আদমশুমারির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন। নওগাঁয় ২৪ হাজার চাকমা থাকার কথা বলা হলেও বাস্তবে চিত্র উল্টো ৪৭ জেলায় আদিবাসীর সংখ্যা কমেছে! by শিশির মোড়ল
সর্বশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা বলছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টিতেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা আদিবাসীর সংখ্যা কমেছে। অন্য ১৭ জেলায় বেড়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৭২ জন। তবে বাস্তব অবস্থার সঙ্গে এই হিসাবের মিল নেই। ফলে আদমশুমারির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আদিবাসী নেতারা বলছেন, শুমারিতে তাঁদের সংখ্যা কম দেখানো হয়েছে। বসবাসের স্থানও ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই মত প্রকাশ করেছেন জনসংখ্যাবিদ ও গবেষকেরাও।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ গাইন দুই দশকের বেশি সময় ধরে আদিবাসী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অবস্থান, সংখ্যা, সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আদিবাসীদের তথ্য বা পরিসংখ্যান সংগ্রহ, লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণের সময় আন্তরিকতার অভাব লক্ষ করা যায়। গারো, কোচ, খাসি ও সাঁওতাল নিয়ে একাধিক স্বাধীন জরিপে দেখা গেছে, সরকারের দেওয়া তথ্যের চেয়ে এদের প্রকৃত সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের এ ক্ষেত্রে নির্দেশনার ঘাটতি থাকতে পারে। আবার মাঠপর্যায়ের গণনাকারীদের তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও ত্রুটি থাকতে পারে।
শুমারি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, উত্তরের জেলা নওগাঁয় ২৪ হাজার ৪০৯ জন চাকমা বাস করে। আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা অথবা এঁদের বিষয়ে গবেষণা করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, এটা ভুল তথ্য, হাস্যকর। চাকমাদের বসবাসের স্থান পার্বত্য চট্টগ্রাম, নওগাঁ নয়।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আদমশুমারির তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কোনো অর্থ বহন করে না। ৪৭টি জেলায় কেন আদিবাসী মানুষ কমেছে, তার ব্যাখ্যা পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দিতে হবে। সংখ্যা কম দেখানোর অর্থ রাষ্ট্র কর্তৃক আমাদের অধিকার অস্বীকার করা। আদিবাসীদের সংখ্যা যত কম দেখানো যাবে, সরকারের দায়িত্বও তত কম থাকবে।’ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১’ প্রকল্পের পরিচালক অসীম কুমার দে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের গণনাকারীরা যে তথ্য পেয়েছেন, আমরা সেই তথ্য প্রকাশ করেছি।’
২০১১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ২৭টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন মানুষ বাস করে। এরা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১ শতাংশ। ২০০১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ১০ হাজার ১৬৯। ১০ বছরে এদের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৭২ জন।
ব্যাখ্যা মেলে না: ২০০১ সালে বরিশাল ও ভোলা জেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে পাঁচ হাজার ৩২১ ও ১২ হাজার ৯৪৯ জন। ২০১১ সালে জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৬ ও ৫৭ জনে। বরিশাল বিভাগের বাকি সব জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যাও কমেছে।
২০০১ সালের আদমশুমারিতে বলা হয়েছিল, বরগুনা জেলায় নয় হাজার ৭২৮ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। এ বছর দেখানো হয়েছে এক হাজার ১৪৩ জন। এদের মধ্যে মালপাহাড়ি এক হাজার ৫৯ জন, চাকমা ২৯, ডালু ২৭ এবং অন্যান্য ২৮। সরকারি হিসাবে বরগুনা জেলায় রাখাইন বাস করে না।
তবে বুড্ডিস্ট রাখাইন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বরগুনা জেলা শাখার সদস্যসচিব খে মংলা এই হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। গতকাল বরগুনায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদককে তিনি বলেন, জেলার ২৩টি পল্লিতে দুই হাজার ৪৬২ জন রাখাইন বাস করে।
