নাটক শুধু বিনোদন নয় শ্রেণীসংগ্রামের সুতীক্ষ হাতিয়ার’-আরণ্যকের ৪০ by সুজাত শিমুল
‘মুর্দা ফকির ঝড় ও বোঝে না আগুনও বোঝে না। ও তো এক রকম কবরের বাসিন্দা। ভাষার দাবিতে মিছিল বেরিয়েছিল বলে পুলিশ গুলি করে কয়েকটিকে খতম করে দিয়েছে—এত কথা বোঝার মতো জ্ঞান বুদ্ধি ওর নেই। লাশ দেখলেই ও মুখের মধ্যে ভাত গুঁজে দিতে চায়’—সংলাপটি শুনলে কারও না বোঝার অবকাশ নেই যে এটি ভাষা আন্দোলনের কালে জেলখানায় বসে মোমের আলোতে লেখা মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকেরই সংলাপ।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন করে আরণ্যক নাট্যদল। ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় শুরু হয় আরণ্যক নাট্যদলের পদচারণ। ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হয়েছে আরণ্যকের উৎসব।
এই দীর্ঘ সময়ে আরণ্যক মঞ্চ নাটক, পথনাটক ও মুক্ত নাটকের বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মযজ্ঞ আর নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে দেশের নন্দিত নাট্যদলের কাতারে। স্বাধীনতার সমান বয়স নিয়ে আরণ্যক হেঁটে চলেছে গন্তব্যের পথে। ১ ফেব্রুয়ারি সূর্যাস্তের মুহূর্তে আলোক প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় আরণ্যকের ৪০ বছর পূর্তি উৎসব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। আয়োজনে থাকে নাট্যে-ভাষ্যে-গীতে-স্থাপত্যে একুশ।
উৎসবের উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শন করা হয় কবর নাটকের স্মারক অভিনয়। আবার মঞ্চে কবর নাটক, অর্থাৎ—আবার মঞ্চে নেতা চরিত্রে আলী যাকের, ইন্সপেক্টর চরিত্রে সুভাষ দত্ত, মুর্দা ফকির চরিত্রে মামুনুর রশীদ, দারোয়ান চরিত্রে নাজমুল হোসাইন এবং ছায়ামূর্তি চরিত্রে ড. ইনামুল হক! এই স্মারক অভিনয়ে নাটকের একটি বিশেষ দৃশ্যে অভিনয় করে আরণ্যকের এই প্রজন্মের নাট্যকর্মীরা। একই নাটক, মাঝখানে ব্যবধান ৪০ বছর এবং তারপর বর্তমান প্রজন্ম। দুই প্রজন্মের সেতুবন্ধে কবর নাটকের স্মারক অভিনয়। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন কবর নাটকের প্রথম কলাকুশলীদের অনেকেই।
এবার আরণ্যকের এই সুদীর্ঘ পথচলা নিয়ে কিছু কথা।
সত্তরের দশক
এই দশকে মামুনুর রশীদের রচনায়ওরা কদম আলী নাটকটি বেশ আলোচিত ছিল। শ্রেণীবৈষম্য আর শাসন-শোষণের নানা চিত্র এবং ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে তৈরি করা নাটকটি। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল ৩ জুলাই ১৯৭৬। নাটকটিতে অভিনয় করেন আলী মামুন, আলমগীর, মামুনুর রশীদ, আজিজুল হাকিমসহ আরও অনেকে।
আশির দশক
