বিরোধী দলের পথসভা-সংসদই সমস্যা সমাধানের স্থান
রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেভাবে রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও-ভাংচুর-রক্তপাতের ঘটনা ঘটে চলেছে, তাতে বিরোধী বিএনপি জোটের পথসভা নিয়েও নাগরিকদের মনে নানা উদ্বেগ আর আশঙ্কা জেগেছিল। স্বস্তির খবর হলো, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বুধবারের কর্মসূচি শেষ হয়েছে।
বিরোধী দল কর্মসূচির আগেই সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে, সরকারও সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করে বিরোধী দলের পথসভার নিরাপত্তা বিধানে মনোযোগী হয়েছে। সরকারি দলের নেতারা পথসভায় বাধা দেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে কোথাও উগ্রতা প্রদর্শন করেননি। বিএনপির পক্ষ থেকে পথচারীদের দুর্ভোগের জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হয়েছিল, পথসভার কারণে ঢাকায় তীব্র যানজট হবে। কিন্তু দেখা গেছে, সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির পূর্বতন অভিজ্ঞতা থেকে গাড়ি ব্যবহারকারীরা গাড়ি নিয়ে পথে নামেননি। ফলে যানজটও শেষ পর্যন্ত অসহনীয় হয়ে ওঠেনি। সব মিলিয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক মনোভাবেও নাগরিকরা আশ্বস্ত হয়েছেন। এখন বিবদমান সংকট নিরসনে সরকার ও বিরোধী দল দায়িত্বশীল আলোচনার পথে এগোলে সেটি হবে চূড়ান্ত খুশির খবর। বিরোধী দলের দাবি, অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও ইতিবাচক বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা স্পষ্টভাবেই বলেছেন, সরকার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকুক সেটি তারাও চান। যদি তা-ই হয়, তবে সমস্যাটিকে জিইয়ে রেখে রাজপথ উত্তপ্ত করার কোনো যুক্তি নেই। সকলেই আশা করে, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য উপযুক্ত স্থান জাতীয় সংসদ। বিরোধী দলের অবশ্যই সংসদে গিয়ে দাবি বা প্রস্তাব উত্থাপন করা উচিত। আর সরকার যদি নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে, তবে বিষয়টি অচিরে সুরাহা করে ফেলা দরকার। এ ইস্যুতে হরতাল-জ্বালাও-পোড়াও-রক্তপাত আর কেউ দেখতে চায় না। কোনো ইস্যুতেই হরতালের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি জনগণ সমর্থন করে না। বিদ্যুৎ-তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মতো ইস্যুগুলোতে অন্য পন্থায় প্রতিবাদ জানানো যেতে পারে। কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের অধিকার খর্ব করে তা করা উচিত নয়। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বাঁচাতেও কোনো কর্মসূচি প্রত্যাশিত নয়। আমরা আশা করব, জনগণকে উদ্বেগ ও আশঙ্কা থেকে মুক্তি দিতে অচিরে সরকার ও বিরোধী দল বিবদমান ইস্যুগুলো, বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট সংকট ফয়সালা করে ফেলবে। শুধু রাজনৈতিক বিবাদ মেটানোই জরুরি নয়, কিছু দৃষ্টিকটু রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনও জরুরি। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা অনেক সময়ই একে অপরের সম্পর্কে আপত্তিকর ভাষায় কথা বলেন, পরস্পরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। এটি কখনোই প্রত্যাশিত নয়। বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযত, শালীন ও গ্রহণযোগ্য ভাষাই আমরা কামনা করি। বিরোধী দলের একটি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হয়েছে_ এটি আশার কথা। আমরা আশা করি, পরবর্তী কর্মসূচিগুলোও শান্তিপূর্ণ হবে। সবচেয়ে স্বস্তি আসবে যদি কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। যদি সংসদই সকল বিবাদ মেটানোর কেন্দ্রে পরিণত হয়। সে লক্ষ্যে সরকার ও বিরোধী দল এগিয়ে যাক, রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে আলাপ-আলোচনার পথ খুলে যাক_ এটাই এখন নাগরিকদের প্রত্যাশা।
No comments