ছোটদের সাফল্যে উদ্বেল দেশ-পাসের হার প্রাথমিকে ৯৭.৩৫ জেএসসিতে ৮৬.১১ শতাংশ
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও এবতেদায়ি সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় এবার দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে খুদে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয় এসব পরীক্ষার ফল।
এবার ফলাফলের সব ক্ষেত্রে সাফল্যের সূচক যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। মেধার প্রতিযোগিতায় ছোটদের এই বড় মাপের সাফল্যে হাড় কাঁপানো শীতের দিনটি ভরে ওঠে আবেগের উষ্ণতায়। আনন্দ-উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। তবে সবচেয়ে বেশি উল্লাসের ঢেউ আছড়ে পড়ে প্রতিটি স্কুলের আঙিনায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচ্ছ্বাস হয়ে ওঠে বাঁধভাঙা।
এবার প্রাথমিক সমাপনীতে ৯৭.৩৫ এবং এবতেদায়িতে ৯২.৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এই হার ছিল প্রাথমিকে ৯৭.২৬ এবং এবতেদায়িতে ৯১.২৮ শতাংশ। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৮৬.৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে জেএসসিতে পাসের হার ৮৬.১১ এবং জেডিসিতে ৯০.৮৭ শতাংশ। গত বছর জেএসসি ও জেডিসির সম্মিলিত পাসের হার ছিল ৮৩.৭১ শতাংশ। এর মধ্যে জেএসসিতে পাসের হার ছিল ৮২.৬৭ এবং জেডিসিতে ৮৮.৭১ শতাংশ।
প্রাথমিক সমাপনীর ফল প্রকাশ করা হয়েছে বিভাগওয়ারি। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে পাসের হার সর্বোচ্চ ৯৯.১৯ শতাংশ। এবার প্রাথমিকে জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট দুই লাখ ৩০ হাজার ২২০ জন, যা গত বছরের দ্বিগুণ। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী।
জেএসসিতে এবার বরিশাল বোর্ডে ৯৩.৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যা আট বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৮৫.০২, রাজশাহীতে ৮৫.০৯, কুমিল্লায় ৯১.৮৬, যশোরে ৮৫.২৮, চট্টগ্রামে ৭৮.৩৫, সিলেটে ৯০.৪৫ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৮৪.৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী এবার অষ্টম শ্রেণীর এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। জেএসসি ও জেডিসিতে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ৪৬ হাজার ৯৪২ জন। এর মধ্যে জেএসসিতে ৪৪ হাজার ১৫৮ এবং জেডিসিতে দুই হাজার ৭৮৪ জন।
জেএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়ে আট বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা। এ বোর্ডের ১৭ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থী এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ছয় হাজার ২২১, কুমিল্লা বোর্ডে তিন হাজার ৭৬৩, যশোর বোর্ডে তিন হাজার ৯৭৮, চট্টগ্রাম বোর্ডে তিন হাজার ৫৩১, বরিশাল বোর্ডে তিন হাজার ১৭২, সিলেট বোর্ডে এক হাজার ৩৬৪ এবং দিনাজপুর বোর্ডে চার হাজার ৫৩৪ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দুটি পরীক্ষার ফলের অনুলিপি তুলে দেন। এবারই প্রথম স্কুল পর্যায়ের দুটি বড় পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলো একই দিনে। পরে শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী সচিবালয়ে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে দুই পরীক্ষার ফলাফলের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। পরীক্ষার ফলাফলে দুই মন্ত্রীই তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। এ সময় দুই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সরকারের নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের আন্তরিক চেষ্টার কারণে সব সূচকে উন্নতি হয়েছে। আর এর প্রভাব সার্বিক ফলাফলে ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. মো. আফসারুল আমিন বলেন, বিষয়ভিত্তিক ফল ভালো হওয়ায় সার্বিক ফল ভালো হয়েছে।
