টিফা চুক্তি নিয়ে কিছু কথা by হায়দার আকবর খান রনো
গত জানুয়ারি মাসে নতুন নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছিল সরকারকে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেসল্টমেন্ট ফেদ্ধমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’—সংক্ষেপে টিফা চুক্তি গেলানোর প্রচেষ্টা। নতুন সরকার ক্ষমতায় বসার এক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল চুক্তির এক নতুন খসড়া। তখনই দেশে প্রতিবাদ উঠেছিল। তাই বলে চুক্তি নিয়ে আলোচনা বন্ব্দ থাকেনি।
গত সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তখনও ফারুক খানের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ হয়েছিল। সেখানে আবার টিফার প্রসঙ্গটি উঠেছিল। সেপ্টেম্বর মাসে দুই দেশের দুই মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সেক্রেটারি অফ মৌটস) হিলারি ক্লিনটন ডা. দিপু মনির সঙ্গে ৪৫ মিনিটের জন্য বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে বললেন যে, পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ দমনের মতো জরুরি বিষয় আলোচিত হয়েছিল বলে জানা যায়। তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তত্পরতা তাদের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের অংশ। তাই এই বিষয়টি তো থাকবেই মার্কিন প্রশাসনের দিক থেকে। এছাড়াও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন টিফার প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেও ভোলেননি। যদিও বিষয়টি বাণিজ্য সংক্রান্ত, তবু পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয়ের বৈঠকে ঠিকই উঠে এসেছে টিফার বিষয়টি। বাংলাদেশকে মার্কিন স্বার্থে বন্দি করার জন্যই এই চুক্তি। ওই আলোচনার সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি সহায়তা চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কো-অপারেশন (এমসিসি) ফান্ড থেকে। ডা. দিপু মনি আরো চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার। হিলারি ক্লিনটন এ ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দেননি। বরং শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন, দুর্নীতিমুক্ত না হলে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওই পবিত্র ফান্ডে হাত দেয়া যাবে না। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখা হয়েছে। এতেই আমরা গদগদ হয়ে আছি। কিন্তু ওইসব নেহায়েত আনুষ্ঠানিক বৈঠকে কোনো বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকে না। দুর্নীতির বিষয়টি কী? এর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সম্পর্ক কী? আমাদের ফিরে যেতে হবে কয়েক বছর পেছনে। ২০০৩ সালেই প্রথম মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে টিফা চুক্তির প্রস্তাব করা হয় বাংলাদেশের কাছে। তখনই দুর্নীতির বিষয়টি যুক্ত ছিল চুক্তির খসড়ার মধ্যে। এছাড়াও এমসিসি’র সাহায্য পেতে হলেও সাহায্য গ্রহণকারী দেশকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে এবং থাকতে হবে গণতান্ত্রিক পরিবেশ। বলাই বাস্লল্য এসব মুখরোচক কথা আসলে কোনো অর্থ বহন করে না। আসল কথা হলো কতটা মার্কিন প্রশাসনের অনুগত থাকবে। এই ধারা যুক্ত করে তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, হাত মোচড়ানোর সুবিধাটা হাতে রাখা মাত্র। ২০০৩ সালেই টিফা চুক্তির বিভিন্ন ধারার ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপত্তি উঠেছিল। তার মধ্যে ঘুষ-দুর্নীতি সংক্রান্ত ধারাটিও ছিল। তাছাড়া আরো অনেক আপত্তিকর ধারা ছিল। বাংলাদেশের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে খসড়ায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এখন আবার নতুন করে ২০০৩ সালের খসড়া প্রস্তাবটি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। ২০০৫ সালেও ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ব্দ করার কথা ছিল। সরাসরি ঘুষ-দুর্নীতির মতো শব্দ চাপিয়ে দেয়া যে কোনো দেশের জন্য অপমানকর। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তখনও আপত্তি জানানো হয়েছিল। আপত্তি জানিয়েছিল তখনকার আইন মন্ত্রণালয়। এই প্রসঙ্গটি নিয়ে গত ২৯ আগসল্ট ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে ২০০৫ সালের জনৈক মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছিল। তার নাম বেটসি সিল্টলম্যান। তিনি ছিলেন মার্কিন সরকারের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন বাণিজ্যনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি ২০০৫ সালে টিফা চুক্তি সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন যে, উভয় পক্ষই ্তুনত্রনবত্ু ধহফ পড়ত্ত্ঁঢ়ঃরড়হ্থ শব্দ দুটি বাদ দিয়ে ্তুঢ়ত্বাবহঃরড়হ ড়ভ সধষঢ়ত্ধপঃরপব্থ শব্দ যোগ করেছেন। সম্প্রতি নারী নেত্রী ফরিদা আখতারও এক লেখায় এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এখন শোনা যাচ্ছে আবার সেই ২০০৩ সালের খসড়ার জায়গায় চলে গেছি আমরা। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিফার খসড়া থেকে ‘শ্রমিক ও বুদ্ধিজাত সম্পত্তির অধিকারের’ বিষয়টি বাদ দেয়ার কথা বলেছেন। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এগুলোকে তিনি সঠিকভাবেই ‘অশুল্কজনিত’ বাধা বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই দুটি বিষয় সম্পর্কেও কিছু ব্যাখ্যা আবশ্যক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে শ্রমমানের কথা বলে। বাহ্যিকভাবে শুনতে ভালো লাগে। মনে হয় ওরা আমাদের দেশের শ্রমিকের জন্য কত না দরদি। এর আগে আমাদের দেশে শিশুশ্রমের ব্যাপারে মার্কিন সিনেটে বিল উত্থাপিত হয়েছিল। শিশুশ্রম থাকলে সেখান থেকে পণ্য আমদানি করা চলবে না। একে বলে মায়াকান্না! শিশুশ্রম খারাপ। কিন্তু যে শিশুটি খেতে পায় না, তার জন্য কারখানায় বা কোনো বাড়িতে শ্রম দেয়া ছাড়া উপায় কি আছে? শিশুশ্রম বন্ব্দ করতে হলে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেতে হবে। অন্যথায় আমাদের মতো দেশে পুঁজিবাদি ব্যবস্থায় কীভাবে শিশুশ্রম বন্ব্দ হবে? মার্কিন প্রশাসন সে কথা বলবে না। বরং এই সুযোগ আমাদের উপর খবরদারি করবে। অন্যদিকে আমাদের দেশের মুনাফালোভী কারখানার মালিকরা, বিশেষ করে গার্মেন্টস কারখানার মালিকরা কম মজুরি দেয়া ছাড়াও কারখানার পরিবেশ করে রাখে চরম অস্বাস্থ্যকর। কোনোভাবে এক টাকা শ্রমিককে ঠকাতে পারলেই এই মালিকরা মহাখুশি হয়। এই হলো মানসিকতা। কিন্তু যখন বিদেশি ক্রেতারা শ্রমমান নির্ধারণ করে দেয়, তখন তারা বিদেশিদের দেখানোর জন্য কিছু ব্যবস্থা করে মাত্র। বিদেশ থেকে রফতানি-বাণিজ্যের ওপর শর্ত আরোপ করলে তাকে বলা হয় ঈড়সঢ়ষরধহপব, যা মালিকরা মানতে বাধ্য হয়। অথচ শ্রমিকরা সেই দাবি করলে শ্রমিকের ভাগ্যে থাকে চাকরিচ্যুতি, মিথ্যা মামলা, পুলিশ দিয়ে পেটানো, হাজতবাস ইত্যাদি। আসা যাক টিফা চুক্তি প্রসঙ্গে। টিফা চুক্তির মধ্যে ট্রিপস চুক্তির ধারা সংযুক্ত হওয়ার বিষয়টি এসেছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিধিমালার মধ্যে ট্রিপসের বিষয়টি যখন অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে, তখনই এর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ উঠেছিল। -------- যখন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার বিধিমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন অবশ্য গরিব দেশগুলোর জন্য কিছুকালের জন্য সুবিধা দেয়ার কথা ওঠে। বেশ কয়েক বছর ধরে দর কষাকষির পর বস্লপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (খউঈ) জন্য ২০১৬ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়েছিল। অর্থাত্ ওই সময় পর্যন্ত এমন ধরনের চুক্তি করার বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে। এখন বস্লপাক্ষিক চুক্তির বদলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বিশেষ কৌশল বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে টিফা চুক্তির দ্বারা। এর ফল হবে খুবই মারাত্মক। এর ফলে আমরা আমাদের প্রাণী বৈচিত্র্যের ওপর অধিকার হারাব। আমাদের গাছপালা, শস্যবীজ, এমনকি গরু-ছাগল, মাছের ওপরও বস্লজাতিক কোম্পানি পেটেম্লট করার অধিকার পাবে। টিফার নামে ট্রিকসকে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বস্লজাতিক কোম্পানির স্বার্থে আমাদের জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দেয়া। বর্তমান অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার চেয়ে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের (আঙ্কটাড) কাঠামোর অধীনে ও মধ্য থেকে বাংলাদেশের মতো দেশের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করা সহজ হবে। এখন যেভাবে টিফা চুক্তিটি হতে যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সুবিধা লাভ করবে। অন্য কোনো দেশের পক্ষে বিনিয়োগ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠবে। বিশেষ করে সেবা খাতে মার্কিন বস্লজাতিক কোম্পানির একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের উচিত বিশ্ব বাণিজ্যসংস্থা এবং আঙ্কটাডের অধীনে বস্লপাক্ষিক চুক্তির পথে অগ্রসর হওয়া। স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে ধনী দেশের সঙ্গে দর কষাকষি করা। ডঞঙ থেকে যেসব সুবিধা বাংলাদেশ আদায় করতে পারে তার সঙ্গে প্রস্তাবিত টিফা চুক্তির বস্ল বিষয় বিরোধিতাপূর্ণ। তাহলে কেন আমরা টিফা চুক্তিতে নিজেদের বেঁধে ফেলব?