যশোর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। যশোরে ছিল চার হাজার ৫৩৯ জন। বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৩২ জন। ঝিনাইদহ ও মাগুরায়ও বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক।
সংখ্যা বাড়া অথবা কমার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, নানা কারণে সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে। তবে কেন বাড়ল বা কমল, তা জানা দরকার। পরিসংখ্যান ব্যুরোকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মাঠপর্যায়ের গণনাকারীরা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে ভুল করেন। তাঁদের বাঙালি হিসেবে গণনা করেন। এ কারণে কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যা কমে যেতে পারে।
তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি: আদমশুমারি বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় আদিবাসী বেড়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৬৪ জন। ২০০১ সালে তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসী ছিল পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৯৭৭ জন (বান্দরবানে এক লাখ ৪২ হাজার ৬৫১ জন, রাঙামাটিতে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৯ জন ও খাগড়াছড়িতে এক লাখ ৯২ হাজার ৬৪৭)। ২০১১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৪৫ হাজার ৫৪১ জনে (বান্দরবানে এক লাখ ৭২ হাজার ৪০১, রাঙামাটিতে তিন লাখ ৫৬ হাজার ১৫৩ জন ও খাগড়াছড়িতে তিন লাখ ১৬ হাজার ৯৮৭ জন)। ১০ বছরে এই তিন জেলায় আদিবাসী বেড়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৬৪ জন (বান্দরবানে ২৯ হাজার ৭৫০, রাঙামাটিতে ৯৮ হাজার ৪৭৪ ও খাগড়াছড়িতে এক লাখ ২৪ হাজার ৩৪০ জন)।
আদমশুমারি বলছে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে এখন আদিবাসীর চেয়ে বাঙালি বেশি। এই জেলায় এখন দুই লাখ ১৫ হাজার ৯৩৪ জন বাঙালির বসবাস।
চাকমারা সংখ্যায় ভারী: ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, চার লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮ জন। এর পরই মারমাদের অবস্থান, দুই লাখ দুই হাজার ৯৭৪ জন। চাকমা ও মারমাদের প্রধান আবাসস্থল পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায়।
সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে সাঁওতাল। এদের সংখ্যা এক লাখ ৪৭ হাজার ১১২ জন। সাঁওতালেরা প্রধানত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বাস করে। রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, সারা দেশে সাঁওতালদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের হিসাবে সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ সাঁওতাল বাস করে। ফিলিপ গাইনও বলেছেন, একাধিক জরিপ অনুযায়ী দেশে সাঁওতালদের সংখ্যা চার লাখ বা তারও বেশি।
শুমারিতে বলা হচ্ছে, দেশে ১১ হাজার ৬৯৭ জন খাসি বাস করে। তবে এই সংখ্যা মানতে রাজি নন মৌলভীবাজার ডাবলছড়া খাসিপুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) পিডিশন প্রধান সুচিয়াং। পিডিশন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের ৯৪টি পুঞ্জিতে ১৭ হাজারের বেশি খাসি বাস করে।
পরিচয় অস্বীকার: সরকার বলে, বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। শুমারি প্রতিবেদনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ‘এথনিক পপুলেশন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৭টি। এগুলো হচ্ছে: চাকমা (চার লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮), মারমা (দুই লাখ দুই হাজার ৯৭৪), ত্রিপুরা (এক লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৮), ম্রো (৩৯ হাজার চারজন), তঞ্চ্যঙ্গা (৪৪ হাজার ২৫৪), বম (১২ হাজার ৪২৪), পাঙ্খুয়া (দুই হাজার ২৭৪), চাক (দুই হাজার ৮৩৫), খিয়াং (তিন হাজার ৮৯৯), খুমি (তিন হাজার ৩৬৯), লুসাই (৯৫৯), কোচ (১৬ হাজার ৯০৩), সাঁওতাল (এক লাখ ৪৭ হাজার ১১২), ডালু (৮০৬), উসাই (৩৪৭), রাখাইন (১৩ হাজার ২৫৪), মণিপুরি (২৪,৬৯৫), গারো (৮৪ হাজার ৫৬৫), হাজং (নয় হাজার ১৬২), খাসি (১১ হাজার ৬৯৭), মং (২৬৩), ওঁরাও (৮০ হাজার ৩৮৬), বর্ম্মন (৫৩ হাজার ৭৯২), পাহাড়ি (পাঁচ হাজার ৯০৮), মালপাহাড়ি (দুই হাজার ৮৪০), মুন্ডা (৩৮ হাজার ২১২) ও কোল (দুই হাজার ৮৪৩)।