আশির দশকে আবদুল্লাহেল মাহমুদের লেখা সাতপুরুষের ঋণ এবং নানকার পালা নাটক দুটি বেশ আলোচনায় আসে। সাতপুরুষের ঋণ প্রথম মঞ্চে আসে ১৯৮২ সালে। বিভিন্ন নানকার সম্প্রদায়ের অঞ্চলগুলোতে যেসব পেশাভিত্তিক খণ্ড সমাজগুলি নানকার প্রথা শিকলে বাধা পড়েছিল, তার নানা চিত্র নিয়ে তৈরি করা হয় নানকার পালা নাটকটি। নাটকটি প্রথম মঞ্চে আসে ১৯৮৫ সালের ৭ এপ্রিল।
নব্বইয়ের দশক
আলোচিত নাটক মান্নান হীরার রচনায় ময়ূর সিংহাসন । ইতিমধ্যে নাটকটির ১০৬টি প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়েছে। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন শাহ আলম দুলাল। অভিনয় করেন ফজলুর রহমান বাবু, তাজিন আহমেদ, মোমেনা চৌধুরী, মামুনুর রশীদ, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, চঞ্চল চৌধুরী, তমালিকা, শাহ আলম দুলাল, মান্নান হীরা প্রমুখ।
সাম্প্রতিক সময়
আরণ্যক মঞ্চে এনেছে বেশ কয়েকটি নতুন নাটক। এবং বিদ্যাসাগর, রাঢ়াং, শত্রুগণ এবং দুটি নিরীক্ষাধর্মী নাটক ইতি ইউকাস্তে ও টুবি অর নট টুবি। রাঢ়াং নাটকটি দর্শকনন্দিত হয়েছে। ইতিমধ্যে নাটকটির শততম প্রদর্শনীও সম্পন্ন হয়েছে। সাঁওতালদের জীবনের নানা চিত্র নিয়ে নাটকটি রচনা ও নির্দেশনার কাজটি করেছেন মামুনুর রশীদ।
আরণ্যক মানুষের দুঃখ, বেদনা, বিদ্রোহ ও প্রেম নিয়ে সাম্যের অলংকার গড়ার দুর্বার চেষ্টা করে এসেছে পেছনে ফেলে আসা দীর্ঘ ৪০ বছরের পথচলায়। একই সঙ্গে সে অলংকার বিপন্ন নিরন্ন মানুষের গলায় পরিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টাও করেছে তারা। কেননা আরণ্যক বিশ্বাস করে, সমাজবিচ্ছিন্ন কোনো শিল্পকর্মীর অবস্থান শুধু অসম্ভব নয়, অকল্পনীয়ও বটে। তাই তো আরণ্যক বেছে নিয়েছে একটি স্লোগান ‘নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণীসংগ্রামের সুতীক্ষ হাতিয়ার’।
আরণ্যকের প্রথম নাটক কবর-এ অভিনয় করেছিলেন আলী যাকের, সুভাষ দত্ত, ইনামুল হক ও মামুনুর রশীদ। মঞ্চপাড়ায় পড়ুন তাঁদের অনুভূতির কথা।
এই দীর্ঘ সময়ে আরণ্যক মঞ্চ নাটক, পথনাটক ও মুক্ত নাটকের বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মযজ্ঞ আর নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে দেশের নন্দিত নাট্যদলের কাতারে। স্বাধীনতার সমান বয়স নিয়ে আরণ্যক হেঁটে চলেছে গন্তব্যের পথে। ১ ফেব্রুয়ারি সূর্যাস্তের মুহূর্তে আলোক প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় আরণ্যকের ৪০ বছর পূর্তি উৎসব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। আয়োজনে থাকে নাট্যে-ভাষ্যে-গীতে-স্থাপত্যে একুশ।
উৎসবের উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শন করা হয় কবর নাটকের স্মারক অভিনয়। আবার মঞ্চে কবর নাটক, অর্থাৎ—আবার মঞ্চে নেতা চরিত্রে আলী যাকের, ইন্সপেক্টর চরিত্রে সুভাষ দত্ত, মুর্দা ফকির চরিত্রে মামুনুর রশীদ, দারোয়ান চরিত্রে নাজমুল হোসাইন এবং ছায়ামূর্তি চরিত্রে ড. ইনামুল হক! এই স্মারক অভিনয়ে নাটকের একটি বিশেষ দৃশ্যে অভিনয় করে আরণ্যকের এই প্রজন্মের নাট্যকর্মীরা। একই নাটক, মাঝখানে ব্যবধান ৪০ বছর এবং তারপর বর্তমান প্রজন্ম। দুই প্রজন্মের সেতুবন্ধে কবর নাটকের স্মারক অভিনয়। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন কবর নাটকের প্রথম কলাকুশলীদের অনেকেই।
