চারদিকে পানিবন্দি মানুষ-বন্যা সমস্যা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিন

উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কয়েক দিনের টানা বর্ষণে দেশের ১১টি জেলা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পদ্মা ও মেঘনায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ায় এবং দ্রুত পানি নামতে না পারায় অনেক স্থানে দীর্ঘ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সাতক্ষীরা ও সংলগ্ন বিশাল এলাকায় প্রায় পাঁচ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বহু বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে এবং অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।


বহু মানুষ স্কুল-কলেজসহ নানা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। কুষ্টিয়ায় নদীভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বহু আবাদি জমি। ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টের কয়েক শ মিটার নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় পুরো ক্ষেত্রটি হুমকির মুখে রয়েছে। কঙ্বাজারেও কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বান্দরবানে পাহাড়ধসে মারা গেছে দুজন। গত বুধবার সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ছয় ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে খবরে জানা যায়। এদিকে আসামের বহু জায়গা এখনো বন্যাকবলিত এবং পশ্চিমবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতিও আশঙ্কাজনক। এই পানি অবশেষে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হবে। তখন দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে, তাহলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। ইতিমধ্যে সারা দেশেই আমন ফসল ও সবজির আবাদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশেই অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়েছিল। এমনিতেই রাস্তাঘাটের যে বেহাল ছিল, প্লাবিত হওয়ায় সেগুলো আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাস্তার মাঝখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৯টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও অনেক বেড়ে গেছে।
বন্য ছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত ক্ষয়ক্ষতি হয়, কেবল বন্যায় প্রতিবছর তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। অথচ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এ পর্যন্ত কোনো সরকারই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, বাংলাদেশে বন্যার প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে এবং দুটি বড় বন্যার মধ্যবর্তী সময়সীমা ক্রমশ কমে আসছে। বাংলাদেশে বন্যার প্রধান কারণ নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। কারণ বর্ষাকালে বাংলাদেশের নদীগুলো দিয়ে যে পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়, তার প্রায় ৯৪ শতাংশই আসে উজানের দেশগুলোর পার্বত্য অঞ্চল থেকে। এ পানি আটকে রাখার কোনো উপায় নেই। আবার আমাদের নদীগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বা গভীরতা না থাকায় নদী সে পানির কিয়দংশও ধারণ করতে পারে না। তখন নদীর দুই কূল ছাপিয়ে পানি লোকালয় বা ফসলি জমি ডুবিয়ে দেয়। আবার খাল-বিল ও জলাশয় ক্রমাগত ভরাট হওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ বৃষ্টির পানিও বন্যার মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রতিবছর প্রায় ৯৪ লাখ মেট্রিক টন পলি এসে জমা হয় আমাদের নদীগুলোতে। ফলে নদীভরাট প্রক্রিয়া দ্রুততর হচ্ছে। তাই খননের মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ছাড়া বন্যা সমস্যা মোকাবিলার আর কোনো উপায় নেই। আর ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে বন্যার মতোই ক্ষতিকর জলাবদ্ধতা মোকাবিলার জন্য খাল-বিল ও জলাধার রক্ষাসহ পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। তাই আসন্ন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বন্যা-পরবর্তী রোগব্যাধি মোকাবিলায়ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.