অকল্যাণকর সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন-প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়

দেশের জনশক্তির বিদেশ যাওয়া আরও সহজ হোক—এই যখন আমাদের চাওয়া, তখন সরকার এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা উল্টো ফল দিতে বাধ্য। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করার জন্য এমন আদেশ জারি করেছে, যা একদিকে যেমন চাকরি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টি করবে, তেমনি তৈরি করবে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুযোগ।


প্রবাসীদের কল্যাণ করার কথা যে মন্ত্রণালয়ের, তারা কেন এমন অকল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিতে গেল, সেটা সত্যিই বিস্ময়কর। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী, মানতেই হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী কাজ করতে বিভিন্ন দেশে যান, তাঁদের ৯০ শতাংশ ব্যক্তি-উদ্যোগে কাজের অনুমতিপত্র আনেন। এরপর ভিসা সংগ্রহ ও অন্য আনুষঙ্গিক কাজ করতে হয়। এখন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে যে আদেশ জারি করা হয়েছে, তাতে ব্যক্তি-উদ্যোগে আনা চাকরির অনুমতিপত্র সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হবে। আমাদের প্রশ্ন, যাঁরা বিদেশে গিয়ে কষ্ট করে দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আনেন, আমরা তাঁদের বিদেশ যাওয়ার পথ সহজ করব, নাকি আরও কঠিন ও জটিল করে তুলব। অনেক সময় সরকার কিছু বিষয়ে নিরুৎসাহিত করতে নিয়মকানুন কঠিন ও জটিল করে ফেলে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই কাজ দেখে মনে হচ্ছে, তারা যেন জনশক্তির বিদেশ যাওয়াকে নিরুৎসাহিত করতে চাইছে।
বিভিন্ন দেশে আমাদের যেসব দূতাবাস রয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেখানে গিয়ে কতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা পান, সেটা কারও অজানা নয়। কিছু ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও দেখা যায় যে লোকবলের অভাবে দূতাবাসগুলো প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারে না। এ অবস্থায় একজন নিজ দায়িত্বে চাকরির অনুমতিপত্র জোগাড় করবেন, তারপর ওই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে তা সত্যায়িত করতে পাঠাবেন—এই প্রক্রিয়াটি কতটুকু বাস্তবসম্মত? এতে পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়বে; একধরনের হয়রানির মধ্যে পড়বেন বিদেশে চাকরিপ্রত্যাশী মানুষটি। অন্যদিকে দূতাবাসগুলোতে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হবে।
এই আইন করার পেছনে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা হচ্ছে কর্মীরা যাতে প্রতারিত না হন বা কোথায় কত বেতনে কাজ করছেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া ও কর্মীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করা। এই যুক্তিটি অগ্রহণযোগ্য। কারণ, এখন যেকোনো কর্মীকে চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে গেলে স্মার্ট কার্ড নিতে হয়। যেখানে সবকিছুই লিপিবদ্ধ থাকে। এই নতুন আদেশের ফলে জনশক্তি রপ্তানির ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, সে আশঙ্কা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়েরও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বলেছেন, ‘দেখি না কী হয়; আর যদি দেখি লোক যাওয়া অনেক কমে গেছে, তখন অন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।’ যে সিদ্ধান্তটি জনশক্তি রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সংশ্লিষ্ট সবাই যখন তা-ই মনে করছেন, সেটা কার্যকর করে দেখার কোনো দরকার আছে কি? মন্ত্রীর এই অবস্থান কোনো অবস্থাতেই যৌক্তিক হিসেবে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। অবিলম্বে এই আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

No comments

Powered by Blogger.