রবীন্দ্রনাথের সর্বশেষ অভিভাষণ by করুণাময় গোস্বামী

১৯৪১ সালের ১৪ এপ্রিল শান্তিনিকেতনে বরীন্দ্রনাথ জীবনের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক ভাষণ দান করেন। সেটি লিখিত ভাষণ ছিল। আগে থেকেই কবি অসুস্থ ছিলেন। শরীর দুর্বল বলে তিনি নিজে ভাষণটি পাঠ করতে পারেননি। তাঁর উপস্থিতিতেই সেটি পাঠ করে শোনান ক্ষিতিমোহন সেন।


ভাষণের শিরোনাম ছিল সভ্যতার সংকট। তখনকার দিনে শান্তিনিকেতনে বাংলা নববর্ষ পালনের সঙ্গে মিলিয়ে রবীন্দ্রজন্মদিবস পালন করা হতো। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন যদিও আরো ২৫ দিন পরে, নববর্ষ পালনের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রীষ্মের ছুটি হয়ে যেত বলে দুটি অনুষ্ঠান একসঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হতো, যেন ছাত্ররা তাতে যোগ দিতে পারে। সে হিসেবে সভ্যতার সংকট ছিল জন্মদিনের অনুষ্ঠানে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের সর্বশেষ ভাষণ।
ভাষণের শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ বলেন, 'আজ আমার আশি বৎসর পূর্ণ হলো, আমার জীবনের ক্ষেত্রের বিস্তীর্ণতা আজ আমার সম্মুখে প্রসারিত। পূর্বতম দিগন্তে যে জীবন আরম্ভ হয়েছিল, তার দৃশ্য অপর প্রান্ত থেকে নিঃসক্ত দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি এবং অনুভব করতে পারছি যে আমার জীবনের এবং সমস্ত দেশের মনোবৃত্তির পরিণতি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। সেই বিচ্ছিন্নতার মধ্যে গভীর দুঃখের কারণ আছে।' প্রথমেই রবীন্দ্রনাথ দুঃখের কারণে কথা বললেন। প্রচণ্ড দুঃখ সম্পর্কে বলবেন বলেই তিনি এই ভাষণ দানের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মনে হয়। আজ আমার আশি বৎসর পূর্ণ হলো, এমন বলে যে শুরু করা তার অর্থ সম্ভবত এই যে তিনি দীর্ঘকাল ধরে বাঁচলেন, দীর্ঘকাল ধরে ভারতবর্ষের এবং ভারতবর্ষের বাইরের ঘটনাপ্রবাহকে দেখলেন, সে থেকে সারা জীবন তিনি যা বুঝলেন এবং বোঝাতে চাইলেন, সবে মিলে তিনি কোন অনুভবের মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন, সে কথাটি তখন সবাইকে বলাই চলে। তেমন কথা চল্লিশ বছর বয়সে বা পঞ্চাশ বছর বয়সে বলা চলে না।
কেননা, সামনে আরো অনেক কিছু দেখার ও বোঝার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আশি বছর বয়সে পূর্বতম দিগন্তের জীবন পশ্চিমতম দিগন্তে ঢলে পড়েছে, এখনই শেষ কথাটি বলা দরকার, নইলে সে সুযোগ আর নাও পাওয়া যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ক্রমেই শুরু থেকে গুরুতর অসুস্থতার দিকে এগোচ্ছিলেন। এই বিবেচনা থেকেও সভ্যতার সংকট গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমেই রবীন্দ্রনাথ দুঃখের কারণ নির্দেশ করলেন। দুঃখ এ জন্যে যে তাঁর নিজের জীবনের এবং সব দেশের মনোবৃত্তির পরিণতি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। খণ্ডন থেকেই উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে দুঃখ। রবীন্দ্রনাথ খণ্ডন চাননি। উপনিষদের ঋষিরা বলেছিলেন বিচ্ছিন্নতা থেকে উৎপন্ন হয় দুঃখ। সে