আহা কী আনন্দ! : সকালে শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি হস্তান্তরের পরপরই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল প্রকাশিত হতে থাকে। আর সেই সঙ্গে ফুটে উঠতে শুরু করে হাসি-কান্নার পুরনো চিত্র। তবে হাসিমুখেরই ছিল জয়জয়কার। ব্যর্থতার ছবি চোখে পড়েছে কমই। প্রতিটি স্কুলে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্বজনরা উল্লাসে মেতে ওঠে। একই সঙ্গে মিষ্টি ও ফুলের দোকানগুলোয় ভিড় বাড়তে থাকে। পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা বাড়ায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে এবার আনন্দের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
এদিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকে ঘরে বসেও ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষার ফল জানতে পেরেছে। তবে একসঙ্গে অনেকে ওয়েবসাইটে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকায় কিছুটা কারিগরি সমস্যাও দেখা দেয়।
প্রাথমিক সমাপনীর ফল : ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন জানান, এবার পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৯২ হাজার ৩২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২৪ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৪১ জন। পাসের হার ৯৭.৩৫ শতাংশ। ইংলিশ ভার্সনে পাসের হার ৯৯.৪১ শতাংশ হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের পাসের হার ৯৬.২৮ শতাংশ।
প্রাথমিকের ফলাফলে এবার সারা দেশের মধ্যে সেরা স্কুল হয়েছে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজার ৮৫ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৫৬৩ জন। দ্বিতীয় হয়েছে মতিঝিলের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল। এখান থেকে এক হাজার ৬৮ পরীক্ষার্থীর সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৮০ জন।
এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও গড় পাসের হারে ছেলেরা এগিয়ে গেছে। ছেলেদের পাসের হার ৯৭.৫৩ এবং মেয়েদের ৯৭.১৯ শতাংশ।
প্রাথমিকে শিক্ষা বোর্ড না থাকায় অধিদপ্তর বিভাগওয়ারি ফলাফল প্রকাশ করে। পাসের হারে সাত বিভাগের মধ্যে সেরা হয়েছে বরিশাল বিভাগ। তাদের পাসের হার ৯৯.১৯ শতাংশ। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে পাসের হার ৯৭.০৬, খুলনা বিভাগে ৯৮.৫৪, ঢাকা বিভাগে ৯৭.১০, চট্টগ্রামে ৯৭, সিলেটে ৯৫.৩৪ এবং রংপুরে ৯৮.১৪ শতাংশ। এ ছাড়া জেলাওয়ারি ফলাফলে পাসের হারে সবাইকে টপকে শীর্ষস্থানটি দখল করেছে লালমনিরহাট জেলা। এ জেলায় শতভাগ পরীক্ষার্থীই পাস করেছে। যশোর জেলা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, পাসের হার ৯৯.৯৮ শতাংশ। পাসের হারে সর্বনিম্ন হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা, ৯১.৯৮ শতাংশ। উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় পাসের হার সর্বনিম্ন ৭৮.২৯ শতাংশ।
জেএসসির ফলাফল : জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৬.৯৭ শতাংশ। এবার জেএসসি ও জেডিসিতে অংশ নেয় ১৯ লাখ ১০ হাজার ৫০৮ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৮৮.০১ এবং ছাত্রী ৮৬.০২ শতাংশ। সারা দেশে ২২ হাজার ৯৭৬ জন ছাত্র ও ২৩ হাজার ৯৬৬ জন ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
আট বোর্ডের পরিসংখ্যান : আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের জেএসসি পরীক্ষায় এবার উত্তীর্ণের হার ৮৬.১১ শতাংশ। এ বছর জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৪ হাজার ১৫৮ শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৮৩৮। এ বছর জিপিএ ৫ বেড়েছে ১৪ হাজার ৩২০। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত জেডিসি পরীক্ষায় এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজার ৭৮৪।
জিপিএ ৫ : জেএসসিতে এবার জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ১৭ হাজার ৫৯৫ জনই ঢাকা বোর্ডের। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ছয় হাজার ২২১, কুমিল্লা বোর্ডে তিন হাজার ৭৬৩, যশোর বোর্ডে তিন হাজার ৯৭৮, চট্টগ্রাম বোর্ডে তিন হাজার ৫৩১, বরিশাল বোর্ডে তিন হাজার ১৭২, সিলেট বোর্ডে এক হাজার ৩৬৪ এবং দিনাজপুর বোর্ডে চার হাজার ৫৩৪ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
