বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় বাংলায় রূপান্তর : by এনামুল হক
জুলফিকার আলী ভুট্টো বনাম রাষ্ট্র পিএলডি ১৯৭৯ এসসি ৫৩ এবং রাষ্ট্র বনাম
নলিনী (১৯৯৯)৫ এসসিসি ২৮৩ মামলায়ও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত হয়েছে। মকবুল হোসেন
বনাম রাষ্ট্র ১২ ডিএলআর এসসি ২১৭ মামলায় মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি
রেজিস্টারে তাঁর নাম পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ঘুষের টাকা দেয়ার সময় তহসিলদারকে
অপর দুই আসামী যা বলেছিল বলে কথিত তার ওপরই সম্পূর্ণরূপে দাঁড়িয়েছিল।
বিচারে ঐ দুই আসামি তাদের কথিত বক্তব্য অস্বীকার করেছিল। প্রশ্ন যেটা
উঠেছিল তা হচ্ছে দুই সহ-আসামির বক্তব্য সা্যআইনের ১০ ও ২০ ধারা বলে মকবুলের
বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপরে হাতে ছিল কি না। এ সংক্রান্ত অভিমতটা নিম্নোক্তভাবে
দেয়া হয় : "সা্য আইনের ১০ ধারায় ঘোষণা করা আছে যে, যেখানে এ কথা বিশ্বাস
করার মতো যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি আছে যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একটা অপরাধ বা
নালিশযোগ্য অন্যায় সংঘটনের জন্য একত্রে ষড়যন্ত্র করেছে সেখানে ঐ
ব্যক্তিবর্গের কেউ প্রথম অভিন্ন অভিপ্রায় ব্যক্ত করার পর তাদের কেউ একজন
অভিন্ন অভিপ্রায় প্রসঙ্গে কিছু বললে, করলে বা শিখলে সেটা এই ষড়যন্ত্র করেছে
বলে বিশ্বাস এমন প্রতিটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে এবং ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব
প্রমাণের কাজে ও সেই ষড়যন্ত্রে ঐ ব্যক্তিদের যে কেউ যে জড়িত ছিল তা প্রমাণ
করার ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক ঘটনা বলে পরিগণিত হবে। এই ধারাটি সরলভাবে পাঠ
করলেই পরিষ্কার হয়ে দাঁড়াবে যে ১০ ধারাটি আকৃষ্ট করার জন্য
সহ-ষড়যন্ত্রকারীদের কর্মকাণ্ড বা বক্তব্য ছাড়াও পূর্ববতর্ী ষড়যন্ত্রের আপাত
গ্রহণযোগ্য কিছু সা্যপ্রমাণ অবশ্যই থাকতে হবে। আপীলকারী ও দুই রেভিনিউ
অফিসারের মধ্যে পূর্ববতর্ী ষড়যন্ত্রের এমন সা্যপ্রমাণ এই মামলায় লণীয়ভাবে
অনুপস্থিত। তদনুযায়ী কোন অপরাধ সংঘটনের জন্য দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে
ষড়যন্ত্র করেছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত ভিত্তির অস্তিত্ব থেকে থাকলে
অভিন্ন অভিপ্রায় সাদরে গৃহীত হবার পর ষড়যন্ত্রকারীদের একজন যদি সেই অভিন্ন
অভিপ্রায় সম্পর্কে কোন কিছু বলে থাকে, করে থাকে বা লিখে থাকে তাহলে সেটা
ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্যই শুধু নয় সেই ষড়যন্ত্রে যে অপর ব্যক্তিও
জড়িত ছিল তা প্রমাণের জন্যেও অপর ব্যক্তির বেলায় প্রাসঙ্গিক। সা্য আইনের
১০ ধারায় সা্যপ্রমাণের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে দুটো আপত্তি থাকতে পারে।
প্রথমত ষড়যন্ত্রকারী যার সা্যপ্রমাণ সহ ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে গৃহীত হবার
চেষ্টা করা হচ্ছে সহ-ষড়যন্ত্রকারী তাকে আদালতে মোকাবেলা করছে না এবং
দ্বিতীয়ত বাদীপ এ কথা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত ভিত্তির অস্তিত্বই শুধু
প্রমাণ করে যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একটা অপরাধ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্র
করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে সহ-ষড়যন্ত্রকারীকে জড়িত করার জন্য প্রতিনিধিত্বের
সম্পর্কের অস্তিত্ব ক্রিয়াশীল হয়।(ক্রমশ)
No comments