তিস্তা চুক্তি হওয়া না হওয়ায় কিছু যায় আসে না
পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে আলোচনার
টেবিলে অনেক ইস্যু রয়েছে, সেখানে তিস্তা চুক্তির মতো একটি বিষয় না হলে কিছু
যায় আসে না। গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এভাবেই তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে
মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে অভিন্ন নদীর
পানি বণ্টন বিষয়ে ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
আলোচনা হবে বলে জানান। প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিক জানতে চান-
ভারত-বাংলাদেশ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের আলোচনায় তিস্তা কতটুকু গুরুত্ব
পাবে? জবাবে মন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন ‘দুই দেশের সম্পর্ক যে উচ্চতায়
পৌঁছেছে, এর মধ্যে একটা হলো, এটা হলো না, এতে কিছু যায় আসে না। দেখতে হবে
যে (আমাদের সম্পর্কের) মূল ধারাটা কোথায় যাচ্ছে। আমার মনে হয় তার মধ্যে
একটা হবে কি হবে না বা কি হবে এটা এখন আমরা কিছু বলতে চাই না।’
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হবে না কি
চুক্তি? সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নও করা হয়। জবাবে সমঝোতা স্মারক হবে বলে
উল্লেখ করলেও পরে মন্ত্রী বলেন, ‘হলেই বুঝতে পারবেন, সব তো দেখতেই পারবেন।
কোনো কিছু গোপন করার নেই, এক্কেবারে সর্বসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।’ ওই
সমঝোতা স্মারকে কি থাকছে পরবর্তীতে আবারও প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন,
আপনারা সবকিছুই জানতে পারবেন। এ নিয়ে যেগুলো বলা হচ্ছে, আমাদের নিন্দুকরা
সেগুলো বলছেন। এগুলোর মধ্যে এর কিচ্ছু নেই, দেখতেই পাবেন যথাসময়ে, একটু
ধৈর্য ধরতে হবে।’ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী, বর্তমানে
জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় স্পর্শকতার
প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই না করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ নিয়ে
মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সারসরি কোনো জবাব না দিয়ে বলেন,
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক
পরিমণ্ডলে যে অবস্থানে নিয়ে গেছেন তাতে এমন বক্তব্য সিরিয়াস কিছু নয়।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে দুদেশের মধ্যে প্রায় ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই
হতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে
পারে, তার বেশির ভাগই বর্ডার হাট স্থাপন, তথ্য ও সমপ্রচার, বেসামরিক
পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি,
স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা,
ভারত কর্তৃক প্রদেয় লাইন অব গ্রিড (এলওসি), কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত। এসব চুক্তির সব কিছুই
জনগণের সামনে প্রকাশ করা হবে। এসময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়
পৌঁছেছে এবং দুই দেশই নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল- ৩৩ চুক্তি ও সমঝোতার কতটা চুক্তি, আর কতটা
সমঝোতা স্মারক হবে? জবাবে সুস্পষ্ট করে কিছু না জানিয়ে তিনি বলেন, “আলোচনা
এখনও চলছে, কাজেই আমি ‘প্রায়’ শব্দটি ব্যবহার করেছি এবং সম্ভাবনার কথা
বলেছি।” প্রধানমন্ত্রীর সফরে সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না-
এমন প্রশ্নে মাহমুদ আলী বলেন, “অতি সমপ্রতি সীমান্ত সংক্রান্ত বৈঠক হয়ে
গেল। আপনারা জানেন দুই পক্ষই খুব সিরিয়াসলি চেষ্টা করছে যাতে এটা (সীমান্ত
হত্যা) একদম বন্ধ করা যায়, শেষ করা যায়। কাজেই এটা তো নতুন করে কিছু বলার
নেই।” মন্ত্রী মাহমুদ আলী জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির
আমন্ত্রণে ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর
করবেন। সফরকালে দিল্লিতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে
মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল
চলাচল এবং ত্রিপুরার পালটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন। সেখানে দুই দেশের
প্রধানমন্ত্রী মিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর
হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যেসব
সেনা শহীদ হন, তাদের মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর
মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সেনাসদস্যদের আত্মত্যাগকে
যথাযথ স্বীকৃতি দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ৭ জনের নিকট আত্মীয়ের হাতে শেখ
হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পদক এবং সম্মাননাপত্র তুলে দেবেন। এই
অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। দিল্লি সফরকালে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি,
পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রীর সঙ্গে সৌজন্য
সাক্ষাৎ-বৈঠক হবে। দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকটি অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে হবে
জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওই বৈঠক শেষে দুই দেশ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে। বৈঠকে
দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য
সমপ্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ
তথা কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পদ্মা (গঙ্গা) ব্যারেজ
নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ
ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও
মানবসম্পদ রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে। আগামী ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশ ও
ভারতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি বিজনেস ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলও তাতে অংশ
নেবে। মাহমুদ আলী বলেন, “বিনজেস ইভেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের
ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা হবে। তেমনি
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে।” ভারত
সফরে প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী,
আইনমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা,
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৪০ জন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি থাকবেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক বর্তমানে বিশেষ উচ্চতায় অবস্থান করছে
মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুই
দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীরতর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে
আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হবে। সংবাদ সম্মেলনে
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র্র সচিব মো. শহীদুল হক সহ
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
No comments