সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা-ওয়েবসাইটের তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্তে ব্যবহূত একটি ওয়েবসাইটের তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে আসামিপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিনকে জেরা করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল হেলালউদ্দিনকে চতুর্থ দিনের মতো আসামিপক্ষ জেরা করে।


সকালে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম শুরুর আগেই সাঈদীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। জেরায় আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে হেলালউদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন খাজা খয়েরউদ্দিন। ওই তালিকায় মাওলানা আবদুর রহিমের নাম আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি তিনি জানেন না।
মিজানুল এরপর www.genocidebangladesh.org নামের ওয়েবাসাইটের তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে এটি কবে চালু হয়েছে, কারা পরিচালনা করেন ইত্যাদি নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। দুপুরের বিরতির পর আবার জেরা শুরু হলে মিজানুল বলেন, www.kean.edu/~bgsg/welcome.html নামের ওয়েবসাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সটারনাল এডুকেশন-সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইট এবং এতে বরিশাল বা পিরোজপুর তো দূরের কথা, বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা উপাত্ত নেই। তদন্ত কর্মকর্তা ইচ্ছা করে এই ওয়েবসাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন। জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের ২৮তম সাক্ষী হেলালউদ্দিন বলেন, ‘এটি সত্য নয়।’
এরপর মিজানুল বলেন, আপনি যে তথ্য ডাউনলোড করেছেন, তাতে সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুট, ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য নেই। জবাবে হেলালউদ্দিন বলেন, ‘সেখানে শতকরা হার ও সংখ্যা উল্লেখ আছে, কিন্তু কারও নাম নেই।’ এই জবাবে আপত্তি জানিয়ে মিজানুল বলেন, ‘প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দিন।’
এ সময় ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, ‘আপনি প্রশ্ন অনুসারে উত্তর দিচ্ছেন না। দিচ্ছেন কি?’ হেলালউদ্দিন বলেন, ‘দিচ্ছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘কীভাবে দিচ্ছেন?’ এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সহিদুর রহমান বলেন, ‘সাক্ষীর ব্যাখ্যা দেওয়ার অধিকার আছে।’ ট্রাইব্যুনাল কৌঁসুলিকে বলেন, ‘আগে উত্তর দেবেন, পরে ব্যাখ্যা দেবেন। এটা আদালত, খেলার মাঠ নয়। তদন্ত কর্মকর্তা শিক্ষিত ও পদস্থ ব্যক্তি, পুলিশের সহকারী কমিশনার (এএসপি), পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। ওনার প্রশ্ন বোঝার ক্ষমতা আছে।’
এরপর মিজানুল আবার প্রশ্ন শুরু করেন। তিনি জানতে চান, তদন্ত সংস্থা গঠিত হওয়ার পর কি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিযোগ আহ্বান করা হয়েছিল? জবাবে হেলালউদ্দিন বলেন, ‘না।’ অভিযোগকারী মাহবুবুল আলম হাওলাদার ২০১০ সালের ২০ জুলাই অভিযোগ দেওয়ার পর সেটি এক দিন পর নথিভুক্ত করা হয়েছিল কেন—মিজানুলের এ প্রশ্নে হেলালউদ্দিন বলেন, ‘২১ জুলাই সেটি আমার হাতে দেওয়া হয়েছিল।’ তদন্ত সংস্থায় ওই সময়ে অভিযোগ নিবন্ধনের দায়িত্ব কার ছিল—এর জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক খানের।’
বিডিনিউজের প্রতিবেদককে সতর্ক করলেন ট্রাইব্যুনাল: ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের প্রতিবেদককে একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম সঠিক হয়নি উল্লেখ করে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন। ‘ওয়েবসাইট কোয়ারিজ হল্ট আইসিটি-১ গ্রিলিং’ শিরোনামে ৭ মে বিডিনিউজে ওই প্রতিবেদন প্রচারিত হয়।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল আসামির কাঠগড়ায় তাঁর উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করেন। পরে আসামিপক্ষের শুনানির জন্য ১৩ মে দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৬ এপ্রিল এই মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়।
একই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় আসামিপক্ষ আজ বুধবার যুক্তি উপস্থাপন করবে। গতকাল তাঁকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন পড়ে শোনান তাঁর আইনজীবী ফরিদউদ্দিন খান। কাদের মোল্লা আসামির কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.