অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দেবে ইকুয়েডর

লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় দুই মাসের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির সরকার তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর করল।


যুক্তরাজ্য ও সুইডেন ইকুয়েডরের ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাজ্য বলেছে, ইকুয়েডরের ঘোষণায় তাদের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হবে না, তারা অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণ করবেই। অ্যাসাঞ্জের মা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এর আগে বুধবার ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্দো পাতিনো অভিযোগ করেছিলেন, যুক্তরাজ্য লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে ঢুকে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে ‘প্রকাশ্য হুমকি’ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইকুয়েডর এই হুমকি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। গণতান্ত্রিক, সভ্য ও আইনের শাসনভিত্তিক কোনো দেশের এ ধরনের হুমকি যথোচিত নয়। এ ধরনের পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য, অবন্ধুসুলভ এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। এটি পাল্টা ব্যবস্থা নিতে আমাদের বাধ্য করবে।’
সুইডেনে প্রত্যর্পণ এড়াতে অ্যাসাঞ্জ গত জুনে ওই দূতাবাসটিতে আশ্রয় নেন। সুইডেনে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাতিনো গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে বলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে পাঠানো হলে সেখানে তিনি যে রাজনৈতিক পীড়নের শিকার হবেন বলে আশঙ্কা করছেন, তা ‘যথাযথ’। তিনি বলেন, নির্যাতনের শিকার হতে পারে এমন ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়ার ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ইকুয়েডর।
লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসের বাইরে থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জেমস রবিনস বলেন, দূতাবাসের বাইরে সমবেত অ্যাসাঞ্জের সমর্থকদের মাধ্যমে ওই সিদ্ধান্তের কথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তের খবরে সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দিলেও ব্রিটেন বলেছে, এ ঘোষণায় তাদের সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন হবে না। অ্যাসাঞ্জকে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। তিনি যদি বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা চালান, তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।
স্পেনের প্রখ্যাত মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী বালতাজার গারজন গতকাল বলেছেন, যুক্তরাজ্য অ্যাসাঞ্জকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ না দিলে অ্যাসাঞ্জ আন্তর্জাতিক আদালতে আপিল করবেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর আভাস দিয়েছে, অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের ‘আইনগত বাধ্যবাধকতা’ পূরণে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে। ইতিমধ্যে লন্ডনের নাইটসব্রিজে ওই দূতাবাসের বাইরে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও অবস্থান নিয়েছেন।
ওদিকে ইকুয়েডরের রাজধানী কিটোয় ব্রিটিশ দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় তাদের হাতে ‘আমরা সার্বভৌম, উপনিবেশ নই’ লেখা স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড শোভা পায়।
২০১০ সালে উইকিলিকসে অসংখ্য গোপন কূটনৈতিক নথি ফাঁস হওয়ায় বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, সুইডেনে প্রত্যর্পণ করা হলে দেশটি তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। বিবিসি ও এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.