মালয়েশিয়ার প্রস্তাব-পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন আশা

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের নানা টালবাহানা আর অভিযোগের পর হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। কারণ বিশ্বব্যাংকের মতো বড় দাতা সংস্থা যখন কোনো প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ থেকে বিরত থাকে, তার মানেই হচ্ছে সেই প্রকল্প আর বাস্তবায়ন হবে না। কিন্তু পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে যেন এর ব্যতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে।


বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন সাময়িকভাবে বন্ধ করার পর বাংলাদেশের জন্য অর্থায়নের নতুন জানালা খুলে যেতে শুরু করেছে। অতিসম্প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার এই আগ্রহ বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।
মালয়েশিয়া সরকারের অবকাঠামোবিষয়ক বিশেষ দূত গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর দেশের এই আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। গত সোমবার তিনি যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একই আগ্রহের কথা জানান। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের কম্পানি পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে দেশের মানুষের অনেক আশা ছিল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। দীর্ঘ চার দশকেও এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বিগত সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একনেকে পাস হয় পদ্মা সেতু প্রকল্প। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে- এমনটিই আশা করা গিয়েছিল এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ প্রকল্পটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিল। বিদেশি সাহায্যের আশ্বাসও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় কাজ শুরুর আগেই দেখা দিল জটিলতা। এই জটিলতা মীমাংসার জন্য অনেক চেষ্টা হয়েছে। জটিলতা নিরসনে অর্থমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীও উদ্যোগ নেন সংকট নিরসনে। কিন্তু কোনো ফল লাভ হয়নি। বিশ্বব্যাংক যেহেতু এই প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থের জোগানদাতা ও সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান, স্বাভাবিকভাবেই এ সংস্থাটি পিছিয়ে গেলে অন্য দাতা সংস্থাও এই প্রকল্পে অর্থায়নে পিছিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক। সংকটটি অনেকাংশেই আস্থার। এ অবস্থায় দেশকে নতুন করে ভাবতে হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিকল্প নেই। যেকোনো মূল্যে এ সেতু নির্মাণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিকল্প ভাবতে হবে। সেই বিকল্প নিয়েই বাংলাদেশকে ভাবতে হয়েছে। ভাবতে হচ্ছে। কারণ, পদ্মা সেতুর কোনো বিকল্প সরকারের হাতে নেই। যে সেতু ২০১৩ সালের মধ্যে হওয়ার কথা, সেই সেতু নির্মাণের কাজ ২০১২ সালে এসেও শুরু করা যায়নি। এই দীর্ঘ কালক্ষেপণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু তার পরও সরকারকে পদ্মা সেতু নির্মাণে হাত দিতে হবে। নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এর কোনো বিকল্প নেই।
পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে তাই সরকারকে এখন বিকল্প অর্থায়ন নিয়েই ভাবতে হবে। এ বিকল্প অর্থায়ন নানাভাবে হতে পারে। একদিকে দেশে তৈরি নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে আনা যেতে পারে। বাংলাদেশে এখন আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণসামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এই নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি পদ্মা সেতুকে পিপিপির আওতায় নেওয়াও সম্ভব। আবার দেশের পুঁজিবাজার থেকেও পদ্মা সেতুর অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। পাশাপাশি চিন্তা করা যেতে পারে বৈদেশিক সাহায্যের ব্যাপারে। মালয়েশিয়ার নতুন প্রস্তাবসহ অন্যান্য দেশের যে প্রস্তাব আছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখা এখন বোধহয় অসম্ভব নয়। পদ্মা সেতু বিষয়ে নতুন এই সম্ভাবনাগুলো সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আনা উচিত। নতুন যে আশার সঞ্চার হয়েছে, এটাকে কাজে লাগাতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.