পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের-বাড়তি বাসভাড়া আদায়

জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পরিবহন ভাড়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব পরিবহন ভাড়ার ওপর পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তেলের মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে বাসসহ পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির হারের সামঞ্জস্য থাকবে, তা-ও প্রত্যাশিত। কিন্তু প্রতিবারই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাসভাড়া নিয়ে শুরু হয় একধরনের নৈরাজ্য। পরিবহন মালিকপক্ষ যেন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর অপেক্ষায় থাকে, আর সে সুযোগে


নিজেদের খেয়ালখুশিমতো দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত ২৯ ডিসেম্বর নতুন করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সরকার দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১৫ পয়সা বাড়িয়েছে। নতুন নির্ধারিত হার অনুযায়ী, প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া এখন ১ টাকা ৩৫ পয়সা। এই হারেই দূরপাল্লার বাসের ভাড়া নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। যেমন: ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে যে দূরত্ব, সে অনুযায়ী নতুন নির্ধারিত হার অনুযায়ী ভাড়া বৃদ্ধি হওয়ার কথা ৩৬ টাকা ৩০ পয়সা। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভাড়া বেড়েছে ৫০ টাকা। অন্য সব রুটেও একই অবস্থা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়াও অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি সিএনজির দাম বাড়ানো না হলেও সিএনজিচালিত পরিবহনগুলোও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে এই সুযোগে।
ভর্তুকি কমাতে সরকার দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তার চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। আবার এই দাম বাড়ার অজুহাতে যদি কোনো গোষ্ঠী জনগণের ওপর অযৌক্তিকভাবে বাড়তি চাপ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, সেটা হয় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সরকার জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসভাড়াও ঠিক করে দিয়েছে। ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার পর যদি পরিবহনের মালিকেরা খেয়ালখুশিমতো ভাড়া আদায় করেন এবং সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, তা হবে যাত্রীদের সঙ্গে পরিহাস। অতএব, কেউ যাতে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.