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে প্রথম প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী পরিচয় উল্লেখ করে জনসংখ্যা প্রকাশ করা হয়। তবে ২০০১ সালের আদমশুমারিতে শুধু সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছিল, জাতিগোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) নির্বাহী পরিচালক ফিলিপ গাইন দুই দশকের বেশি সময় ধরে আদিবাসী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অবস্থান, সংখ্যা, সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আদিবাসীদের তথ্য বা পরিসংখ্যান সংগ্রহ, লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণের সময় আন্তরিকতার অভাব লক্ষ করা যায়। গারো, কোচ, খাসি ও সাঁওতাল নিয়ে একাধিক স্বাধীন জরিপে দেখা গেছে, সরকারের দেওয়া তথ্যের চেয়ে এদের প্রকৃত সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের এ ক্ষেত্রে নির্দেশনার ঘাটতি থাকতে পারে। আবার মাঠপর্যায়ের গণনাকারীদের তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও ত্রুটি থাকতে পারে।
শুমারি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, উত্তরের জেলা নওগাঁয় ২৪ হাজার ৪০৯ জন চাকমা বাস করে। আদিবাসী বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা অথবা এঁদের বিষয়ে গবেষণা করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, এটা ভুল তথ্য, হাস্যকর। চাকমাদের বসবাসের স্থান পার্বত্য চট্টগ্রাম, নওগাঁ নয়।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আদমশুমারির তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কোনো অর্থ বহন করে না। ৪৭টি জেলায় কেন আদিবাসী মানুষ কমেছে, তার ব্যাখ্যা পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দিতে হবে। সংখ্যা কম দেখানোর অর্থ রাষ্ট্র কর্তৃক আমাদের অধিকার অস্বীকার করা। আদিবাসীদের সংখ্যা যত কম দেখানো যাবে, সরকারের দায়িত্বও তত কম থাকবে।’ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনা ২০১১’ প্রকল্পের পরিচালক অসীম কুমার দে বলেন, ‘মাঠপর্যায়ের গণনাকারীরা যে তথ্য পেয়েছেন, আমরা সেই তথ্য প্রকাশ করেছি।’
২০১১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ২৭টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ১৪১ জন মানুষ বাস করে। এরা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১ শতাংশ। ২০০১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ১০ হাজার ১৬৯। ১০ বছরে এদের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৭২ জন।
ব্যাখ্যা মেলে না: ২০০১ সালে বরিশাল ও ভোলা জেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে পাঁচ হাজার ৩২১ ও ১২ হাজার ৯৪৯ জন। ২০১১ সালে জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭৬ ও ৫৭ জনে। বরিশাল বিভাগের বাকি সব জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যাও কমেছে।
২০০১ সালের আদমশুমারিতে বলা হয়েছিল, বরগুনা জেলায় নয় হাজার ৭২৮ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। এ বছর দেখানো হয়েছে এক হাজার ১৪৩ জন। এদের মধ্যে মালপাহাড়ি এক হাজার ৫৯ জন, চাকমা ২৯, ডালু ২৭ এবং অন্যান্য ২৮। সরকারি হিসাবে বরগুনা জেলায় রাখাইন বাস করে না।
তবে বুড্ডিস্ট রাখাইন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের বরগুনা জেলা শাখার সদস্যসচিব খে মংলা এই হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। গতকাল বরগুনায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদককে তিনি বলেন, জেলার ২৩টি পল্লিতে দুই হাজার ৪৬২ জন রাখাইন বাস করে।
যশোর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। যশোরে ছিল চার হাজার ৫৩৯ জন। বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৩২ জন। ঝিনাইদহ ও মাগুরায়ও বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক।