বিচ্ছিন্নতা অসীম থেকে সীমার বিচ্ছিন্নতা, পরমার্থ থেকে মানুষের বিচ্ছিন্নতা। এই বিচ্ছিন্নতাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ গান রচনা করেছেন অনেক, শান্তিনিকেতন ও ধর্ম প্রবন্ধমালায় এ বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু ভারতবর্ষের মনুষ্য সমাজ বা বিশ্বমনুষ্য সমাজ নিয়ে যখন কথা বলেছেন, তখন মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। রবীন্দ্ররচনায় দুই ধরনের বিচ্ছিন্নতার ওপরই আলোকপাত করা হয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা বা অন্যান্য রচনা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাকর্মে সীমা-অসীমে বিচ্ছিন্নতার ওপর মানুষ মানুষে বিচ্ছিন্নতা থেকে অনেক বেশি অযৌক্তিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ চিরকালই পৃথিবীর ওপর, মানুষের ওপর, প্রকৃতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন অনেক বেশি। গীতাঞ্জলি যুগে অর্থাৎ গীতাঞ্জলি, গীতালি ও গীতিমাল্য রচনা যুগে তিনি সর্বাধিক ঈশ্বর বোধস্পৃষ্ট ছিলেন। শোক হয়তো এর কারণ হিসেবে কাজ করে থাকবে কিন্তু এর মধ্যেও তিনি মানুষের কথা ভোলেননি। যেখানে সবার অধম, দীনের হতে দীন, মানুষ বসবাস করেন, সেই সবার নিচে, সবার পিছে, যেখানে কবির নিজের প্রণাম পৌঁছুতে পারেন না, জীবন ধারণের সেই স্তরকেও রবীন্দ্রনাথ গৌরবান্বিত করেছেন যেখানে ঈশ্বর অবস্থান করেন, তেমন অনুভব করে বা ঘোষণা করে। গীতাঞ্জলি যুগেই রবীন্দ্রনাথ অস্পৃশ্যতা নিয়ে প্রচণ্ড এক কবিতা লিখেছেন এবং স্পৃশ্য-অস্পৃশ্যভেদে বিভক্ত হিন্দু সমাজব্যবস্থাকে ধিক্কার জানিয়েছেন। সে নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে কথা হয় অনেক পরে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ ঘোষণা করার পর। মহাত্মা গান্ধী অনশন করেন, রবীন্দ্রনাথ সেই আন্দোলনের প্রেরণায় লেখেন চণ্ডালিকা। মানুষের প্রতি প্রচণ্ড দায়বোধে রবীন্দ্রনাথ বাঁধা ছিলেন, সে ব্যাপারটি সাময়িক একটু আড়াল করে দিতে সমর্থ হয় তাঁর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির গৌরব। নোবেল জয়ী কবির খ্যাতি হয় মিস্টিক হিসেবে, জীবনের প্রতি প্রগাঢ় প্রাণের টান মিস্টিকতার অন্তরায় এই ভাবনা থেকে রবীন্দ্রনাথের বৈরাগ্যবোধকে খুব বড় করে তোলে পাশ্চাত্য প্রেস। রবীন্দ্রনাথ মিস্টিক হলেও তাঁকে যে মিস্টিসিজমের ক্লাসিক্যাল ধারণা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, সে বিষয়টি সমালোচকরা গ্রাহ্য করেননি। নীরদচন্দ্র চৌধুরী আবার এক ধাপ এগিয়ে রবীন্দ্রনাথকে মিস্টিক বলতেই রাজি হননি। তিনি কবির প্রায় অন্তহীন মর্ত্যপ্রেমকে এর জন্য দায়ী করেন। তিনি অনেক আলোচনার পর এসে পৌঁছান 'যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন' গানটিতে এবং বলেন মৃত্যুর পরেও তিনি মা পৃথিবীর মায়া কাটাতে পারছেন না, এতই যাঁর জগৎপ্রীতি, তখন তিনি আর মিস্টিক কিসে, জগতের প্রতি রবীন্দ্রনাথের যে আন্তরিক ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেছেন নীরদ চৌধুরী সে যথার্থ, তবে এর জন্য তিনি