কন্যা শিশু দিবস-বৈষম্যমুক্ত সমাজ চাই by বনরূপা
বিশ্বজুড়ে শিশুদের কল্যাণে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করেছে। এই সনদের প্রথম ২২ স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছিল, তার প্রধান শিকার ছিল শিশু। ফলে ভবিষ্যৎ বিশ্বের কর্ণধারদের রক্ষায় বিশ্ববিবেক আর মানবতার ধ্বজাধারীরা এগিয়ে আসেন। তবে যুদ্ধবিগ্রহ এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতিবাচক পীড়নের প্রধান শিকার নারী সমাজ তথা কন্যা শিশু।
এ কথা চিন্তা করে কন্যা শিশুর জন্য একটি বিশেষ দিন নির্ধারণের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এসব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বর কন্যা শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত শিশু কনভেনশনে শুধু একটি দিনের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ না রেখে আরো বড় উদ্যোগ নেওয়ার ওপর উপস্থিত প্রতিনিধিরা মত ব্যক্ত করেন। পরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কন্যা শিশু সপ্তাহ এবং কন্যা শিশু দিবস পালনের আয়োজন করা হয়। পরিবারে মূলত ছেলে শিশুরা অধিকার, পুষ্টি বা অন্যান্য সুযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু কন্যা শিশুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা পায় না। ছেলে শিশুর মতো পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ পেলে বিশ্বজুড়ে কন্যা শিশুরা আলো ছড়াতে পারবে। কিছু বিদ্যমান বৈষম্যের কারণে এই সম্ভাবনা নানা ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং আখেরে ক্ষতিটা হচ্ছে সবারই। বৈষম্য জিইয়ে রেখে কোনো রকম উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব নয়। বৈষম্য উন্নয়ন-অগ্রগতি ও বিকাশের অন্তরায়। কন্যা শিশুদের বেলায় যেসব প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান, সেসব অপসারণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে অবশ্যই বিদ্যমান অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির অবসান ঘটবে এবং সমাজ বিকশিত হবে। মনে রাখা দরকার, আমাদের কন্যা শিশুরাও ছেলেদের পাশাপাশি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে পারে এবং সক্ষম_যদি আমরা সবাই তাদের সেভাবে সুযোগ করে দিই, মর্যাদা দিই। কন্যা শিশুরা ইতিমধ্যে লেখাপড়াসহ সমাজের নানা ক্ষেত্রে তাদের কৃতকর্মের কারণেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। নানা ক্ষেত্রে তারা তাদের প্রতিভা, মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে। এই সমাজ মানুষের। লিঙ্গভেদ নয়, একজন মানুষের সর্বাগ্রে পরিচয় মানুষ হিসেবে। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ কিংবা বৈষম্য জিইয়ে রাখলে সমাজ কি বিকশিত হতে পারে? সব কিছুর আগে বৈষম্য বিলোপ করে সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে হবে।
বনরূপা
বনরূপা
No comments