অনির্বাচিত উপাচার্যের দাপট বেশি হয় by বেলাল হোসাইন রাহাত ও বিনারা পারভীন
আমরা জানি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গণতন্ত্র চর্চার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। প্রগতিশীল মানস গঠন ও বিকাশে এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বরাবরই অগ্রগামী। আমাদের রয়েছে প্রতিবাদী চেতনা। তাই খুনি-ধর্ষকবিরোধী আন্দোলন, সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলন, অগণতান্ত্রিক প্রশাসনবিরোধী আন্দোলনে সফলতার গৌরবগাথা কেবল আমাদেরই।
এসব আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে ইতিহাসের ফ্রেমে বাঁধা আছে কতগুলো নাম_ 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর', 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর'। এখন যুক্ত হয়েছে_ 'শিক্ষক সমাজ'। একটি সত্যিকারের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন নিয়ে নির্যাতন ও নিপীড়নবিরোধী প্রতিবাদী শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষক সমাজের ব্যানারে মিলিত হয়েছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ডানপন্থি, বামপন্থি, মধ্যপন্থি, উদারপন্থি_ সব মতাদর্শের শিক্ষকরা আজ ঐক্যবদ্ধ। স্বৈরাচারী ভিসির পতন হলে আরও একটি সংগ্রামের সফল পরিসমাপ্তি হবে। মূলত বর্তমান উপাচার্য গত বছরের ২৯ মার্চ শিক্ষক সমিতির নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় বিবেচনায় ৩২ জন শিক্ষক নিয়োগ দিলে প্রতিবাদী শিক্ষকরা শিক্ষক সমাজের ব্যানারে প্রতিবাদ জানান। এ বছরের ৯ জানুয়ারি ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ নিহত হন কথিত ভিসিলীগের কর্মীদের হাতে। শুরু হয় ছাত্র-শিক্ষকের সমান্তরাল আন্দোলন। জুবায়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার, ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএ মামুনকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিচার, ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত দু'শতাধিক শিক্ষার্থীর নিরাপদ সহাবস্থানসহ স্বাধীন মতপ্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ, গণনিয়োগ বন্ধ, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ, ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভিসি প্যানেলসহ অন্যান্য প্রশাসনিক পদে নির্বাচনসহ আট দফা দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে। দু'মাস ধারাবাহিক আন্দোলনের পর তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় উপাচার্য পতনের আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকরা। তিন বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেখেছে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক নিয়োগের নামে দলীয় ক্যাডার নিয়োগ, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, অবাধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধা ও ভিসিলীগের উত্থান এবং এর প্রতিবাদের বিচিত্র ভাষা। গতানুগতিকতার মধ্যেই কেবল আন্দোলন সীমাবদ্ধ নেই। সর্বত্র সৃষ্টিশীলতার ছাপ। 'কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই' শীর্ষক মুক্ত আলোচনা, উপাচার্য প্রত্যাখ্যান মঞ্চ, গণঅভিযোগ বাক্স, কালো পতাকা, কাফনের কাপড় পরিধান, অনিয়ম-অনুসন্ধান কমিটি গঠন ও ভিসির কুশপুত্তলিকা দাহ_ এসব প্রতিবাদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সৃজনশীল চেতনার বহিঃপ্রকাশ। একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসে সর্বত্র জনমতের প্রতিফলন থাকা চাই। কিন্তু এ ভিসির অগণতান্ত্রিক আচরণ শিক্ষার্থীদের বারবার হতাশ করছে। কলঙ্কিত হচ্ছে এ পবিত্র স্থান। এ জন্য আমরা চাই_ ছাত্র সংসদ, ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট, ভিসি প্যানেল প্রভৃতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরি করে উচ্চশিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মানে পেঁৗছতে; কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি নির্বাচিত না হয়েও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছেন। '৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, নিয়োগ পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও তিন বছর ধরে ভিসি অবৈধভাবে পদ ধরে রেখেছেন। তবে আশার কথা, অতীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দু'জন অনির্বাচিত উপাচার্যের কেউই টিকতে পারেননি। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের পদচ্যুত করেছিলেন। শিক্ষকদের প্রতিবাদ-আন্দোলনের মুখে নড়ে উঠেছে বর্তমান একনায়ক প্রশাসকের গদি। বিশ্ববিদ্যালয় শিগগির একটি মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র।
স লেখকদ্বয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
স লেখকদ্বয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
No comments