সম্পর্কে গতি আনতে আসছেন প্রণব by রাহীদ এজাজ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নতুন করে গতির সঞ্চার করতে মনোযোগী হয়েছে ভারত। এরই অংশ হিসেবে এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকায় আসছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি ও প্রটোকলের বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি পূরণে ভারত বদ্ধপরিকর।


মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সদিচ্ছা ও অগ্রাধিকারের বিষয়টিই ঢাকার কাছে তুলে ধরবেন প্রণব মুখার্জি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেছেন, গত ২১ জানুয়ারি পেট্রাপোল স্থলবন্দরে মালবাহী যানবাহন পারাপারের অতিক্রমপত্র (কার পাস) উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে আলাপ করেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। ওই সময় প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠান। গতকালই ভারতের পক্ষ থেকে এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনার কথা জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় অবস্থানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়াও অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রণব মুখার্জির বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ভারতের অর্থমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় আলোচনার বাইরে অন্য কোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ মাসে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই এ সফরের সময় চুক্তিটি নবায়নের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, তিস্তা চুক্তি সই না হওয়ায় বাংলাদেশের হতাশার বিষয়টি সম্প্রতি ত্রিপুরা সফরে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১১ জানুয়ারি ত্রিপুরার রাজভবনে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সব চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি দুই দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ভারতের দেওয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের কথাও উল্লেখ করেন।
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠকের সময় তিস্তা চুক্তি সই হয়নি। সই হয়নি ট্রানজিট-সংক্রান্ত সম্মতপত্র। ছিটমহল ও অপদখলীয় জমিবিনিময় ও সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানা চিহ্নিত করতে সই হয় একটি প্রটোকল। কিন্তু তা এখনো ভারতীয় পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়নি। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের বক্তব্য হচ্ছে, প্রটোকলটি অনুমোদনের জন্য এ মাসেই লোকসভার বাজেট অধিবেশনে তোলা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি স্থলসীমান্ত-সংক্রান্ত ’৭৪-এর চুক্তি বাস্তবায়নের প্রটোকলের বিষয়ে বাংলাদেশের হতাশার বিষয়টি ভারতকে জানানো হয়েছে। এ দুটি বিষয় বাস্তবায়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। বিশেষ করে, তিস্তা চুক্তি শেষ মুহূর্তে সই হয়নি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে। তাঁর যুক্তি, বাংলাদেশকে ২৫ ভাগের বেশি পানি তিস্তা থেকে দেওয়া যাবে না। অথচ বাংলাদেশকে অভিন্ন নদীটির ৫০ ভাগ পানি দিতে চেয়েছিল দিল্লি। সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন নিয়ে মমতার আপত্তির কথা কলকাতার গণমাধ্যমে বলা হলেও সেটি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন।
ঢাকার এক কর্মকর্তার মতে, এ প্রেক্ষাপটে ঢাকায় প্রণব মুখার্জির সম্ভাব্য সফরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ঢাকায় এসে যে বার্তা দেবেন, তার ওপর নির্ভর করবে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক ভবিষ্যতে কোন পথে এগোবে।

No comments

Powered by Blogger.