বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক- লিমন কি বিচার পাবে না?
র্যাবের কয়েকজন সদস্যের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝালকাঠির তরুণ লিমন হোসেন একটি পা হারিয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছে। তার মা হেনোয়ারা বেগম এ ঘটনার বিচার চেয়ে যে মামলা করেছিলেন, ঝালকাঠির রাজাপুর থানার পুলিশ সেটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন, তরুণ লিমন হোসেন তাহলে কী করে পঙ্গু হলো? এর জন্য দায়ী কে?
হেনোয়ারা বেগমের করা অভিযোগ থেকে র্যাবের ছয় সদস্যকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে রাজাপুর থানার পুলিশ; তাহলে লিমনকে কারা গুলি করেছিল—এই প্রশ্নের উত্তর কীভাবে পাওয়া যাবে? ঘটনার শুরু থেকেই লিমন ও তার পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশের আচরণ ছিল অসহযোগিতামূলক। লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম নিরীহ ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা গ্রহণ করেনি। অসহায় মা তখন গেছেন ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে; তাঁর মামলা সেখানে গৃহীত হয়েছে। তারপর আদালতের নির্দেশে রাজাপুর থানা সেই মামলা গ্রহণ করে। কিন্তু লিমন ও তার মা যেন ন্যায়বিচার পান, সেই লক্ষ্যে পুলিশ মামলাটির যথাযথ তদন্ত করেনি। এমনকি মামলার প্রধান সাক্ষী ও ঘটনার শিকার তরুণ লিমনের সঙ্গেও তদন্ত কর্মকর্তা কথা বলেননি বলে লিমন অভিযোগ করেছে।
লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম দরিদ্র, অসহায়। তিনি যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছিলেন, তাঁরা সরকারের ক্ষমতাধর বাহিনী র্যাবের সদস্য। তাঁর অভিযোগ আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কার্যত আমলেই নিল না। তিনি যথার্থই প্রশ্ন তুলেছেন: গরিব বলে কি আমরা বিচার পাব না?
অথচ লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের সদস্যদের অভিযোগের প্রতি পুলিশ ঠিকই গুরুত্ব দিয়েছে। র্যাবের সদস্যরা লিমনকে গুলি করার দিনই অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ দুটি মামলাতেই লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে। এখন ‘অবৈধ অস্ত্র রাখা’ ও ‘সরকারি কাজে বাধাদানের’ বানোয়াট অভিযোগে এই পঙ্গু ছেলেটিকে দণ্ডিত করার যাবতীয় চেষ্টা করা হবে পুলিশ-প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে। অথচ সংবিধান, আইনের শাসন, ন্যায়বিচারের নীতির এমন বিপরীত আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
র্যাব সদস্যদের হাতে লিমনের পঙ্গু হওয়ার এ ঘটনায় পুলিশের তদন্ত নিয়ে গোড়া থেকেই সংশয় ছিল; তাই নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এখন সেই উদ্যোগই নেওয়া উচিত। লিমনের গুলিবিদ্ধ ও পঙ্গু হওয়ার ঘটনায় সঠিক বিচার না হলে আইনের শাসনের ক্ষেত্রে এটি খুব নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে, ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বেড়ে যেতে পারে।
No comments