অনুমাননির্ভর আদমশুমারি ও খাদ্য নিরাপত্তা by আমিনুল ইসলাম জুয়েল
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত ১৬ জুলাই ৫ম আদমশুমারির প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করে জানায়, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার। জনসংখ্যার এই হিসাব কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় এর একদিন পরই ব্যুরোর মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলন করে জানান, দেশের জনসংখ্যা ১৫ কোটি হতে পারে। পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানাতে পারেননি দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা কত। এ নিয়ে বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) গত অক্টোবরে জানিয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৪ লাখ। তাদের হিসাবমতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ২২ লাখ। অর্থাৎ এক বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে ২২ লাখ। সরকার অবশ্য ইউএনএফপিএর রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছিল। সরকারি হিসাবে সে সময় জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৬০ লাখ বলা হয়েছিল। বিবিএসের হিসাবমতে দেশের জনসংখ্যা এখন গতবারের চেয়েও কমে গেছে! জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) হিসাব ঠিক ধরলে এখন জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২২ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। সিআইএর হিসাবে জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৮৬ লাখ। গত ১১ এপ্রিল জনসংখ্যা দিবসে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর জানিয়েছিল, জনসংখ্যা ১৫ কোটি ১৪ লাখ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে, চাল উৎপাদন ও মাথাপিছু ভোগ হিসাব করলে দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটির ওপর। বিবিএসের হিসাবে ২০১০-১১ সালে আমন, আউশ এবং বোরো মৌসুম মিলিয়ে মোট চালের উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৩৩ লাখ টন। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে মোট উৎপাদন তিন কোটি ৪০ লাখ টন। জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ হলে খাদ্য চাহিদা হতো আড়াই কোটি টন। মোট জনসংখ্যা ১৫ কোটি হলে দেশে চালের মোট চাহিদা দুই কোটি ৭০ লাখ টন। ১৬ কোটি হলে এই চাহিদা তিন কোটি পাঁচ লাখ টন হয়। অথচ দেশে মোট তিন কোটি ৪০ লাখ টন চাল উৎপাদন হওয়ার পরও গত বছর নয় লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছে। তাহলে জনসংখ্যা ১৪ কোটি হয় কী করে? কৃষিমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বিবিএসের আদমশুমারি ঠিক হলে খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। তিনি বলেন, খাদ্যের চাহিদা অনুসারে জনসংখ্যা ১৬ কোটির ওপরে হওয়ার কথা। তিনি বিবিএসের হিসাবের গরমিল ঠিক করতে বলেছেন। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, জনসংখ্যা বাস্তবের চেয়ে কম দেখালে সরকারের খাদ্য উৎপাদন ও আমদানি পরিকল্পনা করতে সমস্যা হবে। দেশে কয়েক বছর ধরে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে একটি ভুল আদমশুমারির মাধ্যমে সরকারকে ভুল সিগন্যাল দেওয়া হলে এবং সরকার তা গ্রহণ করলে দেশ ভয়াবহ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়তে পারে।
জনসংখ্যার হিসাবের এই গরমিলের কারণ গণনায় ভুল বা গণন প্রক্রিয়ায় ভুল। আদমশুমারিতে অনেক লোক গণনায় পড়েননি। এ জন্য দুঃখ করেও অনেককে বলতে শুনেছি, 'আদম হইলাম, শুমার হইলাম না।' যারা গণনা কাজে জড়িত ছিলেন তারা পরিসংখ্যান ব্যুরোর কোনো কর্মচারী নন। এমনকি তারা কোনো চাকরিও করেন না। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় সরকারি চাকুরেদের যে দায়বোধ ছিল, জনসংখ্যা গণনাকারীদের সে রকম কোনো দায়বোধ ছিল না। অনুমান করেই যদি জনসংখ্যা বলতে হয়, তাহলে আর শুমারির জন্য এত ঢাকঢোল পিটিয়ে ২৫৩ কোটি টাকা গচ্চা দেওয়ার কী দরকার ছিল? জনগণের ট্যাক্সের টাকা অপচয়ের দায়ভার কে নেবে?
