সাবেক সেতুসচিবকে রিমান্ডে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রশাসন সমিতির
সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ফৌজদারি মামলার আসামির মতো রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএস প্রশাসন সমিতি) বৈঠকে এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে’ যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা ‘অশোভন ও অবমাননাকর’। গতকাল সোমবার সমিতির এই অবস্থান মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসনসচিবকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মামলায় গত ২৭ ডিসেম্বর মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে হাইকোর্ট থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বিসিএস সমিতির বৈঠকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ৩২ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এঁরা সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। গত বৃহস্পতিবার নিউ ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। ওই দিন ছিল সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বিদায়ী ও নতুন কমিটির যৌথ বৈঠক। বিদায়ী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি আবু আলম মো. শহীদ খান সভায় সভাপতিত্ব করেন। নতুন কমিটির সভাপতিও তিনি।
সেতুসচিবের গ্রেপ্তারের পর থেকেই সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সমিতির বৈঠকেও তা জানিয়েছেন। পরে বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়, মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে’ আটক করা প্রশাসন পরিবার ও সমিতির জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর। এভাবে তাঁকে আটক করায় পুরো প্রশাসন পরিবার অপমানিতও। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক বলেও কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।
কার্যবিবরণীতে বলা হয়, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব কোনো গর্হিত ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন না। তিনি পলাতকও ছিলেন না। দুদক যখনই চেয়েছে, তিনি তখনই উপস্থিত হয়েছেন। এর পরও তাঁকে অশোভনভাবে আটক ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় প্রশাসনের সব কর্মকর্তা অপমানিত হয়েছেন।
সমিতির বৈঠকে সদস্যরা বলেন, অপরাধী যেই হোক, তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। তবে প্রতিটি সরকারি সংস্থারই নিজেদের ক্ষমতা ও আইন সম্পর্কে সঠিক ধারণা এবং আইন প্রয়োগে যত্নবান ও সংবেদনশীল হওয়া দরকার।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, সমিতির কয়েকজন সদস্য তাঁদের বক্তব্যে দুদকে হাজতখানা নির্মাণের সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, কোন প্রেক্ষিতে তারা এ ধরনের হাজতখানা করেছে, তা বোধগম্য নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে স্বাধীন সংস্থার এ ধরনের ক্ষমতা নেই। এভাবে লোক দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া নাটক ছাড়া কিছুই নয়। কয়েকজন প্রশ্ন তোলেন, যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সেই সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো না? মন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া সচিব কিছু করতে পারেন না বলেও দাবি করেন তাঁরা।
প্রশাসন সমিতির চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঞা বলেন, ‘এখনো চিঠি দেখতে পারিনি। কারণ আমি দুপুরে অফিস থেকে বের হয়ে এসেছি। চিঠি দেখেই মন্তব্য করা সমীচীন হবে।’
No comments