যে মিস্টিক নন তাও আবার যথার্থ নয়। সে এক আশ্চর্য মিস্টিকতা, জগতেও থাকে, আবার জগতের বাইরেও টানে। সেই ছিল রবীন্দ্রনাথের ধারণায় পরিপূর্ণ জীবনের ছবি। সে দৃষ্টিতে মাটির অংশটাই বেশি, আকাশের অংশটা কম। রবীন্দ্রনাথ একসময় বলেছিলেন যে তিনি জমিদার, সে কথা যেমন ঠিক, তেমনি তিনি যে আসমানদার, সে কথাটিও মিথ্যে নয়। অনেক আলোচক রবীন্দ্রনাথের বেলায় আসমান বড় করে তুলেছেন, জমিনের পরিমাণ দিয়েছেন কমিয়ে। কে কী বললেন বা না বললেন বা বিবেচনায় না নিয়ে, আমরা নিজেরা যখন যথার্থ মনোযোগ দিয়ে রবীন্দ্ররচনা পড়ি, তখন দেখতে পাই যে রবীন্দ্রনাথের বিবেচনায় জমিনের ব্যাপারটাই বিস্তীর্ণ, আকাশের ব্যাপারটা তার তুলনায় অতটা বিস্তীর্ণ নয়।
জীবনের সর্বশেষ ভাষণে রবীন্দ্রনাথ যে গভীর দুঃখের কথা উল্লেখ করলেন, তা একেবারেই এক ঘোরতর ইহজাগতিক ব্যাপার। এর সঙ্গে সীমা-অসীমের বিচ্ছেদজনিত দুঃখের কোনো সম্পর্ক নেই। কৈশোরকাল থেকেই এই ইহজাগতিক দুঃখের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। সেটি ছিল হিন্দু-মুসলমানের বিরোধজনিত দুঃখ। ঠাকুরবাড়িকে কেন্দ্র করে হিন্দুমেলা নামে যে স্বদেশি মেলা চালু করা হয়েছিল, তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল মিলনমঞ্চ রচনা। সে মিলন হিন্দু-মুসলমানের মিলন। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে যে গান রচিত হলো, এর নাম দেওয়া হলো মিলনগান। বাংলা দেশাত্মবোধক গানের আনুষ্ঠানিক সূচনা মিলল গান হিসেবে। ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক মিলনের ধারণাকে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত পবিত্র মনে করতেন। এতটাই পবিত্র যে তিনি যখন ১৮৮৬ সালে কোলকাতা কংগ্রেসের উদ্বোধনী গান হিসেবে গাইলেন 'আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে'- তখন এ গানটিকে তিনি ব্রহ্মসংগীত হিসেবে বিবেচনা করলেন। রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি স্তম্ভস্বরূপ ধারণা ছিল। সারা জীবন তিনি এই ধারণাগুলোকে সম্বল করেই অগ্রসর হয়েছেন। অহিংসা, মানুষের অখণ্ডতা, বিজ্ঞানের জীবনবান্ধব প্রয়োগ, প্রগতির পথে সামাজিক জাগরণ, সত্যের প্রতি আনুগত্য- এসব ধারণা থেকে রবীন্দ্রনাথ কখনো সরে আসেননি। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য বলে যে ধারণা ভারতবর্ষে আগে থেকেই ছিল, রবীন্দ্রনাথ সে ধারণাকেই মানুষের অখণ্ড অস্তিত্বের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন। কৈশোরকাল থেকে পিতৃগৃহে পিতার এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাদের চিন্তায় ও কাজেকর্মে এসব ধারণার প্রতিফলন তিনি দেখতে পেয়েছেন। নিজের চিন্তায় ও কর্মে সেসব ধারণাকেই তিনি তাঁর মতো করে পরিস্ফুট করে তুলেছিলেন। