প্রশাসন-মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স ও মর্যাদা by ফাহমিদা জাহান সিদ্দিকা
আমরা সাধারণ মানুষ ক্ষমতাসীনদের পাশে অতি নগণ্য। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা কিছু করতে অক্ষম হলেও দেশপ্রেম ও নৈতিক মূল্যবোধের তাগিদে সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে লেখনীর ভাষায় বলতে চাই_ অবিলম্বে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করা হোক এবং তারা কর্মক্ষম থাকা পর্যন্ত তাদের সরকারি চাকরিতে বহাল রেখে আজীবন আবাসন সুযোগ নিশ্চিত করা হোক।
এ ছাড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে নূ্যনতম পাঁচ হাজার টাকায় উন্নীত করে তাদের মহান আত্মত্যাগ ও অবদানের কিঞ্চিৎ স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আর এ কাজটি অতি শিগগিরই কার্যকর করা প্রয়োজন
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা নিঃস্বার্থভাবে জীবন উৎসর্গ করে কিংবা জীবন বাজি রেখে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিলেন শুধুই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে; কিন্তু এ বীর জাতির কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষ তাদের সেই অবদানের কথা স্মরণ রাখেনি। খোদ সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। যদিও সব সরকারের মুখ দিয়েই আল্লাহ এ সত্যটি উচ্চারণ করিয়েছেন যে, 'মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান; কিন্তু দুঃখজনক কথা হলো, জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সঠিক সংখ্যাটি পর্যন্ত আজও নিরূপিত হয়নি কিংবা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্ক মোচনের চেষ্টাও সফলভাবে করা হয়নি। ফলে স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ক্রমাগত অলৌকিকভাবে বেড়েই চলেছে। অথচ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরি ও তাদের সম্মানজনক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা সরকারের রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। আর এ কাজটি সরকারের জন্য খুব কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। তাই আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রোগ-শোকে ও অভাবের তাড়নায় মানবেতন জীবনযাপন করছেন। আকাশে-বাতাসে তাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি হাহাকার, অথচ সৌভাগ্যবানদের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ারও যেন অবকাশ নেই।
বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য 'মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের' অধীনে বেশকিছু জাতীয় প্রতিষ্ঠান উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন, যা দুঃখজনকভাবে জাতির কিছু লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, কুলাঙ্গার দস্যু চুষে খেয়ে ছোবড়ায় পরিণত করেছে, যা এখন দেখারও কেউ নেই। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করেছে বটে, তবে তা দিয়ে একটি পরিবার নয় বরং একজন মানুষ কোনোমতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। সরকার মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের চাকরির বয়স দু'বছর বাড়ালেও পরবর্তী সময়ে তা সাধারণ চাকরিজীবীদের সঙ্গে সমান করে দেওয়া হয়। আর এ কাজে সম্ভবত কোনো একটি মহলের গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। কারণ তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও সম্মানজনক অবস্থান দেখতে চায় না। তারা '৭১-এ যেমন এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি তেমনি এখনও তারা এ দেশের শত্রু।