বিদেশের সাত কেন্দ্রের ফল : এ বছর বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ৩৬২ শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৫২ জন। পাসের হার ৯৭.২৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৭ জন।
বোর্ডওয়ারি ফলাফল : আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর জেএসসিতে সর্বোচ্চ পাসের হার বরিশাল বোর্ডে ৯৩.৮২ শতাংশ। সর্বনিম্ন চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭৮.৩৫ শতাংশ।
ঢাকা বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল চার লাখ ৭৪ হাজার ৫১৫ শিক্ষার্থী। পাস করেছে চার লাখ তিন হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৯৫ হাজার ১৪৪ জন ছাত্র ও দুই লাখ আট হাজার ২৭৭ জন ছাত্রী।
রাজশাহী বোর্ড : রাজশাহী বোর্ড থেকে এবার এক লাখ ৮৫ হাজার ৫২৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে ৭৭ হাজার ৬০৭ জন ছাত্র ও ৮০ হাজার ২৫৮ জন ছাত্রী।
চট্টগ্রাম বোর্ড : চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৭২ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক লাখ চার হাজার ৫৭৮ জন পাস করেছে। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ২৬০ জন ছাত্র ও ৫৬ হাজার ৩১৮ জন ছাত্রী।
কুমিল্লা বোর্ড : কুমিল্লা বোর্ড থেকে এক লাখ ৮৬ হাজার ৫০১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে এক লাখ ৭১ হাজার ৩২৮ জন। এর মধ্যে ৭৪ হাজার ৬৫৫ জন ছাত্র ও ৯৬ হাজার ৬৭৩ জন ছাত্রী।
যশোর বোর্ড : যশোর বোর্ড থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৯৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে এক লাখ ৫৪ হাজার ৪৪১ জন। এর মধ্যে ৭৫ হাজার ৮৯৭ জন ছাত্র ও ৭৮ হাজার ৫৪৪ জন ছাত্রী। বরিশাল বোর্ড : বরিশাল বোর্ডের অধীনে ৮২ হাজার ১৮২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৭৭ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৩৪৮ জন ছাত্র ও ৩৯ হাজার ৭৫৩ জন ছাত্রী।
সিলেট বোর্ড : সিলেট বোর্ডে এবার ৯০ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে ৮১ হাজার ৯৪৯ জন। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ হাজার ৪৬৭ জন ছাত্র ও ৪৫ হাজার ৪৮২ জন ছাত্রী।
দিনাজপুর বোর্ড : দিনাজপুর বোর্ড থেকে এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০৫ জন। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭২ হাজার ৩৪ জন ছাত্র ও ৭৫ হাজার ৪৭১ জন ছাত্রী।
এবার প্রাথমিক সমাপনীতে ৯৭.৩৫ এবং এবতেদায়িতে ৯২.৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এই হার ছিল প্রাথমিকে ৯৭.২৬ এবং এবতেদায়িতে ৯১.২৮ শতাংশ। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৮৬.৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে জেএসসিতে পাসের হার ৮৬.১১ এবং জেডিসিতে ৯০.৮৭ শতাংশ। গত বছর জেএসসি ও জেডিসির সম্মিলিত পাসের হার ছিল ৮৩.৭১ শতাংশ। এর মধ্যে জেএসসিতে পাসের হার ছিল ৮২.৬৭ এবং জেডিসিতে ৮৮.৭১ শতাংশ।
প্রাথমিক সমাপনীর ফল প্রকাশ করা হয়েছে বিভাগওয়ারি। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে পাসের হার সর্বোচ্চ ৯৯.১৯ শতাংশ। এবার প্রাথমিকে জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট দুই লাখ ৩০ হাজার ২২০ জন, যা গত বছরের দ্বিগুণ। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী।
জেএসসিতে এবার বরিশাল বোর্ডে ৯৩.৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যা আট বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৮৫.০২, রাজশাহীতে ৮৫.০৯, কুমিল্লায় ৯১.৮৬, যশোরে ৮৫.২৮, চট্টগ্রামে ৭৮.৩৫, সিলেটে ৯০.৪৫ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৮৪.৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী এবার অষ্টম শ্রেণীর এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। জেএসসি ও জেডিসিতে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ৪৬ হাজার ৯৪২ জন। এর মধ্যে জেএসসিতে ৪৪ হাজার ১৫৮ এবং জেডিসিতে দুই হাজার ৭৮৪ জন।
জেএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়ে আট বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা। এ বোর্ডের ১৭ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থী এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ছয় হাজার ২২১, কুমিল্লা বোর্ডে তিন হাজার ৭৬৩, যশোর বোর্ডে তিন হাজার ৯৭৮, চট্টগ্রাম বোর্ডে তিন হাজার ৫৩১, বরিশাল বোর্ডে তিন হাজার ১৭২, সিলেট বোর্ডে এক হাজার ৩৬৪ এবং দিনাজপুর বোর্ডে চার হাজার ৫৩৪ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
গতকাল সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দুটি পরীক্ষার ফলের অনুলিপি তুলে দেন। এবারই প্রথম স্কুল পর্যায়ের দুটি বড় পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলো একই দিনে। পরে শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী সচিবালয়ে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে দুই পরীক্ষার ফলাফলের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। পরীক্ষার ফলাফলে দুই মন্ত্রীই তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। এ সময় দুই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সরকারের নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের আন্তরিক চেষ্টার কারণে সব সূচকে উন্নতি হয়েছে। আর এর প্রভাব সার্বিক ফলাফলে ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. মো. আফসারুল আমিন বলেন, বিষয়ভিত্তিক ফল ভালো হওয়ায় সার্বিক ফল ভালো হয়েছে।
আহা কী আনন্দ! : সকালে শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের কপি হস্তান্তরের পরপরই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফল প্রকাশিত হতে থাকে। আর সেই সঙ্গে ফুটে উঠতে শুরু করে হাসি-কান্নার পুরনো চিত্র। তবে হাসিমুখেরই ছিল জয়জয়কার। ব্যর্থতার ছবি চোখে পড়েছে কমই। প্রতিটি স্কুলে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্বজনরা উল্লাসে মেতে ওঠে। একই সঙ্গে মিষ্টি ও ফুলের দোকানগুলোয় ভিড় বাড়তে থাকে। পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা বাড়ায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে এবার আনন্দের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
এদিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকে ঘরে বসেও ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষার ফল জানতে পেরেছে। তবে একসঙ্গে অনেকে ওয়েবসাইটে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকায় কিছুটা কারিগরি সমস্যাও দেখা দেয়।
প্রাথমিক সমাপনীর ফল : ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন জানান, এবার পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৯২ হাজার ৩২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২৪ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৪১ জন। পাসের হার ৯৭.৩৫ শতাংশ। ইংলিশ ভার্সনে পাসের হার ৯৯.৪১ শতাংশ হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের পাসের হার ৯৬.২৮ শতাংশ।
প্রাথমিকের ফলাফলে এবার সারা দেশের মধ্যে সেরা স্কুল হয়েছে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজার ৮৫ পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৫৬৩ জন। দ্বিতীয় হয়েছে মতিঝিলের ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল। এখান থেকে এক হাজার ৬৮ পরীক্ষার্থীর সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৮০ জন।
এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও গড় পাসের হারে ছেলেরা এগিয়ে গেছে। ছেলেদের পাসের হার ৯৭.৫৩ এবং মেয়েদের ৯৭.১৯ শতাংশ।
প্রাথমিকে শিক্ষা বোর্ড না থাকায় অধিদপ্তর বিভাগওয়ারি ফলাফল প্রকাশ করে। পাসের হারে সাত বিভাগের মধ্যে সেরা হয়েছে বরিশাল বিভাগ। তাদের পাসের হার ৯৯.১৯ শতাংশ। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে পাসের হার ৯৭.০৬, খুলনা বিভাগে ৯৮.৫৪, ঢাকা বিভাগে ৯৭.১০, চট্টগ্রামে ৯৭, সিলেটে ৯৫.৩৪ এবং রংপুরে ৯৮.১৪ শতাংশ। এ ছাড়া জেলাওয়ারি ফলাফলে পাসের হারে সবাইকে টপকে শীর্ষস্থানটি দখল করেছে লালমনিরহাট জেলা। এ জেলায় শতভাগ পরীক্ষার্থীই পাস করেছে। যশোর জেলা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, পাসের হার ৯৯.৯৮ শতাংশ। পাসের হারে সর্বনিম্ন হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা, ৯১.৯৮ শতাংশ। উপজেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় পাসের হার সর্বনিম্ন ৭৮.২৯ শতাংশ।
