স্বাগত, কাত্সুইয়া ওকাদা by মনজুরুল হক
জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাত্সুইয়া ওকাদা দুই দিনের এক সরকারি সফরে ঢাকা আসছেন। জাপানি উপপ্রধানমন্ত্রীর এই সফর বাস্তবায়িত হচ্ছে অন্য দুটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রীর সফরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলতে থাকার সময়। ফলে জাপানের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক দলের সাবেক সভাপতি ও মহাসচিব এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী
ইয়োশিহিকো নোদার মন্ত্রিসভার খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনরত জাপানি নেতার এই সফর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে বলে মনে হয় না। তবে তা সত্ত্বেও সফরের গুরুত্ব খাটো করে দেখার সুযোগ একেবারেই নেই।
গত এক যুগে এটা হচ্ছে জাপানের খুবই উচ্চপর্যায়ের কোনো এক নেতার বাংলাদেশ সফর। ২০০০ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি বাংলাদেশ সফর করার পর জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী কিংবা উপপ্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যাননি। সেদিক থেকে কাত্সুইয়া ওকাদার এই সফর হচ্ছে দীর্ঘ বিরতির পর জাপানের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার বাংলাদেশে পদার্পণ।
কাত্সুইয়া ওকাদা বাংলাদেশ সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নোদার স্থলাভিষিক্ত হয়ে। জাপানের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাপানের জন্য তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো সফরের সুযোগ খুব একটা না থাকায় উপপ্রধানমন্ত্রীকে এখন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, উপপ্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থান করার সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন এবং উপপ্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর শেষ করে শ্রীলঙ্কা যাবেন। ফলে সেদিক থেকে রাষ্ট্রাচারসংক্রান্ত নিয়মনীতি অনুযায়ী জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রীর এই বাংলাদেশ সফর হচ্ছে অন্যান্য সফরের চেয়ে উচ্চপর্যায়ের।
কাত্সুইয়া ওকাদাকে শুধু অপেক্ষাকৃত কম তাত্পর্যপূর্ণ পদ উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী এক রাজনীতিবিদ হিসেবে গণ্য করে নিলে হিসাবে কিছুটা গরমিল থেকে যেতে পারে। তিনি হচ্ছেন জাপান সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের একজন, দেশের কঠিন একসময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক পদে প্রধানমন্ত্রী যাঁকে নিয়োগ দিয়েছেন। জাপান সরকার যে আকণ্ঠ ঋণভারে জর্জরিত, সে তথ্য কারও অজানা নয়। সরকারি ঋণের পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ কোটি মার্কিন ডলারে, যা হচ্ছে দেশের বার্ষিক অভ্যন্তরীণ উত্পাদনের দুই গুণের বেশি। ফলে বিশাল এই ঋণভার সময়মতো কমিয়ে আনতে না পারলে যে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর চলা পিচ্ছিল পথে জাপানকেও পা বাড়াতে হতে পারে, তা নিয়ে দেশের নীতিনির্ধারকেরা ইতিমধ্যে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তবে কথা হচ্ছে, ঋণভার কমিয়ে এনে সরকারের আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে নিতে হলে সরকারের আয়ের উত্স সম্প্রসারিত করে নেওয়া দরকার। আয় বাড়িয়ে নেওয়ার সহজ ও গ্রহণযোগ্য পথ হচ্ছে কর বৃদ্ধি, যদিও জনসমর্থন হারানোর মতো ঝুঁকি এতে থেকেই যায়। জাপান সরকার এখন সেই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, ভোগ্যকরের পরিমাণ যেখানে এখানকার পাঁচ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে ধার্য করা হবে।
আর জনগণের কাছে সেই বার্তা যুক্তিসংগতভাবে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব যে রাজনীতিবিদের ওপর অর্পিত হয়েছে, তিনি হলেন উপপ্রধানমন্ত্রী কাত্সুইয়া ওকাদা। জাপানের সব কটি জেলা ও অঞ্চল ভ্রমণ করে সরকারের কর বৃদ্ধির প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরায় ব্যস্ত থাকার মধ্যেও বাংলাদেশ সফরের মতো সময় যে তিনি করে নিয়েছেন, সেটা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। আর তাই আমাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো সঠিকভাবে জাপানি নেতার সামনে তুলে ধরতে পারলে এই সফরে ইতিবাচক ফল আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করতে পারব। সেদিক থেকে মনে হয়, পদ্মা সেতু আর ঢাকার উড়াল রেলের মতো প্রকল্পে জাপানি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার দিকটি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারলে জাপানি নেতার এই সফর থেকে আমাদের প্রাপ্তির ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে জাপান হয়তো ছোট্ট একটি অনুরোধ বাংলাদেশের কাছে জানাতে পারে, সেটা হলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যের নির্বাচনে এবার আমাদের ভোট জাপানকে দেওয়া। বাংলাদেশের পক্ষে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের এই অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ার কারণ খুব একটা নেই। আগের নির্বাচনে আমাদের ভোট জাপানের পক্ষে যায়নি। ফলে এবার মনে হয় আগের সেই অবস্থান থেকে সরে আসার আশ্বাস জাপানকে দেওয়া অযৌক্তিক শোনাবে না।