এবার আরণ্যকের এই সুদীর্ঘ পথচলা নিয়ে কিছু কথা।
সত্তরের দশক
এই দশকে মামুনুর রশীদের রচনায়ওরা কদম আলী নাটকটি বেশ আলোচিত ছিল। শ্রেণীবৈষম্য আর শাসন-শোষণের নানা চিত্র এবং ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে তৈরি করা নাটকটি। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন মোশাররফ হোসেন। প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল ৩ জুলাই ১৯৭৬। নাটকটিতে অভিনয় করেন আলী মামুন, আলমগীর, মামুনুর রশীদ, আজিজুল হাকিমসহ আরও অনেকে।
আশির দশক
আশির দশকে আবদুল্লাহেল মাহমুদের লেখা সাতপুরুষের ঋণ এবং নানকার পালা নাটক দুটি বেশ আলোচনায় আসে। সাতপুরুষের ঋণ প্রথম মঞ্চে আসে ১৯৮২ সালে। বিভিন্ন নানকার সম্প্রদায়ের অঞ্চলগুলোতে যেসব পেশাভিত্তিক খণ্ড সমাজগুলি নানকার প্রথা শিকলে বাধা পড়েছিল, তার নানা চিত্র নিয়ে তৈরি করা হয় নানকার পালা নাটকটি। নাটকটি প্রথম মঞ্চে আসে ১৯৮৫ সালের ৭ এপ্রিল।
নব্বইয়ের দশক
আলোচিত নাটক মান্নান হীরার রচনায় ময়ূর সিংহাসন । ইতিমধ্যে নাটকটির ১০৬টি প্রদর্শনী সম্পন্ন হয়েছে। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন শাহ আলম দুলাল। অভিনয় করেন ফজলুর রহমান বাবু, তাজিন আহমেদ, মোমেনা চৌধুরী, মামুনুর রশীদ, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, চঞ্চল চৌধুরী, তমালিকা, শাহ আলম দুলাল, মান্নান হীরা প্রমুখ।
সাম্প্রতিক সময়
আরণ্যক মঞ্চে এনেছে বেশ কয়েকটি নতুন নাটক। এবং বিদ্যাসাগর, রাঢ়াং, শত্রুগণ এবং দুটি নিরীক্ষাধর্মী নাটক ইতি ইউকাস্তে ও টুবি অর নট টুবি। রাঢ়াং নাটকটি দর্শকনন্দিত হয়েছে। ইতিমধ্যে নাটকটির শততম প্রদর্শনীও সম্পন্ন হয়েছে। সাঁওতালদের জীবনের নানা চিত্র নিয়ে নাটকটি রচনা ও নির্দেশনার কাজটি করেছেন মামুনুর রশীদ।
আরণ্যক মানুষের দুঃখ, বেদনা, বিদ্রোহ ও প্রেম নিয়ে সাম্যের অলংকার গড়ার দুর্বার চেষ্টা করে এসেছে পেছনে ফেলে আসা দীর্ঘ ৪০ বছরের পথচলায়। একই সঙ্গে সে অলংকার বিপন্ন নিরন্ন মানুষের গলায় পরিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টাও করেছে তারা। কেননা আরণ্যক বিশ্বাস করে, সমাজবিচ্ছিন্ন কোনো শিল্পকর্মীর অবস্থান শুধু অসম্ভব নয়, অকল্পনীয়ও বটে। তাই তো আরণ্যক বেছে নিয়েছে একটি স্লোগান ‘নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণীসংগ্রামের সুতীক্ষ হাতিয়ার’।
আরণ্যকের প্রথম নাটক কবর-এ অভিনয় করেছিলেন আলী যাকের, সুভাষ দত্ত, ইনামুল হক ও মামুনুর রশীদ। মঞ্চপাড়ায় পড়ুন তাঁদের অনুভূতির কথা।
No comments