রমজান মাস এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি by মোঃ লিয়াকত হোসেন লিংকন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আমাদের দেশে বর্তমানে একটি জাতীয় সমস্যারূপে দেখা দিয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সংবাদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবার তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে।


জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের সাধারণ ও সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। একদিকে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার উপকরণ জোগানো, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে ক্রমেই জনমনে সংশয় দেখা দিচ্ছে। এদিকে পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে চলেছে। রমজান ও ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও একটি সিন্ডিকেট পণ্য মজুদ রেখে দাম বাড়ানোয় তৎপর রয়েছে। নানা অজুহাতে রমজান মাসের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে তারা। রমজান মাস যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। চিনির দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে।
রমজান মাসের শুরুতে চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, ছোলা, আটা, ময়দা, খেজুর, মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। ক্রমাগতভাবে মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, বেগুন, করলা, পটোল, ঢেঁড়স, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, শসা, বরবটি, টমেটো, শাক-সবজিসহ সব কাঁচামালের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে সিন্ডিকেট করে দ্রব্যের দাম তাদের ইচ্ছামতো বাড়িয়ে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা পণ্য সরবরাহ কম থাকার অজুহাত দেখালেও বাজারে পর্যাপ্ত দ্রব্যসামগ্রী রয়েছে। অন্যদিকে এক শ্রেণীর কালোবাজারি, মজুদদার, মুনাফাখোর ও অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা পণ্য মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। কাঁচামালের পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে শাক-সবজির দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। রমজান মাস আসার আগেই এক শ্রেণীর অসাধু মুনাফাখোর, মজুদদার দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু করেছে।
সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ নিলেও কোনো কাজে আসছে না। মফস্বল এলাকার কাঁচাবাজারগুলোতে প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি নেই। দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জনমনে নানা সংশয় দেখা দিচ্ছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও দাম কমছে না। এহেন পরিস্থিতি দেশের সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের জীবনের ওপর চরম প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। সেহ্রির সময় ভালো খাবার না খেলে সারাদিন রোজা রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যাহত করে। তাই পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
হ রামদিয়া বাজার, কাশিয়ানী গোপালগঞ্জ
 

No comments

Powered by Blogger.