ওরা জামায়াতের আর্মড ক্যাডার, নিজামীর বীজ- রগ কেটে উত্থান!
নির্মম, নৃশংসতা, পৈশাচিকতার নাম শিবির। রগ কেটে জবাই করে মানুষ হত্যা বাহিনীর নাম শিবির। আলস্নাহর নামে পশু মনোবৃত্তিতে আলস্নাহরই সৃষ্টির সেরা মানুষকে নির্দ্বিধায় যারা অকাতরে হত্যা করে_তাদের নাম শিবির।
এরা একাত্তরের নরঘাতকের দল জামায়াতের নিজামী বাহিনীর বীজ। 'মরলে শহীদ-বাঁচলে গাজী' _এ সেস্নাগানে বলীয়ান হয় এরা। ধর্মের লেবাস এঁটে ধর্মপ্রাণ মানুষকে কৌশলে বিভ্রানত্ম করতে পটু স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের আর্মড ক্যাডার বাহিনীই হচ্ছে এ শিবির।চট্টগ্রামে ছাত্র রাজনীতিতে স্বাধীনতার পরে ছাত্র সংগঠনের নেতাকমর্ীদের রগ কেটে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার নগ্নরূপ নিয়ে এদের হিংস্রতা প্রকাশ পায় প্রথম। আশির দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সিরাজুস_সালেহীন' বাহিনী সৃষ্টি করে শিবিরের তা-বলীলায় দেশজুড়ে রীতিমতো আতঙ্কের জন্ম দিয়েছিল। রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী নিজামী_মুজাহিদ বাহিনীর ও এর দোসরদের লালিত শিবিরের মূল অবস্থান দেশজুড়ে বিভিন্ন শিাঙ্গন জুড়ে। একদিকে চট্টগ্রাম, অপরদিকে উত্তরাঞ্চল এদের বর্তমান মূল শক্তি। তন্মধ্যে চট্টগ্রামই শিবিরের দখলে রয়েছে ৮ শিা প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারী মহসিন কলেজসহ নামীদামী বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর শিবির বাহিনীর দখলেই রয়েছে। বিএনপি এবং পরবতর্ীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শিবির যে শক্তি নিয়ে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, বর্তমানে স্বাধীনতার পরে মহাজোট সরকার আমলেও এদের শক্তি ও ঔদ্ধত্য একই অবস্থায় রয়েছে। যারা স্বাধীনতার পরে সকল শক্তির জন্য বড় ধরনের একটি চপেটাঘাত বলে ওয়াকিফহাল মহলের অভিমত।
গত সোমবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নককে রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে শিবিরের ক্যাডাররা। এছাড়া রগ কেটে দিয়েছে আরও চার ছাত্রের। শুধু ফারম্নক নয়, চট্টগ্রামে শিবিরের পশুসুলভ এ আচরণের শিকার হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছাত্র সংগঠনগুলোর অসংখ্য নেতাকর্মী। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকাদের মদদে বারবার রেহাই পেয়ে গেছে শিবির ক্যাডাররা। আর প্রতিবছরই শিবির ক্যাডারদের নৃশংসতার বলি হচ্ছে প্রতিভাবান তরম্নণরা। ১৯৭৭ সালে উত্থানের পর শিবির চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা পর্যায়ে প্রতিপ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের রগ কেটেছে ও জবাই করেছে এবং তাদের হাতে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকেই। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে শিবির গড়ে তুলেছে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। নগরীর শিা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধিপত্য বিসত্মার করতে এ ধরনের বীভৎসতার রাজনীতি বেছে নেয় শিবির। বিভিন্ন সূত্র ও অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা যায়।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে শিবিরের হাতে কমপ েছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী ছাত্র সংগঠনগুলোর শতাধিক নেতাকমর্ী শিবিরের 'রগকাটা' রাজনীতির শিকার হয়। চট্টগ্রামেই শিবির সর্বপ্রথম রগকাটা ও জবাই রাজনীতির ধারা শুরম্ন করে। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে জবাই করে ছাত্রলীগ নেতা তবারককে। এরপর এ শি প্রতিষ্ঠানে প্রাধান্য বিসত্মার করতে ১৯৮৭ সালে আবার রক্তাক্ত করে পবিত্র ক্যাম্পাসকে। হলের নিজ ক েঘুমনত্ম অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ নেতা শাহাদাতকে হাত-পায়ের রগ কেটে ও জবাই করে হত্যা করে শিবিরের ভয়ঙ্কর ক্যাডাররা। এছাড়া, পরবর্তী সময়ে শিবিরের হাতে নিহত হয় প্রায় ১৫ জন। একাত্তরের ঘাতক জামায়াতের সহযোগী ছাত্র সংগঠন শিবিরের হাতে খুন হওয়া নেতাকর্মী হচ্ছে চট্টগ্রাম কলেজের মাহবুব, কমার্স কলেজের কুদ্দস, পলিটেনিক ইনস্টিটিউটের জিন্নাহ, পাঁচলাইশের