প্রধান শিক্ষিকাকে পিটিয়ে কলঙ্কের বোঝা বাড়ালেন-অধঃপতিত আওয়ামী লীগ নেতা

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় যাঁরা শিক্ষকতা করেন, মনে হয় তাঁদের অন্তত একটি বিষয় জানা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে—স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কথা শুনে চলা। এই সাধারণ জ্ঞান না থাকলে মার খেয়ে, মানসম্মান খুইয়ে বিদায় নিতে হবে। তিনি প্রধান শিক্ষক হন বা নারী হন, পার পাবেন না। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা শিক্ষকদের ‘বেয়াদবি’ সহ্য করেন না।


বাগাতিপাড়ার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার ‘অপরাধ’, তিনি আওয়ামী লীগের নেতার কথা শুনে চলেন না, যিনি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতিও। প্রধান শিক্ষিকাকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বলেন তিনি। তাতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে মারধর করা হলো। বুধবার প্রথম আলোয় এই অভিযোগের কথা ছাপা হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে, বাগাতিপাড়ার আওয়ামী লীগের নেতা কি আইনকানুন, থানা-পুলিশের ঊর্ধ্বে? তা না হলে একজন নারী প্রধান শিক্ষককে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ‘লাথি ও কিল ঘুষি’ মেরে বহাল তবিয়তে আছেন কী করে?
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার কথামতো চলা কোন আইনে আছে, সেটা জানা দরকার। সরকারের কোনো পরিপত্রে এমন কথা বলা আছে কি?
দলীয় নেতার তল্পিবাহক হওয়া শিক্ষকের কাজ নয়। বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদানই তাঁর কাজ। প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটাই চায়। কিন্তু সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা মনে করেন, বিদ্যালয় তাঁদের ব্যক্তিগত অথবা অন্তত দলীয় সম্পত্তি। এসব তথাকথিত নেতা যেমন শিক্ষার বারোটা বাজাচ্ছেন, তেমনি সরকারের ভাবমূর্তিও মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছেন।
গত বছরও শিক্ষক পেটানো হয়েছে। একই উপজেলার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন নেতা অপর এক প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় চলা অবস্থায় মারধর করেছিলেন। কত নিচে নামলে একজন নেতা এমন নিন্দনীয় কাজ করতে পারেন, ভাবলে অবাক হতে হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত ও বিচার হতে হবে। অপরাধ প্রমাণ-সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হোক। পরিচালনা কমিটিতে দলীয় লোকজন না রেখে বরং এলাকার শিক্ষানুরাগীদের রাখলে সমস্যা অনেক কমে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.