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ স্বদেশি সমাজ নিয়ে অনেক বেশি ভেবেছেন। তাঁর স্বদেশি সমাজের সামনে সর্বপ্রধান সমস্যাটি ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার। হিন্দুমেলার যুগ থেকে কিশোর রবীন্দ্রনাথ তেমনই শুনে আসছিলেন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দল গঠিত হলে সবাই ভাবলেন এই দলের নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য পর্যায়ক্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। কিন্তু দল গঠনের সূচনাই নেতাদের আচার-আচরণে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত হতাশ বোধ করেন। ১৮৮৬ সালে কংগ্রেসের দ্বিতীয় কলকাতা অধিবেশনের সময় রবীন্দ্রনাথের মনে হলো তাঁরা যথেষ্ট দেশপ্রেমিক কাজ করছেন না, জনগণের সঙ্গে তাঁরা ছলনা করছেন। তারকনাথ পালিত কংগ্রেস ডেলিগেটদের সম্মানে পার্টি দিলেন এবং রবীন্দ্রনাথকে বললেন সেখানে গান গেয়ে শোনাতে। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে রাজি হলেন না, পরে দেখলেন যে তারকনাথ পালিত তাঁর বন্ধুর পিতা, তাঁর আহ্বানে সাড়া না দেওয়াটা অভব্যতা হয়। গেলেন যদিও পার্টিতে গান গাইতে, নেতাদের কষে এক হাত নিলেন সদ্যরচিত যে গানটি গাইলেন তাতে। তাতে বললেন, নেতারা যশের কাঙাল মাত্র, অর্থহীন কথার ডালি সাজিয়ে করতালি নিতে চান, তাঁরা মিথ্যে কথা বলেন, মিথ্যে সুখ্যাতি নিয়ে ঘরে ফিরতে চান, মিথ্যে কাজে তাঁরা নিশিযাপন করেন। তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন জনগণকে জাগতে, নেতাদের কথায় বিভ্রান্ত না হতে, দেশের জন্য কাজ করতে, দেশমাতৃকার পায়ে অঞ্জলি, দেশজননীর লজ্জা ঘোচাতে। গানটি গেয়ে কংগ্রেস ডেলিগেটদের বিদ্রূপে জর্জরিত করলেন এবং সারা জীবন তিনি গভীর আনন্দের সঙ্গে বলেও গেলেন তারকনাথ পালিতের বাড়িতে সেই গান গাওয়া ছিল তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ গান গাওয়া। নিশ্চয়ই এই গান গাওয়া তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ গান গাওয়া ছিল না, অনেক অসামান্য সংগীত পরিবেশনের কথা আমরা জানি সমকালীন তথ্যাবলি থেকে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ এই গান গাওয়াকে অতি উচ্চমূল্য দিচ্ছেন এর রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্য। ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গে এলেন পারিবারিক জমিদারি দেখাশোনা করতে। রবীন্দ্রনাথ যত না মুগ্ধ হলেন গ্রামীণ সৌন্দর্যে ও সংগীতে, তার চেয়ে অনেক বেশি মর্মাহত হলেন গ্রামীণ দারিদ্র্যে। তাঁর কেবলই মনে হতে থাকল এই দারিদ্র্য মোচনের জন্য যেভাবেই হোক উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। ১৯১০ সালের ৭ এপ্রিল তিনি রথীন্দ্রনাথকে লিখলেন, দেশের সব গ্রামাঞ্চল গভীর হতাশায় আচ্ছন্ন, অবস্থা এতটাই উদ্বেগজনক যে হোমরুল বা স্বায়ত্তশাসনের মতো ধারণা তাঁর কাছে অর্থহীন মনে হয়। এসব বলতে তিনি লজ্জাবোধ করেন। রবীন্দ্রনাথ স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারণার সঙ্গে যেমন একাত্ম ছিলেন, তেমনি বা তার চেয়েও বেশি একাত্ম ছিলেন দারিদ্র্য দূরীকরণে, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে, সমবায় গড়ে তুলতে ও শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগী হতে। এসব ব্যাপারে তিনি একাই দৃষ্টান্তস্থানীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে শুরু