পবিত্র কোরআনের আলো-মুনাফিকদের মনের গোপন কথা আল্লাহ প্রকাশ করেই ছাড়বেন

৬১. ওয়া মিনহুমুল্লাযীনা ইউ'যূনান নাবিয়্যা ওয়া ইয়াক্বূলূনা হুয়া উযুন; ক্বুল উযুনু খাইরিন লাকুম ইউ'মিনু বিল্লা-হি ওয়া ইউমিনু লিলমু'মিনীনা ওয়া রাহ্মাতান লিল্লাযীনা আ-মানূ মিনকুম; ওয়াল্লাযীনা ইউ'যূনা রাসূলাল্লা-হি লাহুম আ'যা-বুন আলীম।


৬২. ইয়াহ্লিফূনা বিল্লা-হি লাকুম লিইউর্দ্বূকুম; ওয়াল্লা-হু ওয়া রাসূলুহূ আহাক্কু আন ইয়্যুর্দ্বূহু ইন কা-নূ মু'মিনীন।
৬৩. আলাম্ ইয়া'লামূ আন্নাহূ মান ইয়্যুহা-দিদিল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূ ফাআন্না লাহূ না-রা জাহান্নামা খা-লিদান ফীহা-; যা-লিকাল খিয্ইউল আ'যীম।
৬৪. ইয়াহ্যারুল মুনা-ফিক্বূনা আন তুনায্যালা আ'লাইহিম ছূরাতুন তুনাবি্বউহুম বিমা ফী ক্বুলূবিহিম; ক্বুল ইছ্তাহ্যিঊ; ইন্নাল্লা-হা মুখ্রিজুম মা-তাহ্যারূন। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৬১-৬৪]

অনুবাদ : ৬১. তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং তার সম্পর্কে বলে, তিনি তো কানকথা শোনেন। (হে নবী) আপনি বলে দিন, তোমাদের কল্যাণের জন্যই তিনি কানপাতলা, তিনি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখেন এবং মুমিনদের প্রতিও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে, তাদের জন্য রহমতস্বরূপ। যারা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
৬২. (হে মুমিনরা) তারা তোমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহর নামে হলফ করে, অথচ তারা মুমিন হলে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করারই কথা ছিল।
৬৩. তারা কি জানে না, কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করলে তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি নির্ধারিত হয়ে আছে? আর তারা সেই জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে! এটা তো চরম লাঞ্ছনা।
৬৪. মুনাফিকরা ভয় পায় যে পাছে মুসলমানদের প্রতি কোনো সুরা নাজিল হয়, যাতে তাদেরকে তাদের মনের গোপন কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। (হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা ঠাট্টা করতে থাকো। তোমরা যা আশঙ্কা করছ, আল্লাহ তা প্রকাশ করেই দেবেন।

ব্যাখ্যা : ৬১ নম্বর আয়াতে তিনি 'উজুনুন' বা 'কান' বলে মুনাফিকরা যে উক্তি করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা আরবি ভাষার একটা প্রবচন। বাংলা ভাষায় এ ধরনের যে প্রবচনটি রয়েছে, সেটা হলো 'কানকথা শোনা' বা 'কানপাতলা'। মুনাফিকরা নবী করিম (সা.) সম্পর্কে তাদের আলাপচারিতায় এ ধরনের অবমাননাকর ভাষা ব্যবহার করত (ধিক তাদের)। আবার তারা এটাও মনে করত যে আমাদের চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেলেও আমরা তাঁকে তোষামোদি করে খুশি করে ফেলব। কেননা তিনি সবার কথাই শোনেন ও বিশ্বাস করেন। এই আয়াতে মুনাফিকদের উপরিউক্ত আপত্তিকর বক্তব্যের জবাবে আল্লাহ তায়ালা তিনটি বিষয় ইরশাদ করেছেন। ১. তিনি যা শোনেন তা মানুষের কল্যাণের জন্যই শোনেন, যেমনি তিনি আল্লাহর ওহি শোনেন, যা মানুষের কল্যাণের জন্য এসেছে। ২. তিনি মুমিনদের কথা শোনেন এবং বিশ্বাস করেন। কারণ তিনি জানেন, মুমিনরা যা বলে তা সত্য বলে, মিথ্যা বলে না। ৩. মুনাফিকদের কথাও তিনি মনোযোগ দিয়ে শোনেন। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তিনি তাদের কথা বিশ্বাস করে ধোঁকায় পড়ে যান।
বরং তাদের কথা শুনে তিনি তাদের কপটতা বোঝার চেষ্টা করেন। আর আল্লাহ তায়ালা যেহেতু তাদের জনগোষ্ঠীর জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন, তাই তিনি সবার সঙ্গেই সদয় আচরণ করেন। তিনি চান তারা কপটতা ছেড়ে সত্যের পথে আসুক। ৬২ ও ৬৩ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের বিভ্রান্তি ও অজ্ঞতাগুলো ধরিয়ে দেওয়ার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
৬৪ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের মনের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। মুনাফিকরা নিজেদের মধ্যকার আলাপ-আলোচনায় মুসলিমদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। কেউ এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলত, আমরা এসব কথা কেবল তামাশা করেই বলেছিলাম। আসলে এগুলো আমাদের মনের কথা নয়। কিন্তু এগুলোই তাদের মনের কথা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং ইসলামের শিক্ষা তামাশা করার বিষয় নয়। আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে তাদের মনের গোপন কথা তিনি মুমিনদের কাছে প্রকাশ করে দেবেন। যেটা তারা মনে মনে আশঙ্কা করছে, সেটাই সত্য হবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.