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইতোমধ্যেই অনেক দেশকে এই চুক্তিতে বেঁধে ফেলেছে। সেটা তারা করতে পেরেছে গণবিরোধী সরকারকে হাত করে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে। যে সরকার এত বিপুলসংখ্যক ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে সেই সরকারের কি এতটা আত্মসমর্পণের প্রয়োজন আছে? সবচেয়ে বড় কথা, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার এমন চুক্তি করতে চলেছে জনগণকে না জানিয়ে। তাই বিষয়টি সংসদে পর্যন্ত উত্থাপিত হয়নি। বঙ্গোপসাগরের গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার মতো জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি যেমন দাবি ওঠা সত্ত্বেও সংসদে আলোচিত হচ্ছে না, তেমনি টিফা চুক্তিও প্রকাশ্যে আলোচিত হচ্ছে না। এ রকম বিদেশের সঙ্গে বড় বড় চুক্তি গোপনে করা হচ্ছে। জনগণকে আড়াল করে। কারণ এসব চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করাই এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র আমরা লক্ষ্য করি। এর বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণকে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। টিফা চুক্তি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের তত্পরতা এখন বেশ জোরে চলছে। এখন বাংলাদেশে সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল জে ডিলোনি। তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী চুক্তির খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া শ্রম ইস্যু, পরিবেশ ও মেধাস্বত্বের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো সরাসরি নাকচ করেননি। বলেছেন, আরও আলোচনা হবে। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিনিধিও বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক কথা বলতে পারেননি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনিকে এই বাণিজ্যিক সুবিধা দেয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। তারপরও সরকার এমন জাতীয় স্বার্থবিরোধী টিফা চুক্তি করতে চলেছে। গরিব দেশের সঙ্গে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি করতে আগ্রহী হয়, তখন শুধু আমাদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয় বৈকি। সেটি কেবল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণেই নয়, রাজনৈতিক কারণেও বটে। অবশ্যই মার্কিন প্রশাসন সেই দেশের বস্লজাতিক কোম্পানির স্বার্থেই বাণিজ্যিক চুক্তি করে থাকে। এছাড়াও অন্য দেশের ওপর রাজনৈতিক ও ভূসামরিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যও থাকে। এই দিকটিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান সরকার যদি সঙ্কীর্ণ শ্রেণীস্বার্থে আমাদের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যেতে পারে না। সর্বনাশা টিফা চুক্তিকে এখনই রুখতে হবে। বিলম্ব হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইতোমধ্যেই অনেক দেশকে এই চুক্তিতে বেঁধে ফেলেছে। সেটা তারা করতে পেরেছে গণবিরোধী সরকারকে হাত করে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে। যে সরকার এত বিপুলসংখ্যক ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে সেই সরকারের কি এতটা আত্মসমর্পণের প্রয়োজন আছে? সবচেয়ে বড় কথা, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার এমন চুক্তি করতে চলেছে জনগণকে না জানিয়ে। তাই বিষয়টি সংসদে পর্যন্ত উত্থাপিত হয়নি। বঙ্গোপসাগরের গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার মতো জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি যেমন দাবি ওঠা সত্ত্বেও সংসদে আলোচিত হচ্ছে না, তেমনি টিফা চুক্তিও প্রকাশ্যে আলোচিত হচ্ছে না। এ রকম বিদেশের সঙ্গে বড় বড় চুক্তি গোপনে করা হচ্ছে। জনগণকে আড়াল করে। কারণ এসব চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করাই এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র আমরা লক্ষ্য করি। এর বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণকে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। টিফা চুক্তি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের তত্পরতা এখন বেশ জোরে চলছে। এখন বাংলাদেশে সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল জে ডিলোনি। তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী চুক্তির খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া শ্রম ইস্যু, পরিবেশ ও মেধাস্বত্বের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো সরাসরি নাকচ করেননি। বলেছেন, আরও আলোচনা হবে। অন্যদিকে মার্কিন প্রতিনিধিও বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক কথা বলতে পারেননি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দিপু মনিকে এই বাণিজ্যিক সুবিধা দেয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। তারপরও সরকার এমন জাতীয় স্বার্থবিরোধী টিফা চুক্তি করতে চলেছে। গরিব দেশের সঙ্গে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি করতে আগ্রহী হয়, তখন শুধু আমাদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয় বৈকি। সেটি কেবল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণেই নয়, রাজনৈতিক কারণেও বটে। অবশ্যই মার্কিন প্রশাসন সেই দেশের বস্লজাতিক কোম্পানির স্বার্থেই বাণিজ্যিক চুক্তি করে থাকে। এছাড়াও অন্য দেশের ওপর রাজনৈতিক ও ভূসামরিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যও থাকে। এই দিকটিও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান সরকার যদি সঙ্কীর্ণ শ্রেণীস্বার্থে আমাদের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে, সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যেতে পারে না। সর্বনাশা টিফা চুক্তিকে এখনই রুখতে হবে। বিলম্ব হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
No comments