তাজুল : আত্মনিবেদনের সুদৃঢ় প্রতিনিধি by হিলাল ফয়েজী
এক একটি কালপর্বে এক এক ধরনের আত্মনিবেদনের রূপ, রঙ, প্রকরণ পৃথিবী উপহার পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে দুনিয়াজুড়ে সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর-ব্যাকুল একদল মানুষ আত্মদানের স্রোতধারা গড়েছে হৃদয়ের ঐকান্তিকতায়, সাহসে, ধৈর্যে, প্রবল উদ্যোগ-উদ্যমে।
আমাদের এই বাংলায় এক সময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুর হাত থেকে স্বদেশ ভূমিকে মুক্ত করার সংগ্রামে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহ, নূরল দীনের কৃষক বিদ্রোহ, ফারায়জী আন্দোলন, নীলচাষিদের প্রতিরোধ সংগ্রাম প্রভৃতি ঐতিহ্যের গৌরবময় উদাহরণ গড়েছে এ দেশবাসী। তিতুমীর, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা_ আত্মনিবেদনের এমনি কত নক্ষত্র আমাদের হৃদয়গগনে। সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ রচনার সংগ্রামটি আসে এরই ধারাবাহিকতায়। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে এমনি সংগ্রামে নিবেদনের কত শত উদাহরণ। বছরের পর বছর কারাবরণ, নির্যাতন, নিবর্তন, দ্বীপান্তর, অন্তরীণ, আন্ডারগ্রাউন্ড কর্মধারা, আন্দোলনের নানা রূপ। বাংলাদেশের ভূসীমানা ও রাষ্ট্রকাঠামোর স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হওয়ার পর সমাজতন্ত্র রাষ্ট্রীয় অন্যতম মূলনীতিতে পরিণত হয়। তবুও নীতি-সমাজতন্ত্র আর বাস্তবায়ন-সমাজতন্ত্রের ভেতর যোজন যোজন ফারাক দৃশ্যমান ছিল। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে আগুয়ান সংগঠন ছিল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। গোপনতার খোলস ভেঙে স্বাধীন দেশে বেরিয়ে এসেই তারা সমাজতন্ত্রের পথে বিপ্লব সংঘটনের একটা রোডম্যাপ তৈরি করে বিশেষত তরুণ-নবীনতর নেতৃত্বের প্রতিনিধি মোহাম্মদ ফরহাদের মূল কর্মোদ্যোগে। সমাজের নানা শ্রেণী ও স্তরে, জীবিকা ও পেশাভিত্তিক সংগঠনে সার্বক্ষণিক ও খণ্ডকালীন কর্মী সংগঠক নিয়োজিত করা হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে তাজুল নাম লেখান শ্রমিকশ্রেণীর জন্য মুক্তিসংগ্রামের খাতায়। এশিয়ার কথিত বৃহত্তম চটকল আদমজী জুটমিলে তিনি শ্রমিকের মাঝে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি। সকলেই বিপ্লবী নন, কেউ কেউ। এই কথাটি কবির সঙ্গে আমরা দ্বিধাহীন চিত্তে, প্রবল সাহসে উচ্চারণ করতে পারি। তাজুল ইসলাম ছিলেন একজন বিপ্লবীর মতো বিপ্লবী। সাহসে এবং ধৈর্যে অতুলনীয়। আত্মনিবেদনে অভাবনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা শেষে যদি চাকরির সন্ধান করতেন, পেতেন উচ্চমাপের চাকরি। হেসে হেসে তিনি আদমজী জুটমিলের বদলি শ্রমিকের কাজ নিলেন দ্বিধাহীনভাবে। কেননা শ্রমিকের মধ্যে কাজ করছেন, অথচ শ্রমিকের পেশা থেকে উচ্চ গগনে বিরাজ করছেন, তাজুল তা মেনে নিতে পারেননি। কী কঠিন দারিদ্র্য স্ত্রী-দু'সন্তানের পরিবারে। দাঁতে দাঁত কামড়ে সে দারিদ্র্যকে সহ্য করে আদমজী শ্রমিক বস্তির বাসিন্দা হয়েই শ্রমিক নেতৃত্বের আশ্চর্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তাজুল। না, একথা তেমন কেউ জানত না। তাজুল তার কাজকে প্রচারের বাইরে রেখে নীরবে-নিভৃতে-নিঃশব্দে নিপীড়িত-বঞ্চিত শ্রমিকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেওয়ার প্রয়াসে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রোডম্যাপে শ্রমিকদের বৃহত্তম প্রান্তর আদমজী চটকলের সংগ্রামী অঙ্গনে তাজুলকে দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল অনেক ভেবেচিন্তে। শৈশব থেকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ী, সুদৃঢ় স্নায়ুবীর তাজুলই ছিলেন তাদের যোগ্যতম প্রতিনিধি। সেই তাজুলকে অনুপস্থিত করে দেওয়ার জন্য স্বৈরাচারের দুর্বৃত্ত ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব পরিকল্পিত হিংস্রতায় ১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে চূড়ান্ত আঘাত হানে। তাজুলের জীবনাবসানের পর বাংলাদেশ এবং পৃথিবী জানল, অমন উচ্চশিক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির উচ্চতম অঙ্গন পেরিয়ে আসা তরুণ অমন বদলি শ্রমিকের কষ্টকর জীবনবরণ করে শ্রমিকের মাঝে মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার কাজে ব্যাপৃত ছিলেন।
তাজুলের আমদজী চটকলকে গলা টিপে বন্ধ করে দিয়েছিল রাষ্ট্রযন্ত্র বিদেশি মদদে। তাজুল নেই, চটকল নেই, চটকল শ্রমিক নেই, পাটের বিশ্ববাজার নেই, সব যেন জাদুঘরে চলে গিয়েছিল। আজ ফের পাট বিশ্ববাজারে ফিরে এসেছে, বন্ধ করা চটকল আবার কিছুটা জীবন ফিরে পাচ্ছে। পাটের নবজীবন ফিরে আসার সাফল্য পেয়েছে। ফিরে আসবে কি তাজুলের মতো দৃঢ়তার নব-তাজুল, একালের?
সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি। সকলেই বিপ্লবী নন, কেউ কেউ। এই কথাটি কবির সঙ্গে আমরা দ্বিধাহীন চিত্তে, প্রবল সাহসে উচ্চারণ করতে পারি। তাজুল ইসলাম ছিলেন একজন বিপ্লবীর মতো বিপ্লবী। সাহসে এবং ধৈর্যে অতুলনীয়। আত্মনিবেদনে অভাবনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা শেষে যদি চাকরির সন্ধান করতেন, পেতেন উচ্চমাপের চাকরি। হেসে হেসে তিনি আদমজী জুটমিলের বদলি শ্রমিকের কাজ নিলেন দ্বিধাহীনভাবে। কেননা শ্রমিকের মধ্যে কাজ করছেন, অথচ শ্রমিকের পেশা থেকে উচ্চ গগনে বিরাজ করছেন, তাজুল তা মেনে নিতে পারেননি। কী কঠিন দারিদ্র্য স্ত্রী-দু'সন্তানের পরিবারে। দাঁতে দাঁত কামড়ে সে দারিদ্র্যকে সহ্য করে আদমজী শ্রমিক বস্তির বাসিন্দা হয়েই শ্রমিক নেতৃত্বের আশ্চর্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তাজুল। না, একথা তেমন কেউ জানত না। তাজুল তার কাজকে প্রচারের বাইরে রেখে নীরবে-নিভৃতে-নিঃশব্দে নিপীড়িত-বঞ্চিত শ্রমিকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেওয়ার প্রয়াসে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রোডম্যাপে শ্রমিকদের বৃহত্তম প্রান্তর আদমজী চটকলের সংগ্রামী অঙ্গনে তাজুলকে দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছিল অনেক ভেবেচিন্তে। শৈশব থেকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ী, সুদৃঢ় স্নায়ুবীর তাজুলই ছিলেন তাদের যোগ্যতম প্রতিনিধি। সেই তাজুলকে অনুপস্থিত করে দেওয়ার জন্য স্বৈরাচারের দুর্বৃত্ত ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব পরিকল্পিত হিংস্রতায় ১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে চূড়ান্ত আঘাত হানে। তাজুলের জীবনাবসানের পর বাংলাদেশ এবং পৃথিবী জানল, অমন উচ্চশিক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির উচ্চতম অঙ্গন পেরিয়ে আসা তরুণ অমন বদলি শ্রমিকের কষ্টকর জীবনবরণ করে শ্রমিকের মাঝে মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার কাজে ব্যাপৃত ছিলেন।
তাজুলের আমদজী চটকলকে গলা টিপে বন্ধ করে দিয়েছিল রাষ্ট্রযন্ত্র বিদেশি মদদে। তাজুল নেই, চটকল নেই, চটকল শ্রমিক নেই, পাটের বিশ্ববাজার নেই, সব যেন জাদুঘরে চলে গিয়েছিল। আজ ফের পাট বিশ্ববাজারে ফিরে এসেছে, বন্ধ করা চটকল আবার কিছুটা জীবন ফিরে পাচ্ছে। পাটের নবজীবন ফিরে আসার সাফল্য পেয়েছে। ফিরে আসবে কি তাজুলের মতো দৃঢ়তার নব-তাজুল, একালের?
No comments