বন্যার আশঙ্কায় সমন্বিত সতর্কতা by গৌতম কুমার রায়

ভূ-অবস্থানগত কারণে এবং আবহাওয়ার পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের বন্যা বছরভিত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রাকৃতিক সমস্যা আর যা-ই থাকুক না কেন, বন্যা এখন নিয়মিত সমস্যা। অন্য বছরের ব্যাপকতা যতটা হোক না কেন, এবার বর্ষার শুরু থেকে অব্যাহত বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল,


সাগরের নিম্নচাপ, উজানের জলের প্রবাহে ভয়ঙ্কর নদীভাঙনে বন্যা যে ভয়ঙ্কর হবে, সেটা ধরে নেওয়া একেবারেই অমূলক হবে না। ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালের প্রবল বন্যার পর প্রতিবছর আমরা বন্যায় যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর বন্যা আগামীতে আসন্ন।
২০০৪ সালের বন্যায় দেশের দুই-পঞ্চমাংশ প্লাবিত হয়। এতে ৩০ মিলিয়ন মানুষ বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সে তুলনায় ২০০৭ সালে ৪৪ জেলার ২৬৭ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল। দিন দিন বন্যার জন্য জলাবদ্ধতা যে ভয়াবহ রূপ নেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিবারে বন্যার জন্য আমাদের জীবনে বেশ কয়টি পর্যায়ে ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে জীবনের ঝুঁকিসহ কৃষি, ভৌত অবকাঠামো, পরিবেশ, মৎস্য, পশুসম্পদ এবং শিল্প খাত উল্লেখযোগ্য। যা আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত।
বাংলাদেশের বর্ষা মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাস থেকে। ভারতের আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়ে প্রবল বর্ষণ শুরু হলে আমাদের দেশের নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এ ছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান ও চীনের বেশির ভাগ নদীর পানি আমাদের দেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হয়। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে অব্যাহত বৃষ্টির পানিতে দেশের নিম্নাঞ্চল ও মধ্য এলাকার কিছু জায়গায় পানি ঢুকেছে। পটুয়াখালী, নবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নওগাঁসহ কয়েকটি জেলা ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার নদীগুলোর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পানি বেড়েছে বলে পত্রিকা সূত্রে জানা যায়। আবার দেশের বেশ কয়েকটি নদীর আগ্রাসী ভূমিকার কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানির অব্যাহত গতিপ্রকৃতির কারণে এসব এলাকার মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাবনা হচ্ছে, এবারও কি বন্যা ধেয়ে আসছে? যদি এ আশঙ্কা থেকে থাকে তবে আমাদের পূর্বসতর্কতা অবশ্যই রাখতে হবে।
দেশের বন্যার সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। যদি দেশের সমতল ভূমি বন্যায় ডুবে গিয়ে বেশ কিছুদিন স্থির থাকে, তবে কৃষিজ এবং বনজ সম্পদের ক্ষতি হয়। কেননা, যখন বন্যার পানি ঢুকে পড়ে তখন চাষির ক্ষেতে ফসল থাকে। ফলপ্রাপ্তির পূর্ব মুহূর্ত অবস্থায়। এতে চাষি বন্যার জন্য তার ফসল উপযুক্ত করে ঘরে তুলতে পারে না। অর্থাৎ চাষি সামগ্রিকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আবার গাছগুলো তৈরি করতে যে সার বা খাদ্য প্রয়োগ হয়ে আসছিল তা বন্যার টানিতে মিশে যায়। বন্যার সময় বন্যাকবলিত প্রতিটি মানুষ সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় জীবন ধারণ করে। বাসগৃহ, ফসল, গৃহপালিত জীবজন্তু, পুকুর, রাস্তাঘাট যা তিলে তিলে অনেক দিন ধরে সঞ্চয় করে গড়ে তোলা হয়েছিল তা বন্যা শেষ করে দেয় এক নিমেষেই। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করতে হলে সামগ্রিকভাবে এবং সমন্বিত অবস্থায় পুনর্বাসনের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বন্যা শুরু হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মোকাবেলা কমিটি গঠন করা উচিত। বন্যায় আক্রান্ত মানুষের জন্য স্বল্পকালীন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ তাদের আপৎকালীন সময়ে উদ্ধারের ব্যবস্থা আগেই গ্রহণ করা উচিত।
হ চৌড়হাস, কুষ্টিয়া
 

No comments

Powered by Blogger.