জেএসসির ফলাফল : জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৬.৯৭ শতাংশ। এবার জেএসসি ও জেডিসিতে অংশ নেয় ১৯ লাখ ১০ হাজার ৫০৮ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৮৮.০১ এবং ছাত্রী ৮৬.০২ শতাংশ। সারা দেশে ২২ হাজার ৯৭৬ জন ছাত্র ও ২৩ হাজার ৯৬৬ জন ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে।
আট বোর্ডের পরিসংখ্যান : আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের জেএসসি পরীক্ষায় এবার উত্তীর্ণের হার ৮৬.১১ শতাংশ। এ বছর জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৪ হাজার ১৫৮ শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৮৩৮। এ বছর জিপিএ ৫ বেড়েছে ১৪ হাজার ৩২০। মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত জেডিসি পরীক্ষায় এবার জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই হাজার ৭৮৪।
জিপিএ ৫ : জেএসসিতে এবার জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ১৭ হাজার ৫৯৫ জনই ঢাকা বোর্ডের। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ছয় হাজার ২২১, কুমিল্লা বোর্ডে তিন হাজার ৭৬৩, যশোর বোর্ডে তিন হাজার ৯৭৮, চট্টগ্রাম বোর্ডে তিন হাজার ৫৩১, বরিশাল বোর্ডে তিন হাজার ১৭২, সিলেট বোর্ডে এক হাজার ৩৬৪ এবং দিনাজপুর বোর্ডে চার হাজার ৫৩৪ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
বিদেশের সাত কেন্দ্রের ফল : এ বছর বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ৩৬২ শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৫২ জন। পাসের হার ৯৭.২৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৭ জন।
বোর্ডওয়ারি ফলাফল : আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর জেএসসিতে সর্বোচ্চ পাসের হার বরিশাল বোর্ডে ৯৩.৮২ শতাংশ। সর্বনিম্ন চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭৮.৩৫ শতাংশ।
ঢাকা বোর্ড থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল চার লাখ ৭৪ হাজার ৫১৫ শিক্ষার্থী। পাস করেছে চার লাখ তিন হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৯৫ হাজার ১৪৪ জন ছাত্র ও দুই লাখ আট হাজার ২৭৭ জন ছাত্রী।
রাজশাহী বোর্ড : রাজশাহী বোর্ড থেকে এবার এক লাখ ৮৫ হাজার ৫২৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে ৭৭ হাজার ৬০৭ জন ছাত্র ও ৮০ হাজার ২৫৮ জন ছাত্রী।
চট্টগ্রাম বোর্ড : চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক লাখ ৩৩ হাজার ৪৭২ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক লাখ চার হাজার ৫৭৮ জন পাস করেছে। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ২৬০ জন ছাত্র ও ৫৬ হাজার ৩১৮ জন ছাত্রী।
কুমিল্লা বোর্ড : কুমিল্লা বোর্ড থেকে এক লাখ ৮৬ হাজার ৫০১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে এক লাখ ৭১ হাজার ৩২৮ জন। এর মধ্যে ৭৪ হাজার ৬৫৫ জন ছাত্র ও ৯৬ হাজার ৬৭৩ জন ছাত্রী।
যশোর বোর্ড : যশোর বোর্ড থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৯৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে এক লাখ ৫৪ হাজার ৪৪১ জন। এর মধ্যে ৭৫ হাজার ৮৯৭ জন ছাত্র ও ৭৮ হাজার ৫৪৪ জন ছাত্রী। বরিশাল বোর্ড : বরিশাল বোর্ডের অধীনে ৮২ হাজার ১৮২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৭৭ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৩৪৮ জন ছাত্র ও ৩৯ হাজার ৭৫৩ জন ছাত্রী।
সিলেট বোর্ড : সিলেট বোর্ডে এবার ৯০ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে ৮১ হাজার ৯৪৯ জন। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ হাজার ৪৬৭ জন ছাত্র ও ৪৫ হাজার ৪৮২ জন ছাত্রী।
দিনাজপুর বোর্ড : দিনাজপুর বোর্ড থেকে এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৮৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাস করে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০৫ জন। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭২ হাজার ৩৪ জন ছাত্র ও ৭৫ হাজার ৪৭১ জন ছাত্রী।
No comments