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিবিড়ভাবে জড়িত। জনসংখ্যা বাড়ছে, তাই খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। এক হিসাবে দেখা যায়, স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ, আর খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। তারপরও দেশে খাদ্য চাহিদা মিটছে না। প্রতিবছর এক শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে। সব মিলিয়ে একটি ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমাদের লক্ষ্য কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। সে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে চাইল্ডবুম রোধ তথা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই।
হ পাবনা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে, চাল উৎপাদন ও মাথাপিছু ভোগ হিসাব করলে দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটির ওপর। বিবিএসের হিসাবে ২০১০-১১ সালে আমন, আউশ এবং বোরো মৌসুম মিলিয়ে মোট চালের উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৩৩ লাখ টন। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে মোট উৎপাদন তিন কোটি ৪০ লাখ টন। জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ হলে খাদ্য চাহিদা হতো আড়াই কোটি টন। মোট জনসংখ্যা ১৫ কোটি হলে দেশে চালের মোট চাহিদা দুই কোটি ৭০ লাখ টন। ১৬ কোটি হলে এই চাহিদা তিন কোটি পাঁচ লাখ টন হয়। অথচ দেশে মোট তিন কোটি ৪০ লাখ টন চাল উৎপাদন হওয়ার পরও গত বছর নয় লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছে। তাহলে জনসংখ্যা ১৪ কোটি হয় কী করে? কৃষিমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বিবিএসের আদমশুমারি ঠিক হলে খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। তিনি বলেন, খাদ্যের চাহিদা অনুসারে জনসংখ্যা ১৬ কোটির ওপরে হওয়ার কথা। তিনি বিবিএসের হিসাবের গরমিল ঠিক করতে বলেছেন। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, জনসংখ্যা বাস্তবের চেয়ে কম দেখালে সরকারের খাদ্য উৎপাদন ও আমদানি পরিকল্পনা করতে সমস্যা হবে। দেশে কয়েক বছর ধরে খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে একটি ভুল আদমশুমারির মাধ্যমে সরকারকে ভুল সিগন্যাল দেওয়া হলে এবং সরকার তা গ্রহণ করলে দেশ ভয়াবহ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়তে পারে।
জনসংখ্যার হিসাবের এই গরমিলের কারণ গণনায় ভুল বা গণন প্রক্রিয়ায় ভুল। আদমশুমারিতে অনেক লোক গণনায় পড়েননি। এ জন্য দুঃখ করেও অনেককে বলতে শুনেছি, 'আদম হইলাম, শুমার হইলাম না।' যারা গণনা কাজে জড়িত ছিলেন তারা পরিসংখ্যান ব্যুরোর কোনো কর্মচারী নন। এমনকি তারা কোনো চাকরিও করেন না। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সময় সরকারি চাকুরেদের যে দায়বোধ ছিল, জনসংখ্যা গণনাকারীদের সে রকম কোনো দায়বোধ ছিল না। অনুমান করেই যদি জনসংখ্যা বলতে হয়, তাহলে আর শুমারির জন্য এত ঢাকঢোল পিটিয়ে ২৫৩ কোটি টাকা গচ্চা দেওয়ার কী দরকার ছিল? জনগণের ট্যাক্সের টাকা অপচয়ের দায়ভার কে নেবে?
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিবিড়ভাবে জড়িত। জনসংখ্যা বাড়ছে, তাই খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। এক হিসাবে দেখা যায়, স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ, আর খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। তারপরও দেশে খাদ্য চাহিদা মিটছে না। প্রতিবছর এক শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে। সব মিলিয়ে একটি ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমাদের লক্ষ্য কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। সে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে চাইল্ডবুম রোধ তথা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই।
হ পাবনা
No comments