চরাচর-ফুটপাতে শীতের পোশাক by পাভেল রহমান
কুয়াশায় ঢেকে আছে সারা শহর। অলিগলি কিংবা রাজপথ সর্বত্রই শীতের দাপট। মাঘ মাসের শীত আসতে এখনো বাকি। তবু সূর্যের দেখা নেই কয়েক দিন। হাড় কাঁপানো শীত জীবনযাত্রায় নিয়ে এসেছে স্থবিরতা।
তার পরও থেমে নেই নাগরিক জীবন। প্রচণ্ড কুয়াশার মধ্যেও গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে মানুষকে ছুটতে হচ্ছে জীবনের প্রয়োজনে। তবে ফুটপাতে বাস করা নিম্ন আয়ের মানুষগুলো অনেকটা বস্ত্রহীন হয়েই লড়াই করছে শীতের তীব্রতার সঙ্গে। কখনো খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে আবার কখনো রান্নার চুলার পাশে বসে শীত থেকে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে কেউ কেউ। প্রকৃতি আর মানুষের এই চিরায়ত খেলা এবার যেন একটু বেশিই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর ফার্মগেট, গুলিস্তান, মিরপুর, গাউছিয়াসহ সব কাপড়ের মার্কেট এখন কেবলই শীতবস্ত্রের দখলে। শহরের অভিজাত ফ্যাশন হাউসগুলোও পসরা সাজিয়ে বসেছে নিত্যনতুন ডিজাইনের গরম কাপড় দিয়ে। তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, কখনো কখনো উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকজন ভিড় করছে ফুটপাতের কাপড়ের দোকানগুলোতে। ফলে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় লেগেই আছে শীতবস্ত্র ক্রেতাদের। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কাপড় কেনার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে না আপনাকে, কারণ এক দামেই বিক্রি হচ্ছে কাপড়। তবে পছন্দ করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। কারণ ফুটপাতের এই ব্যবসায়ীরা গার্মেন্টের রিজেক্ট কাপড়গুলোও এখানে এনে বিক্রি করেন। তাই কেনার সময় ভালো করে দেখে নেওয়া আবশ্যক। অনেক সময় ভালো কোয়ালিটির কাপড় আপনি পেয়ে যেতে পারেন খুব কম দামে। ফার্মগেটের কাপড় ব্যবসায়ী জসিম মিয়া জানান, তাঁরা এই কাপড়গুলো যখন কিনে আনেন, তখন তাঁদের দেখে আনার তেমন সুযোগ থাকে না। আর তাঁরা রিজেক্ট হওয়া কাপড়গুলোই এখানে বিক্রি করেন। ফলে কিছু কাপড় খারাপ থেকেই যায়। ব্যবসায়ী জসিম মিয়ার সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম তখন পাশের দোকান থেকে ভেসে আসছিল কোরাস সংলাপ। খালি ৬০ খালি ৬০, দেইখ্যা লন বাইছ্যা লন। একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেল ভারি ফুল হাতা টি-শার্ট বিক্রি করা হচ্ছে। লোকজন ভিড় করে পছন্দ করছে নিজের উপযুক্ত শীতবস্ত্র। দোকানের চারপাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে জ্যাকেট, চাদর, টি-শার্ট, জিন্স শার্ট, সোয়েটার ইত্যাদি। এগুলোর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। ফলে দাম নিয়ে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারেই নেই। দোকান মালিক আফসার উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর দোকানে জ্যাকেটের মূল্য ৩৫০, সোয়েটার ২০০ এবং টি-শার্ট ৬০ থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত আছে। ফুটপাতের এই দোকানগুলোই রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে শীতের সঙ্গে টিকে থাকার অপার সুযোগ করে দিচ্ছে। তবে ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ দোকানের কারণে মানুষের হাঁটা-চলায় সমস্যা হচ্ছে। কখনো কখনো যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। আবার এই দোকানগুলোই এখন হয়ে উঠেছে এই শহরের বেশির ভাগ মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরণের নির্ভরযোগ্য স্থান।
পাভেল রহমান
পাভেল রহমান
No comments