শাহজাহান, বাদুড়তলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ইউসুফ, মহানগরের পুলক বিশ্বাস, এনাম, মনচুর, শহীদ, কাশেম উলেস্নখযোগ্য। এছাড়া আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে নেয়া নেতাকমর্ী সংখ্যা কম নয়। ছাত্রশিবিরের এ অপনাজনীতির প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এম আর আজিম জনকণ্ঠকে জানান, শিবিরের রক্তের হোলি খেলার জন্য দেশের শিা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে অনেক মেধাবী ছাত্র। তাদের অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বন্ধ করতে শিবির আবার এ অপরাজনীতির পথ বেছে নিয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. রিজোয়ানুল রেহান জানান, অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু শিবিরের রগকাটা, গুপ্ত হত্যার রাজনীতি একাত্তরের নৃশংসতাকেও হার মানায়।
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের স্বরূপ উন্মোচন ঘটে রগকাটার মাধ্যমেই। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন মতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সমাজ নেতা হামিদের হাতের কব্জি কেটে নেয় শিবির ক্যাডাররা। ঐ কাটা কব্জি নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য মিছিল করে শিবির। অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনায় জড়িত শিবির ক্যাডারদের একজন বর্তমানে ঢাকা মহানগর জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। এরপর বিভিন্ন সময়ে শিবির ছাত্র-শিৰকদের ওপর নিয়মিত হামলা চালায়। এছাড়া, শিবিরের রগকাটা রাজনীতির কারণে অর্ধশতাধিক ছাত্র বর্তমানে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ১৯৯৮ সালে শাহজালাল হলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে অপহরণ করে নিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির ক্যাডাররা। এসময় তার ঊরম্ন থেকে মাংসও কেটে তুলে নেয়া হয়। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আজাদ এখন এক অসহনীয় জীবনযাপন করছেন। এর আগের বছর অর্থ সম্পাদক ফরিদ আনোয়ার কাজলের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ২০০৩ সালে ভর্তি পরীার সময় প্রকাশ্য হামলা চালিয়ে শিবিরের নেতাকর্মীরা কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সহ সভাপতি নাজিম উদ্দিন শিমুল, একেএম সোহেল রানা ও আব্দুর রহিমকে। এছাড়া একই বছরে কেন্দ্রীয় সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদের পায়ে রড ঢুকিয়ে আহত করে। এছাড়া ২০০৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনছুর জামশেদ ও আবেদীন আল মামুনকে পরীার হল থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় শিবিরের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরম্নল ইসলাম জানান, চবিতে ঘাঁটি করে শিবির সাধারণ ছাত্রসহ ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অতি দ্রম্নত এর অবসান হওয়া দরকার। না হলে ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এর বিরম্নদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
ওয়াকিফহাল মহলে প্রশ্ন উঠেছে, স্বাধীনতার আগে জামায়াতী বর্বরতা, স্বাধীনতা পরবতর্ীতে শিবিরের নৃশংসতা_ এভাবে আর কতদিন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপরে শক্তিগুলো যখন এক কাতারে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপরে সরকার যখন মতায় তখন জামায়াত-শিবিরের অপরাজনীতি বন্ধে পদপে নিতে বাধা কোথায়_ এ প্রশ্ন সংশিস্নষ্ট সকলের মনে বারে বারেই ঘুরপাক খাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের ফাঁসি হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থার ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু ধর্মের নামে উস্কে দিয়ে অপরাজনীতির ধারক বাহক, বর্বর কায়দায় রগ কাটা ও জবাই করে মানুষ খুনের এ নরঘাতকদের প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধে কঠোর পদপে নিয়ে তা এ মুহূর্তে কার্যকর করা না হলে এর পরিণাম ও ভবিষ্যত যে ভয়াবহ হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই_ এ অভিমত শানত্মিকামী সকল শ্রেণীর মানুষের।
No comments