লক্ষ্মীপুরে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন ওসি
লক্ষ্মীপুর শহরে গত রোববার মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় যে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল, তার নির্দেশ দিয়েছিলেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছারোয়ার। লক্ষ্মীপুর শহরে বিএনপি-জামায়াতের মিছিলে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন মারা যান।
ওই দিন চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে নিহত আবুল হোসেন মৃধার স্ত্রী ফাতেমা বেগম এনডিসি শামীমুল হক, সদর মডেল থানার ওসি জাকের হোসাইন, ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন মজুমদার, এসআই মহিউদ্দিনসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গতকাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করা হয়। আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
লক্ষ্মীপুর: সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম ছারোয়ার গতকাল বুধবার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, গত রোববার মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তিনি বলেন, ‘আমি তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পরিস্থিতি জানিয়েছি। একপর্যায়ে সরকারি গোলাবারুদ রক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আত্মরক্ষা এবং অপরের জীবন রক্ষার্থে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ঘটনার সময় পুলিশ ৬৮টি গুলি নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ গুলি না করলে আরও অনেকের প্রাণহানি ঘটত।’
দুজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, দুজনকে হত্যা, গাড়ি ভাঙচুর ও বিনা উসকানিতে পুলিশকে ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ এনে লক্ষ্মীপুর সদর থানার এসআই এনামুল কামাল বাদী হয়ে ওই দিন রাতেই একটি মামলা করেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিনসহ ১৮১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ছয়-সাত হাজার লোককে এ মামলার আসামি করা হয়।
ওই ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স অতিরিক্ত ডিআইজি (চট্টগ্রাম রেঞ্জ) বিশ্বাস আফজাল হোসেন ও চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলমকে দিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি করে। এ ছাড়া পুলিশ সুপারের অফিস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিগুলো ঘটনাস্থলসংলগ্ন বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার জমসের আলী বলেন, ‘ঘটনাস্থলে সদর থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁর নির্দেশে পুলিশ গুলি করে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’
সংবাদ সম্মেলন: গতকাল বুধবার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাংসদ আবুল খায়ের ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, পুলিশ প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি মহল প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে পুলিশকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। তিনি বলেন, বিগত জোট সরকারের আমলে লক্ষ্মীপুরে কোনো খুন হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার লক্ষ্মীপুরকে সন্ত্রাসকবলিত করতে শুরু করেছে।
লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লক্ষ্মীপুরের পৌর মেয়র আবু তাহেরের নির্দেশে জোটের মিছিলে গুলি ছোড়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাইন উদ্দিন চৌধুরী, হারুনুর রশিদ প্রমুখ। এ সময় নিহত আবুল কাসেমের দুই ছেলে মো. ইউসুফ, হায়দর আলী, বড় ভাই তরিকুল ইসলাম, নিহত যুবদল নেতা রুবেলের বাবা বাহার উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
ডিআইজির দুঃখ প্রকাশ: লক্ষ্মীপুরে ছয় সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি বিশ্বাস আফজাল হোসেন মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় সার্কিট হাউসে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের নির্যাতনের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
চাঁদপুরে মামলা: গত রোববার চাঁদপুরে জেলা বিএনপি গণমিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে বিএনপির দুই কর্মী আবুল হোসেন মৃধা ও লিমন ছৈয়াল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
নিহত আবুল হোসেন মৃধার স্ত্রী ফাতেমা বেগম গতকাল দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। তাঁর আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জুডিশিয়াল (বিচার বিভাগীয়) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে এ ঘটনায় গত রোববার পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপি-জামায়াতের ৫০ জন নেতার-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার লোককে আসামি করে দুটি মামলা হয়। ওই দুটি মামলার বাদী হলেন মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. আলমগীর হোসেন মজুমদার।
বিএনপির সহায়তা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে নিহত দুজনের পরিবারকে গতকাল নগদ দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
No comments