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স আবার দু'বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে বিষয়টি এক বছরে নামিয়ে আনা হতে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এ গুঞ্জন সত্য হলে তা হবে সরকারের নৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবহেলা ও অবিচার। তাই সরকার যেন এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত না নেয়, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পক্ষ থেকে এটাই বিবেকবান মানুষের অন্তরের দাবি। আর এটিও আশা করব যে, যারা পিআরএলে রয়েছেন তারাও যেন এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন। কারণ ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হলে এলপিআরভোগী মুক্তিযোদ্ধারাও তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে যেসব মুক্তিযোদ্ধা পিআরএলে আছেন ন্যায়সঙ্গত কারণে তারাও আবার চাকরিতে বহাল থাকার দাবি রাখেন। এখানে সঙ্গত কারণেই বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। এলপিআর অর্থ (খবধাব ঢ়ৎবঢ়ধৎধঃড়ৎু ঃড় ৎবঃরৎবসবহঃ) অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটি এবং পিআরএল হলো (চড়ংঃ ৎবঃরৎবসবহঃ ঃড় ষবধাব) অবসর-পরবর্তী ছুটি।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এলপিআর অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত একটি নিয়ম। কারণ অবসরে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অবসরে যাওয়ার পর তাদের কীভাবে ছুটি ভোগের সুযোগ থাকে? আর কীভাবেইবা তারা চাকরিকালীন সময়ের মতো পূর্ণ বেতন-ভাতাদি পাওয়ার অধিকার রাখেন? এসবই অযৌক্তিক। কারণ অবসরকালীন নিয়ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই পিআরএল নামকরণ হলেও তা কার্যত এলপিআরই বটে। কারণ তারা উভয়েই একই রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। সুতরাং নিয়মের বিচারে এবং মানবতা ও নৈতিক বিবেচনায় পিআরএলে থাকা মুক্তিযোদ্ধারাও আবার চাকরিতে বহাল থাকার পূর্ণ অধিকার রাখেন। এ ছাড়া যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য এ নূ্যনতম সুযোগটুকু দেওয়া জাতির শুধু রাষ্ট্রীয় দায়িত্বই নয়, বরং নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্বও বটে। আর এটুকু করা হলেই যে তাদের জন্য খুব বেশি কিছু করা হবে এমনটিও দাবি করার সুযোগ নেই। কারণ তারা তো শহীদদের মতোই জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক তারা জাতির এ নৈরাজ্য এবং অনিয়ম দেখার জন্যই হয়তো বেঁচে আছেন। অতএব মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কখনোই শোধ হওয়ার নয়। আর এ কারণেই জাতির প্রতিটি মানুষ তাদের এবং তাদের পরিবারের কাছে ঋণী। আর একথাটিও ভুললে চলবে না যে, এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা যারা ক্ষমতা আর নেতৃত্বের মর্যাদায় আসীন কিংবা ধন-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি বা শিল্প-কারখানার গর্বিত মালিক তাদের সেই সৌভাগ্য সৃষ্টির মহান নায়ক আত্মত্যাগী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের বঞ্চিত করা হলে অবশ্যই তাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে। কারণ দেশটা স্বাধীন না হলে তারা কখনোই বর্তমান অবস্থানে থাকতে পারতেন না। হতে পারতেন না মন্ত্রী-সাংসদ, আমলা বা শিল্পপতি। সুতরাং সরকারের সর্বোচ্চ এবং সম্মানিত পদবিধারীদের বিষয়টি মনে রাখা উচিত। অতএব মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা সসম্মানে স্মরণ করে তাদের শুধু মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দেওয়া নয়, জীবিতাবস্থায় তাদের সম্মানজনক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা সরকারের গুরুদায়িত্ব।
আমরা সাধারণ মানুষ ক্ষমতাসীনদের পাশে অতি নগণ্য। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা কিছু করতে অক্ষম হলেও দেশপ্রেম ও নৈতিক মূল্যবোধের তাগিদে সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে লেখনীর ভাষায় বলতে চাই_ অবিলম্বে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করা হোক এবং তারা কর্মক্ষম থাকা পর্যন্ত তাদের সরকারি চাকরিতে বহাল রেখে আজীবন আবাসন সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। এ ছাড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে নূ্যনতম পাঁচ হাজার টাকায় উন্নীত করে তাদের মহান আত্মত্যাগ ও অবদানের কিঞ্চিৎ স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আর এ কাজটি অতি শিগগিরই কার্যকর করা প্রয়োজন। যেন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবদ্দশায় এ সম্মানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে এ কাজটি করতে পারলে তবেই হয়তো 'মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান'_ কথাটির উচ্চারণ সত্য বলে প্রমাণিত হবে। অন্যথায় মনে হবে এসব কথা নিছকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে আমার বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা, সরকার এ মহৎ কাজটির দ্বারা জাতির ঋণের বোঝা কিঞ্চিৎ হ্রাস করে সরকারের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে অবশ্যই সচেষ্ট হবে।
