পাকিস্তানের আসল সমস্যা
জঙ্গিবাদ ও অব্যাহত সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানের জন্য একটা বিরাট সমস্যা, সন্দেহ নেই। কারও কারও মতে, এখন দেশটির এক নম্বর সমস্যাই তা। ওই দুই সমস্যা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং এ থেকে আরও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
বাইরের লোকের কাছে যা-ই মনে হোক না কেন, পাকিস্তানের অনেক মানুষ মনে করে দেশের প্রধান সমস্যা আসলে বেলুচিস্তান। তারা জানায়, সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদের বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরেক দফা ভাঙনের শিকার হতে পারে পাকিস্তান।
বেলুচরা আলাদা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড চায়। এই আকাঙ্ক্ষার জের ধরে সেখানে চলছে সহিংস সংগ্রাম। উত্তরোত্তর তার মাত্রা বাড়ছে। ধকল সামলাতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় কেন্দ্রীয় সরকারের।
বেলুচ বিদ্রোহীরা জানায়, পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তান থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ফায়দা লুটছে ঠিকই, কিন্তু তাদের দেখভালে উদাসীন। পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পর্যন্ত যথাযথভাবে পূরণ হচ্ছে না তাদের। সামাজিক উন্নয়ন সূচকে প্রদেশটি পিছিয়ে। এ ছাড়া গড়পড়তা পাকিস্তানিদের মধ্যে গোষ্ঠীগত একটা বিদ্বেষ আছে বেলুচদের প্রতি। এসবের অবসানের জন্যই স্বাধীন ভূখণ্ড চায় তারা।
সম্প্রতি বেলুচিস্তানের শাসনব্যবস্থার পরিস্থিতি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত। এতে পুরোনো সমস্যাটি নতুন করে সামনে উঠে এসেছে। প্রদেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন পাকিস্তানের ভেতর চলা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম। বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতা বেলুচিস্তান ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) নেতা সরদার আখতার মেঙ্গাল তাঁদের উত্থাপিত ছয় দফা দাবিকে বাঙালি নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার সঙ্গে তুলনা করেন। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, দাবিগুলো পূরণ না হলে তাঁরাও স্বাধীনতার পথে পা বাড়াতে বাধ্য হবেন। মেঙ্গালের ছয় দফায় রয়েছে: গুম-অপহরণ বন্ধ করা, বেলুচিস্তানে সক্রিয় ‘ডেথ স্কোয়াড’ ভেঙে দেওয়া, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বেলুচ দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম আবার শুরু করতে দেওয়া, বেলুচ নেতা-কর্মীদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করা এবং বাস্তুহারা বেলুচদের জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করা।
স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীরা বলছে, যেসব নেতা তাদের সঙ্গে নেই, তাঁরা আসলে বিরুদ্ধাচরণ করছেন। বিদ্রোহীরা দিন দিন দলে ভারী হয়ে ওঠায় এবং জনসমর্থন তাদের অনুকূলে থাকায় স্থানীয় নেতারা সমর্থন না দিয়েও পারছেন না।
ভৌগোলিকভাবে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ। এর উপকূলীয় রেখা ইরানি সীমান্তে গিয়ে শেষ হয়েছে। বেলুচিস্তানের পরই ইরানের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালির শুরু। এই নৌপথে বিশ্বের ৩০ শতাংশ তেল সরবরাহ করা হয়। কেবল ইরান নয়, বেলুচিস্তানের সঙ্গে রয়েছে আফগানিস্তানের সীমান্তও। কাজেই প্রদেশটিকে হারালে ভৌগোলিক, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে পাকিস্তানের বড় ক্ষতি হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি তো আছেই।