয়েছে। এ নীতি অনুসারে উত্তরাধিকার আইনে নারী পুরুষের সমান সম্পদ অর্জন করতে না পারলেও যে সম্পদ নারী অর্জন করবে তার ওপর নারীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নীতি গৃহীত হয়েছে। সকলেই স্বীকার করবেন, সরকারের এ নীতি নারীর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে এ নীতির অবস্থান সাংঘর্ষিক নয় বরং সহযোগিতামূলক। ফলে মন্ত্রিসভায় গৃহীত 'নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১' নিয়ে যখন দেশের সব মহলে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে তখনই এর বিরুদ্ধে অশুভ তৎপরতা শুরু করেছে কিছু স্বার্থান্বেষী শক্তি। ইসলামিক সংগঠনের নামে এ স্বার্থান্বেষী শক্তিগুলো নীতির ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এ ব্যাখ্যা অগ্রহণযোগ্য ও অনভিপ্রেত। শুধু ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনেই তারা সক্রিয় নয়_ রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে তারা হরতালও ডেকেছে। নারী উন্নয়ন নীতির মতো ইতিবাচক একটি কর্মসূচি ঠেকাবার জন্য ভুল ব্যাখ্যা ও হরতাল ডাকার মধ্য দিয়ে নারীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি অসম্মান যেমন করা হয়েছে, তেমনি এটিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা হচ্ছে। হরতালের মতো নৈরাজ্যমূলক কর্মসূচি এমনিতেই পরিত্যাজ্য। এখন নাগরিকরা মনে করেন, ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যও হরতাল সমর্থনযোগ্য কর্মসূচি নয়। এটি সমাজকে অস্থিতিশীল করে, অর্থনীতির গতি রুদ্ধ করে, সংঘাত-সংঘর্ষ আরও সংঘাত ও সংঘর্ষের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য বিকল্প পথ অনুসরণই যেখানে নাগরিকদের দাবি, সেখানে ইসলামী ঐক্য জোটের মতো সংগঠনগুলোর ভুল দাবির জন্য হরতালের মতো কর্মসূচি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নাগরিকরা মনে করেন, কোনো হুজুগে কান দিয়ে নয়_ নারী উন্নয়ন নীতিটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেই আপত্তিকর কিছু থাকলে তা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ভুল প্রচারণা বন্ধ হওয়া উচিত। এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে এ নীতিকে কেন্দ্র করে দেওয়া হরতাল প্রত্যাহার করা উচিত।
No comments