ফাহমিদা জাহান সিদ্দিকা : লেখিকা ও গবেষক
jashimu09@gmail.com
আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা নিঃস্বার্থভাবে জীবন উৎসর্গ করে কিংবা জীবন বাজি রেখে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিলেন শুধুই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে; কিন্তু এ বীর জাতির কিছু অকৃতজ্ঞ মানুষ তাদের সেই অবদানের কথা স্মরণ রাখেনি। খোদ সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। যদিও সব সরকারের মুখ দিয়েই আল্লাহ এ সত্যটি উচ্চারণ করিয়েছেন যে, 'মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান; কিন্তু দুঃখজনক কথা হলো, জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সঠিক সংখ্যাটি পর্যন্ত আজও নিরূপিত হয়নি কিংবা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্ক মোচনের চেষ্টাও সফলভাবে করা হয়নি। ফলে স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ক্রমাগত অলৌকিকভাবে বেড়েই চলেছে। অথচ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরি ও তাদের সম্মানজনক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা সরকারের রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। আর এ কাজটি সরকারের জন্য খুব কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। তাই আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রোগ-শোকে ও অভাবের তাড়নায় মানবেতন জীবনযাপন করছেন। আকাশে-বাতাসে তাদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি হাহাকার, অথচ সৌভাগ্যবানদের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ারও যেন অবকাশ নেই।
বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য 'মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের' অধীনে বেশকিছু জাতীয় প্রতিষ্ঠান উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন, যা দুঃখজনকভাবে জাতির কিছু লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, কুলাঙ্গার দস্যু চুষে খেয়ে ছোবড়ায় পরিণত করেছে, যা এখন দেখারও কেউ নেই। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করেছে বটে, তবে তা দিয়ে একটি পরিবার নয় বরং একজন মানুষ কোনোমতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে। সরকার মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের চাকরির বয়স দু'বছর বাড়ালেও পরবর্তী সময়ে তা সাধারণ চাকরিজীবীদের সঙ্গে সমান করে দেওয়া হয়। আর এ কাজে সম্ভবত কোনো একটি মহলের গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। কারণ তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও সম্মানজনক অবস্থান দেখতে চায় না। তারা '৭১-এ যেমন এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি তেমনি এখনও তারা এ দেশের শত্রু।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়স আবার দু'বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। তবে বিষয়টি এক বছরে নামিয়ে আনা হতে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এ গুঞ্জন সত্য হলে তা হবে সরকারের নৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবহেলা ও অবিচার। তাই সরকার যেন এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত না নেয়, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পক্ষ থেকে এটাই বিবেকবান মানুষের অন্তরের দাবি। আর এটিও আশা করব যে, যারা পিআরএলে রয়েছেন তারাও যেন এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন। কারণ ২০০৯ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হলে এলপিআরভোগী মুক্তিযোদ্ধারাও তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে যেসব মুক্তিযোদ্ধা পিআরএলে আছেন ন্যায়সঙ্গত কারণে তারাও আবার চাকরিতে বহাল থাকার দাবি রাখেন। এখানে সঙ্গত কারণেই বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। এলপিআর অর্থ (খবধাব ঢ়ৎবঢ়ধৎধঃড়ৎু ঃড় ৎবঃরৎবসবহঃ) অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটি এবং পিআরএল হলো (চড়ংঃ ৎবঃরৎবসবহঃ ঃড় ষবধাব) অবসর-পরবর্তী ছুটি।