করেন। জীবনের শুরুতে এভাবে হয়তো বলা যায়, ভারতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ যে সংকট দেখতে পেয়েছিলেন, সে হচ্ছে পরাধীনতার সংকট, জীবনমান উন্নয়নের সংকট এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের সংকট। রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যে সংকটে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছিলেন, তা অনেকটা তিনি কাটিয়ে ওঠেন গান্ধীকে দেখে এবং নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে একমত না হলেও অহিংসা ও জনমঙ্গলের প্রতি গভীর যে দায়বদ্ধতা তাতে তিনি উৎসাহিত বোধ করতেন। রবীন্দ্রনাথ যা চাইতেন তা হচ্ছে, দেশের জন্য যে কিছু উদ্যোগই গ্রহণ করা হোক, তা যেন সত্যবোধের সঙ্গে যুক্ত থাকে। স্বাধীনতার সংগ্রাম যেন জনমঙ্গলের ধারণা থেকে কখনো সরে না পড়ে।
যে দুঃখের কথা পৃথিবীর বৃহৎ পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বলছেন রবীন্দ্রনাথ, সে হচ্ছে ইংরেজ জাতি বা পাশ্চাত্যসমাজ সম্পর্কে তাঁর আশাভঙ্গের কথা। তিনি বলছেন, বৃহৎ মানববিশ্বের সঙ্গে আমাদের প্রত্যক্ষ পরিচয় আরম্ভ হয়েছে সেদিনকার ইংরেজ জাতির ইতিহাসে। আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে উদ্ঘাটিত হলো একটি মহৎ সাহিত্যের উচ্চশিক্ষা থেকে ভারতের এই আগন্তুকের চরিত্রপরিচয়। তখন আমাদের বিদ্যালাভের পথ্য-পরিবেশনে প্রাচুয ও বৈচিত্র্য ছিল না। এখনকার যে বিদ্যা-জ্ঞানের নানা কেন্দ্র থেকে বিশ্ব প্রকৃতির পরিচয় ও তার শক্তির রহস্য নতুন করে দেখাচ্ছে, তার অধিকাংশ ছিল তখন নেপথ্যে অগোচরে। তখন ইংরেজি ভাষার ভেতর দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যকে জানা ও উপভোগ করা ছিল মার্জিতমনা বৈদগ্ধের পরিচয়। দিনরাত মুখরিত ছিল বার্কের বাগি্নমাতয়, মেকলের ভাষাপ্রবাহের তরঙ্গভঙ্গে, নিয়তই আলোচনা চলতে শেক্সপিয়ারের নাটক নিয়ে, বায়রনের কাব্য নিয়ে এবং তখনকার পলিটিক্সে সর্ব মানবের বিজয় ঘোষণায়। তখন আমরা স্বজাতির স্বাধীনতার সাধনা আরম্ভ করেছিলাম, কিন্তু অন্তরে অন্তরে ছিল ইংরেজ জাতির ঔদার্যের প্রতি বিশ্বাস। সে বিশ্বাস এত গভীর ছিল যে এক সময় আমাদের সাধকেরা স্থির করেছিলেন যে এই বিজিত জাতির স্বাধীনতার পথ বিজয়ী জাতির দাক্ষিণ্যের দ্বারাই প্রশস্ত হবে। কেননা একসময় অত্যাচারপীড়িত জাতির আশ্রয়স্থল ছিল ইংল্যান্ডে। যারা স্বজাতির সম্মান রক্ষার জন্য প্রাণপণ করছিল, তাদের অকুণ্ঠিত আসন দিল ইংল্যান্ড। মানবমৈত্রীর বিশুদ্ধ পরিচয় দেখেছি ইংরেজ চরিত্রে। তাই আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়ে ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেম। তখনো সাম্রাজ্যসদমত্ততায় তাদের স্বভাবের দাক্ষিণ্য কলুষিত হয়নি।