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো চায় না বেলুচিস্তান পাকিস্তানের করতল থেকে ফসকে গিয়ে সন্ত্রাসবাদের রমরমা আরও বেড়ে যাক। ন্যাটো কর্মকর্তাদের মতে, পাকিস্তানে চলমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের অন্যতম মূল উৎস হচ্ছে বেলুচিস্তান। বেলুচিস্তানের ভেতরেও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে হানাহানির ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে কোয়েটায় শিয়াদের হাজারা সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। বেড়ে গেছে মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণ, ছিনতাই, লুটপাটের মতো অপরাধমূলক ঘটনাও।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সশস্ত্র সংগ্রামে নামা বিদ্রোহী বেলুচ নেতাদের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ যে নেওয়া হয়নি, তা নয়। কিন্তু উভয় পক্ষই নিজ নিজ দাবিতে অনড় থাকায় অচলাবস্থার অবসান হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ, বাইরের শক্তি বেলুচিস্তানের বিদ্রোহীদের উসকানি দিয়ে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করছে। এখানে বাইরের শক্তি বলতে কখনো ভারত, কখনো বা যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সরকার ও বেলুচ বিদ্রোহীদের মধ্যে সত্যিকারের সমঝোতার সর্বশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০০৪ সালে। সেবারই বেলুচরা স্বাধীনতার দাবিতে জোরালোভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। সে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।
কোয়েটার জাতীয়তাবাদী নেতা মকবুল বেলুচ বলেন, ‘এ আন্দোলন থেকে এখন ফেরার কোনো সুযোগ নেই।’
কোয়েটার বাইরে বেলুচ বসতি নিউ মারি ক্যাম্পের বাসিন্দা মকবুল জানান, দুই দশক হতে চলল তাঁদের বসতিতে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেই। অথচ কাছের সড়কেই এসব সুবিধা আছে। স্বাধীনতা না এলে এসব সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে তাঁর ধারণা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানস রাইটস ওয়াচের পাকিস্তানের পরিচালক আলী দায়ান হাসান বলেন, বেলুচিস্তানের মূল সমস্যা এখন মৌলিক অধিকার রক্ষা। উভয় পক্ষই বাড়াবাড়ি করছে। যুদ্ধংদেহী মনোভাব পরিহার করে সরকার ও বিদ্রোহী নেতাদের সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, সংকট উত্তরণে মূল কাজটি হবে আগামী নির্বাচনগুলোয় জাতীয়তাবাদীদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। এতে সফল হতে পারলে সমাধানের ক্ষেত্রে সরকার এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
বেলুচরা আলাদা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড চায়। এই আকাঙ্ক্ষার জের ধরে সেখানে চলছে সহিংস সংগ্রাম। উত্তরোত্তর তার মাত্রা বাড়ছে। ধকল সামলাতে গিয়ে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় কেন্দ্রীয় সরকারের।
বেলুচ বিদ্রোহীরা জানায়, পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তান থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ফায়দা লুটছে ঠিকই, কিন্তু তাদের দেখভালে উদাসীন। পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পর্যন্ত যথাযথভাবে পূরণ হচ্ছে না তাদের। সামাজিক উন্নয়ন সূচকে প্রদেশটি পিছিয়ে। এ ছাড়া গড়পড়তা পাকিস্তানিদের মধ্যে গোষ্ঠীগত একটা বিদ্বেষ আছে বেলুচদের প্রতি। এসবের অবসানের জন্যই স্বাধীন ভূখণ্ড চায় তারা।
সম্প্রতি বেলুচিস্তানের শাসনব্যবস্থার পরিস্থিতি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত। এতে পুরোনো সমস্যাটি নতুন করে সামনে উঠে এসেছে। প্রদেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন পাকিস্তানের ভেতর চলা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রাম। বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতা বেলুচিস্তান ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) নেতা সরদার আখতার মেঙ্গাল তাঁদের উত্থাপিত ছয় দফা দাবিকে বাঙালি নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফার সঙ্গে তুলনা করেন। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, দাবিগুলো পূরণ না হলে তাঁরাও স্বাধীনতার পথে পা বাড়াতে বাধ্য হবেন। মেঙ্গালের ছয় দফায় রয়েছে: গুম-অপহরণ বন্ধ করা, বেলুচিস্তানে সক্রিয় ‘ডেথ স্কোয়াড’ ভেঙে দেওয়া, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ বন্ধ করে বেলুচ দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম আবার শুরু করতে দেওয়া, বেলুচ নেতা-কর্মীদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করা এবং বাস্তুহারা বেলুচদের জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করা।