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এলপিআর অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত একটি নিয়ম। কারণ অবসরে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অবসরে যাওয়ার পর তাদের কীভাবে ছুটি ভোগের সুযোগ থাকে? আর কীভাবেইবা তারা চাকরিকালীন সময়ের মতো পূর্ণ বেতন-ভাতাদি পাওয়ার অধিকার রাখেন? এসবই অযৌক্তিক। কারণ অবসরকালীন নিয়ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই পিআরএল নামকরণ হলেও তা কার্যত এলপিআরই বটে। কারণ তারা উভয়েই একই রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। সুতরাং নিয়মের বিচারে এবং মানবতা ও নৈতিক বিবেচনায় পিআরএলে থাকা মুক্তিযোদ্ধারাও আবার চাকরিতে বহাল থাকার পূর্ণ অধিকার রাখেন। এ ছাড়া যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জন্য এ নূ্যনতম সুযোগটুকু দেওয়া জাতির শুধু রাষ্ট্রীয় দায়িত্বই নয়, বরং নৈতিক এবং মানবিক দায়িত্বও বটে। আর এটুকু করা হলেই যে তাদের জন্য খুব বেশি কিছু করা হবে এমনটিও দাবি করার সুযোগ নেই। কারণ তারা তো শহীদদের মতোই জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক তারা জাতির এ নৈরাজ্য এবং অনিয়ম দেখার জন্যই হয়তো বেঁচে আছেন। অতএব মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কখনোই শোধ হওয়ার নয়। আর এ কারণেই জাতির প্রতিটি মানুষ তাদের এবং তাদের পরিবারের কাছে ঋণী। আর একথাটিও ভুললে চলবে না যে, এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা যারা ক্ষমতা আর নেতৃত্বের মর্যাদায় আসীন কিংবা ধন-সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি বা শিল্প-কারখানার গর্বিত মালিক তাদের সেই সৌভাগ্য সৃষ্টির মহান নায়ক আত্মত্যাগী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনাদের বঞ্চিত করা হলে অবশ্যই তাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে। কারণ দেশটা স্বাধীন না হলে তারা কখনোই বর্তমান অবস্থানে থাকতে পারতেন না। হতে পারতেন না মন্ত্রী-সাংসদ, আমলা বা শিল্পপতি। সুতরাং সরকারের সর্বোচ্চ এবং সম্মানিত পদবিধারীদের বিষয়টি মনে রাখা উচিত। অতএব মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা সসম্মানে স্মরণ করে তাদের শুধু মৃত্যুর পর গার্ড অব অনার দেওয়া নয়, জীবিতাবস্থায় তাদের সম্মানজনক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা সরকারের গুরুদায়িত্ব।
আমরা সাধারণ মানুষ ক্ষমতাসীনদের পাশে অতি নগণ্য। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমরা কিছু করতে অক্ষম হলেও দেশপ্রেম ও নৈতিক মূল্যবোধের তাগিদে সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে লেখনীর ভাষায় বলতে চাই_ অবিলম্বে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করা হোক এবং তারা কর্মক্ষম থাকা পর্যন্ত তাদের সরকারি চাকরিতে বহাল রেখে আজীবন আবাসন সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। এ ছাড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দুই হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে নূ্যনতম পাঁচ হাজার টাকায় উন্নীত করে তাদের মহান আত্মত্যাগ ও অবদানের কিঞ্চিৎ স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আর এ কাজটি অতি শিগগিরই কার্যকর করা প্রয়োজন। যেন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবদ্দশায় এ সম্মানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে এ কাজটি করতে পারলে তবেই হয়তো 'মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান'_ কথাটির উচ্চারণ সত্য বলে প্রমাণিত হবে। অন্যথায় মনে হবে এসব কথা নিছকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে আমার বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা, সরকার এ মহৎ কাজটির দ্বারা জাতির ঋণের বোঝা কিঞ্চিৎ হ্রাস করে সরকারের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে অবশ্যই সচেষ্ট হবে।
ফাহমিদা জাহান সিদ্দিকা : লেখিকা ও গবেষক
jashimu09@gmail.com
No comments