মনজুরুল হক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।
গত এক যুগে এটা হচ্ছে জাপানের খুবই উচ্চপর্যায়ের কোনো এক নেতার বাংলাদেশ সফর। ২০০০ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি বাংলাদেশ সফর করার পর জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী কিংবা উপপ্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যাননি। সেদিক থেকে কাত্সুইয়া ওকাদার এই সফর হচ্ছে দীর্ঘ বিরতির পর জাপানের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতার বাংলাদেশে পদার্পণ।
কাত্সুইয়া ওকাদা বাংলাদেশ সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নোদার স্থলাভিষিক্ত হয়ে। জাপানের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাপানের জন্য তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো সফরের সুযোগ খুব একটা না থাকায় উপপ্রধানমন্ত্রীকে এখন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, উপপ্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থান করার সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন এবং উপপ্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর শেষ করে শ্রীলঙ্কা যাবেন। ফলে সেদিক থেকে রাষ্ট্রাচারসংক্রান্ত নিয়মনীতি অনুযায়ী জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রীর এই বাংলাদেশ সফর হচ্ছে অন্যান্য সফরের চেয়ে উচ্চপর্যায়ের।
কাত্সুইয়া ওকাদাকে শুধু অপেক্ষাকৃত কম তাত্পর্যপূর্ণ পদ উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী এক রাজনীতিবিদ হিসেবে গণ্য করে নিলে হিসাবে কিছুটা গরমিল থেকে যেতে পারে। তিনি হচ্ছেন জাপান সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের একজন, দেশের কঠিন একসময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক পদে প্রধানমন্ত্রী যাঁকে নিয়োগ দিয়েছেন। জাপান সরকার যে আকণ্ঠ ঋণভারে জর্জরিত, সে তথ্য কারও অজানা নয়। সরকারি ঋণের পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ কোটি মার্কিন ডলারে, যা হচ্ছে দেশের বার্ষিক অভ্যন্তরীণ উত্পাদনের দুই গুণের বেশি। ফলে বিশাল এই ঋণভার সময়মতো কমিয়ে আনতে না পারলে যে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর চলা পিচ্ছিল পথে জাপানকেও পা বাড়াতে হতে পারে, তা নিয়ে দেশের নীতিনির্ধারকেরা ইতিমধ্যে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তবে কথা হচ্ছে, ঋণভার কমিয়ে এনে সরকারের আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে নিতে হলে সরকারের আয়ের উত্স সম্প্রসারিত করে নেওয়া দরকার। আয় বাড়িয়ে নেওয়ার সহজ ও গ্রহণযোগ্য পথ হচ্ছে কর বৃদ্ধি, যদিও জনসমর্থন হারানোর মতো ঝুঁকি এতে থেকেই যায়। জাপান সরকার এখন সেই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, ভোগ্যকরের পরিমাণ যেখানে এখানকার পাঁচ থেকে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে ধার্য করা হবে।
আর জনগণের কাছে সেই বার্তা যুক্তিসংগতভাবে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব যে রাজনীতিবিদের ওপর অর্পিত হয়েছে, তিনি হলেন উপপ্রধানমন্ত্রী কাত্সুইয়া ওকাদা। জাপানের সব কটি জেলা ও অঞ্চল ভ্রমণ করে সরকারের কর বৃদ্ধির প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরায় ব্যস্ত থাকার মধ্যেও বাংলাদেশ সফরের মতো সময় যে তিনি করে নিয়েছেন, সেটা খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। আর তাই আমাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো সঠিকভাবে জাপানি নেতার সামনে তুলে ধরতে পারলে এই সফরে ইতিবাচক ফল আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করতে পারব। সেদিক থেকে মনে হয়, পদ্মা সেতু আর ঢাকার উড়াল রেলের মতো প্রকল্পে জাপানি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার দিকটি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারলে জাপানি নেতার এই সফর থেকে আমাদের প্রাপ্তির ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে জাপান হয়তো ছোট্ট একটি অনুরোধ বাংলাদেশের কাছে জানাতে পারে, সেটা হলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যের নির্বাচনে এবার আমাদের ভোট জাপানকে দেওয়া। বাংলাদেশের পক্ষে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের এই অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ার কারণ খুব একটা নেই। আগের নির্বাচনে আমাদের ভোট জাপানের পক্ষে যায়নি। ফলে এবার মনে হয় আগের সেই অবস্থান থেকে সরে আসার আশ্বাস জাপানকে দেওয়া অযৌক্তিক শোনাবে না।
মনজুরুল হক: শিক্ষক ও সাংবাদিক।
No comments