এসএ গেমস_ স্বপ্ন, বাসত্মবতা ও বন্ধুত্বের মহামিলন- প্রত্যাশার সঙ্গে বাসত্মবতার মেলবন্ধন ঘটানোর ক্রীড়াবিদ কোথায়!
বাকি আর মাত্র ১ দিন। এরপর ঢাকার মাটিতে শুরম্ন হচ্ছে দৰিণ এশিয়ার প্রায় দেড় শ' কোটি মানুষের সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের এক বর্ণিল মিলনমেলা সাউথ এশিয়ান গেমস তথা এসএ গেমস।
বর্ণাঢ্য এক ক্রীড়া আসর এই এসএ গেমস_ বিশ্বের সাথে উন্নতির দৌড়ে পিছিয়ে পড়া দৰিণ এশিয়ার দেশগুলোর কাছে যা অলিম্পিক গেমসের মতোই মর্যাদাপূর্ণ আসর। এখানে এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মানুষেরা সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে নবায়ন করে নেয়ার পাশাপাশি পদক জয়ের লড়াইয়ে একে অন্যকে হারানোর মধ্য দিয়ে ক্রীড়াৰেত্রে নিজেদের অবস্থানটাকেও ঝালিয়ে নেয় দুই বছর পর পর। এবারের আসরটি হচ্ছে এসএ গেমসের ১১তম আসর। ১৯৮৪ সালে সার্কভুক্ত ৭টি দেশ (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিসত্মান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপ) নিয়ে শুরম্ন হয় এ ক্রীড়া আসরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা। সময়ের পরিক্রমায় যা পরিচিতি পেয়েছে 'দৰিণ এশিয়ার অলিম্পিক' হিসেবে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আসরের ভেনু্য ঢাকা। আয়োজক দেশ বাংলাদেশ। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে মোট ৮ দেশের ( এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অষ্টম দেশ হিসেবে অংশ নিচ্ছে আফগানিসত্মান) প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ক্রীড়াবিদ। অনুপম ক্রীড়াশৈলীতে ২৯ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম যারা মাতিয়ে রাখবেন দৰিণ এশিয়ার ক্রীড়াপ্রেমী মানুষদের। এবারের গেমসে মোট ২৩টি ইভেন্টে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নতুন সংযোজন টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেট, যার উন্মাদনা গেমসে এনে দিয়েছে বাড়তি জৌলুস। এ ইভেন্টে অংশ নিতে ঘষেমেজে তৈরি করেছে অনুর্ধ-২১ দলকে। বরাবর ফুটবলকে ঘিরে বাড়তি উন্মাদনা থাকে গেমসে। তবে তাতে এখন কিছুটা ফিকে ভাব। কারণ জাতীয় দলের লড়াই নয়, যুব দলের লড়াই।দৰিণ এশিয়ার ক্রীড়াবিদদের জন্য আনন্দের এক উপলৰ এই এসএ গেমস। এ অঞ্চলের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের জন্যও তা নিখাদ বিনোদনের উৎস। এসএ গেমসে নিজ নিজ দেশের সাফল্য কামনা করেন তারা। প্রত্যাশা করেন বিশ্বমানের ক্রীড়াশৈলী দেখার। এবারের ঢাকা এসএ গেমসে ত্রীড়াভক্তদের এমন আশা কতটা পূরণ হবে, গেমস শুরম্নর ঠিক আগমুহূর্তে এমন প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না মোটেও। বিশেষ করে বাংলাদেশের পরিপ্রেৰিতে এ প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে আরও জোরালোভাবেই। কারণ একে তো বাংলাদেশ এবারে স্বাগতিক দেশ। এরপর গত কয়েকটি আসরে মোটেও গর্ব করার মতো কোন পারফরম্যান্স নেই বাংলাদেশের। এবারের আসরে কি ঘটবে ? প্রশ্নটা তাই বাংলাদেশী ক্রীড়ামোদীদের খোঁচাচ্ছে অবধারিতভাবেই।
বাংলাদেশের প্রেৰিতে এসএ গেমস নিয়ে কিছু বলার আগে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হয় কিছু ক্রীড়াবিদের নাম, দেশের সীমা পেরিয়ে বাইরের জগতেও যাঁরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন বিভিন্ন সময়ে। এদের মধ্যে হলেন সাঁতারম্ন মোশারফ হোসেন খান। ১৯৮৫ সালে ঢাকা সাফ গেমসে মোট ৯টি স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৬টি স্বর্ণ আসে কেবল সাঁতার থেকে, যার ৫টিই ছিল মোশারফের অর্জন। সাফ বা এসএস গেমসের ইতিহাসে এখনও এ রেকর্ড ভাংতে পারেননি কেউ। মোশারফের কল্যাণে তাই আজ গেমসের ইতিহাসে এখনও এক বিশেষ মর্যাদায় আসীন বাংলাদেশের নাম। স্প্রিন্টার শাহ আলমের কথাও বলতে হয়। পর পর দু'বার দৰিণ এশিয়ার দ্রম্নততম মানব হওয়ার কৃতিত্ব দেখান শাহ আলম। এসএ গেমসের ইতিহাসে এ রেকর্ডও এখন