আমার যখন বয়স অল্প, তখন ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। সেই সময় জন ব্রাইটের মুখ থেকে পার্লামেন্ট এবং তার বাইরে কোনো কোনো সভায় যে বক্তৃতা শুনেছিলেম তাতে শুনেছি চিরকালের ইংরেজের বাণী। সেই বক্তৃতায় হৃদয়ের ব্যাপ্তি জাতিগত সফল সংকীর্ণ সীমাকে অতিক্রম করে যে প্রভাব বিস্তার করেছিল, সে আমার আজ পর্যন্ত মনে আছে এবং আজকের এই শ্রীভ্রষ্ট দিনেও আমার পূর্বস্মৃতিকে রক্ষা করছে। এই পরনির্ভরতা নিশ্চয়ই আমাদের শ্লাঘার বিষয় ছিল না। কিন্তু এর মধ্যে এটুকু প্রশংসার বিষয় ছিল যে আমাদের আবহমান কালের অনভিজ্ঞতার মধ্যে মনুষত্বের যে একটি মহৎ রূপ সেদিন দেখেছি, তা বিদেশীয়কে আশ্রয় করে প্রকাশ পেলেও তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করার শক্তি আমাদের ছিল ও কুণ্ঠা আমাদের মধ্যে ছিল না। কারণ মানুষের মধ্যে যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা সংকীর্ণভাবে কোনো জাতির মধ্যে বদ্ধ হতে পারে না, তা কৃপণের অবরুদ্ধ ভাণ্ডারের সম্পদ নয়। তাই ইংরেজের যে সাহিত্যে আমাদের মন পুষ্টিলাভ করেছিল, আজ পর্যন্ত তার বিজয়শঙ্খ আমার মনে মুদ্রিত হয়েছে।
তার পর থেকে ছেদ আরম্ভ হলো কঠিন দুঃখে। প্রত্যহ দেখতে পেলুম সভ্যতাকে যারা চরিত্র উৎস থেকে উৎসারিতরূপে স্বীকার করেছে, রিপুর প্রবর্তনায় তারা তাকে কী অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে। নিভৃতে সাহিত্যের রসসম্ভোগের উপকরণের বেষ্টন হতে একদিন আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সেদিন ভারতবর্ষের জনসাধারণের যে নিদারুণ দারিদ্র্য আমার সম্মুখে উদ্ঘাটিত হলো তা হৃদয়বিদায়ক। অন্ন, বস্ত্র, পানীয়, শিক্ষা আরোগ্য প্রভৃতি মানুষের শরীর-মনের পক্ষে যা কিছু অত্যাবশ্যক, তার এমন নিরতিশয় অভাব বোধ হয় পৃথিবীর আধুনিক শাসনচালিত কোনো দেশেই ঘটেনি। অথচ এই দেশ ইংরেজকে দীর্ঘকাল ধরে তার ঐশ্বর্য জুগিয়ে এসেছে। যখন সভ্যজগতের মহিমাধ্যানে একান্তমনে নিবিষ্ট ছিলেন, তখন কোনো দিন সভ্যনামধারী মানব আদর্শের এত বড়ো নিষ্ঠুর বিকৃতিরূপ কল্পনাই করতে পারিনি। অবশেষে দেখেছি একদিন এই বিকারের ভেতর দিয়ে বহুকোটি জনসাধারণের প্রতি সভ্যজাতির অপরিসীম অবজ্ঞাপূর্ণ ঔদাসীন্য।' রবীন্দ্রনাথ এখানে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে সাহিত্যের মধ্য দিয়ে ইংরেজের জাতীয় চরিত্র সম্পর্কে একটা উচ্চ ধারণা গড়ে তোলার ব্যাপারটি সঠিক ছিল না। এ শুধু তাঁর নিজের একার কথা নয়। সে সময়কার বাংলার বা ভারতবর্ষের অনেক মানুষ ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্য পাঠের ভেতর দিয়ে বিশ্বপ্রবেশ করতেন। তাঁদের সবার আশা ও আশা ভঙ্গের কথা বলছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ বোঝাতে চাইছেন যে সাহিত্য একটি সমাজের চিত্র তুলে ধরতে পারে, তবে স্বয়ং সাহিত্যিকের যে ঔদার্য ও মহত্ত্ব তার সঙ্গে তাঁর উপস্থাপিত সমাজমানসের গভীর কোনো যোগ নাও থাকতে পারে। নেই যে, সে তিনি জীবন সায়াহ্নে এসে স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। শেকসপিয়ার, শেলি বা কিটসকে জানার অর্থ এই নয় যে ইংরেজ জাতিকে জানলাম। রবীন্দ্রনাথকে জানার অর্থ এই নয় যে এর দ্বারা বাঙালি সমাজকে জানা হলো।