সংখ্যা বাড়া অথবা কমার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, নানা কারণে সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে। তবে কেন বাড়ল বা কমল, তা জানা দরকার। পরিসংখ্যান ব্যুরোকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মাঠপর্যায়ের গণনাকারীরা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে ভুল করেন। তাঁদের বাঙালি হিসেবে গণনা করেন। এ কারণে কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যা কমে যেতে পারে।
তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি: আদমশুমারি বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় আদিবাসী বেড়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৬৪ জন। ২০০১ সালে তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসী ছিল পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৯৭৭ জন (বান্দরবানে এক লাখ ৪২ হাজার ৬৫১ জন, রাঙামাটিতে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৯ জন ও খাগড়াছড়িতে এক লাখ ৯২ হাজার ৬৪৭)। ২০১১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৪৫ হাজার ৫৪১ জনে (বান্দরবানে এক লাখ ৭২ হাজার ৪০১, রাঙামাটিতে তিন লাখ ৫৬ হাজার ১৫৩ জন ও খাগড়াছড়িতে তিন লাখ ১৬ হাজার ৯৮৭ জন)। ১০ বছরে এই তিন জেলায় আদিবাসী বেড়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার ৫৬৪ জন (বান্দরবানে ২৯ হাজার ৭৫০, রাঙামাটিতে ৯৮ হাজার ৪৭৪ ও খাগড়াছড়িতে এক লাখ ২৪ হাজার ৩৪০ জন)।
আদমশুমারি বলছে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে এখন আদিবাসীর চেয়ে বাঙালি বেশি। এই জেলায় এখন দুই লাখ ১৫ হাজার ৯৩৪ জন বাঙালির বসবাস।
চাকমারা সংখ্যায় ভারী: ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, চার লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮ জন। এর পরই মারমাদের অবস্থান, দুই লাখ দুই হাজার ৯৭৪ জন। চাকমা ও মারমাদের প্রধান আবাসস্থল পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায়।
সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে সাঁওতাল। এদের সংখ্যা এক লাখ ৪৭ হাজার ১১২ জন। সাঁওতালেরা প্রধানত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বাস করে। রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, সারা দেশে সাঁওতালদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের হিসাবে সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ সাঁওতাল বাস করে। ফিলিপ গাইনও বলেছেন, একাধিক জরিপ অনুযায়ী দেশে সাঁওতালদের সংখ্যা চার লাখ বা তারও বেশি।
শুমারিতে বলা হচ্ছে, দেশে ১১ হাজার ৬৯৭ জন খাসি বাস করে। তবে এই সংখ্যা মানতে রাজি নন মৌলভীবাজার ডাবলছড়া খাসিপুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) পিডিশন প্রধান সুচিয়াং। পিডিশন প্রথম আলোকে বলেন, দেশের ৯৪টি পুঞ্জিতে ১৭ হাজারের বেশি খাসি বাস করে।
পরিচয় অস্বীকার: সরকার বলে, বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। শুমারি প্রতিবেদনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ‘এথনিক পপুলেশন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৭টি। এগুলো হচ্ছে: চাকমা (চার লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮), মারমা (দুই লাখ দুই হাজার ৯৭৪), ত্রিপুরা (এক লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৮), ম্রো (৩৯ হাজার চারজন), তঞ্চ্যঙ্গা (৪৪ হাজার ২৫৪), বম (১২ হাজার ৪২৪), পাঙ্খুয়া (দুই হাজার ২৭৪), চাক (দুই হাজার ৮৩৫), খিয়াং (তিন হাজার ৮৯৯), খুমি (তিন হাজার ৩৬৯), লুসাই (৯৫৯), কোচ (১৬ হাজার ৯০৩), সাঁওতাল (এক লাখ ৪৭ হাজার ১১২), ডালু (৮০৬), উসাই (৩৪৭), রাখাইন (১৩ হাজার ২৫৪), মণিপুরি (২৪,৬৯৫), গারো (৮৪ হাজার ৫৬৫), হাজং (নয় হাজার ১৬২), খাসি (১১ হাজার ৬৯৭), মং (২৬৩), ওঁরাও (৮০ হাজার ৩৮৬), বর্ম্মন (৫৩ হাজার ৭৯২), পাহাড়ি (পাঁচ হাজার ৯০৮), মালপাহাড়ি (দুই হাজার ৮৪০), মুন্ডা (৩৮ হাজার ২১২) ও কোল (দুই হাজার ৮৪৩)।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে প্রথম প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী পরিচয় উল্লেখ করে জনসংখ্যা প্রকাশ করা হয়। তবে ২০০১ সালের আদমশুমারিতে শুধু সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছিল, জাতিগোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
No comments