পর্যনত্ম অৰণ্ন, বাংলাদেশের জন্য যা আরেকটি সম্মান। আফসোসের বিষয়, মর্মানত্মিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয়েছে এই কৃতী স্প্রিন্টারকে। এর পর আরও অনেক ক্রীড়াবিদই নজর কেড়েছেন তাঁদের প্রশংসিত নৈপুণ্যে। এদের মধ্য রয়েছেন বিমল চন্দ্র তরফদার, '৯৩-এ ঢাকা সাফ গেমসে যিনি দ্রম্নততম মানব হবার কৃতিত্ব অর্জন করেন। মোশারফের পর সাঁতারেও কিছু উজ্জ্বল মুখ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে মোখলেসুর রহমান বা কারার মিজানুর রহমানের নাম। আনত্মর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করার ৰেত্রে শূটিংয়ের কথা বলতেই হয়। আতিক, সাজ্জাদ বা কাজী শাহানা পারভীনরা অনেকবারই বাংলাদেশকে সাফল্যের হাসি উপহার দিয়ছেন। এসএ গেমসের আসর মানেই তাদের নামগুলো স্মৃতিপটে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা। শূটার সাবরিনার নামও চলে আসে এ তালিকায়, যদিও তিনি অংশ নিচ্ছেন এবারও। তার সঙ্গে কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণজয়ী আসিফও রয়েছেন।
অলিম্পিক , এশিয়ান বা কমনওয়েলথ গেমসের মতো বড় বড় ক্রীড়া আসরে সাফল্যের প্রথম সারিতে বসে থাকার মতো বাসত্মবতা নেই আমাদের। বড় বড় ক্রীড়াশৈলীর দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অবস্থান এখনও অনেক পিছনে। এসএ গেমসই তাই আমাদের কাছে অলিম্পকের মতো ক্রীড়া আসর, সাফল্যের আনন্দে জাতিকে উদ্ভাসিত করার উপলৰ। এবারের আসর ঘিরেও যে এর ব্যতিক্রম হবে না এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা কি পারবেন এ আশা পূরণ করতে ? অনেক কারণেই প্রশ্নটা ঘোরাফেরা করছে বার বার।
এশিয়ান গেমস, সাফ গেমস বা এসএ গেমস, যে নামেই পরিচিত করা হোক না কেন, দৰিণ এশিয়ার দেশুগলোর অংশগ্রহণে এ বর্ণাঢ্য ক্রীড়া আসরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্যের কথা যদি বলতে হয় তবে সেটা ১৯৯৩ সালের ঢাকা সাফ গেমস। সেবারের আসরে মোট ১১টি স্বর্ণসহ মোট ৬২টি পদক জেতে বাংলাদেশ। যদিও ১৯৮৫ সালের ঢাকা সাফ গেমসে মোট ৬৪টি পদক জেতে বাংলাদেশ। তবে সেবারে স্বর্ণপদকের সংখ্যা ছিল ৯টি। ফলে ৯৩'র সাফ গেমসকেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্যের আসর হিসেবে মেনে নিতে হচ্ছে। কারণ রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ পদক তো নয়, স্বর্ণ জয়ের মধ্য দিয়েই তো পাওয়া যায় সর্বোচ্চ সাফল্য। ১৯৮৫ এবং ১৯৯৩ সালের ওই দু'টি আসর বাদ দিলে গেমসে বাংলাদেশের উলেস্নখ করার মতো তেমন কোন সাফল্য নেই। বরং তা যেন হতাশার ধারাবাহিক গল্প।
সার্কভুক্ত ৭ দেশ নিয়ে ১৯৮৪ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় সাফ গেমস। কাঠমন্ডুতে অনুষ্ঠিত ওই আসরে মোট ৪৪টি স্বর্ণসহ ৮৮ পদক জিতে শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা দখল করে রাখে ভারত। বাংলাদেশের অর্জন ছিল ২ স্বর্ণসহ মোট ২৩ পদক। অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে। ১৯৮৫ সালে ঢাকা সাফ গেমসে উন্নতির ছাপ রাখে বাংলাদেশ। ৬১ স্বর্ণসহ মোট ১০৭ পদক জিতে ভারত পথম এবং ২১ স্বর্ণসহ মোট ৫৯ পদক জিতে পাকিসত্মান দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। তখন ৯ স্বর্ণসহ মোট ৬৪ পদক জিতে শ্রীলঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ। তবে এই শেষ। এর পর আর কখনই পদক তালিকায় তৃতীয় স্থানটাও জোটেনি বাংলাদেশের। পরবর্তী প্রতিটি আসরেই বাংলাদেশ ঘুরপাক খাচ্ছে পদক তালিকার ৪ বা ৫ নম্বর অবস্থানে। '৯৩ সাফ গেমসে ১১ স্বর্ণ জিতলেও সেবারে চতুর্থ স্থানেই থাকে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত গত আসরে ৩ স্বর্ণসহ মোট ৫০ পদক জিতে ষষ্ঠ স্থানে ছিল বাংলাদেশ। অবশ্য সেবারে এ আসরে নতুন সদস্য ছিল আফগানিসত্মান। ৬ স্বর্ণসহ মোট ৩১ পদক নিয়ে পঞ্চম স্থানটা দখল করে রাখে আফগানরাই। এবারও আফগানিসত্মান অংশ নিচ্ছে এসএ গেমসে। অন্যদিকে, ঢাকার মাটিতেই বসছে এবারের আসর। স্বাভাবিকভাবে তাই প্রশ্নটা আসছে_
No comments