সোহরাব হোসেনের জীবনাবসান-'ঘোর ঘনঘটা ছাইল গগন'
গত শতাব্দীর আশির দশক পর্যন্ত সংগীতপিপাসু বাঙালি জাতির শ্রুতিতৃষ্ণা মেটানোর প্রধান মাধ্যম ছিল বেতার। হাটে, মাঠে, ঘাটে মানুষের শ্রুতি ইন্দ্রীয় থাকত বেতারের দিকে।
ঘোষক যখন বলতেন, 'এবার নজরুলগীতি পরিবেশন করবেন সোহরাব হোসেন', তখনই যেন হৃদয় নেচে উঠত বাঙালি সংগীতপ্রেমীদের, বিশেষ করে নজরুলসংগীতভক্ত বিশাল শ্রোতা মহলের। নজরুলসংগীত এবং সোহরাব হোসেন যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল শ্রোতা-ভক্তদের অন্তরে। এই সোহরাব হোসেন অসংখ্য শ্রোতা, শিক্ষার্থী ও স্বজন রেখে চলে গেলেন 'বাজিয়ে বাঁশি মনের বনে'। নজরুলসংগীত ও শাস্ত্রীয়সংগীতের এই বরণীয় কণ্ঠশিল্পী বৃহস্পতিবার সকালে ৯০ বছরের দীর্ঘ, উজ্জ্বল জীবন পার করে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি...রাজিউন)। ত্রিশের দশক থেকে শুরু করে পুরো শতাব্দী তিনি শুধু সংগীত পরিবেশন করেননি, শুদ্ধ ধারার সংগীত বিকাশে যাঁদের অবদান অগ্রগণ্য, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন। সোহরাব হোসেন বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার আয়েশতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালের ৯ এপ্রিল। পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠকালে তাঁর সংগীতজীবনের শুরু হয়েছিল গুরু কিরণ দে চৌধুরীর হাতে স্থানীয় জমিদারের বদান্যতায়। তারপর থেকেই তিনি সংগীতের সঙ্গে জীবনকে বেঁধে নিয়েছেন। ১৯৪৮ সালে তিনি দেশ বিভাগের পর বাংলাদেশে চলে আসেন। তখন থেকে তিনি আমৃত্যু দেশের সংগীতের শুদ্ধ ধারাকে বাঁচিয়ে রাখতে জড়িয়ে ছিলেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমী, নজরুল একাডেমীসহ আরো কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। নিজ পরিশ্রমে তিনি অসংখ্য শিল্পী তৈরি করেছেন, যাঁরা স্বকীয়তার সঙ্গে সংগীত জগতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। আর তাই দেশ সোহরাব হোসেনকে মূল্যায়ন করছে, সম্মান দেখিয়েছে। পেয়েছেন তিনি স্বাধীনতা পদকসহ অন্যান্য সম্মাননা, পেয়েছেন অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
সোহরাব হোসেন চলে যাওয়ায় শুদ্ধ সংগীতের জগতে ব্যক্ত-অব্যক্ত শূন্যতা ও প্রয়োজন অনুভূত হবে। সেই জায়গাটি পূরণ করার দায়িত্ব তিনি দিয়ে গেছেন নিজের হাতে গড়া শিল্পীদের। এসব শিল্পী সংগীতের এই প্রাণপুরুষের শিক্ষা ও প্রতিশ্রুতিকে ধারণ করে বাংলা সংগীতের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখবেন- এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তিনি যেমন ব্যক্তিগত সাধনার পাশাপাশি গুণী শিল্পী তৈরির কাজ করেছেন, তাঁর সুযোগ্য শিক্ষার্থীরাও সেসব কিছুর আগে সেই বৈশিষ্ট্যকে অগ্রাধিকার দিলে দেশে সংগীতের সুস্থ বিকাশ ঘটবে। গোটা জাতির মনে রাখা দরকার, সুস্থ সংগীতের ধারা জাতির সৃজনশীলতা ও মেধা বিকাশে এক গভীর রেখাপাত করে থাকে। সোহরাব হোসেনের মতো শিল্পীকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারেরও অনেক গুরুদায়িত্ব রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সোহরাব হোসেনকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা সরকারের নেওয়া উচিত। যেমন- সোহরাব হোসেনের গানের সংগ্রহ সরকারের উদ্যোগে অথবা সহযোগিতায় প্রকাশ করা, তাঁর জীবনী রচনা করে তা শিশু-কিশোরদের সামনে তুলে ধরা; সেই সঙ্গে যত বেশি সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে তাঁকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা।
সোহরাব হোসেন চলে যাওয়ায় শুদ্ধ সংগীতের জগতে ব্যক্ত-অব্যক্ত শূন্যতা ও প্রয়োজন অনুভূত হবে। সেই জায়গাটি পূরণ করার দায়িত্ব তিনি দিয়ে গেছেন নিজের হাতে গড়া শিল্পীদের। এসব শিল্পী সংগীতের এই প্রাণপুরুষের শিক্ষা ও প্রতিশ্রুতিকে ধারণ করে বাংলা সংগীতের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রাখবেন- এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তিনি যেমন ব্যক্তিগত সাধনার পাশাপাশি গুণী শিল্পী তৈরির কাজ করেছেন, তাঁর সুযোগ্য শিক্ষার্থীরাও সেসব কিছুর আগে সেই বৈশিষ্ট্যকে অগ্রাধিকার দিলে দেশে সংগীতের সুস্থ বিকাশ ঘটবে। গোটা জাতির মনে রাখা দরকার, সুস্থ সংগীতের ধারা জাতির সৃজনশীলতা ও মেধা বিকাশে এক গভীর রেখাপাত করে থাকে। সোহরাব হোসেনের মতো শিল্পীকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারেরও অনেক গুরুদায়িত্ব রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সোহরাব হোসেনকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা সরকারের নেওয়া উচিত। যেমন- সোহরাব হোসেনের গানের সংগ্রহ সরকারের উদ্যোগে অথবা সহযোগিতায় প্রকাশ করা, তাঁর জীবনী রচনা করে তা শিশু-কিশোরদের সামনে তুলে ধরা; সেই সঙ্গে যত বেশি সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে তাঁকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা।
No comments