স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা-দৃষ্টি দিতে হবে মানের দিকে

শিক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। একেকটি পরীক্ষা আসে, পরীক্ষায় ভালো ফল করা উজ্জ্বল মুখগুলো দেখে আমরা আশান্বিত হই। কিন্তু প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার, তেমনি খারাপ ফল করা শিক্ষার্থীদের বিষয়েও ভাবতে হবে। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের আশা-ভরসা, আগামী দিনের সম্পদ।


রাষ্ট্রের এই ভবিষ্যৎ সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও লালন-পালন করার দায়িত্বও নিতে হবে রাষ্ট্রকেই। কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যাতে অকালে শেষ হয়ে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ১৪ লাখ ২০ হাজার ৫৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। আশার কথা, এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৫ জন। এই আশাজাগানিয়া খবরের পাশাপাশি একটি বেদনার খবরও আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশের ২৬ হাজারেরও বেশি কিশোর-কিশোরীর শিক্ষাজীবন প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। এসব শিক্ষার্থী ২০১০ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। 'রেফার্ড'-এর সুযোগ পেয়ে নবম শ্রেণীতে উঠলেও অষ্টম শ্রেণীতে অকৃতকার্য বিষয়গুলোতে আবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করার বাধ্যবাধকতা ছিল তাদের। কিন্তু ২০১১ সালে জেএসসি বা জেডিসি পরীক্ষা দিয়ে তারা কৃতকার্য হতে পারেনি। আর এভাবেই অষ্টম শ্রেণীর চৌকাঠ পেরোতে না পারা এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে ইতি ঘটতে যাচ্ছে বলেই মনে করেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ড সূত্র বলছে, এসব শিক্ষার্থী জেএসসি বা জেডিসি পরীক্ষায় ফেল করায় বিশেষ বিবেচনায় সরকার তাদের একটি সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। সূত্রমতে, এসব শিক্ষার্থী স্কুলে আসত না এবং পড়াশোনাও করত না। ফেল করা এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষাজীবন বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাদের নতুন করে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হতে হবে। দুই বছর পর এসে নতুন করে নিচের ক্লাসে ভর্তি হওয়াটা অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই সম্ভব হবে না। কিন্তু এভাবেই কি শেষ হয়ে যাবে এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন?
কেন 'ফেল করা' শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার ব্যাপারে বা ফেল করা বিষয়ে পড়াশোনা করতে অনাগ্রহী ছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আগে খোঁজা দরকার।
বর্তমান সরকার মাধ্যমিক পর্যায়ে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু করতে পেরেছে। সাফল্য দেখিয়েছে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে। পাসের হার বেড়েছে, বেড়েছে জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। কিন্তু তাতে কি শিক্ষার মান নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার অবকাশ আছে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সিলেবাস কি শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলে ভবিষতে ঝরে পড়া এবং ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসবে। ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প শিক্ষা, বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। তবে শিক্ষার মানের বিষয়টিই মাথায় রাখতে হবে সবার আগে।

No comments

Powered by Blogger.