স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীরা বলছে, যেসব নেতা তাদের সঙ্গে নেই, তাঁরা আসলে বিরুদ্ধাচরণ করছেন। বিদ্রোহীরা দিন দিন দলে ভারী হয়ে ওঠায় এবং জনসমর্থন তাদের অনুকূলে থাকায় স্থানীয় নেতারা সমর্থন না দিয়েও পারছেন না।
ভৌগোলিকভাবে বেলুচিস্তান পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ। এর উপকূলীয় রেখা ইরানি সীমান্তে গিয়ে শেষ হয়েছে। বেলুচিস্তানের পরই ইরানের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালির শুরু। এই নৌপথে বিশ্বের ৩০ শতাংশ তেল সরবরাহ করা হয়। কেবল ইরান নয়, বেলুচিস্তানের সঙ্গে রয়েছে আফগানিস্তানের সীমান্তও। কাজেই প্রদেশটিকে হারালে ভৌগোলিক, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে পাকিস্তানের বড় ক্ষতি হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি তো আছেই।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো চায় না বেলুচিস্তান পাকিস্তানের করতল থেকে ফসকে গিয়ে সন্ত্রাসবাদের রমরমা আরও বেড়ে যাক। ন্যাটো কর্মকর্তাদের মতে, পাকিস্তানে চলমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের অন্যতম মূল উৎস হচ্ছে বেলুচিস্তান। বেলুচিস্তানের ভেতরেও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে হানাহানির ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে কোয়েটায় শিয়াদের হাজারা সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। বেড়ে গেছে মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণ, ছিনতাই, লুটপাটের মতো অপরাধমূলক ঘটনাও।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সশস্ত্র সংগ্রামে নামা বিদ্রোহী বেলুচ নেতাদের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ যে নেওয়া হয়নি, তা নয়। কিন্তু উভয় পক্ষই নিজ নিজ দাবিতে অনড় থাকায় অচলাবস্থার অবসান হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ, বাইরের শক্তি বেলুচিস্তানের বিদ্রোহীদের উসকানি দিয়ে পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করছে। এখানে বাইরের শক্তি বলতে কখনো ভারত, কখনো বা যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সরকার ও বেলুচ বিদ্রোহীদের মধ্যে সত্যিকারের সমঝোতার সর্বশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০০৪ সালে। সেবারই বেলুচরা স্বাধীনতার দাবিতে জোরালোভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। সে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।
কোয়েটার জাতীয়তাবাদী নেতা মকবুল বেলুচ বলেন, ‘এ আন্দোলন থেকে এখন ফেরার কোনো সুযোগ নেই।’
কোয়েটার বাইরে বেলুচ বসতি নিউ মারি ক্যাম্পের বাসিন্দা মকবুল জানান, দুই দশক হতে চলল তাঁদের বসতিতে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেই। অথচ কাছের সড়কেই এসব সুবিধা আছে। স্বাধীনতা না এলে এসব সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে তাঁর ধারণা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানস রাইটস ওয়াচের পাকিস্তানের পরিচালক আলী দায়ান হাসান বলেন, বেলুচিস্তানের মূল সমস্যা এখন মৌলিক অধিকার রক্ষা। উভয় পক্ষই বাড়াবাড়ি করছে। যুদ্ধংদেহী মনোভাব পরিহার করে সরকার ও বিদ্রোহী নেতাদের সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, সংকট উত্তরণে মূল কাজটি হবে আগামী নির্বাচনগুলোয় জাতীয়তাবাদীদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা। এতে সফল হতে পারলে সমাধানের ক্ষেত্রে সরকার এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
No comments