রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ-জাতিসংঘের পরামর্শ শুনতে হবে
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের শেষ নেই। স্বদেশে তাদের জীবন কাটছে নিরন্তর প্রাণ সংশয়ের শঙ্কায়। যে রাষ্ট্রে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বসবাস করছে, সেখানে নাগরিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত।
১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রবিহীন মানবগোষ্ঠীতে পরিণত করা হয়েছে। এ অমানবিক আচরণের অবসান ঘটাতে হবে, এমন আহ্বান এসেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক প্রস্তাবে। এতে জাতিসত্তার স্বীকৃতিদানসহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘন অবসানের কথা রয়েছে। আশা করব, গণতন্ত্রের পথে চলতে সংকল্পবদ্ধ মিয়ানমার সরকার বিশ্ব সংস্থার এ পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে। এটা ঠিক যে, কোনো দেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আহ্বান বা সুপারিশ উপেক্ষা করলে বিশ্ব সংস্থার কিছুই করার থাকে না। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করা সমীচীন হবে। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি সক্রিয় হলে দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান সহজ হবে। বিভিন্ন সময়ে অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে যেসব রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়েও মিয়ানমার সরকারকে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ শান্তি ও পরমতসহিষ্ণুতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হলেও সেখানের সরকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবন ও নাগরিক অধিকার ক্রমাগত অস্বীকারই শুধু করছে না, তারা গ্রহণ করছে পরিকল্পিত জাতিগত নিশ্চিহ্নকরণ কৌশল। এই নৃশংসতার অবসান কবে হবে, সেটা অনিশ্চিত। জাতিসংঘের পাশাপাশি চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি দেশ এবং বিশেষভাবে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করবে বলে আমরা আশা করব। সেনাশাসনের আমলে দশকের পর দশক মিয়ানমার ছিল বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। নিকট ভবিষ্যতে দেশটি আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। যে দেশের সরকার ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের কারণে স্বদেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নাগরিকের জানমাল অনিরাপদ করে তোলে, তার জন্য এমন মর্যাদার পদ কিন্তু বেমানান। আমরা আশা করব, মিয়ানমার সরকার বিশ্বসমাজের সুপরামর্শের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করবে এবং এটা যত দ্রুত করা যায় ততই সবার জন্য মঙ্গল।
No comments