ভাষণ প্রদানে একটু এগিয়ে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'যে যন্ত্রশক্তির সাহায্যে ইংরেজ আপনার বিশ্বকর্তৃত্ব রক্ষা করে এসেছে, তার যথোচিত চর্চা থেকে এই নিঃসহায় দেশ বঞ্চিত। অথচ চক্ষের সামনে দেখলুম জাপান যন্ত্রচালনার যুগে দেখতে দেখতে সর্বতোভাবে কি রকম সম্পদবান হয়ে উঠল। আর দেখেছি রাশিয়ায় মস্কো নাগরীতে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের আরোগ্য বিস্তারের কী অসামান্য অকৃপণ অধ্যবসায়। সেই অধ্যবসায়ের প্রভাবে এই বৃহৎ সাম্রাজ্যের মূর্খতা, দৈন্য ও আত্মাবমাননা অপসারিত হয়ে যাচ্ছে। মস্কো শহরে গিয়ে রাশিয়ার শাসনকার্যের একটি অসাধারণতা আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছিল, দেখেছিলেম, সেখানকার মুসলমানদের সঙ্গে রাষ্ট্র অধিকারের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে অমুসলমানদের কোনো বিরোধ ঘটে না, তাদের উভয়ের মিলিত স্বার্থ সম্বন্ধের ভেতরে রয়েছে শাসনব্যবস্থার যথার্থ সত্য ভূমিকা।' রবীন্দ্রনাথ জানাচ্ছেন যে বহুসংখ্যক পরজাতির ওপর প্রভাব বিস্তার করে এমন রাষ্ট্রশক্তি আছে দুটো, ইংরেজ ও সোভিয়েত রাশিয়ায়। এর মধ্যে ইংরেজ পরজাতীয়ের পৌরুষ দলিত করে দিয়ে তাকে চিরকালের মতো নির্জীব করে রেখেছে। অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়া বহুসংখ্যক মরুচর মুসলমান জাতিকে সব দিকে শক্তিমান করে তোলার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ যে সোভিয়েত রাশিয়াকে দেখে এসেছিলেন, সে এখন নেই। যে সাম্যবাদী সমাজদর্শনের প্রভাবে সবাইকে একত্র করা, সবাইকে শক্তিশালী করে তোলার সাধনা চলছিল, তাতে ছেদ পড়েছে। সেই ঐতিহাসিক কাণ্ডটি ঘটে যাওয়ার পর বিশ্বব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আসতে পারে এবং এই পরিবর্তনের পরিণামে সভ্যতায় যে একটা সংঘর্ষ লেগে যেতে পারে বলে যে বিবেচনায় উপনীত হয়েছেন হান্টিংটন সেটিই আমাদের অন্যতম প্রধান প্রণিধানের বিষয়। তার আগে রবীন্দ্রনাথের সর্বশেষ ভাষণ সম্পর্কে আরো কয়েকটি কথা বলার অবকাশ আছে। কবি বলছেন, 'য়ুরোপীয় জাতির স্বভাবগত সভ্যতার প্রতি বিশ্বাস ক্রমে কী করে হারানো গেল, তারই এই শোচনীয় ইতিহাস আজকে আমাকে জানাতে হলো। সভ্যশাসনের চালনায় ভারতবর্ষের সবার চেয়ে যে দুর্গতি আজ মাথা তুলে উঠেছে সে কেবল অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা এবং আরোগ্যের শোকাবহ অভাবমাত্র নয়, সে হচ্ছে ভারতবাসীর মধ্যে অতি নৃশংস আত্মবিচ্ছেদ, যার কোনো তুলনা দেখতে পাইনি ভারতবর্ষের বাইরে মুসলমান স্বায়ত্তশাসনচালিত দেশে। আমাদের বিপদ এই যে এই দুর্গতির জন্য আমাদের সমাজকে একমাত্র দায়ী করা হবে। কিন্তু এই দুর্গতির রূপ যে প্রত্যহই ক্রমশ উৎকট হয়ে উঠেছে, সে যদি ভারতশাসন যন্ত্রের ঊর্ধ্বস্তরে কোনো এক গোপন কেন্দ্রে প্রশ্রয়ের দ্বারা পোষিত না হতো, তা হলে কখনোই ভারত ইতিহাসের এত বড় অপমানকর অসভ্য পরিণাম ঘটতে পারত না। ভারতবাসী যে বুদ্ধি সামর্থ্যে কোনো অংশে জাপানের চেয়ে নূ্যন, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই দুই প্রাচ্যদেশের সর্বপ্রধান প্রভেদ এই, ইংরেজ শাসনের দ্বারা সর্বতোভাবে অধিকৃত ও অভিভূত ভারত আর জাপান এরূপ কোনো পাশ্চাত্য জাতির পক্ষছায়ার আবরণ থেকে মুক্ত। এই বিদেশির সভ্যতা, যদি একে সভ্যতা বলো, আমাদের কী অপহরণ করেছে তা জানি, সে তার পরিবর্তে দণ্ড হাতে স্থাপন করেছে যাকে তার নাম দিয়েছে 'ল অ্যান্ড অর্ডার' বিধি এবং ব্যবস্থা, যা সম্পূর্ণ বাইরের জিনিস, যা দারোয়ানি মাত্র। পাশ্চাত্য জাতির সভ্যতা অভিমানের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা অসাধ্য হয়েছে। সে তার শক্তিরূপ আমাদের দেখিয়েছে, মুক্তিরূপ দেখতে পারেনি।'
ভারতবাসীর মধ্যে অতি নৃশংস আত্মবিচ্ছেদকে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, আরোগ্যের চেয়েও গুরুতর বিষয় হিসেবে গণ্য করেছেন রবীন্দ্রনাথ। এই আত্মবিচ্ছেদ হচ্ছে হিন্দু-মুসলমানের বিচ্ছেদ। এই বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেছেন ভারত শাসনযন্ত্রের ঊর্ধ্বস্তরে কোনো এক গোপন কেন্দ্রে প্রশ্রয়ের দ্বারা পোষিত ব্যাপারকে বা এ ব্যাপারে ইংরেজের কারসাজিকে। রবীন্দ্রনাথ এর আগে বহুবার বহু প্রসঙ্গে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন। এবার বলছেন যে ইংরেজের কুটিল ইন্ধন না থাকলে এই নৃশংস আত্মবিচ্ছেদ ঘটতে পারত না। রবীন্দ্রনাথ এতটাই বিরক্ত যে এর আগে যে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে তিনি উচ্চমান দিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা ঘটানোর জন্য মদদ দেওয়াতে তাকে তিনি সভ্যতা বলবেন কি না তাতে সংশয় প্রকাশ করছেন। বলছেন, এই বিদেশীয় সভ্যতা, যদি একে সভ্যতা বলো। ব্যক্তিগতভাবে তিনি অনেক ইংরেজকে, অনেক যথার্থ খ্রিস্টানকে মহাত্মা হিসেবে স্বীকার করছেন, কিন্তু ইউরোপের সভ্যতাকে আর সভ্যতা বলতে চাইছেন না। কারণ, 'মানবপীড়নের মহামারি পাশ্চাত্য সভ্যতার মজ্জার ভেতর থেকে জাগ্রত হয়ে উঠে আজ মানবাত্মার অপমানে দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত বাতাস কলুষিত করে দিয়েছে। ভাগ্যচক্রের পরিবর্তনের দ্বারা একদিন না একদিন ইংরেজকে এই ভারতসাম্রাজ্য ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। কিন্তু কোন ভারতবর্ষকে সে পেছনে ত্যাগ করে যাবে? কী লক্ষ্মীছাড়া দীনতার আবর্জনাকে। জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলুম য়ুরোপের অন্তরের সম্পদ সভ্যতার এই দানকে। আর আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল। আজ আশা করছি, পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্র্যলাঞ্ছিত কুটিরের মধ্যে, অপেক্ষা করে থাকব সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে এই পূর্বদিগন্ত থেকেই। আজ পারের দিকে যাত্রা করছি, পেছনের ঘাটে কী দেখে এলুম, কী রেখে এলুম, ইতিহাসের কী অকিঞ্চিৎকর উচ্ছিষ্ট সভ্যতাভিমানের পরিকীর্ণ ভগ্নস্তূপ। কিন্তু মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব। মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভাবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপরাধ মনে করি।' রবীন্দ্রনাথ ভাষণ শেষ করলেন একটি গানের পাঠ উদ্ধৃত করে, যে গানে নবজীবনের আশ্বাস জানানো হচ্ছে, মানব অভ্যুদয়ের জয় ঘোষণা করা হচ্ছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ

No comments

Powered by Blogger.